নিজস্ব প্রতিবেদক: নয় দিনের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। তবে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বাড়তি চাপ দেখা যায়নি। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো যাত্রীরা।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে বাস পাচ্ছেন। অনেকে আগেই টিকিট কেটে রেখেছেন, আবার কেউ টার্মিনালে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। কিছু সময় অপেক্ষা করলেও বড় ধরনের ভোগান্তি নেই।
এ টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে এবার নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্ট, যা এনা পরিবহনের আগের কাউন্টারে যাত্রীসেবা দিচ্ছে। যাত্রীরা তাৎক্ষণিক টিকিট কেটে বাসে উঠতে পারছেন, এবং বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ নেই।
চাকরিজীবী রাকিবুল ইসলাম বলেন, পাঁচ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছি, বাড়তি ভাড়াও নেয়নি।
একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সরকারি কর্মকর্তা সাজ্জাদ খান। তবে এসি বাসের সংখ্যা কম থাকায় কিছু যাত্রী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী ইলিয়াস হোসেন জানান, এসি বাসের টিকিট পেতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের ফোরম্যান ইসমাইল হোসেন জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩৭টি বাস ছেড়ে গেছে, তবে এসি বাস মাত্র ১২টি থাকায় কিছু যাত্রী সমস্যায় পড়ছেন। এনা পরিবহনের বুকিং মাস্টার অর্জুন জানান, তাদের বাস কম থাকায় অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ রুটের অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আমান জানান, সকাল থেকে ৩৫-৩৬টি বাস ছেড়েছে, তবে চাপ খুব বেশি নেই।
এদিকে, টাঙ্গাইলগামী বিনিময় ও সৌখিন পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এসেছে। প্রতি টিকিটে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হলেও যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিআরটিএ একটি বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ, র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মহাখালী টার্মিনালে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে উপস্থিত হয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন জানিয়েছেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি হবে না এবং সড়কে পর্যাপ্ত যানবাহন রয়েছে।
তিনি বলেন, সড়কে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে বন্ধ করা হচ্ছে। যানবাহনের কোনো ঘাটতি হবে না। ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্ট নিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। যানবাহন ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ডে যাতে কোনো কাউন্টার অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে৷ শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মহড়া দিয়েছে। যত্রতত্র পার্কিংও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
তিনি বলেন, সড়কে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে বন্ধ করা হচ্ছে এবং কোনো ঘাটতি হবে না। ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। যানবাহন ও বাসস্ট্যান্ডে প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে নজরদারি চলছে, এবং যত্রতত্র পার্কিংও সীমিত করা হয়েছে।
নৌপথ দিয়েও স্বস্তিতে ফিরছে মানুষ: আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রীদের ভিড় বাড়লেও বাড়তি চাপ নেই। ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। অন্যদিকে কাটা যাত্রীদের নদী পারাপার করতে নৌপথে চলছে ২০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ। ফলে এক সময়ের ভোগান্তির নৌপথ দিয়ে এবার স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে ঈদে ঘরমুখো হাজারো মানুষ।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) বেলা আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ ঘাটেও যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। এই ঘাটের ব্যবস্থাপক পান্না লাল নন্দী বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের ভিড় বাড়লেও চাপ নেই। এ নৌপথে ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মো. আব্দুস সালাম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে আজকে সকালের পর যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে ঘাট এলাকায় যাত্রী বা যানবাহনগুলোকে আগের মতো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ঘাট পার হতে আসা যানবাহনগুলো সহসাই ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ির ঘাটে আসা মাত্রই ফেরিতে উঠে নদী পার হচ্ছে এবং যাত্রীবাহী পরিবহন বাসের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০টির মত হবে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১১টি রো রো, ২টি ইউটিলিটি, ১টি কেটাইপ, ৩টি ছোট ফেরিসহ মোট ১৭টি নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে চলাচল করছে। তবে ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতেই নৌপথ পার হয়ে যে যার গন্তব্যে ফিরছে বলেও জানান তিনি।