ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

এমপি হিসেবে শপথ নিলেন ২৯৭ জন মন্ত্রিসভার শপথ আজ

  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গতকাল বুধবার এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ২৯৭ জন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে। এ জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪০টি গাড়ি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও পাঁচটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে চাওয়ামাত্রই দেওয়া যায়।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য এই গাড়ির সংখ্যা দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কত হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা ঠিক হবে না বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আনুমানিক হিসেবে এসব গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কত হচ্ছে, তা এখনো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কেউ কিছু বলতে পারছেন না। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, এবার নতুন কোনো গাড়ি কেনা হচ্ছে না। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের গাড়িগুলো ফেরত নিয়ে সেগুলোই মূলত প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাঁদের ব্যবহৃত গাড়িগুলো ফেরত দিয়েছেন। গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এখন পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একজন করে দুজন জয়ী হয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পর এবার সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে সংসদের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে। আর ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৫ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী ছিলেন।
গতকাল বুধবার বিজয়ী সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের শপথ শেষে অনুষ্ঠিত হয় দলটির সংসদীয় দলের প্রথম সভায়। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এখন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ও পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১১ জানুয়ারি (আগামীকাল) সন্ধ্যা সাতটায় মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৫ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী ছিলেন। তফসিল ঘোষণার পর টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন এমন) দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তাঁরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন না পাওয়া এবং নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ছয়জন প্রতিমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না বলেই অনেকে ধরে নিয়েছেন। এ ছাড়া পদত্যাগ করা টেকনোক্র্যাট তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে। এরপর এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি আরও তিনজন প্রতিমন্ত্রী। তাঁরা হলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেননি। মন্ত্রিসভার বাকি সবাই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন না পাওয়া এবং নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ছয়জন প্রতিমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না বলেই অনেকে ধরে নিয়েছেন। এ ছাড়া পদত্যাগ করা টেকনোক্র্যাট তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে। নির্বাচনের আগে স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে ইশতেহার দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন মন্ত্রিসভায় নতুন কিছু মুখ স্থান পেতে পারেন বলে সরকারি মহলে আলোচনা আছে। সে ক্ষেত্রে পুরোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কেউ কেউ বাদ যেতে পারেন। আবার বর্তমান মন্ত্রিসভার উপমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন বলেও আলোচনা আছে। অবশ্য এগুলো সবই আলোচনা। মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। ফলে কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কারা থাকছেন নতুন মন্ত্রিসভায়। নতুন মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, আকার কেমন হচ্ছে—এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন গত মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে এখনো নির্দেশনা পাননি।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি রাষ্ট্রপতির: টানা চতুর্থবার এবং পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ-সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। এর আগে বুধবার সকালে শপথ নিয়েছেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। এখন গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। এর আগে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৬২টি আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে।
এমপি হিসেবে শপথ নিলেন ২৯৭ জন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৯৭ জন শপথ নিয়েছেন। গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত এমপিদের মাধ্যমে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির নতুন এমপিরা শপথ নেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। সংসদের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত ড. আওলাদ হোসেনের শপথ অনুষ্ঠিত হয়নি। উচ্চ আদালতে ঢাকা-৪ আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল স্থগিত করার কারণে তার শপথ হয়নি। তবে বুধবার ড. আওলাদ হোসেন হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। পরে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে তার শপথের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। ওই আদেশ নিয়ে তিনি শপথ গ্রহণের জন্য সংসদে এসেছেন বলে জানা গেছে।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এমপি হিসেবে শপথ নিলেন ২৯৭ জন মন্ত্রিসভার শপথ আজ

আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গতকাল বুধবার এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ২৯৭ জন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে। এ জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪০টি গাড়ি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও পাঁচটি গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে চাওয়ামাত্রই দেওয়া যায়।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য এই গাড়ির সংখ্যা দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কত হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা ঠিক হবে না বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আনুমানিক হিসেবে এসব গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কত হচ্ছে, তা এখনো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কেউ কিছু বলতে পারছেন না। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, এবার নতুন কোনো গাড়ি কেনা হচ্ছে না। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের গাড়িগুলো ফেরত নিয়ে সেগুলোই মূলত প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাঁদের ব্যবহৃত গাড়িগুলো ফেরত দিয়েছেন। গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এখন পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একজন করে দুজন জয়ী হয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করেন। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পর এবার সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে সংসদের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে। আর ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৫ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী ছিলেন।
গতকাল বুধবার বিজয়ী সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের শপথ শেষে অনুষ্ঠিত হয় দলটির সংসদীয় দলের প্রথম সভায়। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এখন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ও পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১১ জানুয়ারি (আগামীকাল) সন্ধ্যা সাতটায় মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৫ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী ছিলেন। তফসিল ঘোষণার পর টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন এমন) দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তাঁরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন না পাওয়া এবং নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ছয়জন প্রতিমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না বলেই অনেকে ধরে নিয়েছেন। এ ছাড়া পদত্যাগ করা টেকনোক্র্যাট তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে। এরপর এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি আরও তিনজন প্রতিমন্ত্রী। তাঁরা হলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেননি। মন্ত্রিসভার বাকি সবাই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন না পাওয়া এবং নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ছয়জন প্রতিমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না বলেই অনেকে ধরে নিয়েছেন। এ ছাড়া পদত্যাগ করা টেকনোক্র্যাট তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে। নির্বাচনের আগে স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে ইশতেহার দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন মন্ত্রিসভায় নতুন কিছু মুখ স্থান পেতে পারেন বলে সরকারি মহলে আলোচনা আছে। সে ক্ষেত্রে পুরোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কেউ কেউ বাদ যেতে পারেন। আবার বর্তমান মন্ত্রিসভার উপমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন বলেও আলোচনা আছে। অবশ্য এগুলো সবই আলোচনা। মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। ফলে কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কারা থাকছেন নতুন মন্ত্রিসভায়। নতুন মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, আকার কেমন হচ্ছে—এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন গত মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে এখনো নির্দেশনা পাননি।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি রাষ্ট্রপতির: টানা চতুর্থবার এবং পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ-সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। এর আগে বুধবার সকালে শপথ নিয়েছেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। এখন গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। এর আগে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৬২টি আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে।
এমপি হিসেবে শপথ নিলেন ২৯৭ জন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৯৭ জন শপথ নিয়েছেন। গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত এমপিদের মাধ্যমে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির নতুন এমপিরা শপথ নেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। সংসদের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত ড. আওলাদ হোসেনের শপথ অনুষ্ঠিত হয়নি। উচ্চ আদালতে ঢাকা-৪ আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল স্থগিত করার কারণে তার শপথ হয়নি। তবে বুধবার ড. আওলাদ হোসেন হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। পরে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে তার শপথের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। ওই আদেশ নিয়ে তিনি শপথ গ্রহণের জন্য সংসদে এসেছেন বলে জানা গেছে।