ঢাকা ০৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

এবার ঈদযাত্রায় ভিন্নচিত্র

  • আপডেট সময় : ০৯:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদযাত্রায় গাড়ি পাওয়া নিয়ে ভোগান্তির চিত্র এবার বুঝি বদলাল; লম্বা ছুটিতে বেশির ভাগ মানুষ আগেভাগে ঢাকা ছাড়ায় এখন গাবতলী টার্মিনালে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বাসকর্মীদের।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাবতলী টার্মিনাল এলাকায় ভিড়ভাট্টা তেমন দেখা গেল না। টার্মিনালের সামনে সারি বেঁধে রাখা সেলফী পরিবহনের অনেকগুলো বাস। দুজন কর্মী ‘ঘাট দুইশ’ বলে চিৎকার করে যাত্রী জড়ো করছেন।
একটু সামনেই পদ্মা দ্রুতগামী পরিবহনের বাসটি ছেড়ে ‘যাব যাব’ করছে, তখনও চালকের সহকারী যাত্রী টানার চেষ্টা করছেন। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই সেলফী পরিবহনের কর্মী বিপ্লব দাস বলেন, “ঈদের টাইমে এবার যাত্রী ডাইকা আনা লাগতাছে। অন্যবার গাড়ি টার্মিনালে লাগার লগে লগে ভইরা যায়। এইবার লোকজন যাইতাছে ধীরে সুস্থে।”
একটি ব্যাগের দুই পাশে ধরে হাঁটছিলেন মিষ্টি আক্তার ও তার স্বামী সাইয়ীদ ইকবাল। এই দম্পতি যাবেন পাবনা। জানালেন, সরাসরি বাসের টিকেট কাটেননি। পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত লোকাল বাসে গিয়ে লঞ্চে নদী পার হয়ে কাজীরহাট হয়ে পাবনা যাবেন।
টার্মিনালের অদূরে আমিন বাজার সেতুর গোড়ায় কথা হয় পুলিশ সদস্য রবিউল ইসলামের সঙ্গে। দুপুর রোদে ছাতা হাতে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
কথায় কথায় জানালেন, ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আমিনবাজার সেতুর গোড়া থেকে মাজার রোড পর্যন্ত যানজট ছিল। যানবাহনগুলো থেমে থেমে এগিয়েছে। কিন্তু সকাল ১০টার পর একেবারেই ফাঁকা। উত্তরবঙ্গের বাসগুলো রাতেই ছেড়ে গেছে বেশিরভাগ। ছোট গাড়ি আর মোটরসাইকেল নিয়ে মানুষ খুব ভোরে সেহরির পরপরই বেরিয়ে পড়েছেন। এই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘হুন্ডার যে ভিড় আছিল ভোর বেলায়, মনে কয়- সব মানুষ হুন্ডাত কইরাই বাড়ি যাইতাছে।’
মোটরসাইকেল নিয়ে সকালে নওগাঁ গেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিব-উল-আহসান। তিনি জানান, ভোরবেলায় বেরিয়ে তেমন যানজট পাননি। সাভার, নবীনগর ও বাইপাইলে অনেক পোশাককর্মী দাঁড়িয়েছিলেন বাসের জন্য। কিছু বাসও সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল, সে কারণে একটু যানজট ছিল। চন্দ্রা মোড়ও ফাঁকা ছিল। এরপর টাঙ্গাইলের রাস্তায় বাইক দাবড়ে ৯টার মধ্যেই এলেঙ্গায় পৌঁছে যান।
“কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ভোগান্তি। অন্তত কয়েকশ বাইক সামনে তখন। প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায় শুধু টোল দিয়ে সেতু পার হতে।”
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, টাঙ্গাইলের পর বিভিন্ন জায়গায় সকালের দিকে যানজট ছিল। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। রাতের বাসগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
গাবতলী টার্মিনালে বরিশালগামী সূর্যমুখী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. সারওয়ার বললেন, রাস্তায় যানজট তুলনামূলকভাবে কম, গাড়ি সঠিক সময়ে এসে পৌঁছাচ্ছে।
“মাঝে মাঝে আধাঘণ্টা… দেরি হচ্ছে, তবে আমরা সঠিক সময়ে গাড়ি ছাড়তে পারছি।”
ঈদের তিন দিনের ছুটির আগে এবার মে দিবস আর শুক্র-শনি মিলিয়ে মোট ছয় দিনের ছুটি পেয়ে গেছে মানুষ। তাছাড়া ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে ছুটি শুরুর পর উপচে পড়া ভিড় আর হচ্ছে না বলে মনে করেন ঢাকা-মাদারীপুর রুটের সার্বিক পরিবহনের কাউন্টারম্যান মো. শওকত। তিনি বলেন, “যে যার মত সুবিধা অনুযায়ী বাড়ি যাচ্ছে। আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হত, এখন রেগুলার যাত্রীও তেমন নাই।” সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো মাইনুল জানান, “আমাদের বাসে কোনো শিডিউল সমস্যা হচ্ছে না। ফেরিঘাটে তেমন জ্যাম নেই। ঠিক সময়েই বাস আসছে।” তবে আজ শনিবার থেকে চাপ একটু বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
