ঢাকা ১১:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

এবার ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ-কর্মবিরতিতে ট্যানারি শ্রমিকরা

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

সাভার সংবাদদাতা: সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির কারণে ঢাকার সাভার উপজেলায় ট্যানারি শিল্প নগরীর কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ হয়।

কর্মসূচির কারণে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। ফলে চামড়া শিল্প নগরীর কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ ছিল। দাবি আদায় না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা।

ট্যানারি শ্রমিক আরিফ মোল্লা বলেন, অন্যান্য সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পরপর তা বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার ১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এখন বাস্তবায়ন করেননি মালিকরা। নানা বাহানায় মালিকপক্ষ শুধু সময়ক্ষেপণ করছেন। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রমিকরা।

রুহুল আমিন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আমরা ট্যানারিতে অনেক পরিশ্রমের কাজ করি, সে তুলনায় আমাদের বেতন অনেক কম, এতে আমাদের সংসার চালাইতে অনেক কষ্ট হয়। তাই অবিলম্বে সরকার ঘোষিত পাঁচটি গ্রেডে বেতন কাঠামো মালিক পক্ষ মেনে নিলে আমরা আন্দোলন ছেড়ে কাজে মনোযোগ দেব, যদি দাবি না মানে তাহলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও রিলায়েন্স ট্যানারির শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, আন্দোলন করুম না কী করুম কন? আইজ মাসের পোনারো তারিখ, বেতন দেয় নাই। আমাগো তো রোজার খাই-খরচা আছে। বেতন বাড়াবেও না, টাইম মতন দিবেও না। ক্যামনে চলুম।

ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, বকেয়া বেতন পরিশোধ ও শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি নিয়ে ট্যানারি মালিক পক্ষ ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা চলতে থাকার মধ্যেই আন্দোলনে নামল শ্রমিকরা।

শনিবার অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ট্যানারির সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, তাদের (শ্রমিক) সঙ্গে আলোচনা তো চলছে। আগামী ১৭ মার্চ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও মালিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। আমরা তাদের চিঠি দিয়েও বৈঠকের বিষয়টি ঠিকঠাক করেছি। শ্রমিকরাও জানেন, বৈঠকে আলোচনা হবে। এর মধ্যে হঠাৎ করে আধাবেলার কর্মবিরতি করলেন তারা।

সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলা কর্মবিরতি শেষে শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন বলে তথ্য দেন তিনি। এদিকে শ্রমিকরা জানান, ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি তাদের আরো কিছু দাবি রয়েছে। দাবিগুলো হল- প্রতিটি কারখানায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র দিতে হবে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শন কার্যক্রম স্বচ্ছ, কার্যকর ও জোরদার করতে হবে, স্থায়ী কাজে কোনো অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না, মধ্যস্বত্বভোগী বেআইনি কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজ করানো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ শ্রমিক ছাঁটাই ও টারমিনেশন বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, শ্রমিকদের জন্য স্বল্প মূল্যে ক্যান্টিন ও আবাসন ব্যবস্থা চালু, প্রস্তুতি কল্যাণ সুবিধাসহ নারী শ্রমিকদের সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা, ট্যানারি শিল্পে কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর এবং সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে ট্যানারি শ্রমিকদের।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ

এবার ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ-কর্মবিরতিতে ট্যানারি শ্রমিকরা

আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

সাভার সংবাদদাতা: সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির কারণে ঢাকার সাভার উপজেলায় ট্যানারি শিল্প নগরীর কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ হয়।

কর্মসূচির কারণে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। ফলে চামড়া শিল্প নগরীর কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ ছিল। দাবি আদায় না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা।

ট্যানারি শ্রমিক আরিফ মোল্লা বলেন, অন্যান্য সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পরপর তা বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার ১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এখন বাস্তবায়ন করেননি মালিকরা। নানা বাহানায় মালিকপক্ষ শুধু সময়ক্ষেপণ করছেন। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রমিকরা।

রুহুল আমিন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আমরা ট্যানারিতে অনেক পরিশ্রমের কাজ করি, সে তুলনায় আমাদের বেতন অনেক কম, এতে আমাদের সংসার চালাইতে অনেক কষ্ট হয়। তাই অবিলম্বে সরকার ঘোষিত পাঁচটি গ্রেডে বেতন কাঠামো মালিক পক্ষ মেনে নিলে আমরা আন্দোলন ছেড়ে কাজে মনোযোগ দেব, যদি দাবি না মানে তাহলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও রিলায়েন্স ট্যানারির শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, আন্দোলন করুম না কী করুম কন? আইজ মাসের পোনারো তারিখ, বেতন দেয় নাই। আমাগো তো রোজার খাই-খরচা আছে। বেতন বাড়াবেও না, টাইম মতন দিবেও না। ক্যামনে চলুম।

ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, বকেয়া বেতন পরিশোধ ও শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি নিয়ে ট্যানারি মালিক পক্ষ ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা চলতে থাকার মধ্যেই আন্দোলনে নামল শ্রমিকরা।

শনিবার অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ট্যানারির সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, তাদের (শ্রমিক) সঙ্গে আলোচনা তো চলছে। আগামী ১৭ মার্চ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও মালিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। আমরা তাদের চিঠি দিয়েও বৈঠকের বিষয়টি ঠিকঠাক করেছি। শ্রমিকরাও জানেন, বৈঠকে আলোচনা হবে। এর মধ্যে হঠাৎ করে আধাবেলার কর্মবিরতি করলেন তারা।

সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলা কর্মবিরতি শেষে শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন বলে তথ্য দেন তিনি। এদিকে শ্রমিকরা জানান, ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি তাদের আরো কিছু দাবি রয়েছে। দাবিগুলো হল- প্রতিটি কারখানায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র দিতে হবে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শন কার্যক্রম স্বচ্ছ, কার্যকর ও জোরদার করতে হবে, স্থায়ী কাজে কোনো অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না, মধ্যস্বত্বভোগী বেআইনি কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজ করানো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ শ্রমিক ছাঁটাই ও টারমিনেশন বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, শ্রমিকদের জন্য স্বল্প মূল্যে ক্যান্টিন ও আবাসন ব্যবস্থা চালু, প্রস্তুতি কল্যাণ সুবিধাসহ নারী শ্রমিকদের সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা, ট্যানারি শিল্পে কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর এবং সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে ট্যানারি শ্রমিকদের।