ঢাকা ১২:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

এবার ভয়াবহ আগুনে পুড়লো শাহজালালের কার্গো ভিলেজ

  • আপডেট সময় : ০৯:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

আগুনের শিখায় লাল হয়ে উঠে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। ঢাকায় নামতে না পেরে অন্য বিমানবন্দরে গেছে এক ডজনের বেশি ফ্লাইট।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেলা সোয়া ২টার দিকে সেখানে আগুন লাগার খবর পাওয়ার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া অফিসার তালহা বিন জসিম।

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি পণ্য রাখার কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে লাগা এ আগুন পাঁচ ঘণ্টায়েও নেভেনি। এতে দেশের প্রধান বিমানবন্দরটিতে সব ধরনের বিমান ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ। এখানে নামতে না পেরে ফ্লাইটগুলো চলে যায় অন্য বিমানবন্দরে।

শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওয়ানা হয়। পরে আগুন ছড়াতে থাকলে ইউনিটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। পাশাপাশি কাছ থেকে আগুন নেভাতে আনা হয়েছে ‘রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবট’। এ রোবট মানুষের সাহায্য ছাড়াই খুব কাছ থেকে আগুনে পানি নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এছাড়া যেখানে আগুনের শিখা রয়েছে সেখানেও পানি দিতে পারে রোবটটি।

উল্লেখ্য সম্প্রতি ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঢাকায় অন্তত ১৭ জন নিহত হন। সপ্তাহ না যেতেই আবারো এমন ভয়াবহ ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। নাশকতামূলক কি-না সেই প্রশ্ন তুলেছেন এনসিপি নেতা সারজিস আলমও। তিনি এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে নারাজ।

এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কার্গো সেকশনে সংঘটিত অগ্নিনির্বাপণে কাজ করছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট এবং নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক মো. আশিকউজ্জামান জানান, বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনুমানিক এক হাজার আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। কর্তব্যরত অবস্থায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের দ্রুত ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তায় বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য কাজ করছেন। আগুনে বিমানবন্দরের আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূর থেকে এ ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়টি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে চট্টগ্রাম ও সিলেটে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটটি এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইট অবতরণ করেছে। বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছে সেখানে আমদানি করা পণ্য মজুত রাখা হয়। কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।

২৫ আনসার সদস্য আহত: রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় আনসার বাহিনীর অন্তত ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। আগুন নেভাতে গিয়ে তারা ধোঁয়া ও তাপের কারণে দগ্ধ এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতাল ও কুর্মিটলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আনসার ও ভিডিপির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আমাদের এক হাজার সদস্য কাজ করছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেওয়ার সময় ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নয়জনকে সিএমএইচে এবং বাকিদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।’

এর আগে দুপুর আড়াউটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের একটি গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেন। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।
সর্বশেষ রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমলেও পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ঘটনাস্থল থেকে আনসারের উত্তর জোন কমান্ডার মো. গোলাম মৌলাহ তুহিন বলেন, আমাদের সদস্যরা আগুন লাগার প্রাথমিক পর্যায়েই বিষয়টি শনাক্ত করে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে তারা নিজেরাই ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার ও প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশ নেয়। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী আগুনের এ ঘটনার সার্বিক তদারকি করছে এবং আহত সদস্যদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

কুরিয়ার শাখা থেকে আগুনের সূত্রপাত: কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে তা কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি। সেখানে কর্তব্যরত অন্তত ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পর পর বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। গেইটে থাকা সাংবাদিকদের সে সময় সরিয়ে দেওয়া হয়। ৮ নম্বর গেইট সংলগ্ন গুদামে জ্বালানি রয়েছে বলেও হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় সে সময়। আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের সামনে উড়োজাহাজ পার্কিং করার ১০ থেকে ১৪ নম্বর বে। আগুন লাগার পর এখানে রাখা কয়েকটি উড়োজাহ সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিমানের কর্মীরা। তারা বলছেন, বেলা ২ টা ২০ মিনিটের দিকে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। কালানবাজার পরপরই কর্মীরা সব বের হয়ে আসেন। বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছে সেখানে আমদানি করা পণ্য মজুত রাখা হয়। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন এতটাই ভয়াবহ যে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
কারগো ভিলেজ এ মাথা থেকেও মাথা লম্বায় আনুমানিক ৩০০ মিটার। বিমানবন্দরটির উত্তর-পূর্ব কোনায় এটি অবস্থিত। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের যেই অংশে কুরিয়ারের কাজকর্ম চলে সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে কার্গো ভিলেজের নিয়মিত কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও কুরিয়ার শাখায় আধাবেলা পর্যন্ত কাজকর্ম চলে।

