ঢাকা ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

এডিবির ঋণের মেয়াদ শেষ হলেও বসেনি দুই হাজার সোলার পাম্প

  • আপডেট সময় : ১১:২১:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

বাণিজ্য ডেস্ক : দেশে সৌরবিদ্যুৎচালিত দুই হাজার সেচ পাম্প স্থাপন করতে চায় সরকার। এর মাধ্যমে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে ১৯ দশমিক ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাপ কমবে। ডিজেলচালিত পাম্প পরিহারের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে ১৩ হাজার ৬২৪ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমানো যাবে। এসবই ছিল পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা সামনে রেখে ৪০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৮ সালের মে মাসে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। পরবর্তীসময়ে মোট ৩৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করতে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক সীমা নির্ধারিত ছিল। প্রায় সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র ১৪ শতাংশ। আর শুধু সোলার স্থাপন কাজের বাস্তব অগ্রগতি মোট প্রকল্পের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। আমরা সময়মতো গ্রাহক পাইনি। সোলার ও পাম্প না দেখেই গ্রাহককে টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য প্রকল্পে গ্রাহকের পেমেন্ট থাকে না। কিন্তু এই প্রকল্পে গ্রাহকের পেমেন্ট আছে। এ কারণে গ্রাহক পেতে সমস্যা হচ্ছে প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মোট অর্থায়নের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৩২৪ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। মার্চ ২০২২ পর্যন্ত এডিবি থেকে অবমুক্ত হয়েছে মাত্র ২২ কোটি ৫৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, যা এডিবির প্রতিশ্রুত মোট অর্থের ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। প্রকল্পের প্রধান কাজ সোলার পাম্প কেনা এবং স্থাপনের কাজের অগ্রগতি না থাকায় এডিবি থেকে অর্থ অবমুক্তি কম হয়েছে। ‘সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষি সেচ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প’র নিবিড় পরিবীক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। আইএমইডি’র প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিবির ঋণ ও অনুদান ক্লোজিংয়ের সর্বশেষ তারিখ ২০২৩ সালের ৩০ জুন। এ কারণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই মেয়াদ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে গত ২৯ মে এডিবিকে পাঠানো হয়েছে। তবে এডিবি এর কোনো জবাব দেয়নি। অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি। এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ খাত। সারাবিশ্ব সৌরশক্তির পেছনে ছুটছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বা দুই হাজার সোলার পাম্প বসানো গেলে লোডশেডিংয়ের প্রকটতা কমতো। কৃষিখাত অনেক উপকৃত হতো। প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। নানা প্রকল্পে অনিয়ম ও অদক্ষতা দেখা যায়। এই প্রকল্পেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটলো না বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহক মিলছে না। এই প্রকল্পের আওতায় পাম্প কিনতে হলে গ্রাহককে ৩৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হবে আর বাকি ৬৫ শতাংশ দেবে সরকার। গ্রাহকের অংশের এই টাকার মধ্যে গ্রাহককে ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে। এই ১০ শতাংশ ডাউন্ট পেমেন্টের পর বাকি টাকা ১০ বছরে পরিশোধ করা যাবে। তবে পাম্প চোখে না দেখে টাকা পরিশোধের ঝুঁকি অনেক গ্রাহক নিতে চান না। প্রকল্পের আওতায় সর্বনি¤œ তিন হর্স পাওয়ারের সোলার পাম্পের দাম ১০ লাখ টাকা। এখানে গ্রাহককে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর সর্বোচ্চ ১৫ হর্স পাওয়ারের সোলার পাম্পের দাম ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি সমসাময়িক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নেওয়া হলেও এডিবি ঋণ ক্লোজিংয়ের কারণে অনিশ্চয়তায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড ইআরডির মাধ্যমে এডিবিকে চিঠি দিলেও তা এখনো সুরাহা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে।
ইআরডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি সমাপ্ত করার জন্য ঋণ ও অনুদানের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করতে এডিবিকে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এডিবি থেকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। গত মে মাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এডিবি বিষয়টি রিভিউ করছে। সংস্থাটি বিভিন্ন তথ্য চেয়েছে, আমরা তাদের তথ্য দিয়েছি।
বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড জানায়, প্রকল্পের আওতায় পাম্প কেনা হবে ইতালি থেকে এবং সোলার প্যানেল কেনা হবে চীন থেকে। ঠিকাদাররা নানা কারণে এসব সরঞ্জাম দেশে পৌঁছে দিতে দেরি করেছে। এসব কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শেখ মুজিব জাতির পিতা নন, স্বাধীনতা অর্জনে তার ত্যাগকে স্বীকার করি

