ঢাকা ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

এবার স্পার্ম তিমির ‘ফোনেটিক বর্ণমালা’ প্রকাশ করল এআই

  • আপডেট সময় : ১০:১২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি স্পার্ম হোয়েল প্রজাতির তিমির যোগাযোগ ব্যবস্থায় মানুষের কথা বলার মতোই বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট কাঠামো খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন গবেষকরা। সমুদ্রের নীচে থাকা অন্ধকার অঞ্চলের গভীরতায় এই বিশালাকায় প্রাণীটি বড় বড় স্কুইডের দাগ বহন করে, যার আগে সে অঞ্চলে প্রতিনিয়তই এদের খোঁজ চালায় প্রাণীটি, যার প্রতিধ্বনি স্পন্দিত হয় জলের কলামে। পরবর্তীতে, এইসব দৈত্যাকার স্কুইডকে হত্যা করার ঠিক আগে অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ বের হয় এদের মুখ থেকে। তবে, স্পার্ম হোয়েল ঠিক কীভাবে স্কুইড শিকার করে, তা এখনও রহস্য হিসেবেই থেকে গেছে। “এরা অত্যন্ত ধীরগতির সাতারু,” বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেস্টার’র মেরিন বিজ্ঞানী কার্স্টেন ইয়ং। অন্যদিকে, স্কুইডের গতি এর চেয়ে অনেক বেশি।
“স্পার্ম হোয়েলের গতি ঘণ্টায় মাত্র সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, তবে তারা কীভাবে স্কুইড শিকার করে? স্কুইডগুলো কী খুব ধীরে চলারফেরা করছে এই কারণে? না কি তিমিগুলো নিজেদের কণ্ঠস্বর দিয়ে এদের চমকে দেয়? সেখানে আসলে কী ঘটছে? তা কেউ জানে না।”
স্পার্ম হোয়েল নিয়ে গবেষণা এতটা সহজ বিষয় নয়। কারণ, এরা জীবনের সিংহভাগ সময় এমন জায়গায় তন্ন তন্ন করে শিকার খুঁজে বেড়ায়, যেখানে সূর্যালোক পৌঁছায় না। এরা সমুদ্রপৃষ্ঠের তিন কিলোমিটার (১০ হাজার ফুট) গভীর পর্যন্ত ডুব দিতে এমনকি দুই ঘণ্টা পর্যন্ত নিজেদের শ্বাস ধরে রাখতে সক্ষম। “সমুদ্রপৃষ্ঠের এক কিলোমিটার অর্থাৎ তিন হাজার তিনশ ফুট গভীরে এ শ্রেণির অনেক প্রাণী দেখা যায়, যারা একে অপরের পাশে সহাবস্থান করলেও সেটা বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে,” বলেন ইয়ং। “এ পুরো সময় তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে।” তিনি আরও বলেন, এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পর এরা সারিবদ্ধভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে। “সে সময় তাদের বিশ্রামের পর্যায় চলে। আর তারা সম্ভবত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থান করে আবারও ডুব দেয়।” ইয়ং বলছেন, সারাদিন ধরে শিকার খোঁজা শেষ হলে এইসব স্পার্ম হোয়েল একত্রে সমুদ্রপৃষ্ঠে মিলিত হয় ও নিজেদের শরীর একে অপরের সঙ্গে ঘষা লাগায়, যেখানে সামাজিকতা রক্ষার্থে তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে। “যেহেতু এরা সমুদ্রপৃষ্ঠে বেশি সময় কাটায় না, তাই গবেষক হিসেবে এদের অনেক আচরণই আমাদের চোখে ধরা পড়ে না,” বলেন তিনি। “এদের সম্পর্কে অনেক কিছুই আমরা জানি না। কারণ, আমরা এদের জীবনের অল্প অংশই দেখতে পাই, যখন তারা ১৫ মিনিটের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে।”
প্রায় চার কোটি ৭০ লাখ বছর আগে ডাঙায় চরে বেড়ানো বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী সমুদ্রে পাড়ি জমাতে শুরু করেছিল। একে এমন এক পরিবেশের বিবর্তনবাদও বলা যায়, যা মানুষের কাছে এখনও ভিনগ্রহের মতো কিছু একটা। ফলে, এমন প্রাণীদের সহজে বোঝার কোনো উপায় আছে কী, যারা বিভিন্ন ধরনের বিবর্তনীয় চাপের মধ্য দিয়ে নিজেদের জীবনধারণ ও যোগাযোগের উপায় মানিয়ে নিয়েছে? সেটাই বড় প্রশ্ন। “আমাদের জগৎ ও তাদের জগৎ যেখানে সমন্বিত হয়, সে বিষয়গুলো বোঝা কিছুটা সহজ। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, খাওয়া দাওয়া, সহযোগিতা করা বা ঘুমানো,” বলেন ‘সাটেইশন ট্রান্সলেশন ইনিশিয়েটিভ (সেটি)’ প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ও ‘সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক’-এর অধ্যাপক ডেভিড গ্রুবার।
“স্তন্যপায়ী হিসেবে, অন্য অনেক প্রাণীর সঙ্গেই আমাদের মিল আছে। তবে, আমি মনে করি বিশ্বের এমন বিভিন্ন জায়গা, যেখানে আমাদের নিজস্ব কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই, সে জায়গাগুলো বোঝার বিষয়টি খুবই রোমাঞ্চকর।” হাতি থেকে শুরু করে কুকুর, আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গবেষকরা এদের বিশাল ডেটাসেট নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন, যেখানে এদের যোগাযোগের বৈচিত্র্য ও জটিলতা নিয়ে এমন তথ্যও বেরিয়ে আসছে, যা এর আগে অজানা ছিল। আর এখন ‘সেটি’র গবেষকরা দাবি করছেন, তারা এআই ব্যবহার করে ‘স্পার্ম হোয়েলের ফোনেটিক বর্ণমালা’ ডিকোড করেছেন। ২০০৫ সালে ‘ডমিনিকা স্পার্ম হোয়েল প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটি’র জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শেন গেরো। এর লক্ষ্য ছিল, পূর্ব ক্যারাবীয় অঞ্চলের চারশটি স্পার্ম তিমির সামাজিক ও কণ্ঠস্বর সংশ্লিষ্ট আচরণ নিয়ে গবেষণা করা। প্রায় ২০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণের পর, গবেষকরা তিমিগুলোর কণ্ঠস্বরের এমন ঘোরপ্যাঁচ খুঁজে পেয়েছেন, যা এর আগে কখনই শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া, স্পার্ম তিমির যোগাযোগ কাঠামোর সঙ্গে যে মানুষের ভাষার মিল আছে, সেই রহস্যও সামনে চলে এসেছে। স্পার্ম তিমিরা একাধিক স্তরে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করে, যেখানে কন্যা, মা ও দাদীদের দল থাকে। অন্যদিকে, পুরুষ তিমিরা সমুদ্রে বিচরণ করে বেড়ায়, যেখানে তারা বিভিন্ন শ্রেণির তিমির সঙ্গে দেখা করে। আর এরা নিজেদের জটিল আচরণ ও দলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পরিচিত, যেখানে খুবই বিশেষ ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা লাগে।