উত্তরের পথে চাপ থাকলেও যাত্রা সহনীয় : এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের পথে যানবাহনের চাপ থাকলেও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। ফলে এখন পর্যন্ত তেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না উত্তরবঙ্গগামী মানুষজনকে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব সংযোগ সড়কে এবং সেতু পার হয়ে সিরাজঞ্জের সীমানা পর্যন্ত তেমন কোন অসহনীয় যানজট দেখা যায়নি। উত্তরবঙ্গের প্রবেশ পথ টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার দুই লেন সড়কে ২০০ এপিবিএন সদস্যসহ আট শতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। অপরদিকে মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের সীমানায় পাঁচ শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কে দিয়ে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময় কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়।
এবার এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজার কাছে গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার একমুখী (ওয়ানওয়ে) করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে এই সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।
এ ছাড়া যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে সেজন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে পাম্প ও রেস্তোরাঁ নেই। তাই ওই অংশে ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের পানি, শুকনা খাবার সরবরাহ ও ১৫টি অস্থায়ী টয়লেট জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরদিকে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলমও বঙ্গবন্ধ সেতুর পশ্চিম পাড়ের গোলচত্বর থেকে উত্তরবঙ্গের পথে যানজট নিরসনে নানা প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে এরই মধ্যে নলকা দ্বিতীয় সেতুর এক পাশ খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যানজট এড়াতে জেলার মহাসড়ককে চার সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে পাঁচলিয়া বাজার পর্যন্ত এক, পাঁচলিয়া বাজার থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত দুই, হাটিকুমরুল থেকে কাছিহাটা টোল প্লাজা পর্যন্ত তিন ও হাটিকুমরুল থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত চার নম্বর সেক্টর করা হয়েছে। এখানে ৫৭২ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে এবং জেলা পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া তিনটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। মহাসড়কে পুলিশের এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন পুলিশ সুপার।
সিরাজগঞ্জ : শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক থেকে নলকা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এলাকায় উত্তরাঞ্চলগামী লেনে তীব্র যানজট দেখা দেয়। তবে পুলিশের তৎপরতায় বেলা ১১টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এরপর থেকে মহাসড়কে যানজট না থাকলেও যানবাহনগুলো চলছে ধীরগতিতে। সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পরিদর্শক সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার কারণে মহাসড়কে ধীরগতি রয়েছে। মাঝে মধ্যে যানজট সৃষ্টি হলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক, জেলা, থানা ও হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে রয়েছে।
ভারী যানবাহনকে পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহারের অনুরোধ প্রতিমন্ত্রীর : ঈদের ছুটিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার পথে ভারী যানবাহনের চালকদের পদ্মা নদী পার হতে শিমুলিয়ার পরিবর্তে পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহার করার অনুরোধ করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যতগুলো ঘাট আছে সব মিলে ৪৯টি ফেরি চলছে। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়ায় চলছে ১০টি, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ২১টি ও আরিচায় চারটি। পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে শিমুলিয়ায় ১০টি ভালমানের ফেরি রাখা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ পারাপারে প্রস্তুতির কোনো অভাব নেই উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শিমুলিয়ায় যাত্রীদের নিরাপদে পারাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আমরা যাত্রী সাধারণকে বলেছি, পাটুরিয়া ঘাটকে ব্যবহার করতে। আমরা এই পথে ভারী কোনো যানবাহন চলতে দিচ্ছি না। এখানে সব হালকা যান চলছে। “তবে ঘাটে মানুষের চাপ আজকে বেশি। চাপের কারণে