ঢাকা ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

এনু-রুপনের উত্থান কাহিনী

  • আপডেট সময় : ০১:২২:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্যাসিনো সম্রাট পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া। হঠাৎ করেই বনে যান টাকার কুমির। মাত্র পাঁচ-ছয় বছরে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। জানা গেছে এই ক্যাসিনো ব্রাদারের উত্থান মূলত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সেক্রেটারি জয় গোপালের হাত ধরে। যদিও আগে থেকেই পারিবারিকভাবে জুয়ার ব্যবসা করে আসছিলেন তারা। তবে পুরোপুরি তারা ক্যাসিনোতে জড়ান ২০১৪ সালে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ এনু-রুপনের উত্থান সম্পর্কে জানিয়ে ছিলেন। তিনি জানান, ২০০৭ সাল থেকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ওয়ানটেন খেলা হতো। সেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে খেলা হতো। এনু-রুপনের উত্থান পারিবারিকভাবে। তাদের বাবা জুয়াড়ি ছিলেন। রাজধানীর সদরঘাটেই ছিল তাদের জুয়ার আড্ডা। সেখানেই তাদের পেশাদার জুয়া কার্যক্রমের শুরু। এরপর ২০১৪ সালে বড় পরিসরে ক্যাসিনো কার্যক্রম শুরু হয় ইউরোপীয় আদলে। এরপর বনেযান কোটি কোটি টাকার মালিক। অবৈধ এই অর্থ তারা খরচ করেছেন অনুসারীদের পেছনেও। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীকে বিলাসবহুল গাড়িও তারা কিনে দিয়েছেন। গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা রীতিমতো তাদের কাছে ঋণীও বলা যায়। এরপর অর্থ ও প্রভাবের জোরে আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান। কমিটি থেকে পদও পেয়ে যান। ২০১৮ সালে গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার পরপরই এলাকায় তাদের আধিপত্য আরও বেড়ে যায়। তাদের কাছে ভিড়েন এলাকার অনেক প্রভাবশালীরাও। তারপর এই দুই ভাই গড়ে তোলেন একটা বাহিনী । তাদের সঙ্গে ডাকাত শহীদের লোকজনও এসে যোগ দেন। শুরু হয় প্রভাব বিস্তারের খেলা। পুরান ঢাকার জমি দখল, ফুটপাত দখল থেকে থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো কর্মকা- নেই যা এনু-রুপন করেননি। এনু-রুপনের পথপ্রদর্শক যিনি:- এনু-রুপনের উত্থান মূলত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সেক্রেটারি জয় গোপালের হাত ধরেই। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দেওয়া তথ্য মতে, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে জড়িত কয়েকজন এজেন্টকে সিআইডি গ্রেফতার করে। আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতেই মূলত উঠে আসে সেক্রেটারি জয় গোপালের নাম। মূলত তার তত্ত্বাবধানেই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর যাত্রা।
এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জয় গোপালের নাম উঠে এলে সিআইডি তাকে ২০২০ সালের ১৩ জুলাই লালবাগ থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাসের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। জানা যায়, জয় গোপাল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন ফুটবলার ছিলেন। অবসরে গিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, পরে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৪ সালে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দুটি মামলা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেপ্তার গেন্ডারিয়ার ত্রাস দুই ভাই বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু ও রুপন ভূঁইয়াসহ ১১ জনকে মানিলন্ডারিংমামলায় সাত বছর করে কারাদ- দিয়েছেন আদালত। রায়ে আসামিদের চার কোটি টাকা অর্থদ- অনাদায়ের আরও এক বছরের কারাদ- দিয়েছেন বিচারক। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। দ-িত অপর আসামিরা হলেন- মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু, রশিদুল হক ভূঁইয়া, সহিদুল হক ভূঁইয়া, জয় গোপাল সরকার, পাভেল রহমান, তুহিন মুন্সি, আবুল কালাম আজাদ, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শিপলু, রশিদুল, সহিদুল ও পাভেল মামলার শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। তুহিন জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি কারাগারে আছেন। এর আগে একই আদালতে গত ৬ এপ্রিল এ মামলায় রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। সেদিন বিচারক ছুটিতে থাকায় রায় পিছিয়ে ২৫ এপ্রিল নতুন দিন ঠিক করা হয়। