প্যুক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি বিরল এক মহাজাগতিক সংকেত খুঁজে বের করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন চীনের ‘সাংহাই অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি’র অধ্যাপক জি জিয়ানের নেতৃত্বাধীন একদল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী।
গবেষণা দলটি ‘কোয়াসার’ বর্ণালী থেকে নির্গত বিভিন্ন দুর্বল আলোর সংকেত খোঁজার দিকে নজর দিয়েছিল, যা মূলত দূরের বিভিন্ন ছায়াপথ থেকে আসা আলোর উৎস। এ গবেষণায় ‘ডিপ লার্নিং নিউরাল নেটওয়ার্ক’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে গবেষকরা বিভিন্ন ‘নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার’ চিহ্নিত করেছেন, যা ছায়াপথের গঠন ও বিবর্তন পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল। নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার পাওয়া যায় মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ধূলিকণাযুক্ত ঠাণ্ডা গ্যাসে, যেগুলোর সংকেত বেশ দূর্বল হওয়ায় এদের শনাক্ত করা কঠিন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। প্রচলিত পদ্ধতিতে এইসব বড় ডেটাসেটের সংকেত সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিষয়টিকে ‘খড়ের গাদায় সুই খোঁজার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন অধ্যাপক জি।
এদিকে, ২০১৫ সালে জোতির্বিদ্যাবিষয়ক জরিপ ‘স্লোন ডিজিটাল স্কাই সার্ভে (এসডিএসএস)’র ডেটা থেকে ৬৬টি নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার-এর খোঁজ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে, এখন নিজেদের এআই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রায় ১০৭টি বিরল অ্যাবজর্বার খুঁজে পেয়েছে অধ্যাপক জি’র গবেষণা দলটি। তাদের এ সাফল্য এসেছে সত্যিকারের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নমুনা অনুকরণ ও বিভিন্ন ‘ডিপ লার্নিং নিউরাল নেটওয়ার্ক’কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে। এদিকে, নেটওয়ার্কগুলোতে ‘এসডিএসএস’র ডেটা প্রয়োগ করার পর সেগুলো আরও বেশি নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার শনাক্ত করেছে। এইসব অ্যাবজর্বারের সঙ্গে বর্ণালীর সমন্বয় ঘটিয়ে গবেষণা দলটি এ ধরনের উপাদানের প্রাচুর্য আরও ভালোভাবে শনাক্ত করার পাশাপাশি ধূলিকণায় হারিয়ে যাওয়া ধাতু সম্পর্কেও পরিমাপ করতে পেরেছিল। এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, নিউট্রাল কার্বন অ্যাবজর্বার থাকা শুরুর দিকের বিভিন্ন ছায়াপথ বিগ ব্যাংয়ের প্রায় তিনশ কোটি বছর পর দ্রুতই বিবর্তিত হয়েছে। এইসব ছায়াপথ, যেগুলো ‘লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড’ নামের ছোট গ্যালাক্সি ও মিল্কিওয়ের মধ্যে চলাফেরা করে, সেগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ ধাতু উৎপন্ন হয়ে থাকে, যার কিছু অংশ থেকে ধূলিকণাও তৈরি হয়। এর মাধ্যমে পরবর্তীতে ‘ডাস্ট রেডেনিং ইফেক্ট’ নামের ঘটনাটিও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়ে উঠেছিল। এ গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে মিল আছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের, যেটি প্রথম দিকের বিভিন্ন তারায় কার্বনের ধূলিকণা শনাক্ত করেছিল। উভয় গবেষণাতেই ইঙ্গিত মেলে, কিছু ছায়াপথ আগের ধারণার চেয়ে দ্রুত বিকশিত হয়, যা ছায়াপথ গঠনের প্রচলিত বিভিন্ন মডেলকেও চ্যালেঞ্জ করে।