নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক আগুনের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব আগুনের ধরন, সময় প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এসব অগ্নিকা- নিছক দুর্ঘটনা, নাকি কোনও নাশকতা? ঘনঘন অগ্নিকা- নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও। তিনি এসব ঘটনায় ষড়যন্ত্র বা নাশকতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঈদের আগেই কেন একাধিক মার্কেটে আগুন লাগছে, আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসকে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে ও অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের ওপর কেন হামলা হচ্ছে, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস কিনা; এসব প্রশ্ন রাখেন সরকারপ্রধান। এর আগে সকালে নিউ মার্কেট এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্রিফিং করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, আগুনের সূত্রপাত হয়েছে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) ভবনের তৃতীয় তলা থেকে। বিষয়টি নাশকতা কিনা, খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধও জানান তিনি।
গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোরে লাগা আগুনে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের প্রায় ১ হাজার ৫০০ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটটির ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সিটি করপোরেশনের লোকেরা রাত ৩টার দিকে ব্রিজ ভাঙ্গার কাজ করছিল, ব্রিজের ওখানে বিদ্যুতের লাইন ছিল; যা তারা খেয়াল করেনি। ওই লাইনের ওপর বুলডোজার চালানোর সময়ই আগুনের সূত্রপাত হয়।’ পরিকল্পনা ছাড়াই এই ব্রিজ ভাঙার কারণেই আজ এই দশা (অগ্নিকা-) হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে এ ধরনের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই অগ্নিকা-কে নিউ মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত পথচারী পারাপার সেতুর (ফুটওভার ব্রিজ) সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টা করছে। গণমাধ্যমেও এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে; যা ডিএসসিসির দৃষ্টিগোচর হয়েছে।’ দুর্যোগের এই কঠিনতম সময়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ‘ভিত্তিহীন সংবাদ ও গুজব’ ছড়ানো থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। ব্যবসায়ীদের কারও কারও ধারণা, এখানে কেউ না কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্যবসায়ী মো. সবুজ আহাজারি করছিলেন ঘটনাস্থলে। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের মার্কেটে কেন এত আগুন, এটা স্বাভাবিক না। মনে হয় কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’ ঈদ উপলক্ষে তিনি দোকানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন, কিছু মালামাল বিক্রি করেছিলেন। বাকি সব শেষ হয়ে গেছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় তাসনিয়া ফ্যাশনের মালিক রুবেল মিয়া জানান, রাত ২টার দিকে দোকান বন্ধ করে নবাবপুরের বাসায় ফেরেন। ভোরে খবর পেয়ে দ্রুত মার্কেটে এসে দেখেন আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে মালামাল বের করার চেষ্টা করেন। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আর ঢুকতে পারেননি। দোকান থেকে সরিয়ে রাখা কিছু মালামালের কাছে বসেই কাঁদছিলেন তিনি। রুবেল মিয়া বলেন, ‘গুদামে ৪০ লাখ টাকার মালামাল রয়েছে। গুদামের দরজার কাছেও যেতে পারিনি।’ এই ব্যবসায়ীর মনেও সন্দেহ কেউ না কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফায়ার সার্ভিস বলেছে মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এমন বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে যে কোনও ছোট্ট দুর্ঘটনায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সবগুলোবিষয় খতিয়ে দেখছি। এগুলো নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনও কারণ আছে সেটাও দেখা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে বঙ্গবাজারে একটি বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গত রাতে হাজারীবাগের ট্যানারিতেও আগুনের ঘটনা ঘটেছে। সুরিটোলায় গুদামে আগুন লেগেছে। সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ও নিউমার্কেটের পাশের শিরিন ম্যানশনে বিস্ফোরণের ঘটনা দুটোতেও মামলা নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবাজারের ঘটনায় পুলিশ কমিটি না করলেও তদন্তকাজ চালিয়েছে।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে র্যাবের ঢাকার ব্যাটালিয়নগুলোর টহল দল ও সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করে। উক্ত অগ্নিকা-ের ঘটনায় কোনও ধরনের নাশকতা রয়েছে কিনা- এ বিষয়েও র্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন।’
