ঢাকা ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
ছয় দফা দাবিতে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

এবার রেল ব্লকেডের ডাক

  • আপডেট সময় : ০৮:৫২:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

বুধবার রাজধানীর সাতরাস্তা মোড়ে সমাবেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা -ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: ছয় দফা দাবি আদায়ে সারা দেশে ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে এক সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী। প্রায় আট ঘণ্টা অবরোধ শেষে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

জুবায়ের পাটোয়ারী জানান, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়েছে। তবে দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত আশ্বাস না পাওয়ায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, বৈঠকে দাবি বাস্তবায়নের কোনও লিখিত নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। এমনকি কুমিল্লা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কোনও প্রতিকারও হয়নি। তাই বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সারা দেশে রেল ও সড়কপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হলো।

এর আগে বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তাসহ তেজগাঁও ও শিল্পাঞ্চল এলাকার সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকাসহ ওইসব জেলায় দেখা দেছে যানজট। কয়েক জায়গায় রেলপথ অবরোধ করা হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ আর যানজটের কারণে সড়কে চলাচলকারী মানুষ পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা আগেও একাধিকবার একই দাবি উত্থাপন করেছি, কেউ কর্ণপাত করেনি। এখন আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। দাবির ব্যাপারে কথা বলতে হলে আমাদের কাছে আসতে হবে। সচিবালয়ে কেউ যাবে না।তাদের অবরোধের কারণে তেজগাঁও-মগবাজার সড়কে যানজট সীমাহীন আকার ধারণ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

রোদ-বৃষ্টি, অবরোধে স্থবির ঢাকা: ‘সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এক জায়গায় আটকা পড়ে আছি। সামনের যানবাহনের কোনো হেলদোল নেই। শিক্ষার্থীরা কখন সড়ক থেকে সরে যাবে? জানার কোনো উপায়ও নেই। বিকল্প কোনো রাস্তা নেই যে চলে যাব। সড়ক সচলে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকারের লোকজন এসির বাতাস খাচ্ছে আর আমরা সাধারণ মানুষ সড়কে ভুগতেছি’- বুধবার দুপুরে রাজধানীর সাতরাস্তার মুখে আটকা সিএনজি চালক আফজাল হোসেন আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন। তিনি চার ঘণ্টা ধরে ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন।

ছবি সংগৃহীত

সিএনজি চালক আফজাল বলেন, ‘আমরা তো অসহায় আমাদের এই ভোগান্তি দেখার মানুষ নেই। সরকারে যারা বসে আছেন, তারা তো জানেন এই আন্দোলনের কথা। তারা তো আইসা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। না পারলে প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধিকে পাঠাক। সরকারের একজন তো অভিভাবক আছে নাকি! তার দায়িত্ব কী? আমাদের ভোগানো? আমি যাত্রী নামিয়ে দিয়েছি। দিনটা তো শেষ! মালিককে তো আজ জমার টাকার দিতে পারুম না।’
আজমেরী পরিবহনের বাসচালক মো. রবি বলেন, বাস ভরা যাত্রী ছিল। অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে সব যাত্রী একে একে সবাই নেমে গেছে। আমি আর হেল্পার মিলে এখন বসে আছি কতক্ষণে এই আন্দোলন থামবে আর চলে যাব। আমাদেরকে আটকে রাখছে। খালি বাস তবুও যেতে দিচ্ছে না।
ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কে আটকে থাকার কারণে সব মিটিং পণ্ড হয়ে গেছে। অপূরণীয় ক্ষতি আর ভোগান্তিতে আমরা সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের দাবি, অযৌক্তিক না যৌক্তিক তাতো আমাদের দেখার সুযোগ নেই। আমরা চাই দ্রুত সড়ক সচল হোক। কিন্তু সেটা চার ঘণ্টায়ও আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
আরেক প্রাইভেট কারের যাত্রী বলেন, আমাদেরও চাওয়া আছে। সেটা কেউ বুঝছে না। আমরা চাই সুন্দরভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে। আড়াই ঘণ্টা ধরে আটকা। গাজীপুর যাব। অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কোনো উপায় না পেয়ে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।
সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে গেছে পুরো ঢাকা। তেজগাঁও, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কাওরানবাজার, মগবাজার, এফডিসি মোড়, হাতিরঝিল, গুলশান, মালিবাগ, মৌচাকসহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র যানজট। শুধু সড়ক নয়, তেজগাঁও, কারওয়ানবাজার, মহাখালী এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইনকামিং রুটও স্থবির অবস্থায় রয়েছে।
সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বেলা সোয়া ৩টা থেকে সরেজমিনে সাতরাস্তা মোড় এলাকায় দেখা যায়, সকাল থেকেই ছিল রোদ। তিনটার পর শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এর মধ্যেই সড়ক অবরোধের কারণে চারদিকে আটকে থাকা মানুষের ভোগান্তি চরমে। তবে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে, বিক্ষোভ করছে। রোদের সময় ক্রিকেট ও বৃষ্টির সময় বোতলকে ফুটবল বানিয়ে সড়কে খেলতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কার্যনিবাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী জানান, আমরা আগের ছয় দফা দাবির সঙ্গে আরো একটি নতুন দাবি যুক্ত করে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের সর্বশেষ দাবি হলো, ল্যাব এসিস্টেন্টদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। আমরা চাই না, কেউ পিয়ন হিসেবে যোগ দিয়ে পরে আমাদের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের এ ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের অনেক শিক্ষকও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