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো খেলা পরিচালনাকারী এনুর কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকা উদ্ধারের জন্য ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাড়ি ঘেরাও করে র‌্যাব। ওই অভিযানে কালামের স্ত্রী ও মেয়ের দেখানো মতে চতুর্থ তলার বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে দুই কোটি টাকা জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় র‌্যাব-৩ এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) জিয়াউল হাসান ২৫ নভেম্বর ওয়ারী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এনু ও রুপন দীর্ঘদিন ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে আসছেন। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে তারা তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন করার জন্য কালামের বাসায় রেখেছিলেন। আসামিরা জেনে-বুঝে অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপার্জিত অর্থ আড়াল করার জন্য গোপনে কালামের কাছে রাখেন। কালাম তা গ্রহণ করে নিজের কাছে রাখেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অপরাধ। মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২১ জুলাই ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী। গত বছরের ৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
জুয়া থেকে ক্যাসিনো হয়ে যেভাবে টাকার কুমির এনু-রুপন ক্যাসিনো কারবারের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ২০২০ সালে একযোগে ঢাকায় সাড়াশি অভিযান শুরু হয়। একে একে ধরা পড়তে থাকেন এর নেপণ্যে থাকা কুশীলবরা। সে সময়ই তিন মাস ধরে গাঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে থাকার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আটকা পড়েন ক্যাসিনোকা-ের অন্যতম হোতা দুই ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া।
জানা যায়, জুয়ার কারবারি থেকে ক্যাসিনোতে জড়িয়ে মাত্র পাঁচ বছরে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হন এই দুই ভাই। গ্রেপ্তার হতে হবে এমনটা কল্পনাতেও ছিল না তাদের। যে কারণে সিআইডি গ্রেপ্তার করার সময় দুই ভাইয়ের প্রশ্ন ছিল- ‘আমাদের তো র‌্যাব, ডিবি ও থানা পুলিশের গ্রেপ্তার করার কথা নয়। আপনারা কারা?’
গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার মোবাইলের সিম পরিবর্তন, দাড়ি রেখে বেশভূষা পরিবর্তন করেছিলেন এনু। সাত মামলা মাথায় নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পালিয়ে থাকতে পারেননি তারা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জালে ধরা পড়তে হয়েছে তাদের। তথ্যপ্রযুক্তি আর বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ থেকে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ২২টি জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজপত্র ও ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি টাকা থাকার প্রমাণপত্র জব্দ করা হয়। এছাড়া ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল জব্দ করে সিআইডি।
এনু-রুপনকে নিয়ে প্রথম আলোচনা শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সেদিন ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানা এলাকায়। এরপর একে একে অভিযানে উদ্ধার হতে থাকে কোটি কোটি টাকা। প্রকাশ হতে থাকে একাধিক বাড়িসহ অঢেল সম্পদের খবর। দুই ভাইয়ের বাড়ির সিন্ধুক থেকে তখন উদ্ধার হওয়া টাকা বস্তায় ভরে নিতে দেখা গেছে। তাদের সিন্ধুক থেকে নগদ ২৭ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল অভিযানে, যা দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে।