মাঝে মাঝে একটু অসুবিধা আছে। বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা শবে কদরের ইবাদত বন্দেগি করেও মানুষের সেবায় সচেষ্ট রয়েছে। মানুষ আনন্দের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন”, বলেন প্রতিমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ার ফেরি ঘাট, লঞ্চ ঘাট, স্পিডবোট ঘাট ঘুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন নৌ প্রতিমন্ত্রী। এ সময় খালিদ মাহমুদ আরও বলেন, এখানে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা জোর দিয়ে দেখছি। সবকিছু চিন্তা করে আমরা এই পথে যে ফেরিগুলো চালাচ্ছি সেগুলো চলার মতো।“
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, বিএনপি সরকার বলেছিল, পদ্মা সেতু হবে পাটুরিয়ায়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফেরি ঘাটে এসে বলেছিলেন, পদ্মা সেতু হবে মাওয়ায়। এরপর থেকেই মাওয়া বা শিমুলিয়া ঘাট আজকের দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কথা রেখেছেন। আমরা আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে এই স্বপ্নের সেতু খুলে দেওয়া হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। ঘাটে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে; তারা বিষয়টি দেখছেন। এ সময় সেখানে অন্যান্যের মধ্যে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান শামীম আল রাজী, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সদরঘাটে সকালে যাত্রীর চাপ থাকলেও দুপুরে পন্টুনে কোনো লোক ছিল না। বিকালের দিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক পি এম সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে চাঁদপুর রুটে সিডিউল অনুযায়ী লঞ্চ ছেড়ে যায় আর বরিশাল রুটেও কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে ১১০টি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ছেড়ে যায় বলে জানান পরিদর্শক। কোতোয়ালী থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, সদরঘাট টার্মিনাল কেন্দ্রিক ৮৫ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত। শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে টার্মিনাল ও আশপাশের সড়কগুলোতে। রয়েছে একটি মনিটরিং সেন্টার। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বলে ওসি জানান।
শিমুলিয়া-পাটুরিয়ায় মানুষের ঢল : ঈদ ঘিরে টানা ছয় দিনের ছুটির প্রথম দিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে। গতকাল শুক্রবার ভোরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বাস, ছোট যানবহন, প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেলে করে এ দুই ঘাটে ভিড় জমান ঈদে বাড়িফেরা মানুষেরা। বেলা বাড়লে ভিড়ও বাড়তে থাকে। যাত্রী ও যানবহনের চাপ বেশি পড়ায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটছে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো। প্রচ- গরমে কাঁধে-পিঠে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও তাদের চোখেমুখে লেগে আছে বাড়ি ফেরার আনন্দের রেশ।
শিমুলিয়া : গত বৃহস্পতিবার ছুটির ঘণ্টা বাজতেই এই ঘাটে যাত্রী ও যানবহনের চাপ বাড়তে থাকে। গতকাল শুক্রবার সকালে চাপ আরও বেড়ে যায়। গরমে গাড়ির লম্বা সারি আর মানুষের হুড়োহুড়ি ঠেলাঠেলি অতিক্রম করে যাত্রীরা ফেরি, লঞ্চ বা স্পিডবোটে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা। অনেকেই শিমুলিয়া পর্যন্ত গাড়িতে এসে লঞ্চ বা স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপর প্রান্তে গিয়ে আবার গাড়িতে উঠছেন। লঞ্চ এবং স্পিডবোটগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি নৌপথে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৮৫টি লঞ্চ এবং ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৫৫টি স্পিডবোট চলাচল করছে। স্পিডবোটে ১৫০ টাকা ও লঞ্চে ৪৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ঘাটে ভোর ৬টায় এসেছেন বরিশালগামী সুফিয়া। তিনি বলেন, “অপেক্ষা করছি ফেরিতে ওঠার জন্য। ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও খুশি।”
