ঢাকা ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

এমপি বাহারকে নিয়ে সিইসির উল্টো সুর

  • আপডেট সময় : ০৩:০৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পাঁচ দিন পর স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহারকে নিয়ে এবার অন্য সুরে কথা বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, তাতে জন্ম নিল নতুন ধাঁধা।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিইসি যা বললেন, তার মোদ্দা কথা হল, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ইসি এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিতে পারে না, তেমন কোনো ‘নির্দেশ’ ইসিও ‘দেয়নি’। তাহলে এমপি বাহারও কোনো ‘নিয়ম ভাঙেননি’, আর কমিশনও কোথাও ‘ব্যর্থ হয়নি’।
এবারের নির্বাচনে কুমিল্লা সিটির মেয়র প্রার্থীদের ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহারের নাম। দলীয় প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আগের দুই বারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে পুরনো রাজনৈতিক সম্পর্কই এর মূল কারণ। ১৫ জুন শান্তিপূর্ণ ভোট শেষে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর নাটকীয়তার মধ্যে সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রিফাত। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ভোটের আগে বাহারকে এলাকা ছাড়তে বলেছিল ইসি, যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত বাহার কুমিল্লাতেই ছিলেন, ফলে তাকে ঘিরে আলোচনাও ছিল। ১৫ জুন ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাহার বলেছিলেন, কোনো এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ারই ইসির নেই। তিনি আইন সংশোধনের জন্য সংসদে প্রস্তাব তুলবেন। অন্যদিকে ভোটের দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়াতে সিইসি বলেছিলেন, “বাহার প্রসঙ্গ পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড।”
কিন্তু ভোটের পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার সাংবাদিকরা যখন আবারও বাহার প্রসঙ্গ ধরে প্রশ্ন করলেন, সিইসির কথায় ইসির আগের অবস্থানের সঙ্গে মিল পাওয়া গেল না। কাজী হাবিবুল আউয়াল বললেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়তে ‘নির্দেশ দেওয়া হয়নি’। কমিশন তাকে এলাকা ছাড়তে বলতে পারে না, বলেওনি। “মাননীয় সাংসদ আ ক ম বাহার উদ্দিন সাহেব কোনো রকম আইন ভঙ্গ করেননি। আমাদের কোনো নির্দেশ উনি ভঙ্গ করেননি। আমরা নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্যে কিছু কিছু অনুরোধ ও অভিযোগ পাচ্ছিলাম- উনি প্রচারণা করছেন। তারপর আমরা আইনটা দেখেছি। আমরা কিন্তু কোনো লোককে তার এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিতে পারি না আইনত।”
সিইসির ভাষায়, বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার জন্যে বলা যায়। স্থানীয়দের এলাকা ছাড়ার জন্যে বলা যায় না। সেরকম ‘বেআইনি কোনো আদেশ’ কমিশনও দিতে চায় না।
“আমরা উনাকে নির্দেশ দিইনি। উনি মনক্ষুণœ হয়েছেন…। বলা হয়েছিল, ‘আপনাকে নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে এলাকা ত্যাগ করে সহযোগিতা করার জন্যে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হল’। বিনীতভাবে অনুরোধ আর আদেশ এক করে দেখেন, তাহলে আমরাও কিন্তু বেআইনি আদেশ করতে চাই না “
সিইসি বলেন, এর আগে একজন মন্ত্রীকে এক ঘণ্টার নোটিসে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন পরিস্থিতি ‘ভিন্ন ছিল’।
“মনে রাখতে হবে, উনি ছিলেন বহিরাগত। বাইরে থেকে গিয়ে ওখানে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন কমিশন কঠোর অবস্থান নিয়েছে, সাবধান করেছিল কমিশন। উনি চলে গিয়েছিলেন।” সিইসি বলেন, “বাহার উদ্দিন সাহেব কিন্তু দিনাজপুরের লোক নন, উনি কুমিল্লার লোক, এটা উনার স্থায়ী ঠিকানা। তাকে স্থান ত্যাগ করতে বলতে পারেন না এবং বলিওনি। তাহলে উনিও কিছু ভঙ্গ করেননি, আমরাও ব্যর্থ হইনি- যেটা বলা হচ্ছে।” কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা উনাকে অনুরোধ করেছি। আপনিও বোঝেন, অনুরোধ রক্ষা করতে পারেন, নাও রাখতে পারেন। অনুরোধ আর আদেশকে একাকার করে ফেললে হবে না।”
