নিজস্ব প্রতিবেদক: কারাগারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে ডোপ টেস্ট (মাদকাসক্ত চিহ্নিতের পরীক্ষা)। এক মাস ধরে চলছে এই কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত ডোপ টেস্টে অন্তত ৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কারাকর্মী ও বন্দি রয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে কাউকে সন্দেহ হলেই ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায় কারো ‘পজিটিভ’ এলে সেটি আরও নিশ্চিত করার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে দেশের কারাগারগুলোকে মাদকমুক্ত করতে সেপ্টেম্বর মাসকে মাদকবিরোধী কার্যক্রমের মাস হিসেবে ঘোষণা করে অভিযান শুরু করেছে কারা অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে মাসজুড়ে কারারক্ষী ও বন্দিদের ওপর বিশেষ নজর থাকবে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন গণমাধ্যমেকে বলেন, বর্তমানে মাদকসেবী হিসেবে সন্দেহভাজন ব্যক্তির ডোপ টেস্ট কারা অভ্যন্তরে করতে পারছি। আমরা নিজেরাই ডোপ টেস্টিং মেশিন কিনেছি। মাস খানেক ধরে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ জনের মতো এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। কারাগারকে মাদকমুক্ত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান বিশ্বে মাদকের ভয়াবহতা প্রকট রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেও মাদকের প্রভাব সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করছে। এটি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। দেশের কারাগারসমূহ এই ক্ষতিকর প্রভাবের বাইরে নয়। এরই প্রেক্ষাপটে সেপ্টেম্বরকে মাদকবিরোধী কার্যক্রমের মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আবুল বাশার গণমাধ্যমেকে বলেন, বাংলাদেশ জেল মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে কারাগার এলাকায় মাদক নির্মূল করতে স্থানীয় কারা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহায়তায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আগত দর্শনার্থী ও কারাভ্যন্তরে প্রবেশকালে সব বন্দি এবং কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ তল্লাশি। কারারক্ষী, বন্দি, আগত দর্শনার্থীদের জন্য মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। সন্দেহভাজন বন্দি ও কারাকর্মীদের নিজস্ব ব্যবস্থায় ডোপ টেস্ট করা হবে।
কারাগার সূত্র জানায়, মাদকাসক্তির বিষয়ে জিরো টলারেন্স কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং গত এক বছরে মাদকসেবী ২৯ জন সদস্যকে মাদক বহন, গ্রহণ ও সরবরাহে জড়িত থাকার অপরাধে ফৌজদারি মামলায় কারাগারে পাঠানোসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ–সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারা সদর দপ্তর নিজস্ব ডোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করেছে।
এর আগে পুলিশে শুরু হয়েছিল ডোপ টেস্ট। ২০২০ সালের মার্চে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ডোপ টেস্ট চালু করে। ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ডোপ টেস্টে ১২০ জন পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে ডিএমপিতে শুরু হওয়া এই ডোপ টেস্ট ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত জোরেশোরে চলে। এরপর ধীরে ধীরে ওই কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
ওআ/আপ্র/১৬/০৯/২০২৫