ক্যাসিনোর টাকায় অঢেল সম্পদ : অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনু ও রুপনরা সাত ভাই ও এক বোন। তার বাবা সিরাজুল ইসলামও পেশাদার জুয়াড়ি ছিলেন। একসময় পুরান ঢাকায় লেদ মেশিনের দোকানে চাকরি করলেও পরে খুলে বসেন লোহার শিটের ব্যবসা। শিটের ব্যবসায় খুব একটা মুনাফা হতো না। ফলে বাবার সঙ্গে প্রায়ই আজাদ ক্লাবে যেতেন দুই ভাই। পরে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারা। ওই ক্লাব ভাড়া নিয়ে ‘ওয়ান-টেন’ খেলা চালান এনু-রুপন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘ওয়ান টেনে’ তেমন লাভ না হওয়ায় ক্যাসিনো ব্যবসায় নামেন দুই ভাই। গ্রেপ্তারের কয়েক বছর আগে ক্যাসিনোর ম্যাজিকম্যান নেপালি নাগরিক হ্যারির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর তার মাধ্যমে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসান। ক্যাসিনোর সরঞ্জাম হ্যারির মাধ্যমে ক্লাবে ঢোকে। লাভের নির্দিষ্ট অঙ্ক হ্যারি পেতেন। বাকিটা পেতেন এনু-রুপন।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এনু-রুপন সিআইডিকে অঢেল সম্পদের তথ্য দেন বলে তখন জানা যায়। তাদের ফিরিস্তি অনুযায়ী রাজধানীর সূত্রাপুরে ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে ছয়টি ফ্ল্যাট, ওয়ারীর ১০৫ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১০৬ লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১০ তলা ভবনে ১০টি ফ্ল্যাট, একই স্ট্রিটের ১০৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে এক কাঠার একটি প্লট, ১১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ছয়টি ফ্ল্যাট এবং ১২০ নম্বর হোল্ডিংয়ে এক কাঠার প্লট রয়েছে। প্রত্যেকটি এক ইউনিটের বাড়ি। ওয়ারীর ৭০ নম্বর দক্ষিণ মৈসুন্দিতে সাত তলা ভবনের ১৪টি ফ্ল্যাটের মালিক দুই ভাই। গে-ারিয়ার ৬৫/২ শাহ সাহেব লেনে ১০ তলা ভবনের ১৭টি ফ্ল্যাটের মালিক রুপন। একই লেনের (৭০ বা ৭১ নম্বর হোল্ডিং) ছয় তলা বাড়িতে রুপনের নামে আছে চারটি ফ্ল্যাট। ওই লেনের ৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি চার তলা বাড়িতে ১৩টি ফ্ল্যাটের মালিক এনু। গে-ারিয়ার ১ নম্বর নারিন্দা লেনের চার তলা বাড়িতে এনু-রুপনদের পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১৫ নম্বর নারিন্দা লেনের ছয় তলা বাড়িতে ১১টি ফ্ল্যাট, ছয় নম্বর গুরুদাস লেনের ছয় তলা বড়িতে ১২টি ফ্ল্যাট, গে-ারিয়ার ১৩৫ নম্বর ডিস্টিলারি রোডে একটি টিনশেড বাড়ি আছে। ওয়ারী থানার পেছনে ৪৪/বি, ব্রজহরি শাহ স্ট্রিটে ৪ কাঠার একটি প্লট, ৮৮ মুরগিটোলায় নয় কাঠার প্লট, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এলাকায় ১৫ কাঠা জমির ওপর এক তলা তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট আছে দুই ভাইয়ের। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ১০ কাঠার একটি প্লট আছে।
দুই ভাইয়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে পুরান ঢাকার ২৯ নম্বর বানিয়ানগরে রুপন স্টিল হাউস, বংশালের ১৪ নম্বর নবাব ইউসুফ রোডে এনু-রুপন স্টিল হাউস, একই রোডে একটি দোকান, ধোলাইখালে বাঁধন এন্টারপ্রাইজ এবং ২৯ নম্বর বানিয়ানগরে সুমন শিট কাটিং নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
১০৩, লালমোহন স্ট্রিটের পাশে আধা কাঠা খালি জমি, ১১৯ লালমোহন স্ট্রিটে আধা কাঠা জমিসহ ছয় তলায় একটি ফ্ল্যাট, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ১২ শতাংশ জমি, পালংয়ের দোশমা গ্রামে ৩৪ শতাংশ জমি, রাজধানীর নারিন্দার ১৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে তিনটি ফ্ল্যাট, ৬৫ নম্বর শাহ সাহেব লেনে একটি টিনশেড বাড়ি আছে এনু ও রুপনের।
জানা গেছে, বিপুল বিত্তবৈভব গড়লেও ট্যাক্স ফাইলে এখনও সম্পদ বলতে পুরনো এনু-রুপন স্টিল মিলস নামের লোহালক্কড়ের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়কেই দেখিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ভাই। তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে কেনা হয় বেশিরভাগ সম্পদ। জানা গেছে, দুই ভাইয়ের সোনালি রং প্রিয় তাই তাদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সোনালি রং বেশি ব্যবহার করা হয়। বাড়ির গেট এবং অধিকাংশ কমোডও সোনালি রঙের।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এনু-রুপনের উত্থান কাহিনী

