নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকার নিয়ে নিলে আমরা ভোটার কার্ড দেব। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এনআইডির জন্য নতুন আইন হচ্ছে। এটি পাস হলেই এনআইডি নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। জন্মের পরপরই নাগরিককে এনআইডি দেওয়া হবে।
ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট হিসেবে ইসি এ কাজটি ২০০৮ সাল থেকে করে আসছে। এজন্য সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনাররা, ইসি সচিব এমনকি সাধারণ মানুষও চাচ্ছে এটি ইসির কাছেই থাকুক। এসব বিষয় নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলমগীর বলেন, এনআইডি চলে গেলে ক্ষতি হবে না। এনআইডি এক জিনিস, ভোটার এক জিনিস। আমরা কাজ করি ভোটার তালিকা নিয়ে। এনআইডির ভিত্তিতে নির্বাচন করি না। আমরা ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করি। তিনি বলেন, এনআইডি চলে গেলেও ভোটার সার্ভার দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা কাউকেই দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা ইসির সম্পদ। তবে আমরা তথ্য শেয়ার করতে পারি। এনআইডি স্বরাষ্ট্রে চলে গেলে তারা তথ্য ব্যবহার করতে চাইলে দেওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ ইসি সচিব বলেন, এনআইডি চলে এটার নাম দেব ভোটার আইডি। ভোটার যারা তারা আমাদের কাছ থেকে কার্ড পাবেন। এনআইডি কার্ড হিসেবে তো আমরা বানাইনি। আমরা তো বানিয়েছি ভোটার কার্ড হিসেবে। আমাদের সার্ভার আমাদের কাছেই থাকবে। এ সার্ভার আমরা কারো কাছে হস্তান্তর করবো না। এটা নিয়ে যারা বুঝে তারাও বলে, যারা না বুঝে তারাও বলে।
জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে কিনতে না পারলে যা আছে তা দিয়ে যতগুলো আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যায়, ততগুলোই করব।
পরিকল্পনা কমিশন আমাদের প্রকল্প প্রস্তাব যদি মনে করে আর্থিক সক্ষমতা আমাদের আছে, সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, অনেক কিছু দেখতে হয়; তারা যদি মনে করে পারবেন তাহলে নতুন করে ইভিএম কেনা হবে। তবে এটা আমাদের যদি জানুয়ারির মধ্যে না (প্রকল্প পাস না করে) দেন, তাহলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
গোপন কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো ভোটাধিকার লঙ্ঘন- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আলমগীর বলেন, আমরা গোপন কক্ষে সিসি ক্যামেরা রাখিনি। কারণ এটা গোপন কক্ষ। কে কোন মার্কায় ভোট দিয়েছেন এটা দ্বিতীয় ব্যক্তির জানার সুযোগ নেই। সিইসি বা কমিশনার, কারো অধিকার নেই এটা জানার। যারা বলেছেন ঠিকই বলেছে। আমরা গোপন কক্ষে সিসি ক্যামেরা রাখিনি। ভোটকেন্দ্রে রেখেছি। সেখানে দেখা গেছে অবৈধ ব্যক্তি ভোট দিয়ে চলে আসছেন। কাকে ভোট দিয়েছে তাতো দেখিনি। এটা দেখার সুযোগ নেই। কেউ যদি এটা বলে থাকেন, সেটা ভুল তথ্য।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনে অনিয়মে গঠিত তদন্ত কমিটি আগামীকাল হয়তো ফিরে আসবে। তারপর তারা রিপোর্ট দেবে। রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচন : তদন্ত কমিটির কাছে ৫ প্রার্থীর বক্তব্য পেশ
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ‘ব্যাপক অনিয়ম’ খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে ইসি গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এতে মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ তিনদিনে ৬৮৫ জনকে শুনানির আওতায় আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শেষদিনে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের বন্ধ হওয়া উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচ প্রার্থীর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে এই শুনানি শুরু করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ, সদস্যসচিব ও ইসির যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। সেখানে প্রত্যেক প্রার্থী তাদের লিখিত বক্তব্য তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন। শুনানিতে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন জানান, তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে যে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল সেগুলো বাদ দিয়ে বাকি ৯৪ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে সেগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ভোট বর্জন করা চার প্রার্থী জাতীয় পার্টি সমর্থিত এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু (লাঙ্গল প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল প্রতীক), বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম (কুলা প্রতীক) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান (ট্রাক প্রতীক) জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে তারা লিখিত বক্তব্য পেশ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে তারা তা মেনে নিতে রাজি আছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে প্রথম দিনের তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১১টি ভোট কেন্দ্রের ১১ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট, গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ১৩৬ জনের শুনানি করা হয়।
পরের দিন বুধবার (১৯ অক্টোবর) সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে ৫২২ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের শুনানি সম্পন্ন করা হয়। এরমধ্যে ৪০ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। গত দুইদিনে মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ৬৫৮ জনের শুনানি সম্পন্ন করে তদন্ত কমিটি।
গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেন নির্বাচন কমিশন। সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করে পর্যায়ক্রমে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ভোট বন্ধ ঘোষণা করেন ইসি। পরে ওই উপ-নির্বাচনের ভোট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে এই শুনানির জন্য আদেশ জারি করে ইসি।
গত ২৩ জুলাই জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে এই উপ-নির্বাচনের শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন কমিশন তার বিশেষ ক্ষমতাবলে আরও ৯০ দিনের সময় বাড়িয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
এনআইডি স্বরাষ্ট্রে গেলে আমরা ভোটার কার্ড দেব : ইসি আলমগীর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