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, ‘নাশকতা মনে করলে আগে দেখতে হবে, এ ঘটনায় কে বা কারা লাভবান হচ্ছে। আর যদি কেউ লাভবান না হয় তাহলে এটা নাশকতা নয়। তবে শুনেছি কিছুদিন আগে ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকে কেউ এমন করেছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।’
প্রায় সবগুলো ঘটনায় ভোরের দিকে এমন আগুন লাগার ঘটনা ‘অস্বাভাবিক’ মনে করেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘নাশকতা হলে এক সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা বড় ধরনের আগুনের উৎপত্তি হয়। তেমন কোনও আলামত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আর মার্কেটগুলো যখন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়, তখন কোন কোন বিষয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ভবন, ফায়ার অ্যারেজমেন্ট নাকি ইলেকট্রিক সরঞ্জাম বিষয়ে? কোন ঝুঁকিতে আছে সেটা ক্লিয়ার থাকতে হবে।’ আর কোনও ঘটনা ঘটলেই রাজনৈতিক লোকরা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেন। সেটা তাদের রাজনৈতিক চাল বলে মনে করেন তিনি। শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রাজধানী নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণের তথ্য জানায়। তবে এখনও আগুন নেভেনি। পুরোপুরি আগুন নেভাতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কান্না নিউ সুপার মার্কেটে: ৪ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল-দিন দশেকের ব্যবধান। এরমধ্যেই আগুনে পুড়ল রাজধানীর কাপড়ের অন্যতম প্রধান দুই মার্কেট। দুই মার্কেটেই আগুন লাগার সময় মোটামুটি একই। বঙ্গবাজারে আগুন লেগেছিল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে, আর শনিবার নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে। দুই মার্কেটেই ক্ষতির চিত্রেও মিল রয়েছে। ঈদের আগে বেচাকেনার জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নেওয়া ছিল ব্যবসায়ীদের। আগুন কেড়ে নিয়েছে সব। নিউ সুপার মার্কেট মূলত কাপড়ের মার্কেট। এখানে শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট এবং পাঞ্জাবিসহ নানা ধরনের কাপড় ছিল। এছাড়া খেলনা ও আসবাবপত্রসহ নানা ধরনের পণ্য ছিল। এই মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত ২টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম। ভোরে খবর শুনি, আগুন লেগেছে। এসে দেখি মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছে। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি আরও বলেন, আগুনে আমার দোকানের সবকিছু পুড়ে গেছে। আমার স্বপ্ন শেষ ভাই। আমি এখন কী করব? ঈদ উপক্ষ্যে ঋণ করে ১০ লাখ টাকার মাল এনেছি, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নোঙর ফ্যাশন নামে একটি দোকানের মালিক রফিকুল ইসলাম রোকন বলেন, যা কিছু ছিল সব আগুনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে দেখছি আমার সব সম্পদ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। কিছুই করতে পারছি না। মালামাল বের করতে পারছি না। স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে মালামাল উঠিয়েছি। এখন আমি কী জবাব দেব তাকে?
ব্যবসায়ী নূপুর বেগম বলেন, আমাদের তিন দোকান ছিল, এর মধ্যে একটা দোকানের অর্ধেক মাল নামিয়েছি। আর সব পুড়ে গেছে। আমার ভাই কথা বলছে না, পাগলের মতো হয়ে গেছে। আমার ভাই ফকির হয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকার মাল সব গেছে। তিন দোকানই শেষ আমাদের। আবু সাঈদ নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, নিউ সুপার মার্কেটে আমাদের চারটি দোকান ছিল। এই চার দোকানের সব মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে। আমরা কী করব, কোথায় যাব, কার কাছে বিচার চাইব?
