প্রত্যাশা ডেস্ক : নানা জটিলতার কারণে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ ৩ বছরের জায়গায় ১৩ বছর সময় লেগে যাচ্ছে। আর যথাসময়ে সেতুটি নির্মিত না হওয়ায় ওই প্রকল্পে ২৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বিলম্ব এবং ডিজাইন পরিবর্তনের কারণেই এমনটি হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর সরকারের নিজস্ব তহবিল ও সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি) ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ৯ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সওজ এবং পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু বিগত ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্রথমবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই এক বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু তার মধ্যেও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় দ্বিতীয়বার ব্যয় বাড়ানো ছাড়াই ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বছর প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানো হয়। এভাবে তৃতীয়বার ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৬ মাস এবং চতুর্থবার একই বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করা হয়। এ পর্যায়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৩ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। আর তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় এবার দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়ছে। এ পর্যায়ে দেড় বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় শত শত মানুষ প্রতিদিন নৌকায় চড়ে শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদরে যাতায়াত করে। ওসব মানুষকে কাঁচপুর সেতু হয়ে যাতায়াত করতে গেলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। তাছাড়া পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে এন-১, এন-২ এবং এন-৮ জাতীয় মহাসড়কের যানবাহনের মাধ্যমে ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে বিকল্প সড়ক সৃষ্টির প্রয়োজন হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১ হাজার ২৯০ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের সহায়তায় মূল প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৩৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬৫ কোটি ৯৮ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ হতে ৩১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হলেও ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব এখতিয়ারে বিশেষ সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ৫৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা করা হয়। পরে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে আবারো ব্যয় বাড়িয়ে ৫৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা করা হয়। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ৬১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ২৬৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হতে ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পের সংশোধনীর কারণ হিসাবে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আইটি ও সিডি ভ্যাট খাতে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় পরামর্শক খাতে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, লোকাল সাপোর্ট স্টাফদের বেতন খাতে ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং অন্য একটি খাতে বেড়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে ২ লেন অ্যাপ্রোচ সড়কের পরিমাণ ১ হাজার ৬৮১ মিটারের পরিবর্তে ৩৮৫ মিটার এবং ৪ লেন অ্যাপ্রোচ সড়কের পরিমাণ ৪৩১ মিটারের পরিবর্তে ১ হাজার ১৪২ মিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। সুপার স্ট্রাকচার অব ব্রিজ এবং সুপার স্ট্রাকচার অব ভায়াডাক্ট উভয় ক্ষেত্রেই দৈর্ঘ্য ৮৯০ মিটারের পরিবর্তে ৮৩৪ মিটার নির্ধারণ অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই সাড়ে ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য কমেছে। তাছাড়া ইউটিলিটি শিফটিং খাতে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ওসব কারণেই প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন করতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল-রশীদ জানান, প্রকল্পটিতে মূলত যে সমস্যা হয়েছিল তা হচ্ছে বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত করতে না পারা। অর্থাৎ সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে অর্থায়নের আলোচনা হলেও তাদের এ দেশে কোনো অফিস নেই। ফলে তখন যারা প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন তারাও ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি কিভাবে ঋণ চুক্তিসহ পরবর্তী কাজগুলো করবেন। এভাবেই ওই ঋণ চূড়ান্ত হতেই প্রায় ৩ বছর পেরিয়ে যায়। তারপর দরপত্র প্রক্রিয়ার সময় সৌদি ফান্ডের সম্মতি পেতে চলে যায় ৫-৬ মাস। পাশাপাশি সেতুটির ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই হলেও প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজ লাইন ছিল, যা নজরে আসেনি। ফলে ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে এখন জটিলতা কেটে গেছে। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এক যুগের বেশি সময়েও বাস্তবায়িত হয়নি তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