তিনি জানান, বছরে একবারই বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়। বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়। তাই বাড়ি যেতেই হবে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন শহীদ সুমন। শিমুলিয়া ঘাটে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ভোর সাড়ে ৫টায় ঘাটে এসেছেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি ফেরিতে উঠতে পারেননি। পিকআপ-মিনি কভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও ঘাট এলাকায় অপেক্ষায় রয়েছে এরকম শতাধিক যানবাহন। এই ঘাট দিয়ে পার হওয়া যাবে না- তা জানতেন না মালবাহী পিকআপ চালক মো. শফিক। ভুল করে এই পথে এসে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
শফিক বলেন, “এখন বিকল্প পথে যাওয়ার অবস্থাও নাই। পার হওয়ায় আশায় দুদিন ধরে অপেক্ষা করছি।” শিমুলিয়া-মাঝিকান্দির সঙ্গে এবার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ফেরি চালু থাকায় যানবাহন পারাপারে গতি বেড়েছে। দিনে রো রো ফেরি এনায়েতপুরীসহ ১০টি ফেরি চলাচল করছে এবং রাতে চলাচল করছে সাতটি ফেরি। ফলে রাতের বেলা অপেক্ষার প্রহর কমেছে যাত্রীদের। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দি (সাত্তার মাদবর) ঘাটে নতুন আরেকটি ফেরিঘাট চালু করা হয়েছে। বুধবার থেকে নতুন ঘাটটিতে যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম বলেন, “আশা করছি ১০টি ফেরি দিয়ে সব যাত্রীকে সুন্দরভাবেই পারাপার করতে পারব। “যেহেতু বাস-ট্রাক শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি রুটে পারাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেক্ষেত্রে শুধু প্রাইভেটকার, মাইক্রো এসব গাড়ি পারাপার হবে। যাত্রীরা যদি লঞ্চ ব্যবহার করে এবং ছোট গাড়িগুলো আমরা ফেরিতে পারাপার করি সেক্ষেত্রে ঘরমুখো মানুষকে সুন্দরভাবে পারাপার করতে পারব।”
শফিকুল বলেন, দিনের বেলা ১০টি ও রাতে সাতটি ফেরি চলাচল করতে পারবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের মাস্টার আছে, মেরিন বিভাগ আছে, সেনাবাহিনী আছে, বিআইডব্লিউটিএ আছে। সবাই মিলে সোচ্চার আছি আমরা। সতর্কতার সঙ্গে ফেরি চালানো হচ্ছে। যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। যাত্রীদের নির্বিঘেœ বাড়ি ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ, নৌ পুলিশ, লৌহজং থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিভিল ডিফেন্স ও আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।
পাটুরিয়া : শুক্রবার সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবহনের চাপ বাড়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটে। তবে বেলা বাড়ার পর সেই চাপ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা। পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটের পরিচালক পান্না লাল নন্দী বলেন, “সকাল বেলা মোটামুটি ঢল নেমেছিল। তবে দুপুরে চাপ অত নেই।
“অল্প সময়ে স্বস্তিতে যারা যেতে চান, তারা লঞ্চে যান। লঞ্চে বসে অল্প সময়ে পার হওয়া যায়। কিন্তু ফেরিতে পার হতে হলে তিন-চার তলা হেঁটে বসার জায়গা খুঁজতে হয়। আবার বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যেতে হয়।”
গত শুক্রবার পাটুরিয়া ঘাটে ৩২টি লঞ্চ ও ২১টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবহন পারাপার চলছে বলে জানান পান্না লাল। পাটুরিয়া ঘাটের সুপারভাইজার সুমন বলেন, “করোনার আগে মানুষের যে ঢল ছিল, এ বছর ওই চাপ নেই, তবে সকাল বেলা চাপ ছিল।” এমভি ব্ল্যাক বার্ড নামে একটি লঞ্চের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, “সকালে মেলা চাপ ছিল। এখন অত নাই। যাত্রীরা ফেরিতে না গিয়ে লঞ্চে ওঠে, কারণ (অন্যপাড়ে) লঞ্চ ঘাটে নেমেই গাড়ি পাওয়া যায়। আর ফেরিতে পার হয়ে অনেক দূরে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়।”
ওই লঞ্চের লঞ্চের সারেং দুলাল জানান, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছয়টি ট্রিপ দিয়েছেন তিনি।
রাজবাড়ীগামী একটি লঞ্চের যাত্রী কামাল হোসেন বলেন, “লোকাল বাসে আসছি, অনেক দূরে নামায় দিছে, সেখান থেকে হেঁটে আসছি। ফেরিতে পার হতে হলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সময় বেশিও লাগে। তাই লঞ্চে পার হব।”
নবীনগর থেকে বাসে করে পাটুরিয়া ঘাটে আসা রহমান খানের গন্তব্য মাগুড়া। তিনি বলেন, “আমি লঞ্চে যাতায়াত করি। প্রেসে চাকরি করি। নদীপার হয়ে বাসে চরে মাগুরা যাব।”
এদিকে ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বসানো হয়েছে। ঘাট এলাকায় থাকা মানিকগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতে আমরা প্রস্তুত আছি। “অতিরিক্ত যাত্রী যেন না ওঠে সে জন্য আমাদের সদস্যরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এবার ঈদযাত্রায় ভিন্নচিত্র