উদাহরণ হিসেবে, তারা দলগতভাবে এমন আচরণ আয়ত্ত করতে সক্ষম, যখন অর্কা তিমি বা মানুষের মতো শিকারিদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর মতো পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্পার্ম তিমি সাধারণত বিভিন্ন ‘ক্লিকের ছন্দবদ্ধ ক্রম’ ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, যা ‘কোডা’ নামে পরিচিত। এর আগে ধারণা করা হতো, স্পার্ম তিমি স্রেফ ২১ ধরনের কোডা ব্যবহার করে। তবে, এর প্রায় নয় হাজার রেকর্ডিং নিয়ে গবেষণা করার পর এমন ১৫৬টি বিশেষ ধরনের কোডা শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। এইসব কোডার মৌলিক ভিত্তিপ্রস্তরকে তারা ব্যাখ্যা করেছেন ‘স্পার্ম হোয়েল ফোনেটিক অ্যালফাবেট’ বলে, যা অনেকটা মানুষের শব্দগঠনের সময় বিভিন্ন ধ্বনির সমষ্টিগত রূপের মতো কাজ করে। তবে ইয়ং বলছেন, স্পার্ম তিমিরা একে অপরকে কী বলছে, তা বুঝতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। “এ বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। তবে, এ বিস্ময়কর প্রাণিগুলো নিয়ে আমরা যতো ভালোভাবে বুঝতে পারব, এদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়, সে সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে।”