কী হয়েছিল কুমিল্লায়? আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা প্রচারে নামতে পারেন না। বাহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি কুমিল্লায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিগত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ইসিতে এমপি বাহারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দফায় বাহারকে সতর্ক করে ইসি। এরপর তাকে এলাকা ছাড়তে চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে আদালতেও যান বাহার। হাই কোর্ট ইসির ওই আদেশের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করে। এদিকে ইসির চিঠি উপেক্ষা করে বাহার এলাকায় থেকে গেলে নির্বাচন কমিশনাররা হতাশা প্রকাশ করেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোটের আগে বলেছিলেন, সংসদ সদস্যের জন্য ইসির অনুরোধই ‘যথেষ্ট’। না মানলে কিছুই করার নেই। আর কুমিল্লায় গিয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছিলেন, “তিনি (এমপি বাহার) আইন অমান্য করে নির্বাচনী এলাকায় আছেন। তবে আইনের কিছু ফাঁক-ফোঁকরকে তিনি ব্যবহার করছেন। “আমাদেরও সময় আসবে। ওয়েট অ্যান্ড সি।”
আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছিলেন, “তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। উনারা আইন প্রণয়ন করেন। যদি উনারাই আইন না মানেন, তাহলে আর কী বলব! উনাকে তো আর আমরা টেনে-হিঁচড়ে নামাতে পারি না। এখানে ইজ্জত গেল কার আপনারাই বুঝুন।” এই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ জাতীয় সংসদে বলেন, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের এলাকা ত্যাগ না করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘অসহায়ত্ব প্রকাশ’ পেয়েছে। তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ তার অন্যতম নজির। কোনো সন্দেহ নেই।” অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো সংসদ সদস্যকে তার নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা তার ‘মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের’ শামিল।
জাতীয় প্রেসক্লাবে এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রথমত আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য, ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, যিনি ওই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটার, তাকে নির্বাচন কমিশন এলাকা ছাড়ার কথা বলতে পারে কি না। এটি কি তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ নয়? “তাহলে তো ঢাকা শহরে যখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে, তখন ঢাকা থেকে নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য, মন্ত্রীদেরকেও ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এভাবে তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।“
ইসির চিঠি পাওয়ার পর কুমিল্লার সংসদ সদস্য বাহার এ বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেন। তিনি গণমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন ভোটের দিন। ১৫ জুন ভোট দিয়ে তিনি বলেন, “চিঠিটা ভাষাগতভাবেও ঠিক হয় নাই। একজন সংসদ সদস্যকে এভাবে ‘নির্দেশ’ শব্দ ব্যবহার করতে পারে না কেউ। চিঠিটা অসমাপ্ত। চিঠিতে আইনের পুরো ব্যাখ্যা নাই।” এ সংসদ সদস্য মনে করেন, ইসি তাকে যে চিঠি দিয়েছে, সেটি ‘আইনের লঙ্ঘন, এখতিয়ার বহির্ভূত’ এবং এতে তার ‘সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন’ হয়েছে। আগামীতে এ নিয়ে তিনি সংসদে কথা বলবেন এবং আইনটি সংশোধনের দাবি তুলবেন। “আমাকে পার্লামেন্টে কথা বলতে হবে। আইনটা আমরা সংশোধন করব ইনশাল্লাহ। আমি হাই কোর্টে রিট করেছি, একটা রুলও পেয়েছি। এই আইনটা পরিবর্তন হবে, কারণ একজন সংসদ সদস্য যেহেতু সরকারের অংশ না, সেহেতু এখানে আমার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে এখানে।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এমপি বাহারকে নিয়ে সিইসির উল্টো সুর