ছয় দফা দাবিতে সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ: ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টার পরে তারা তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তাসহ তেজগাঁও ও শিল্পাঞ্চল এলাকার সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধে দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। এর পাশাপাশি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।

৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং)থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপ-সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
সড়কেই জোহরের নামাজ আদায়: ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের মধ্যে বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে সাতরাস্তা মোড়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এদিকে সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করায় তীব্র যানজটে পড়ে নগরবাসী। যানজট তেজগাঁও সড়ক থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মহাখালী, বনানী, গুলশান, আগারগাঁও ও মিরপুর এলাকায়।
সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’র ব্যানারে এ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ: চট্টগ্রামে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একদল শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর থেকে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে সড়কের ওপর বসে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

ছবি সংগৃহীত

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরুর পর পুরো এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দুই নম্বর গেট, মেডিকেল সংযোগ সড়ক, জিইসি ও মুরাদপুর সড়কে যানচলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এ বিষয়ে জানতে পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। গত ২০ মার্চ একই দাবিতে দুই নম্বর গেট এলাকায় বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সড়ক ও রেলপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন বিক্ষোভকারীরা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ: হাইকোর্টের রিট বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ময়মনসিংহ পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কলেজ গেইটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন।

ছবি সংগৃহীত

কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় অবরোধ করে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। হাইকোর্টের রিট বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিতে বক্তব্য দেন। তাদের সরিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সচল করার চেষ্টা করছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, ১০ কিলোমিটার যানজট: ছয় দফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহানন্দা সেতুর ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র সৃষ্টি যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বারঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, হঠাৎ এসে দেখি সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বাজারে যাচ্ছিলাম এখন ঘুরে যেতে হচ্ছে। বেশ ভোগান্তিতে পড়লাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী কাওসার আলী বলেন, আমরা আগেও একাধিকবার একই দাবি উত্থাপন করেছি, কেউ কর্ণপাত করেনি। আজ আমরা রাস্তা অবরোধ করেছিলাম। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হলে আগামীতে আরো বড় আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। বর্তমানে পুলিশ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করে যাচ্ছে।

জেলায় জেলায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ
টাঙ্গাইল: দুপুর ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাবনা বাইপাসে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশেই ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে যাত্রীদের।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানবীর আহমেদ বলেন, পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের আশ্বাস ছিলে তারা অবরোধ তুলে নেন।

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ শহরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাত শতাধিক শিক্ষার্থী। বেলা ১১ থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত শহরের নিউ ঢাকা রোডের রেলগেট এলাকায় এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ার হোসেন ও সদর আর্মি ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মারুফ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন।

দিনাজপুর: দিনাজপুরে রেলপথ অবরোধ করছেন আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তারা দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড রেলক্রসিংয়ের ওপর বসে পড়েন। এতে ঢাকাগামী দুটি ও রাজশাহীগামী একটিসহ তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রী নিয়ে আটকা পড়েছে। ওই সড়ক দিয়ে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও হয়ে দিনাজপুর দিয়ে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে সকাল ৯টা থেকে।

পাবনা: ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নিয়েছেন পাবনার পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। এর আগে অবরোধ তুলে নিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েক দফা চেষ্টা চালানো হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

ফেনী: ফেনীতে রেলপথ অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ফেনী রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলক্রসিং এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস প্রায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ফেনী স্টেশনে আটকা পড়ে। একই সময়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ৪৫ মিনিট পর্যন্ত গুনবতি স্টেশনে সংকেতের অপেক্ষায় ছিল। এসময় রেলক্রসিং এলাকায় রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার পরিবহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটে সৃষ্টি হয়। ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আরিফুর রহমান ও ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রদের বুঝিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করান।

নরসিংদী: নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এই অবরোধ শুরু হয়। এসময় মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা: কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে মহাসড়কের দুই পাশে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীবাহী পরিবহন ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো। দুপুর ১২টা থেকে মহাসড়ক কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। খবর পেয়ে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানায়। একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে ফাঁকাগুলি করলে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছয় দফা দাবিতে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