কিছুদিন আগে এমন অবস্থা হয়েছে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের। আয়ের উৎস দোকানের সব মালামাল পুড়ে যাওয়ার পর সেখানকার ব্যবসায়ীরাও নিঃস্ব হয়েছেন। এদিকে নিউ সুপার মার্কেটের এই আগুনের জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়ী করছেন মার্কেটের মালিক সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের লোক রাত ৩টার দিকে ব্রিজ ভাঙার কাজ করছিল। ব্রিজের ওখানে আমাদের কারেন্টের লাইন আছে সেটা তারা খেয়াল করেনি। ওই লাইনের ওপর বুলডোজার চালানোর সময়ই আগুনের সূত্রপাত হয়। তারা কোনো পরিকল্পনা না করে এই ব্রিজ ভাঙার কারণেই আজ এই দশা হয়েছে।
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফুটপাতের শতাধিক দোকানি: আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটের লাগোয়া ব্রিজের একপাশে বসে হা হুতাশ করছেন রাব্বি নামের এক যুবক। রাব্বি, পাশেই কলোনিতে থাকেন। নিউমার্কেটে ফুটপাতে দোকান ছিল রাব্বির। নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলায় গোডাউন ছিল তার। ফুটের দোকান বন্ধ করে রাত তিনটায় গোডাউনে সব রেখে গেছেন। আগুনের খবরে ভোর ৫টায় এসে আর কিছু উদ্ধার করতে পারেননি। তিনি বলেন, আমাদের ১৫ থেকে ২০ জন ফুটের দোকানির ৩০ লাখের মতো মাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রাব্বিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন আরও ১০ থেকে ১২ জন। তাদের কেউ একটু পর পর ভেতরে ঢুকছেন, বেরিয়েও আসছেন হতাশ হয়ে। তাদের মধ্যে একজনের নাম সাকিব। আগুনের ভেতর থেকে মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে বেরিয়ে রাকিব বলেন, ‘সব শেষ। পাই নাই কিছু।’ নিজের মালের সন্ধানে তাদের আরেক সহকর্মী সানি। মালামাল খুঁজতে সানিও ভেতরে যায়। মো. মনজিল নামে আরও একজন ফিরে এসেছেন, বলেন ‘সব পুড়ে গেছে, পাইনি কিছু।’
ক্ষতিগ্রস্ত ফুটপাতের দোকানিরা বলছেন, ‘সবাই তো জানে মার্কেটে আগুন লাগছে। মার্কেটের দোকানিদের সহযোগিতা করবে। আমরা যারা ফুটপাতের দোকানি, মার্কেটে গোডাউন ছিল, আমাদেরও তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের তো কেউ দেখবো না। আমাদের তো কেউ ক্ষতিপূরণ দিবো না।’
রাব্বি, সাকিব, সানি ও মনজিলের মত শতাধিক লোক অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটের সামনের ব্রিজের ফুটপাতে দোকান করতেন। তারা দিনশেষে সব মাল রেখে যেতেন নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলায় গোডাউনে। মার্কেটে আগুন লাগায় তাদেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি। কারণ আগুনে তিনতলায় মালামাল পুড়েছে বেশি। অন্যান্য ফ্লোরে আগুন তেমন ছড়ায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মীসহ আহত ৩৫ জন ঢামেকে ভর্তি: রাজধানীর নিউমার্কেটে অগ্নিকা-ে আহত ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ১৩ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। আর ১৬ জন দোকানমালিক ও কর্মচারী।
আহত অন্যদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী তিনজন, বিমানবাহিনীর সদস্য একজন, আনসার সদস্য একজন ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই আগুনের ধোঁয়ায় আহত হয়েছেন। এছাড়া মার্কেটে টিন লেগে কয়েকজন জখম হয়েছেন। আহত ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা হলেন রাসেল (২২), শান্ত (২৪), তৌফিক (২৩), রাজন (২৫), মিলন (২৬), সজীব (২৫), আরিফুল (২৬), কামরুজ্জামান (২৫), শরিফুল (২৪), রাজিব (২২), ডিপজল (২৪), আলমগীর (৩৬), সোহেল রানা (৩৫)। ঢামেকে চিকিৎসাধীন দোকান মালিক ও কর্মীরা হলেন রিফাত (২৩), বায়জিদ (২৫), হাসান (২০), রিমন (২৮), কামাল হোসেন (৩৩), ফিরোজ আলম (৩০), জীবন (৩০), জিসান (১৮), ইয়াসিন (২৪), জীবন (২৫), স্বপন (২৩), ফারহান (২৪), সারফিন (১৮), ইমাম হোসেন আলী (২৬), রাশেদ (৩০), সাব্বির (১৮)। আহত অন্যরা হলেন এটিএন নিউজের সাংবাদিক মনিরুজ্জামান (৩৩), বিমানবাহিনীর সদস্য সার্জেন্ট আরাফাত (৩২), আনসার সদস্য সবুজ (২০), স্বেচ্ছাসেবী সাব্বির (৩০), জাকির হোসেন (২৭), চাঁন মিয়া (১৮)।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার তথ্য জানতে পারে ফায়ার সার্ভিস। ৫টা ৪৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেখানে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অগ্নিনির্বাপণী সাহায্যকারী দল। ঘটনাস্থলে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন স্বেচ্ছাসেবীরাও। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