আপডেট সময় : ০৩:০৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পাঁচ দিন পর স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহারকে নিয়ে এবার অন্য সুরে কথা বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, তাতে জন্ম নিল নতুন ধাঁধা।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিইসি যা বললেন, তার মোদ্দা কথা হল, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ইসি এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিতে পারে না, তেমন কোনো ‘নির্দেশ’ ইসিও ‘দেয়নি’। তাহলে এমপি বাহারও কোনো ‘নিয়ম ভাঙেননি’, আর কমিশনও কোথাও ‘ব্যর্থ হয়নি’।
এবারের নির্বাচনে কুমিল্লা সিটির মেয়র প্রার্থীদের ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহারের নাম। দলীয় প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আগের দুই বারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে পুরনো রাজনৈতিক সম্পর্কই এর মূল কারণ। ১৫ জুন শান্তিপূর্ণ ভোট শেষে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর নাটকীয়তার মধ্যে সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রিফাত। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ভোটের আগে বাহারকে এলাকা ছাড়তে বলেছিল ইসি, যা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত বাহার কুমিল্লাতেই ছিলেন, ফলে তাকে ঘিরে আলোচনাও ছিল। ১৫ জুন ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাহার বলেছিলেন, কোনো এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ারই ইসির নেই। তিনি আইন সংশোধনের জন্য সংসদে প্রস্তাব তুলবেন। অন্যদিকে ভোটের দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়াতে সিইসি বলেছিলেন, “বাহার প্রসঙ্গ পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড।”
কিন্তু ভোটের পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার সাংবাদিকরা যখন আবারও বাহার প্রসঙ্গ ধরে প্রশ্ন করলেন, সিইসির কথায় ইসির আগের অবস্থানের সঙ্গে মিল পাওয়া গেল না। কাজী হাবিবুল আউয়াল বললেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়তে ‘নির্দেশ দেওয়া হয়নি’। কমিশন তাকে এলাকা ছাড়তে বলতে পারে না, বলেওনি। “মাননীয় সাংসদ আ ক ম বাহার উদ্দিন সাহেব কোনো রকম আইন ভঙ্গ করেননি। আমাদের কোনো নির্দেশ উনি ভঙ্গ করেননি। আমরা নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্যে কিছু কিছু অনুরোধ ও অভিযোগ পাচ্ছিলাম- উনি প্রচারণা করছেন। তারপর আমরা আইনটা দেখেছি। আমরা কিন্তু কোনো লোককে তার এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিতে পারি না আইনত।”
সিইসির ভাষায়, বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার জন্যে বলা যায়। স্থানীয়দের এলাকা ছাড়ার জন্যে বলা যায় না। সেরকম ‘বেআইনি কোনো আদেশ’ কমিশনও দিতে চায় না।
“আমরা উনাকে নির্দেশ দিইনি। উনি মনক্ষুণœ হয়েছেন…। বলা হয়েছিল, ‘আপনাকে নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে এলাকা ত্যাগ করে সহযোগিতা করার জন্যে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হল’। বিনীতভাবে অনুরোধ আর আদেশ এক করে দেখেন, তাহলে আমরাও কিন্তু বেআইনি আদেশ করতে চাই না “
সিইসি বলেন, এর আগে একজন মন্ত্রীকে এক ঘণ্টার নোটিসে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন পরিস্থিতি ‘ভিন্ন ছিল’।
“মনে রাখতে হবে, উনি ছিলেন বহিরাগত। বাইরে থেকে গিয়ে ওখানে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন কমিশন কঠোর অবস্থান নিয়েছে, সাবধান করেছিল কমিশন। উনি চলে গিয়েছিলেন।” সিইসি বলেন, “বাহার উদ্দিন সাহেব কিন্তু দিনাজপুরের লোক নন, উনি কুমিল্লার লোক, এটা উনার স্থায়ী ঠিকানা। তাকে স্থান ত্যাগ করতে বলতে পারেন না এবং বলিওনি। তাহলে উনিও কিছু ভঙ্গ করেননি, আমরাও ব্যর্থ হইনি- যেটা বলা হচ্ছে।” কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা উনাকে অনুরোধ করেছি। আপনিও বোঝেন, অনুরোধ রক্ষা করতে পারেন, নাও রাখতে পারেন। অনুরোধ আর আদেশকে একাকার করে ফেললে হবে না।”