এবার রেল ব্লকেডের ডাক

আপডেট সময় : ০৮:৫২:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ছয় দফা দাবি আদায়ে সারা দেশে ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে এক সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী। প্রায় আট ঘণ্টা অবরোধ শেষে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

জুবায়ের পাটোয়ারী জানান, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়েছে। তবে দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত আশ্বাস না পাওয়ায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, বৈঠকে দাবি বাস্তবায়নের কোনও লিখিত নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। এমনকি কুমিল্লা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কোনও প্রতিকারও হয়নি। তাই বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সারা দেশে রেল ও সড়কপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হলো।

এর আগে বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তাসহ তেজগাঁও ও শিল্পাঞ্চল এলাকার সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকাসহ ওইসব জেলায় দেখা দেছে যানজট। কয়েক জায়গায় রেলপথ অবরোধ করা হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ আর যানজটের কারণে সড়কে চলাচলকারী মানুষ পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা আগেও একাধিকবার একই দাবি উত্থাপন করেছি, কেউ কর্ণপাত করেনি। এখন আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। দাবির ব্যাপারে কথা বলতে হলে আমাদের কাছে আসতে হবে। সচিবালয়ে কেউ যাবে না।তাদের অবরোধের কারণে তেজগাঁও-মগবাজার সড়কে যানজট সীমাহীন আকার ধারণ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

রোদ-বৃষ্টি, অবরোধে স্থবির ঢাকা: ‘সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এক জায়গায় আটকা পড়ে আছি। সামনের যানবাহনের কোনো হেলদোল নেই। শিক্ষার্থীরা কখন সড়ক থেকে সরে যাবে? জানার কোনো উপায়ও নেই। বিকল্প কোনো রাস্তা নেই যে চলে যাব। সড়ক সচলে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকারের লোকজন এসির বাতাস খাচ্ছে আর আমরা সাধারণ মানুষ সড়কে ভুগতেছি’- বুধবার দুপুরে রাজধানীর সাতরাস্তার মুখে আটকা সিএনজি চালক আফজাল হোসেন আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন। তিনি চার ঘণ্টা ধরে ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন।

ছবি সংগৃহীত

সিএনজি চালক আফজাল বলেন, ‘আমরা তো অসহায় আমাদের এই ভোগান্তি দেখার মানুষ নেই। সরকারে যারা বসে আছেন, তারা তো জানেন এই আন্দোলনের কথা। তারা তো আইসা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। না পারলে প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধিকে পাঠাক। সরকারের একজন তো অভিভাবক আছে নাকি! তার দায়িত্ব কী? আমাদের ভোগানো? আমি যাত্রী নামিয়ে দিয়েছি। দিনটা তো শেষ! মালিককে তো আজ জমার টাকার দিতে পারুম না।’
আজমেরী পরিবহনের বাসচালক মো. রবি বলেন, বাস ভরা যাত্রী ছিল। অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে সব যাত্রী একে একে সবাই নেমে গেছে। আমি আর হেল্পার মিলে এখন বসে আছি কতক্ষণে এই আন্দোলন থামবে আর চলে যাব। আমাদেরকে আটকে রাখছে। খালি বাস তবুও যেতে দিচ্ছে না।
ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কে আটকে থাকার কারণে সব মিটিং পণ্ড হয়ে গেছে। অপূরণীয় ক্ষতি আর ভোগান্তিতে আমরা সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের দাবি, অযৌক্তিক না যৌক্তিক তাতো আমাদের দেখার সুযোগ নেই। আমরা চাই দ্রুত সড়ক সচল হোক। কিন্তু সেটা চার ঘণ্টায়ও আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
আরেক প্রাইভেট কারের যাত্রী বলেন, আমাদেরও চাওয়া আছে। সেটা কেউ বুঝছে না। আমরা চাই সুন্দরভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে। আড়াই ঘণ্টা ধরে আটকা। গাজীপুর যাব। অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কোনো উপায় না পেয়ে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।
সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে গেছে পুরো ঢাকা। তেজগাঁও, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কাওরানবাজার, মগবাজার, এফডিসি মোড়, হাতিরঝিল, গুলশান, মালিবাগ, মৌচাকসহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র যানজট। শুধু সড়ক নয়, তেজগাঁও, কারওয়ানবাজার, মহাখালী এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইনকামিং রুটও স্থবির অবস্থায় রয়েছে।
সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বেলা সোয়া ৩টা থেকে সরেজমিনে সাতরাস্তা মোড় এলাকায় দেখা যায়, সকাল থেকেই ছিল রোদ। তিনটার পর শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এর মধ্যেই সড়ক অবরোধের কারণে চারদিকে আটকে থাকা মানুষের ভোগান্তি চরমে। তবে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে, বিক্ষোভ করছে। রোদের সময় ক্রিকেট ও বৃষ্টির সময় বোতলকে ফুটবল বানিয়ে সড়কে খেলতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কার্যনিবাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী জানান, আমরা আগের ছয় দফা দাবির সঙ্গে আরো একটি নতুন দাবি যুক্ত করে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের সর্বশেষ দাবি হলো, ল্যাব এসিস্টেন্টদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। আমরা চাই না, কেউ পিয়ন হিসেবে যোগ দিয়ে পরে আমাদের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের এ ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের অনেক শিক্ষকও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