আপডেট সময় : ০১:২২:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্যাসিনো সম্রাট পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া। হঠাৎ করেই বনে যান টাকার কুমির। মাত্র পাঁচ-ছয় বছরে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। জানা গেছে এই ক্যাসিনো ব্রাদারের উত্থান মূলত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সেক্রেটারি জয় গোপালের হাত ধরে। যদিও আগে থেকেই পারিবারিকভাবে জুয়ার ব্যবসা করে আসছিলেন তারা। তবে পুরোপুরি তারা ক্যাসিনোতে জড়ান ২০১৪ সালে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ এনু-রুপনের উত্থান সম্পর্কে জানিয়ে ছিলেন। তিনি জানান, ২০০৭ সাল থেকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ওয়ানটেন খেলা হতো। সেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে খেলা হতো। এনু-রুপনের উত্থান পারিবারিকভাবে। তাদের বাবা জুয়াড়ি ছিলেন। রাজধানীর সদরঘাটেই ছিল তাদের জুয়ার আড্ডা। সেখানেই তাদের পেশাদার জুয়া কার্যক্রমের শুরু। এরপর ২০১৪ সালে বড় পরিসরে ক্যাসিনো কার্যক্রম শুরু হয় ইউরোপীয় আদলে। এরপর বনেযান কোটি কোটি টাকার মালিক। অবৈধ এই অর্থ তারা খরচ করেছেন অনুসারীদের পেছনেও। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীকে বিলাসবহুল গাড়িও তারা কিনে দিয়েছেন। গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা রীতিমতো তাদের কাছে ঋণীও বলা যায়। এরপর অর্থ ও প্রভাবের জোরে আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান। কমিটি থেকে পদও পেয়ে যান। ২০১৮ সালে গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার পরপরই এলাকায় তাদের আধিপত্য আরও বেড়ে যায়। তাদের কাছে ভিড়েন এলাকার অনেক প্রভাবশালীরাও। তারপর এই দুই ভাই গড়ে তোলেন একটা বাহিনী । তাদের সঙ্গে ডাকাত শহীদের লোকজনও এসে যোগ দেন। শুরু হয় প্রভাব বিস্তারের খেলা। পুরান ঢাকার জমি দখল, ফুটপাত দখল থেকে থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো কর্মকা- নেই যা এনু-রুপন করেননি। এনু-রুপনের পথপ্রদর্শক যিনি:- এনু-রুপনের উত্থান মূলত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সেক্রেটারি জয় গোপালের হাত ধরেই। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দেওয়া তথ্য মতে, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে জড়িত কয়েকজন এজেন্টকে সিআইডি গ্রেফতার করে। আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতেই মূলত উঠে আসে সেক্রেটারি জয় গোপালের নাম। মূলত তার তত্ত্বাবধানেই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর যাত্রা।
এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জয় গোপালের নাম উঠে এলে সিআইডি তাকে ২০২০ সালের ১৩ জুলাই লালবাগ থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাসের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। জানা যায়, জয় গোপাল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন ফুটবলার ছিলেন। অবসরে গিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, পরে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৪ সালে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দুটি মামলা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেপ্তার গেন্ডারিয়ার ত্রাস দুই ভাই বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু ও রুপন ভূঁইয়াসহ ১১ জনকে মানিলন্ডারিংমামলায় সাত বছর করে কারাদ- দিয়েছেন আদালত। রায়ে আসামিদের চার কোটি টাকা অর্থদ- অনাদায়ের আরও এক বছরের কারাদ- দিয়েছেন বিচারক। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। দ-িত অপর আসামিরা হলেন- মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু, রশিদুল হক ভূঁইয়া, সহিদুল হক ভূঁইয়া, জয় গোপাল সরকার, পাভেল রহমান, তুহিন মুন্সি, আবুল কালাম আজাদ, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শিপলু, রশিদুল, সহিদুল ও পাভেল মামলার শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। তুহিন জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি কারাগারে আছেন। এর আগে একই আদালতে গত ৬ এপ্রিল এ মামলায় রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। সেদিন বিচারক ছুটিতে থাকায় রায় পিছিয়ে ২৫ এপ্রিল নতুন দিন ঠিক করা হয়। