নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর এখনো ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আগামী সপ্তাহে ঠিক কবে ক্লাস-পরীক্ষা চালু হবে তাও নির্ধারণ করা হয়নি এখনো। মাইলস্টোন স্কুলের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের ইংলিশ শাখার অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের ট্রমা এখনো কাটেনি। তাদের জন্য ক্যাম্পাসে তিনজন কাউন্সিসেলিংয়ের জন্য রয়েছেন। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ক্যাম্পাসে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এমন পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের ক্লাস-পরীক্ষা চালু করা সম্ভব নয়। কবে নাগাদ চালু হবে তা নিয়েও কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে হয়তো আগামী সপ্তাহে ক্লাস চালু হতে পারে।
এদিকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে। এ দুর্ঘটনায় রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রায় অর্ধশত। নিহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে একজন, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে একজন (অজ্ঞাতনামা) এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।
বিমান বিধ্বস্তের ৫ পাঁচদিন পর শনিবার (২৬ জুলাই) স্কুলের সামনে সাধারণ মানুষের জটলা দেখা যায়। বেশিরভাগই গেটের ফাঁকা অংশ দিয়ে ভেতরটা দেখার চেষ্টা করছেন। তবে শনিবার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়নি। স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাবা-মায়ের হাত ধরে ক্যাম্পাসে ঢুকছেন। তবে সাংবাদিকসহ উৎসুক লোকজনকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বেলা ১১টার দিকে গলায় স্কুলের পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জুনায়েদ সিদ্দিকী। আধা ঘণ্টা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেলা সাড়ে ১১টায় বের হয় জুনায়েদ। এ সময় জুনায়েদ সাংবাদিকদের জানায়, ওদিন বিমান দুর্ঘটনার সময় বিকট শব্দ হয়েছিল। মনে হয়েছিল কানের পর্দা ফেটে যাবে। আতঙ্কে সবাই ছোটাছুটি করি। একপর্যায়ে শান্ত হয়ে স্কুলের যে ভবনটিতে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে আসি। দেখি শিশু শিক্ষার্থীদের হাত-পা ছড়িয়ে ছিটে আছে। বহু শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে গেছে। এমন করুণ দৃশ্য বলে বোঝানো যাবে না। এখন রাতে ঘুমাতে গেলে এই দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে ক্লাস-পরীক্ষা দেবো মাথায় আসে না।
না ফেরার দেশে অফিস সহকারী মাসুমা: রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মাসুমা (৩৮) নামে আরো এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী ছিলেন। শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার শাওন বিন রহমান। তিনি জানান, মাসুমার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। গত ৫ দিন তিনি এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শনিবার সকালে ৪০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জারিফও মারা যায়। এর আগে শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে ও দুপুরে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুই শিক্ষার্থী-আইমান (১০) ও মাকিন (১৩)-মারা গেছে। আইমানের শরীরের ৪৫ শতাংশ এবং মাকিনের শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ ছিল।
দগ্ধ ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, দুজনকে ছাড়পত্র: ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মেহাম্মদ নাসির উদ্দিন। শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। তিনি জানান, একই সঙ্গে এ ঘটনায় দগ্ধ রাফসি (১২) ও আয়ান খান (১২) নামের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, এখনো জাতীয় বার্নে ৩৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজন। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সিবিআর ক্যাটাগরিতে ৯ জন। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি। আগামী এক সপ্তাহে আরও ১০ জনকে পর্যায়ক্রমে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে চীনা চিকিৎসক দল: উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসাসেবা দিতে ঢাকায় আসা চীনা চিকিৎসক দল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকার চীনা দূতাবাস এক বার্তায় এ তথ্য জানায়। চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, চীনা চিকিৎসক ও নার্সরা ক্ষত সংক্রমণ প্রতিরোধ ও আহতদের নিয়মিত যত্নের পদ্ধতি সম্পর্কে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা রোগীদের অবস্থা পরীক্ষা, ক্ষত পরিষ্কার, ড্রেসিং পরিবর্তন, ধমনিতে ছিদ্র করতে সহায়তা ও অস্ত্রোপচারের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। চিকিৎসক দলটি সিঙ্গাপুর ও ভারতের চিকিৎসক দলসহ বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গেও পরামর্শ করছে। চীনা পক্ষ জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা আহতদের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তায় আগ্রহী। গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে পাঁচজন পোড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সের সমন্বয়ে গঠিত চীনা চিকিৎসক দল ঢাকায় আসে।