ঢাকা ০৯:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে জরুরি হস্তক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরা

  • আপডেট সময় : ০৬:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও রফতানিকারক সংগঠনগুলো দ্রুত এই সংকট নিরসনে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। এতে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) অংশ নেয়।

সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এনবিআরের কর্মকর্তারা শনিবার সকাল থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর ফলে বন্দরে আটকে পড়েছে রফতানিযোগ্য পোশাক ও অন্যান্য পণ্য। আমদানি পণ্য খালাসও বন্ধ রয়েছে। ফলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল হওয়ার। এতে দেশের রফতানি খাতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংকট ও কর্মকর্তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের যে নীতিগত সমস্যা আছে, তা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা উচিত। কিন্তু এই অচলাবস্থার কারণে পুরো বাণিজ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ছে।

তারা আরো বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে এবং দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে এই অচলাবস্থার দ্রুত অবসান জরুরি। আমরা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চলমান এই অচলাবস্থার ফলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক রফতানিকারক যথাসময়ে কাঁচামাল খালাস করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে রফতানি আদেশ বাতিলের হুমকির মুখে পড়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। তারা বলেন, এই সংকটের কারণে দেশের ব্যবসা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, আজকের মধ্যেই যেন সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এনবিআরের বিভিন্ন দফতর প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টা খোলা থাকায় পণ্য খালাস কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। এতে বন্দরজুড়ে জট সৃষ্টি হচ্ছে এবং কনটেইনার ধরে রাখার খরচ বাড়ছে, যা ব্যবসার ব্যয়ও বাড়িয়ে দিচ্ছে। নেতারা আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শর্তহীনভাবে কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে সংলাপে বসে সরকার যেন একটি স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করে।

নেতারা বলেন, রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার সময়ের দাবি। তবে সেই সংস্কার হতে হবে অংশগ্রহণমূলক ও বিবেচনাপূর্ণ, যাতে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে। তারা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান, দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে চলমান সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোভাবেই সমর্থন করি না। বরং আমরা চাই একটি দক্ষ, জবাবদিহিমূলক ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর প্রতিষ্ঠা হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন– আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ, এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান, বিসিএমইএ সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ট্রান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান।

প্রসঙ্গত, এনবিআরের কর্মকর্তারা ‘প্রতিশোধমূলক বদলি’ ও বর্তমান চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর ফলে শুধু আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা চালু থাকলেও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংগঠনের প্রতি উমামার কমিটমেন্ট ছিল কি না, প্রশ্ন রিফাতের

এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে জরুরি হস্তক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরা

আপডেট সময় : ০৬:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও রফতানিকারক সংগঠনগুলো দ্রুত এই সংকট নিরসনে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। এতে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) অংশ নেয়।

সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এনবিআরের কর্মকর্তারা শনিবার সকাল থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর ফলে বন্দরে আটকে পড়েছে রফতানিযোগ্য পোশাক ও অন্যান্য পণ্য। আমদানি পণ্য খালাসও বন্ধ রয়েছে। ফলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল হওয়ার। এতে দেশের রফতানি খাতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংকট ও কর্মকর্তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের যে নীতিগত সমস্যা আছে, তা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা উচিত। কিন্তু এই অচলাবস্থার কারণে পুরো বাণিজ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ছে।

তারা আরো বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে এবং দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে এই অচলাবস্থার দ্রুত অবসান জরুরি। আমরা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চলমান এই অচলাবস্থার ফলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক রফতানিকারক যথাসময়ে কাঁচামাল খালাস করতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে রফতানি আদেশ বাতিলের হুমকির মুখে পড়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। তারা বলেন, এই সংকটের কারণে দেশের ব্যবসা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, আজকের মধ্যেই যেন সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এনবিআরের বিভিন্ন দফতর প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টা খোলা থাকায় পণ্য খালাস কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। এতে বন্দরজুড়ে জট সৃষ্টি হচ্ছে এবং কনটেইনার ধরে রাখার খরচ বাড়ছে, যা ব্যবসার ব্যয়ও বাড়িয়ে দিচ্ছে। নেতারা আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শর্তহীনভাবে কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে সংলাপে বসে সরকার যেন একটি স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করে।

নেতারা বলেন, রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার সময়ের দাবি। তবে সেই সংস্কার হতে হবে অংশগ্রহণমূলক ও বিবেচনাপূর্ণ, যাতে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে। তারা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান, দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে চলমান সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোভাবেই সমর্থন করি না। বরং আমরা চাই একটি দক্ষ, জবাবদিহিমূলক ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর প্রতিষ্ঠা হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন– আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ, এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান, বিসিএমইএ সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ট্রান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান।

প্রসঙ্গত, এনবিআরের কর্মকর্তারা ‘প্রতিশোধমূলক বদলি’ ও বর্তমান চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর ফলে শুধু আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা চালু থাকলেও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে।