নিজস্ব প্রতিবেদক: চার দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা মোড় অবরোধ করে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড় অবরোধ করে রাখার পর পুলিশের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে যাওয়ার আগে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র ও কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, বৃহস্পতিবার দেশের সব সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ‘কাকতাড়ুয়া দহন’ কর্মসূচি পালন করবেন তারা। এ কর্মসূচি ব্যাখ্যা দিয়ে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা বিএসসি প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি কাকতাড়ুয়ায় সেঁটে দিয়ে তা পুড়িয়ে দেব। এর মধ্য দিয়ে প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে নতুন করে মুখোমুখি অবস্থানে গেল কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাতে আশপাশের সড়কেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার অনীশ কীর্ত্তনীয়া সে সময় বলেন, সাতরাস্তার মঝে অবস্থান নেওয়ার কারণে চারদিকের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব আশেপাশে পড়েছে। আমরা যানবাহন ডাইভারশনের চেষ্টা করছি।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
১। প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন থেকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ‘প্রকাশ্যে গুলি করা ও জবাই করে হত্যার হুমকি’ প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। ২। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক তিন দফা দাবির পক্ষে পরিচালিত সকল কার্যক্রম রাষ্ট্র কর্তৃক অবিলম্বে বন্ধ করা। ৩। কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের উত্থাপিত যৌক্তিক ছয় দফা দাবির রূপরেখা ও সুপারিশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা। ৪। ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ান-চ্যানেল এডুকেশন চালু করা।
এসব দাবিতে রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর ও বরিশালেও বুধবার সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত এপ্রিল মাসে ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে নেমেছিলেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং কারিগরি শিক্ষার ছাত্ররা। সে সময় সরকারের আশ্বাসে পরিসিন্থতি শান্ত হলেও এখন তারা আবার রাস্তায় নেমেছেন।
গাজীপুরে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ: গাজীপুরে ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা দাবি করছেন, কারিগরি শিক্ষা ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে শিক্ষার্থীরা গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে জয়দেবপুর এলাকায় প্রথমে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা চন্দনা চৌরাস্তার দিকে অগ্রসর হন। আন্দোলনের কারণে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর ও শিমুলতলী সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা শিমুলতলী সড়কের ডুয়েট গেটের পাশে এমআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হন। তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভুরুলিয়া রেলগেইট, শিববাড়ি মোড়েও অংশ নেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, দেশে ৪০ লাখের বেশি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এবং প্রায় ৪ লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা যে তিন দফা দাবি তুলেছেন, তা ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক। তারা দাবি করেন, এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষকদের সমর্থন: রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে চলমান কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষকরা সংহতি প্রকাশ করেছেন। কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার অভিযোগ তুলে নিজেদের কিছু দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেখানে এসে তাদের সঙ্গে সংহতি জানান কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
সংহতি প্রকাশ করতে উপস্থিত হয়েছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইনস্টিটিউট ও একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৮-১০ জন শিক্ষক। কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মো. মাশফিক ইসলাম বলেন, আজকের (বুধবার) কর্মসূচিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এসে দাঁড়িয়েছেন। তাদের এই সমর্থন আমাদের আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করেছে।
সানা/আপ্র/১৭/০৯/২০২৫