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এবার স্পার্ম তিমির ‘ফোনেটিক বর্ণমালা’ প্রকাশ করল এআই

আপডেট সময় : ১০:১২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

প্রযুক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি স্পার্ম হোয়েল প্রজাতির তিমির যোগাযোগ ব্যবস্থায় মানুষের কথা বলার মতোই বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট কাঠামো খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন গবেষকরা। সমুদ্রের নীচে থাকা অন্ধকার অঞ্চলের গভীরতায় এই বিশালাকায় প্রাণীটি বড় বড় স্কুইডের দাগ বহন করে, যার আগে সে অঞ্চলে প্রতিনিয়তই এদের খোঁজ চালায় প্রাণীটি, যার প্রতিধ্বনি স্পন্দিত হয় জলের কলামে। পরবর্তীতে, এইসব দৈত্যাকার স্কুইডকে হত্যা করার ঠিক আগে অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ বের হয় এদের মুখ থেকে। তবে, স্পার্ম হোয়েল ঠিক কীভাবে স্কুইড শিকার করে, তা এখনও রহস্য হিসেবেই থেকে গেছে। “এরা অত্যন্ত ধীরগতির সাতারু,” বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেস্টার’র মেরিন বিজ্ঞানী কার্স্টেন ইয়ং। অন্যদিকে, স্কুইডের গতি এর চেয়ে অনেক বেশি।
“স্পার্ম হোয়েলের গতি ঘণ্টায় মাত্র সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, তবে তারা কীভাবে স্কুইড শিকার করে? স্কুইডগুলো কী খুব ধীরে চলারফেরা করছে এই কারণে? না কি তিমিগুলো নিজেদের কণ্ঠস্বর দিয়ে এদের চমকে দেয়? সেখানে আসলে কী ঘটছে? তা কেউ জানে না।”
স্পার্ম হোয়েল নিয়ে গবেষণা এতটা সহজ বিষয় নয়। কারণ, এরা জীবনের সিংহভাগ সময় এমন জায়গায় তন্ন তন্ন করে শিকার খুঁজে বেড়ায়, যেখানে সূর্যালোক পৌঁছায় না। এরা সমুদ্রপৃষ্ঠের তিন কিলোমিটার (১০ হাজার ফুট) গভীর পর্যন্ত ডুব দিতে এমনকি দুই ঘণ্টা পর্যন্ত নিজেদের শ্বাস ধরে রাখতে সক্ষম। “সমুদ্রপৃষ্ঠের এক কিলোমিটার অর্থাৎ তিন হাজার তিনশ ফুট গভীরে এ শ্রেণির অনেক প্রাণী দেখা যায়, যারা একে অপরের পাশে সহাবস্থান করলেও সেটা বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে,” বলেন ইয়ং। “এ পুরো সময় তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে।” তিনি আরও বলেন, এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পর এরা সারিবদ্ধভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে। “সে সময় তাদের বিশ্রামের পর্যায় চলে। আর তারা সম্ভবত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থান করে আবারও ডুব দেয়।” ইয়ং বলছেন, সারাদিন ধরে শিকার খোঁজা শেষ হলে এইসব স্পার্ম হোয়েল একত্রে সমুদ্রপৃষ্ঠে মিলিত হয় ও নিজেদের শরীর একে অপরের সঙ্গে ঘষা লাগায়, যেখানে সামাজিকতা রক্ষার্থে তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে। “যেহেতু এরা সমুদ্রপৃষ্ঠে বেশি সময় কাটায় না, তাই গবেষক হিসেবে এদের অনেক আচরণই আমাদের চোখে ধরা পড়ে না,” বলেন তিনি। “এদের সম্পর্কে অনেক কিছুই আমরা জানি না। কারণ, আমরা এদের জীবনের অল্প অংশই দেখতে পাই, যখন তারা ১৫ মিনিটের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে।”
প্রায় চার কোটি ৭০ লাখ বছর আগে ডাঙায় চরে বেড়ানো বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী সমুদ্রে পাড়ি জমাতে শুরু করেছিল। একে এমন এক পরিবেশের বিবর্তনবাদও বলা যায়, যা মানুষের কাছে এখনও ভিনগ্রহের মতো কিছু একটা। ফলে, এমন প্রাণীদের সহজে বোঝার কোনো উপায় আছে কী, যারা বিভিন্ন ধরনের বিবর্তনীয় চাপের মধ্য দিয়ে নিজেদের জীবনধারণ ও যোগাযোগের উপায় মানিয়ে নিয়েছে? সেটাই বড় প্রশ্ন। “আমাদের জগৎ ও তাদের জগৎ যেখানে সমন্বিত হয়, সে বিষয়গুলো বোঝা কিছুটা সহজ। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, খাওয়া দাওয়া, সহযোগিতা করা বা ঘুমানো,” বলেন ‘সাটেইশন ট্রান্সলেশন ইনিশিয়েটিভ (সেটি)’ প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ও ‘সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক’-এর অধ্যাপক ডেভিড গ্রুবার।
“স্তন্যপায়ী হিসেবে, অন্য অনেক প্রাণীর সঙ্গেই আমাদের মিল আছে। তবে, আমি মনে করি বিশ্বের এমন বিভিন্ন জায়গা, যেখানে আমাদের নিজস্ব কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই, সে জায়গাগুলো বোঝার বিষয়টি খুবই রোমাঞ্চকর।” হাতি থেকে শুরু করে কুকুর, আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গবেষকরা এদের বিশাল ডেটাসেট নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন, যেখানে এদের যোগাযোগের বৈচিত্র্য ও জটিলতা নিয়ে এমন তথ্যও বেরিয়ে আসছে, যা এর আগে অজানা ছিল। আর এখন ‘সেটি’র গবেষকরা দাবি করছেন, তারা এআই ব্যবহার করে ‘স্পার্ম হোয়েলের ফোনেটিক বর্ণমালা’ ডিকোড করেছেন। ২০০৫ সালে ‘ডমিনিকা স্পার্ম হোয়েল প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটি’র জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শেন গেরো। এর লক্ষ্য ছিল, পূর্ব ক্যারাবীয় অঞ্চলের চারশটি স্পার্ম তিমির সামাজিক ও কণ্ঠস্বর সংশ্লিষ্ট আচরণ নিয়ে গবেষণা করা। প্রায় ২০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণের পর, গবেষকরা তিমিগুলোর কণ্ঠস্বরের এমন ঘোরপ্যাঁচ খুঁজে পেয়েছেন, যা এর আগে কখনই শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া, স্পার্ম তিমির যোগাযোগ কাঠামোর সঙ্গে যে মানুষের ভাষার মিল আছে, সেই রহস্যও সামনে চলে এসেছে। স্পার্ম তিমিরা একাধিক স্তরে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করে, যেখানে কন্যা, মা ও দাদীদের দল থাকে। অন্যদিকে, পুরুষ তিমিরা সমুদ্রে বিচরণ করে বেড়ায়, যেখানে তারা বিভিন্ন শ্রেণির তিমির সঙ্গে দেখা করে। আর এরা নিজেদের জটিল আচরণ ও দলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পরিচিত, যেখানে খুবই বিশেষ ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা লাগে।

