নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রথম মহাপরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এনামুল হকের অন্তিম যাত্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে এ গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের গার্ড অব অনারের পূর্বে তার মরদেহে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন- শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষসহ সর্বস্তরের জনগণ। শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে ড. এনামুল হককে নিয়ে সুধীজনেরা স্মৃতিচারণা করেন। স্মৃতিচারণায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি বলেন, তিনি কিংবদন্তী তুল্য প্রতœতাত্ত্বিক। বঙ্গীয় শিল্পরীতির সবকিছুতে উনার বিপুল আগ্রহ। তিনি শেষ বয়সেও দোতারা বাজানো শিখেছেন। তিনি আমাদের দেশকে চিনিয়েছেন নতুন করে। ড. এনামুল হকের বিটিভির প্রতি আক্ষেপ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিটিভি সে সময়ের দারুণ সব ঐতিহাসিক কাজগুলোর আর্কাইভ রাখেনি। তাহলে সেগুলো দেশের বড় সম্পদ হতো। এনামুল হকের দেশের জন্য অপরিসীম অবদান রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রইল। উনি দেশের মানুষের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। ড. এনামুল হকের মেয়ে ড. তৃণা হক বলেন, বাবার সবকিছু করার পিছনে ছিল দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা। তিনি মৃত্যুর আগের রাত পর্যন্ত গবেষণা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। হয়তো তিনি আজ আর নেই, কিন্তু তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন প্রতœতাত্ত্বিক শিল্পকলার চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাবে তার উত্তরসূরী গবেষকদের হাত ধরে। জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বহুগুণের গুণান্বিত একজন ব্যক্তির মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অপরিসীম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ড. এনামুল হকের মতো মানুষ যে বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন মনে হবে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখনও তার দেশকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, এনামুল হককে স্মরণ করা মানে দেশকে স্মরণ করা। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর না আসাটা বেদনাদায়ক। ড. এনামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় সাহিত্য পত্রিকা উত্তরণের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লন্ডন এবং নিউইয়র্ক সফর করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠাসহ জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপন প্রচলনের ক্ষেত্রে তার প্রয়াস অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রফেসর ড. এনামুল হক ২০১৭ সালে একুশে পদক ও ২০২০ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এছাড়া ভারতের পদ্মশ্রী পদকেও ভূষিত হন এ গুণীজন। প্রসঙ্গত, রোববার (১০ জুলাই) রাজধানীতে নিজে বাসভবনে মারা যান ড. এনামুল হক। শুক্রবার (১৫ জুলাই) বগুড়ায় ড. এনামুল হক আর্ট অ্যান্ড কালচারাল একাডেমিতে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় জানাজা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় বগুড়া শহিদ মিনারে নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে ড. এনামুল হকের প্রতি। পরে গ্রামের বাড়ি ভেলুরপাড়াতে ড. এনামুল হক ডিগ্রী কলেজ মাঠে ঐদিন বাদ জুমা সর্বশেষ জানাজার নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাধিস্থ করা হবে।