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো খেলা পরিচালনাকারী এনুর কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকা উদ্ধারের জন্য ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাড়ি ঘেরাও করে র‌্যাব। ওই অভিযানে কালামের স্ত্রী ও মেয়ের দেখানো মতে চতুর্থ তলার বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে দুই কোটি টাকা জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় র‌্যাব-৩ এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) জিয়াউল হাসান ২৫ নভেম্বর ওয়ারী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এনু ও রুপন দীর্ঘদিন ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে আসছেন। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে তারা তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন করার জন্য কালামের বাসায় রেখেছিলেন। আসামিরা জেনে-বুঝে অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপার্জিত অর্থ আড়াল করার জন্য গোপনে কালামের কাছে রাখেন। কালাম তা গ্রহণ করে নিজের কাছে রাখেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অপরাধ। মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২১ জুলাই ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী। গত বছরের ৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
জুয়া থেকে ক্যাসিনো হয়ে যেভাবে টাকার কুমির এনু-রুপন ক্যাসিনো কারবারের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ২০২০ সালে একযোগে ঢাকায় সাড়াশি অভিযান শুরু হয়। একে একে ধরা পড়তে থাকেন এর নেপণ্যে থাকা কুশীলবরা। সে সময়ই তিন মাস ধরে গাঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে থাকার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আটকা পড়েন ক্যাসিনোকা-ের অন্যতম হোতা দুই ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া।
জানা যায়, জুয়ার কারবারি থেকে ক্যাসিনোতে জড়িয়ে মাত্র পাঁচ বছরে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হন এই দুই ভাই। গ্রেপ্তার হতে হবে এমনটা কল্পনাতেও ছিল না তাদের। যে কারণে সিআইডি গ্রেপ্তার করার সময় দুই ভাইয়ের প্রশ্ন ছিল- ‘আমাদের তো র‌্যাব, ডিবি ও থানা পুলিশের গ্রেপ্তার করার কথা নয়। আপনারা কারা?’
গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার মোবাইলের সিম পরিবর্তন, দাড়ি রেখে বেশভূষা পরিবর্তন করেছিলেন এনু। সাত মামলা মাথায় নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পালিয়ে থাকতে পারেননি তারা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জালে ধরা পড়তে হয়েছে তাদের। তথ্যপ্রযুক্তি আর বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ থেকে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ২২টি জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজপত্র ও ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি টাকা থাকার প্রমাণপত্র জব্দ করা হয়। এছাড়া ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল জব্দ করে সিআইডি।
এনু-রুপনকে নিয়ে প্রথম আলোচনা শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সেদিন ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানা এলাকায়। এরপর একে একে অভিযানে উদ্ধার হতে থাকে কোটি কোটি টাকা। প্রকাশ হতে থাকে একাধিক বাড়িসহ অঢেল সম্পদের খবর। দুই ভাইয়ের বাড়ির সিন্ধুক থেকে তখন উদ্ধার হওয়া টাকা বস্তায় ভরে নিতে দেখা গেছে। তাদের সিন্ধুক থেকে নগদ ২৭ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল অভিযানে, যা দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে।