এয়ারপোর্ট কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠু বলছেন, ২টার দিকে তাদের লোকজন বের হয়ে যাওয়ার পরপর আগুনটা লাগে। সেখানে তখনো অনেক শ্রমিক, আনসারসহ লোকজন ছিল। কিন্তু আগুন লাগার পর আনসারসহ অন্যরা সবাইকে সরিয়ে দেন। তখন বলা হয় এই গুদামে গোলাবারুদসহ কেমিকেল রয়েছে, ব্লাস্ট হইতে পারে। সবাই সরে যান। মিঠু অভিযোগ করেন, আগুন নেভাতে এসে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ৮ নাম্বার গেটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। অনুমতিজনিত জটিলতায় তারা ঢুকতে পারছিল না।

বিমানের তিনজন কর্মী বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা বলছেন, কুরিয়ার শাখা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর তারা দৌড় দিয়ে বের হয়ে আসেন।

আনসারের উত্তর জোন কমান্ডার মো. গোলাম মৌলাহ তুহিন বলেন, আনসার সদস্যরা প্রাথমিক মুহূর্তে আগুন দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন এবং ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কার্গো ভিলেজের বাইরে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলে বিমানবাহিনী। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন করা হয়। বিমানবন্দরে প্রবেশের পথগুলো আপাতত বন্ধ রাখা হয়। ঢাকার মূল অংশ থেকে উত্তরাগামী সড়কে দেখা দেয় ব্যাপক যানজট।

সানা/আপ্র/১৮/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

এবার ভয়াবহ আগুনে পুড়লো শাহজালালের কার্গো ভিলেজ

আপডেট সময় : ০৯:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। ঢাকায় নামতে না পেরে অন্য বিমানবন্দরে গেছে এক ডজনের বেশি ফ্লাইট।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেলা সোয়া ২টার দিকে সেখানে আগুন লাগার খবর পাওয়ার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া অফিসার তালহা বিন জসিম।

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি পণ্য রাখার কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে লাগা এ আগুন পাঁচ ঘণ্টায়েও নেভেনি। এতে দেশের প্রধান বিমানবন্দরটিতে সব ধরনের বিমান ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ। এখানে নামতে না পেরে ফ্লাইটগুলো চলে যায় অন্য বিমানবন্দরে।

শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওয়ানা হয়। পরে আগুন ছড়াতে থাকলে ইউনিটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। পাশাপাশি কাছ থেকে আগুন নেভাতে আনা হয়েছে ‘রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবট’। এ রোবট মানুষের সাহায্য ছাড়াই খুব কাছ থেকে আগুনে পানি নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এছাড়া যেখানে আগুনের শিখা রয়েছে সেখানেও পানি দিতে পারে রোবটটি।

উল্লেখ্য সম্প্রতি ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঢাকায় অন্তত ১৭ জন নিহত হন। সপ্তাহ না যেতেই আবারো এমন ভয়াবহ ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। নাশকতামূলক কি-না সেই প্রশ্ন তুলেছেন এনসিপি নেতা সারজিস আলমও। তিনি এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে নারাজ।

এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কার্গো সেকশনে সংঘটিত অগ্নিনির্বাপণে কাজ করছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট এবং নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক মো. আশিকউজ্জামান জানান, বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনুমানিক এক হাজার আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। কর্তব্যরত অবস্থায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের দ্রুত ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তায় বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য কাজ করছেন। আগুনে বিমানবন্দরের আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূর থেকে এ ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়টি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে চট্টগ্রাম ও সিলেটে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটটি এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইট অবতরণ করেছে। বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছে সেখানে আমদানি করা পণ্য মজুত রাখা হয়। কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।