আপডেট সময় : ০৯:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদযাত্রায় গাড়ি পাওয়া নিয়ে ভোগান্তির চিত্র এবার বুঝি বদলাল; লম্বা ছুটিতে বেশির ভাগ মানুষ আগেভাগে ঢাকা ছাড়ায় এখন গাবতলী টার্মিনালে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বাসকর্মীদের।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাবতলী টার্মিনাল এলাকায় ভিড়ভাট্টা তেমন দেখা গেল না। টার্মিনালের সামনে সারি বেঁধে রাখা সেলফী পরিবহনের অনেকগুলো বাস। দুজন কর্মী ‘ঘাট দুইশ’ বলে চিৎকার করে যাত্রী জড়ো করছেন।
একটু সামনেই পদ্মা দ্রুতগামী পরিবহনের বাসটি ছেড়ে ‘যাব যাব’ করছে, তখনও চালকের সহকারী যাত্রী টানার চেষ্টা করছেন। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই সেলফী পরিবহনের কর্মী বিপ্লব দাস বলেন, “ঈদের টাইমে এবার যাত্রী ডাইকা আনা লাগতাছে। অন্যবার গাড়ি টার্মিনালে লাগার লগে লগে ভইরা যায়। এইবার লোকজন যাইতাছে ধীরে সুস্থে।”
একটি ব্যাগের দুই পাশে ধরে হাঁটছিলেন মিষ্টি আক্তার ও তার স্বামী সাইয়ীদ ইকবাল। এই দম্পতি যাবেন পাবনা। জানালেন, সরাসরি বাসের টিকেট কাটেননি। পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত লোকাল বাসে গিয়ে লঞ্চে নদী পার হয়ে কাজীরহাট হয়ে পাবনা যাবেন।
টার্মিনালের অদূরে আমিন বাজার সেতুর গোড়ায় কথা হয় পুলিশ সদস্য রবিউল ইসলামের সঙ্গে। দুপুর রোদে ছাতা হাতে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
কথায় কথায় জানালেন, ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আমিনবাজার সেতুর গোড়া থেকে মাজার রোড পর্যন্ত যানজট ছিল। যানবাহনগুলো থেমে থেমে এগিয়েছে। কিন্তু সকাল ১০টার পর একেবারেই ফাঁকা। উত্তরবঙ্গের বাসগুলো রাতেই ছেড়ে গেছে বেশিরভাগ। ছোট গাড়ি আর মোটরসাইকেল নিয়ে মানুষ খুব ভোরে সেহরির পরপরই বেরিয়ে পড়েছেন। এই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘হুন্ডার যে ভিড় আছিল ভোর বেলায়, মনে কয়- সব মানুষ হুন্ডাত কইরাই বাড়ি যাইতাছে।’
মোটরসাইকেল নিয়ে সকালে নওগাঁ গেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিব-উল-আহসান। তিনি জানান, ভোরবেলায় বেরিয়ে তেমন যানজট পাননি। সাভার, নবীনগর ও বাইপাইলে অনেক পোশাককর্মী দাঁড়িয়েছিলেন বাসের জন্য। কিছু বাসও সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল, সে কারণে একটু যানজট ছিল। চন্দ্রা মোড়ও ফাঁকা ছিল। এরপর টাঙ্গাইলের রাস্তায় বাইক দাবড়ে ৯টার মধ্যেই এলেঙ্গায় পৌঁছে যান।
“কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ভোগান্তি। অন্তত কয়েকশ বাইক সামনে তখন। প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায় শুধু টোল দিয়ে সেতু পার হতে।”
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, টাঙ্গাইলের পর বিভিন্ন জায়গায় সকালের দিকে যানজট ছিল। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। রাতের বাসগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
গাবতলী টার্মিনালে বরিশালগামী সূর্যমুখী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. সারওয়ার বললেন, রাস্তায় যানজট তুলনামূলকভাবে কম, গাড়ি সঠিক সময়ে এসে পৌঁছাচ্ছে।
“মাঝে মাঝে আধাঘণ্টা… দেরি হচ্ছে, তবে আমরা সঠিক সময়ে গাড়ি ছাড়তে পারছি।”
ঈদের তিন দিনের ছুটির আগে এবার মে দিবস আর শুক্র-শনি মিলিয়ে মোট ছয় দিনের ছুটি পেয়ে গেছে মানুষ। তাছাড়া ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে ছুটি শুরুর পর উপচে পড়া ভিড় আর হচ্ছে না বলে মনে করেন ঢাকা-মাদারীপুর রুটের সার্বিক পরিবহনের কাউন্টারম্যান মো. শওকত। তিনি বলেন, “যে যার মত সুবিধা অনুযায়ী বাড়ি যাচ্ছে। আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হত, এখন রেগুলার যাত্রীও তেমন নাই।” সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো মাইনুল জানান, “আমাদের বাসে কোনো শিডিউল সমস্যা হচ্ছে না। ফেরিঘাটে তেমন জ্যাম নেই। ঠিক সময়েই বাস আসছে।” তবে আজ শনিবার থেকে চাপ একটু বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