উদাহরণ হিসেবে, তারা দলগতভাবে এমন আচরণ আয়ত্ত করতে সক্ষম, যখন অর্কা তিমি বা মানুষের মতো শিকারিদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর মতো পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্পার্ম তিমি সাধারণত বিভিন্ন ‘ক্লিকের ছন্দবদ্ধ ক্রম’ ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, যা ‘কোডা’ নামে পরিচিত। এর আগে ধারণা করা হতো, স্পার্ম তিমি স্রেফ ২১ ধরনের কোডা ব্যবহার করে। তবে, এর প্রায় নয় হাজার রেকর্ডিং নিয়ে গবেষণা করার পর এমন ১৫৬টি বিশেষ ধরনের কোডা শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। এইসব কোডার মৌলিক ভিত্তিপ্রস্তরকে তারা ব্যাখ্যা করেছেন ‘স্পার্ম হোয়েল ফোনেটিক অ্যালফাবেট’ বলে, যা অনেকটা মানুষের শব্দগঠনের সময় বিভিন্ন ধ্বনির সমষ্টিগত রূপের মতো কাজ করে। তবে ইয়ং বলছেন, স্পার্ম তিমিরা একে অপরকে কী বলছে, তা বুঝতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। “এ বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। তবে, এ বিস্ময়কর প্রাণিগুলো নিয়ে আমরা যতো ভালোভাবে বুঝতে পারব, এদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়, সে সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে।”