ছয় দফা দাবিতে সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ: ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টার পরে তারা তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তাসহ তেজগাঁও ও শিল্পাঞ্চল এলাকার সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধে দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। এর পাশাপাশি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।

৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং)থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপ-সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
সড়কেই জোহরের নামাজ আদায়: ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের মধ্যে বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে সাতরাস্তা মোড়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এদিকে সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করায় তীব্র যানজটে পড়ে নগরবাসী। যানজট তেজগাঁও সড়ক থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মহাখালী, বনানী, গুলশান, আগারগাঁও ও মিরপুর এলাকায়।
সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’র ব্যানারে এ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ: চট্টগ্রামে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একদল শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর থেকে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে সড়কের ওপর বসে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

ছবি সংগৃহীত

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরুর পর পুরো এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দুই নম্বর গেট, মেডিকেল সংযোগ সড়ক, জিইসি ও মুরাদপুর সড়কে যানচলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এ বিষয়ে জানতে পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। গত ২০ মার্চ একই দাবিতে দুই নম্বর গেট এলাকায় বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সড়ক ও রেলপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন বিক্ষোভকারীরা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ: হাইকোর্টের রিট বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ময়মনসিংহ পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কলেজ গেইটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন।

ছবি সংগৃহীত

কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান মহাসড়কের বাইপাস এলাকায় অবরোধ করে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। হাইকোর্টের রিট বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিতে বক্তব্য দেন। তাদের সরিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সচল করার চেষ্টা করছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, ১০ কিলোমিটার যানজট: ছয় দফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহানন্দা সেতুর ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র সৃষ্টি যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বারঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, হঠাৎ এসে দেখি সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বাজারে যাচ্ছিলাম এখন ঘুরে যেতে হচ্ছে। বেশ ভোগান্তিতে পড়লাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী কাওসার আলী বলেন, আমরা আগেও একাধিকবার একই দাবি উত্থাপন করেছি, কেউ কর্ণপাত করেনি। আজ আমরা রাস্তা অবরোধ করেছিলাম। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হলে আগামীতে আরো বড় আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। বর্তমানে পুলিশ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করে যাচ্ছে।

জেলায় জেলায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ
টাঙ্গাইল: দুপুর ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাবনা বাইপাসে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশেই ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে যাত্রীদের।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানবীর আহমেদ বলেন, পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের আশ্বাস ছিলে তারা অবরোধ তুলে নেন।

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ শহরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাত শতাধিক শিক্ষার্থী। বেলা ১১ থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত শহরের নিউ ঢাকা রোডের রেলগেট এলাকায় এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ার হোসেন ও সদর আর্মি ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মারুফ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন।

দিনাজপুর: দিনাজপুরে রেলপথ অবরোধ করছেন আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তারা দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড রেলক্রসিংয়ের ওপর বসে পড়েন। এতে ঢাকাগামী দুটি ও রাজশাহীগামী একটিসহ তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রী নিয়ে আটকা পড়েছে। ওই সড়ক দিয়ে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও হয়ে দিনাজপুর দিয়ে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে সকাল ৯টা থেকে।

পাবনা: ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নিয়েছেন পাবনার পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। এর আগে অবরোধ তুলে নিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েক দফা চেষ্টা চালানো হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

ফেনী: ফেনীতে রেলপথ অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ফেনী রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলক্রসিং এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস প্রায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ফেনী স্টেশনে আটকা পড়ে। একই সময়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ৪৫ মিনিট পর্যন্ত গুনবতি স্টেশনে সংকেতের অপেক্ষায় ছিল। এসময় রেলক্রসিং এলাকায় রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার পরিবহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটে সৃষ্টি হয়। ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আরিফুর রহমান ও ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রদের বুঝিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করান।

নরসিংদী: নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এই অবরোধ শুরু হয়। এসময় মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা: কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে মহাসড়কের দুই পাশে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীবাহী পরিবহন ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো। দুপুর ১২টা থেকে মহাসড়ক কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। খবর পেয়ে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানায়। একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে ফাঁকাগুলি করলে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।