উত্তরের পথে চাপ থাকলেও যাত্রা সহনীয় : এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের পথে যানবাহনের চাপ থাকলেও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। ফলে এখন পর্যন্ত তেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না উত্তরবঙ্গগামী মানুষজনকে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব সংযোগ সড়কে এবং সেতু পার হয়ে সিরাজঞ্জের সীমানা পর্যন্ত তেমন কোন অসহনীয় যানজট দেখা যায়নি। উত্তরবঙ্গের প্রবেশ পথ টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার দুই লেন সড়কে ২০০ এপিবিএন সদস্যসহ আট শতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। অপরদিকে মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের সীমানায় পাঁচ শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কে দিয়ে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময় কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়।
এবার এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজার কাছে গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার একমুখী (ওয়ানওয়ে) করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে এই সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।
এ ছাড়া যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে সেজন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে পাম্প ও রেস্তোরাঁ নেই। তাই ওই অংশে ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের পানি, শুকনা খাবার সরবরাহ ও ১৫টি অস্থায়ী টয়লেট জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরদিকে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলমও বঙ্গবন্ধ সেতুর পশ্চিম পাড়ের গোলচত্বর থেকে উত্তরবঙ্গের পথে যানজট নিরসনে নানা প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে এরই মধ্যে নলকা দ্বিতীয় সেতুর এক পাশ খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যানজট এড়াতে জেলার মহাসড়ককে চার সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে পাঁচলিয়া বাজার পর্যন্ত এক, পাঁচলিয়া বাজার থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত দুই, হাটিকুমরুল থেকে কাছিহাটা টোল প্লাজা পর্যন্ত তিন ও হাটিকুমরুল থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত চার নম্বর সেক্টর করা হয়েছে। এখানে ৫৭২ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে এবং জেলা পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া তিনটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। মহাসড়কে পুলিশের এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন পুলিশ সুপার।
সিরাজগঞ্জ : শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক থেকে নলকা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এলাকায় উত্তরাঞ্চলগামী লেনে তীব্র যানজট দেখা দেয়। তবে পুলিশের তৎপরতায় বেলা ১১টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এরপর থেকে মহাসড়কে যানজট না থাকলেও যানবাহনগুলো চলছে ধীরগতিতে। সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পরিদর্শক সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার কারণে মহাসড়কে ধীরগতি রয়েছে। মাঝে মধ্যে যানজট সৃষ্টি হলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক, জেলা, থানা ও হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে রয়েছে।
ভারী যানবাহনকে পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহারের অনুরোধ প্রতিমন্ত্রীর : ঈদের ছুটিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার পথে ভারী যানবাহনের চালকদের পদ্মা নদী পার হতে শিমুলিয়ার পরিবর্তে পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহার করার অনুরোধ করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যতগুলো ঘাট আছে সব মিলে ৪৯টি ফেরি চলছে। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়ায় চলছে ১০টি, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ২১টি ও আরিচায় চারটি। পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে শিমুলিয়ায় ১০টি ভালমানের ফেরি রাখা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ পারাপারে প্রস্তুতির কোনো অভাব নেই উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শিমুলিয়ায় যাত্রীদের নিরাপদে পারাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আমরা যাত্রী সাধারণকে বলেছি, পাটুরিয়া ঘাটকে ব্যবহার করতে। আমরা এই পথে ভারী কোনো যানবাহন চলতে দিচ্ছি না। এখানে সব হালকা যান চলছে। “তবে ঘাটে মানুষের চাপ আজকে বেশি। চাপের কারণে মাঝে মাঝে একটু অসুবিধা আছে। বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা শবে কদরের ইবাদত বন্দেগি করেও মানুষের সেবায় সচেষ্ট রয়েছে। মানুষ আনন্দের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন”, বলেন প্রতিমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ার ফেরি ঘাট, লঞ্চ ঘাট, স্পিডবোট ঘাট ঘুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন নৌ প্রতিমন্ত্রী। এ সময় খালিদ মাহমুদ আরও বলেন, এখানে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা জোর দিয়ে দেখছি। সবকিছু চিন্তা করে আমরা এই পথে যে ফেরিগুলো চালাচ্ছি সেগুলো চলার মতো।“
