প্রত্যাশা ডেস্ক : অকস্মাৎ চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন যশোরের তবিবুর রহমান; ছিল না সংসারের খরচ মেটানোর উপায়, শেষ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ছেড়ে পৈত্রিক ভিটার পথ ধরেছিলেন এই সাবেক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার টেকনিশিয়ান। ছয় বছর পর সেই তবিবুরই এখন স্বপ্ন বুনছেন ২০২৫ সাল নাগাদ অবসরে যাওয়ার; মাঝপথে তার গল্পটা পাল্টে দিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং।
একটি সংবাদসংস্থার সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা কথা বললেন তবিবুর। তবে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা সেই যুবকের চিহ্ন ছিল না তার এখনকার কণ্ঠে। ছিল কষ্টার্জিত সাফল্য থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস আর তৃপ্তি।
তবিবুর রহমান নিজ প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটাল ভ্যালি বিডি লিমিটেড’-এর কর্মকা- চালান যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নিজস্ব অফিস থেকে। কিন্তু শুরুটা করেছিলেন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে। আর ২০১৬-১৭ সময়টাতে “অনিশ্চয়তায় সামনের হাঁটার পথ খুব কঠিন ছিল,”– বললেন তিনি।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করলেও, পরবর্তীতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়েও জড়িয়ে পড়েন তবিবুর। বছর ছয়েকের ব্যবধানে নিজস্ব কর্মীর আলাদা দল গঠন করেছেন; “আমার ডিজিটাল মার্কেটিং টিমে এখন কর্মী আছে ২৫ জন। আর গ্রাফিক ডিজাইন টিমে ১০ জন।”
পুরো বিশ্বের মতো মহামারীর আঁচ লেগেছিল তবিবুরের জীবিকাতেও। সেই কালো মেঘ এখন কেটে যাচ্ছে, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ বা ২০২৩ সালের শুরুর সময়টার মধ্যে কর্মী সংখ্যা একশ’তে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যারা আছেন, তাদের অনেকেই নিজের আয় রোজগার নিয়ে সাধারণত মুখ খুলতে চান না। তবে, তবিবুরকে এখানে ব্যতিক্রম বলা যেতেই পারে।
“এটা তো চাকরি নয় যে প্রতি মাসে একই আয় হবে। তবে, আমি একা এক মাসে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার ডলার পর্যন্ত কামিয়েছি,” নিজের আয় সম্পর্কে বললেন তবিবুর। “দলভিত্তিক গড় আয় মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডলার। আর কর্মীদের পাওনা পরিশোধ করে থেকে যায় এক থেকে দেড় হাজার ডলার।”
ফাইবার আর ফ্রিল্যান্সার ডটকমের মতো মার্কেটপ্লেসের বাইরেও ক্লায়েন্টের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন তবিবুর। সবমিলিয়ে তাদের সংখ্যা এখন “সাড়ে তিনশ থেকে চারশ।”
আর্থিক দুর্দিন কেটেছে তবিবুরের। ২০২২ সালে এসে নতুন যা পরিকল্পনা করছেন, তার বেশিরভাগই সমাজ সেবা আর আত্ম-উন্নয়ন কেন্দ্রীক।
“আইটি পেশায় যারা আছেন অনেকেরই মেরুদ-ে সমস্যাসহ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাদের জন্য খেলাধুলা আর ফ্রিল্যান্সিংয়ের সমন্বয়ে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করছি,” জানালেন তিনি।
বলে রাখা ভালো, ফ্রিল্যান্সিং পেশার পাশাপাশি শরীরচর্চা আর খেলাধুলার দিকেও আলাদা ঝোঁক আছে তবিবুরের। যশোর তায়েকোয়ান্দো ক্লাবের এই প্রতিষ্ঠাতা কোচ ও রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ সাবাতে অ্যাসোসিয়েশনে। অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিবেরও পদেও আছেন বলে জানালেন তিনি।
মার্শাল আর্টসের প্রচারণা, নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোসহ নানা পরিকল্পনা করছেন তিনি। কিন্তু ভবিষ্যত পরিকল্পার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি জোর দিলেন নিজের অবসরে।
“আমার পরিকল্পনা হচ্ছে ২০২৫ সালে অবসরে যাওয়ার। ২০২৫ আমার ডেডলাইন। তারপর আর নিজে ফ্রিল্যান্সিং করবো না।” ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাকরি হারিয়েছিলেন তবিবুর। ২০২২ সালের মার্চে এসে স্বপ্ন দেখছেন অবসরে যাওয়ার। মাঝের গল্পটা পুরোটাই পাল্টে দিয়েছে নিজের একাগ্রতা আর ফ্রিল্যান্সিং পেশা।
এখনই অবসরের কথা ভাবতে পারেন ফ্রিল্যান্সার তবিবুর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