এডিবির ঋণের মেয়াদ শেষ হলেও বসেনি দুই হাজার সোলার পাম্প

আপডেট সময় : ১১:২১:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাণিজ্য ডেস্ক : দেশে সৌরবিদ্যুৎচালিত দুই হাজার সেচ পাম্প স্থাপন করতে চায় সরকার। এর মাধ্যমে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে ১৯ দশমিক ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাপ কমবে। ডিজেলচালিত পাম্প পরিহারের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে ১৩ হাজার ৬২৪ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমানো যাবে। এসবই ছিল পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা সামনে রেখে ৪০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৮ সালের মে মাসে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। পরবর্তীসময়ে মোট ৩৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করতে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক সীমা নির্ধারিত ছিল। প্রায় সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র ১৪ শতাংশ। আর শুধু সোলার স্থাপন কাজের বাস্তব অগ্রগতি মোট প্রকল্পের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। আমরা সময়মতো গ্রাহক পাইনি। সোলার ও পাম্প না দেখেই গ্রাহককে টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য প্রকল্পে গ্রাহকের পেমেন্ট থাকে না। কিন্তু এই প্রকল্পে গ্রাহকের পেমেন্ট আছে। এ কারণে গ্রাহক পেতে সমস্যা হচ্ছে প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মোট অর্থায়নের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৩২৪ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। মার্চ ২০২২ পর্যন্ত এডিবি থেকে অবমুক্ত হয়েছে মাত্র ২২ কোটি ৫৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, যা এডিবির প্রতিশ্রুত মোট অর্থের ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। প্রকল্পের প্রধান কাজ সোলার পাম্প কেনা এবং স্থাপনের কাজের অগ্রগতি না থাকায় এডিবি থেকে অর্থ অবমুক্তি কম হয়েছে। ‘সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষি সেচ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প’র নিবিড় পরিবীক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। আইএমইডি’র প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিবির ঋণ ও অনুদান ক্লোজিংয়ের সর্বশেষ তারিখ ২০২৩ সালের ৩০ জুন। এ কারণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই মেয়াদ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে গত ২৯ মে এডিবিকে পাঠানো হয়েছে। তবে এডিবি এর কোনো জবাব দেয়নি। অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি। এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ খাত। সারাবিশ্ব সৌরশক্তির পেছনে ছুটছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বা দুই হাজার সোলার পাম্প বসানো গেলে লোডশেডিংয়ের প্রকটতা কমতো। কৃষিখাত অনেক উপকৃত হতো। প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। নানা প্রকল্পে অনিয়ম ও অদক্ষতা দেখা যায়। এই প্রকল্পেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটলো না বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহক মিলছে না। এই প্রকল্পের আওতায় পাম্প কিনতে হলে গ্রাহককে ৩৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হবে আর বাকি ৬৫ শতাংশ দেবে সরকার। গ্রাহকের অংশের এই টাকার মধ্যে গ্রাহককে ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে। এই ১০ শতাংশ ডাউন্ট পেমেন্টের পর বাকি টাকা ১০ বছরে পরিশোধ করা যাবে। তবে পাম্প চোখে না দেখে টাকা পরিশোধের ঝুঁকি অনেক গ্রাহক নিতে চান না। প্রকল্পের আওতায় সর্বনি¤œ তিন হর্স পাওয়ারের সোলার পাম্পের দাম ১০ লাখ টাকা। এখানে গ্রাহককে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর সর্বোচ্চ ১৫ হর্স পাওয়ারের সোলার পাম্পের দাম ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি সমসাময়িক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নেওয়া হলেও এডিবি ঋণ ক্লোজিংয়ের কারণে অনিশ্চয়তায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড ইআরডির মাধ্যমে এডিবিকে চিঠি দিলেও তা এখনো সুরাহা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে।
ইআরডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি সমাপ্ত করার জন্য ঋণ ও অনুদানের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করতে এডিবিকে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এডিবি থেকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। গত মে মাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এডিবি বিষয়টি রিভিউ করছে। সংস্থাটি বিভিন্ন তথ্য চেয়েছে, আমরা তাদের তথ্য দিয়েছি।
বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড জানায়, প্রকল্পের আওতায় পাম্প কেনা হবে ইতালি থেকে এবং সোলার প্যানেল কেনা হবে চীন থেকে। ঠিকাদাররা নানা কারণে এসব সরঞ্জাম দেশে পৌঁছে দিতে দেরি করেছে। এসব কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।