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, বিএনপি সরকার বলেছিল, পদ্মা সেতু হবে পাটুরিয়ায়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফেরি ঘাটে এসে বলেছিলেন, পদ্মা সেতু হবে মাওয়ায়। এরপর থেকেই মাওয়া বা শিমুলিয়া ঘাট আজকের দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কথা রেখেছেন। আমরা আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে এই স্বপ্নের সেতু খুলে দেওয়া হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। ঘাটে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে; তারা বিষয়টি দেখছেন। এ সময় সেখানে অন্যান্যের মধ্যে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান শামীম আল রাজী, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সদরঘাটে সকালে যাত্রীর চাপ থাকলেও দুপুরে পন্টুনে কোনো লোক ছিল না। বিকালের দিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক পি এম সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে চাঁদপুর রুটে সিডিউল অনুযায়ী লঞ্চ ছেড়ে যায় আর বরিশাল রুটেও কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে ১১০টি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ছেড়ে যায় বলে জানান পরিদর্শক। কোতোয়ালী থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, সদরঘাট টার্মিনাল কেন্দ্রিক ৮৫ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত। শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে টার্মিনাল ও আশপাশের সড়কগুলোতে। রয়েছে একটি মনিটরিং সেন্টার। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বলে ওসি জানান।
শিমুলিয়া-পাটুরিয়ায় মানুষের ঢল : ঈদ ঘিরে টানা ছয় দিনের ছুটির প্রথম দিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে। গতকাল শুক্রবার ভোরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বাস, ছোট যানবহন, প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেলে করে এ দুই ঘাটে ভিড় জমান ঈদে বাড়িফেরা মানুষেরা। বেলা বাড়লে ভিড়ও বাড়তে থাকে। যাত্রী ও যানবহনের চাপ বেশি পড়ায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটছে লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো। প্রচ- গরমে কাঁধে-পিঠে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও তাদের চোখেমুখে লেগে আছে বাড়ি ফেরার আনন্দের রেশ।
শিমুলিয়া : গত বৃহস্পতিবার ছুটির ঘণ্টা বাজতেই এই ঘাটে যাত্রী ও যানবহনের চাপ বাড়তে থাকে। গতকাল শুক্রবার সকালে চাপ আরও বেড়ে যায়। গরমে গাড়ির লম্বা সারি আর মানুষের হুড়োহুড়ি ঠেলাঠেলি অতিক্রম করে যাত্রীরা ফেরি, লঞ্চ বা স্পিডবোটে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা। অনেকেই শিমুলিয়া পর্যন্ত গাড়িতে এসে লঞ্চ বা স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপর প্রান্তে গিয়ে আবার গাড়িতে উঠছেন। লঞ্চ এবং স্পিডবোটগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি নৌপথে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৮৫টি লঞ্চ এবং ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৫৫টি স্পিডবোট চলাচল করছে। স্পিডবোটে ১৫০ টাকা ও লঞ্চে ৪৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ঘাটে ভোর ৬টায় এসেছেন বরিশালগামী সুফিয়া। তিনি বলেন, “অপেক্ষা করছি ফেরিতে ওঠার জন্য। ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও খুশি।”