২৫ আনসার সদস্য আহত: রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় আনসার বাহিনীর অন্তত ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। আগুন নেভাতে গিয়ে তারা ধোঁয়া ও তাপের কারণে দগ্ধ এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতাল ও কুর্মিটলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আনসার ও ভিডিপির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আমাদের এক হাজার সদস্য কাজ করছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেওয়ার সময় ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নয়জনকে সিএমএইচে এবং বাকিদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।’

এর আগে দুপুর আড়াউটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের একটি গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেন। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।
সর্বশেষ রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমলেও পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ঘটনাস্থল থেকে আনসারের উত্তর জোন কমান্ডার মো. গোলাম মৌলাহ তুহিন বলেন, আমাদের সদস্যরা আগুন লাগার প্রাথমিক পর্যায়েই বিষয়টি শনাক্ত করে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে তারা নিজেরাই ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার ও প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশ নেয়। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী আগুনের এ ঘটনার সার্বিক তদারকি করছে এবং আহত সদস্যদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

কুরিয়ার শাখা থেকে আগুনের সূত্রপাত: কীভাবে সেখানে আগুন লেগেছে তা কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি। সেখানে কর্তব্যরত অন্তত ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পর পর বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। গেইটে থাকা সাংবাদিকদের সে সময় সরিয়ে দেওয়া হয়। ৮ নম্বর গেইট সংলগ্ন গুদামে জ্বালানি রয়েছে বলেও হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় সে সময়। আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের সামনে উড়োজাহাজ পার্কিং করার ১০ থেকে ১৪ নম্বর বে। আগুন লাগার পর এখানে রাখা কয়েকটি উড়োজাহ সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিমানের কর্মীরা। তারা বলছেন, বেলা ২ টা ২০ মিনিটের দিকে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। কালানবাজার পরপরই কর্মীরা সব বের হয়ে আসেন। বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছে সেখানে আমদানি করা পণ্য মজুত রাখা হয়। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন এতটাই ভয়াবহ যে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
কারগো ভিলেজ এ মাথা থেকেও মাথা লম্বায় আনুমানিক ৩০০ মিটার। বিমানবন্দরটির উত্তর-পূর্ব কোনায় এটি অবস্থিত। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের যেই অংশে কুরিয়ারের কাজকর্ম চলে সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে কার্গো ভিলেজের নিয়মিত কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও কুরিয়ার শাখায় আধাবেলা পর্যন্ত কাজকর্ম চলে।

এয়ারপোর্ট কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠু বলছেন, ২টার দিকে তাদের লোকজন বের হয়ে যাওয়ার পরপর আগুনটা লাগে। সেখানে তখনো অনেক শ্রমিক, আনসারসহ লোকজন ছিল। কিন্তু আগুন লাগার পর আনসারসহ অন্যরা সবাইকে সরিয়ে দেন। তখন বলা হয় এই গুদামে গোলাবারুদসহ কেমিকেল রয়েছে, ব্লাস্ট হইতে পারে। সবাই সরে যান। মিঠু অভিযোগ করেন, আগুন নেভাতে এসে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ৮ নাম্বার গেটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। অনুমতিজনিত জটিলতায় তারা ঢুকতে পারছিল না।

বিমানের তিনজন কর্মী বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা বলছেন, কুরিয়ার শাখা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর তারা দৌড় দিয়ে বের হয়ে আসেন।

আনসারের উত্তর জোন কমান্ডার মো. গোলাম মৌলাহ তুহিন বলেন, আনসার সদস্যরা প্রাথমিক মুহূর্তে আগুন দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন এবং ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কার্গো ভিলেজের বাইরে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলে বিমানবাহিনী। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন করা হয়। বিমানবন্দরে প্রবেশের পথগুলো আপাতত বন্ধ রাখা হয়। ঢাকার মূল অংশ থেকে উত্তরাগামী সড়কে দেখা দেয় ব্যাপক যানজট।

সানা/আপ্র/১৮/১০/২০২৫