ক্যাসিনোর টাকায় অঢেল সম্পদ : অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনু ও রুপনরা সাত ভাই ও এক বোন। তার বাবা সিরাজুল ইসলামও পেশাদার জুয়াড়ি ছিলেন। একসময় পুরান ঢাকায় লেদ মেশিনের দোকানে চাকরি করলেও পরে খুলে বসেন লোহার শিটের ব্যবসা। শিটের ব্যবসায় খুব একটা মুনাফা হতো না। ফলে বাবার সঙ্গে প্রায়ই আজাদ ক্লাবে যেতেন দুই ভাই। পরে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারা। ওই ক্লাব ভাড়া নিয়ে ‘ওয়ান-টেন’ খেলা চালান এনু-রুপন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘ওয়ান টেনে’ তেমন লাভ না হওয়ায় ক্যাসিনো ব্যবসায় নামেন দুই ভাই। গ্রেপ্তারের কয়েক বছর আগে ক্যাসিনোর ম্যাজিকম্যান নেপালি নাগরিক হ্যারির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর তার মাধ্যমে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসান। ক্যাসিনোর সরঞ্জাম হ্যারির মাধ্যমে ক্লাবে ঢোকে। লাভের নির্দিষ্ট অঙ্ক হ্যারি পেতেন। বাকিটা পেতেন এনু-রুপন।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এনু-রুপন সিআইডিকে অঢেল সম্পদের তথ্য দেন বলে তখন জানা যায়। তাদের ফিরিস্তি অনুযায়ী রাজধানীর সূত্রাপুরে ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে ছয়টি ফ্ল্যাট, ওয়ারীর ১০৫ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১০৬ লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১০ তলা ভবনে ১০টি ফ্ল্যাট, একই স্ট্রিটের ১০৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে এক কাঠার একটি প্লট, ১১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ছয়টি ফ্ল্যাট এবং ১২০ নম্বর হোল্ডিংয়ে এক কাঠার প্লট রয়েছে। প্রত্যেকটি এক ইউনিটের বাড়ি। ওয়ারীর ৭০ নম্বর দক্ষিণ মৈসুন্দিতে সাত তলা ভবনের ১৪টি ফ্ল্যাটের মালিক দুই ভাই। গে-ারিয়ার ৬৫/২ শাহ সাহেব লেনে ১০ তলা ভবনের ১৭টি ফ্ল্যাটের মালিক রুপন। একই লেনের (৭০ বা ৭১ নম্বর হোল্ডিং) ছয় তলা বাড়িতে রুপনের নামে আছে চারটি ফ্ল্যাট। ওই লেনের ৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি চার তলা বাড়িতে ১৩টি ফ্ল্যাটের মালিক এনু। গে-ারিয়ার ১ নম্বর নারিন্দা লেনের চার তলা বাড়িতে এনু-রুপনদের পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১৫ নম্বর নারিন্দা লেনের ছয় তলা বাড়িতে ১১টি ফ্ল্যাট, ছয় নম্বর গুরুদাস লেনের ছয় তলা বড়িতে ১২টি ফ্ল্যাট, গে-ারিয়ার ১৩৫ নম্বর ডিস্টিলারি রোডে একটি টিনশেড বাড়ি আছে। ওয়ারী থানার পেছনে ৪৪/বি, ব্রজহরি শাহ স্ট্রিটে ৪ কাঠার একটি প্লট, ৮৮ মুরগিটোলায় নয় কাঠার প্লট, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এলাকায় ১৫ কাঠা জমির ওপর এক তলা তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট আছে দুই ভাইয়ের। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ১০ কাঠার একটি প্লট আছে।
দুই ভাইয়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে পুরান ঢাকার ২৯ নম্বর বানিয়ানগরে রুপন স্টিল হাউস, বংশালের ১৪ নম্বর নবাব ইউসুফ রোডে এনু-রুপন স্টিল হাউস, একই রোডে একটি দোকান, ধোলাইখালে বাঁধন এন্টারপ্রাইজ এবং ২৯ নম্বর বানিয়ানগরে সুমন শিট কাটিং নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
১০৩, লালমোহন স্ট্রিটের পাশে আধা কাঠা খালি জমি, ১১৯ লালমোহন স্ট্রিটে আধা কাঠা জমিসহ ছয় তলায় একটি ফ্ল্যাট, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ১২ শতাংশ জমি, পালংয়ের দোশমা গ্রামে ৩৪ শতাংশ জমি, রাজধানীর নারিন্দার ১৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে তিনটি ফ্ল্যাট, ৬৫ নম্বর শাহ সাহেব লেনে একটি টিনশেড বাড়ি আছে এনু ও রুপনের।
জানা গেছে, বিপুল বিত্তবৈভব গড়লেও ট্যাক্স ফাইলে এখনও সম্পদ বলতে পুরনো এনু-রুপন স্টিল মিলস নামের লোহালক্কড়ের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়কেই দেখিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ভাই। তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে কেনা হয় বেশিরভাগ সম্পদ। জানা গেছে, দুই ভাইয়ের সোনালি রং প্রিয় তাই তাদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সোনালি রং বেশি ব্যবহার করা হয়। বাড়ির গেট এবং অধিকাংশ কমোডও সোনালি রঙের।