তিনি জানান, বছরে একবারই বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়। বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়। তাই বাড়ি যেতেই হবে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন শহীদ সুমন। শিমুলিয়া ঘাটে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ভোর সাড়ে ৫টায় ঘাটে এসেছেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি ফেরিতে উঠতে পারেননি। পিকআপ-মিনি কভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও ঘাট এলাকায় অপেক্ষায় রয়েছে এরকম শতাধিক যানবাহন। এই ঘাট দিয়ে পার হওয়া যাবে না- তা জানতেন না মালবাহী পিকআপ চালক মো. শফিক। ভুল করে এই পথে এসে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
শফিক বলেন, “এখন বিকল্প পথে যাওয়ার অবস্থাও নাই। পার হওয়ায় আশায় দুদিন ধরে অপেক্ষা করছি।” শিমুলিয়া-মাঝিকান্দির সঙ্গে এবার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ফেরি চালু থাকায় যানবাহন পারাপারে গতি বেড়েছে। দিনে রো রো ফেরি এনায়েতপুরীসহ ১০টি ফেরি চলাচল করছে এবং রাতে চলাচল করছে সাতটি ফেরি। ফলে রাতের বেলা অপেক্ষার প্রহর কমেছে যাত্রীদের। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দি (সাত্তার মাদবর) ঘাটে নতুন আরেকটি ফেরিঘাট চালু করা হয়েছে। বুধবার থেকে নতুন ঘাটটিতে যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম বলেন, “আশা করছি ১০টি ফেরি দিয়ে সব যাত্রীকে সুন্দরভাবেই পারাপার করতে পারব। “যেহেতু বাস-ট্রাক শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি রুটে পারাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেক্ষেত্রে শুধু প্রাইভেটকার, মাইক্রো এসব গাড়ি পারাপার হবে। যাত্রীরা যদি লঞ্চ ব্যবহার করে এবং ছোট গাড়িগুলো আমরা ফেরিতে পারাপার করি সেক্ষেত্রে ঘরমুখো মানুষকে সুন্দরভাবে পারাপার করতে পারব।”
শফিকুল বলেন, দিনের বেলা ১০টি ও রাতে সাতটি ফেরি চলাচল করতে পারবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের মাস্টার আছে, মেরিন বিভাগ আছে, সেনাবাহিনী আছে, বিআইডব্লিউটিএ আছে। সবাই মিলে সোচ্চার আছি আমরা। সতর্কতার সঙ্গে ফেরি চালানো হচ্ছে। যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। যাত্রীদের নির্বিঘেœ বাড়ি ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ, নৌ পুলিশ, লৌহজং থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিভিল ডিফেন্স ও আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।
পাটুরিয়া : শুক্রবার সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবহনের চাপ বাড়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটে। তবে বেলা বাড়ার পর সেই চাপ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা। পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটের পরিচালক পান্না লাল নন্দী বলেন, “সকাল বেলা মোটামুটি ঢল নেমেছিল। তবে দুপুরে চাপ অত নেই।
“অল্প সময়ে স্বস্তিতে যারা যেতে চান, তারা লঞ্চে যান। লঞ্চে বসে অল্প সময়ে পার হওয়া যায়। কিন্তু ফেরিতে পার হতে হলে তিন-চার তলা হেঁটে বসার জায়গা খুঁজতে হয়। আবার বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যেতে হয়।”
গত শুক্রবার পাটুরিয়া ঘাটে ৩২টি লঞ্চ ও ২১টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবহন পারাপার চলছে বলে জানান পান্না লাল। পাটুরিয়া ঘাটের সুপারভাইজার সুমন বলেন, “করোনার আগে মানুষের যে ঢল ছিল, এ বছর ওই চাপ নেই, তবে সকাল বেলা চাপ ছিল।” এমভি ব্ল্যাক বার্ড নামে একটি লঞ্চের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, “সকালে মেলা চাপ ছিল। এখন অত নাই। যাত্রীরা ফেরিতে না গিয়ে লঞ্চে ওঠে, কারণ (অন্যপাড়ে) লঞ্চ ঘাটে নেমেই গাড়ি পাওয়া যায়। আর ফেরিতে পার হয়ে অনেক দূরে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়।”
ওই লঞ্চের লঞ্চের সারেং দুলাল জানান, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছয়টি ট্রিপ দিয়েছেন তিনি।
রাজবাড়ীগামী একটি লঞ্চের যাত্রী কামাল হোসেন বলেন, “লোকাল বাসে আসছি, অনেক দূরে নামায় দিছে, সেখান থেকে হেঁটে আসছি। ফেরিতে পার হতে হলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সময় বেশিও লাগে। তাই লঞ্চে পার হব।”
নবীনগর থেকে বাসে করে পাটুরিয়া ঘাটে আসা রহমান খানের গন্তব্য মাগুড়া। তিনি বলেন, “আমি লঞ্চে যাতায়াত করি। প্রেসে চাকরি করি। নদীপার হয়ে বাসে চরে মাগুরা যাব।”
এদিকে ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বসানো হয়েছে। ঘাট এলাকায় থাকা মানিকগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতে আমরা প্রস্তুত আছি। “অতিরিক্ত যাত্রী যেন না ওঠে সে জন্য আমাদের সদস্যরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।”