কী হয়েছিল কুমিল্লায়? আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা প্রচারে নামতে পারেন না। বাহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি কুমিল্লায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিগত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ইসিতে এমপি বাহারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দফায় বাহারকে সতর্ক করে ইসি। এরপর তাকে এলাকা ছাড়তে চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে আদালতেও যান বাহার। হাই কোর্ট ইসির ওই আদেশের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করে। এদিকে ইসির চিঠি উপেক্ষা করে বাহার এলাকায় থেকে গেলে নির্বাচন কমিশনাররা হতাশা প্রকাশ করেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোটের আগে বলেছিলেন, সংসদ সদস্যের জন্য ইসির অনুরোধই ‘যথেষ্ট’। না মানলে কিছুই করার নেই। আর কুমিল্লায় গিয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছিলেন, “তিনি (এমপি বাহার) আইন অমান্য করে নির্বাচনী এলাকায় আছেন। তবে আইনের কিছু ফাঁক-ফোঁকরকে তিনি ব্যবহার করছেন। “আমাদেরও সময় আসবে। ওয়েট অ্যান্ড সি।”
আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছিলেন, “তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। উনারা আইন প্রণয়ন করেন। যদি উনারাই আইন না মানেন, তাহলে আর কী বলব! উনাকে তো আর আমরা টেনে-হিঁচড়ে নামাতে পারি না। এখানে ইজ্জত গেল কার আপনারাই বুঝুন।” এই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ জাতীয় সংসদে বলেন, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের এলাকা ত্যাগ না করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘অসহায়ত্ব প্রকাশ’ পেয়েছে। তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ তার অন্যতম নজির। কোনো সন্দেহ নেই।” অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো সংসদ সদস্যকে তার নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা তার ‘মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের’ শামিল।
জাতীয় প্রেসক্লাবে এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রথমত আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য, ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, যিনি ওই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটার, তাকে নির্বাচন কমিশন এলাকা ছাড়ার কথা বলতে পারে কি না। এটি কি তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ নয়? “তাহলে তো ঢাকা শহরে যখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে, তখন ঢাকা থেকে নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য, মন্ত্রীদেরকেও ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এভাবে তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।“
ইসির চিঠি পাওয়ার পর কুমিল্লার সংসদ সদস্য বাহার এ বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেন। তিনি গণমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন ভোটের দিন। ১৫ জুন ভোট দিয়ে তিনি বলেন, “চিঠিটা ভাষাগতভাবেও ঠিক হয় নাই। একজন সংসদ সদস্যকে এভাবে ‘নির্দেশ’ শব্দ ব্যবহার করতে পারে না কেউ। চিঠিটা অসমাপ্ত। চিঠিতে আইনের পুরো ব্যাখ্যা নাই।” এ সংসদ সদস্য মনে করেন, ইসি তাকে যে চিঠি দিয়েছে, সেটি ‘আইনের লঙ্ঘন, এখতিয়ার বহির্ভূত’ এবং এতে তার ‘সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন’ হয়েছে। আগামীতে এ নিয়ে তিনি সংসদে কথা বলবেন এবং আইনটি সংশোধনের দাবি তুলবেন। “আমাকে পার্লামেন্টে কথা বলতে হবে। আইনটা আমরা সংশোধন করব ইনশাল্লাহ। আমি হাই কোর্টে রিট করেছি, একটা রুলও পেয়েছি। এই আইনটা পরিবর্তন হবে, কারণ একজন সংসদ সদস্য যেহেতু সরকারের অংশ না, সেহেতু এখানে আমার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে এখানে।”