অনির্দিষ্টকালের জন্য নিউমার্কেট বন্ধ ঘোষণা: নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার নিউ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির বরাত দিয়ে মার্কেটের নিরাপত্তা কমান্ডার মো. ভুলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বন্ধ রয়েছে চাঁদনিচক ও গাউছিয়া মার্কেটও। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-মিডিয়া) শাহজাহান সিকদার বলেন, ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ৫টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ইউনিট সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০টি করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এসময় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহায়তা করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অগ্নিনির্বাপণ সাহায্যকারী দল। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে বিজিবি ও পুলিশ। আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
বারবার কেন অগ্নিকা-, খতিয়ে দেখুন: ফায়ার সার্ভিস ডিজি: ঈদের আগে পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার ও নবাবপুরে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় নাশকতার সন্দেহ করছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন। তাই অগ্নিকা-ের এই ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শনিবার ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে নিজের সন্দেহের কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিজি। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকা- দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশকে আবেদন করব যে, এরকম কোনো কিছু আছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য।
“খতিয়ে দেখাটা অতীব প্রয়োজন। একের পর এক কেন আগুন লাগছে। এটা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা তাদের রিকয়েস্ট করব।”
ঢাকা নিউ মার্কেটের সঙ্গে লাগোয়া ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে শনিবার সকাল পৌনে ৬টায় আগুন লাগে, যা তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুড়েছে অনেকে পোশাক। ১১ দিন আগে গত ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে আগুন লেগে পুড়ে যায় ২০টির মতো গুদাম। নবাবপুরে অগ্নিকা-ের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলামও বলেছিলেন, সম্প্রতি ঘনঘন অগ্নিকা- ঘটছে। এর পেছনে কোনো নাশকতা আছে কি না, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখা উচিৎ। শনিবার নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-স্থলে আসার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুককে নাশকতা নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, “এখানে কোনো নাশকতা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
তবে ঢাকার বিপণি বিতানগুলোর সামনে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বঙ্গবাজারের অগ্নিকা- তদন্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কমিটি অবশ্য নাশকতার কোনো আলামত না পাওয়ার কথা জানিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিগারেট কিংবা মশার কয়েল থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত। নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনও জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার মইন বলেন, “আমরা কারণটা এখনও জানি না। তদন্ত না করে বলা যাবে না।” তবে তিনি বলেন, “এখন শুষ্ক মৌসুম চলছে, বাতাসের আর্দ্রতা অনেক কম। মার্কেট এবং দোকান সৌন্দর্য করার জন্য অনেক বড় বড় পাওয়ারের লাইট ব্যবহার করে থাকি। এসব কারণে অগ্নিকা- হতে পারে।”
নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে সারাদেশের ঈদ মার্কেট: রাজধানীর বঙ্গবাজারের মতো প্রায় একই সময় নিউমার্কেট সংলগ্ন ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এসব আগুন এক সুতোয় গাঁথা কিনা সে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না পুলিশ। সে কারণে এখন থেকে ঈদ পর্যন্ত কেনাবেচা শেষে বন্ধ হয়ে যাওয়া মার্কেটেও নজরদারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর ও একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবার পুড়লো নিউ সুপার মার্কেট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