ঢাকা ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

এক যুগেও শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা

  • আপডেট সময় : ১০:৪১:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : দীর্ঘ এক যুগেও শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এডুকেশন ওয়াচ চেয়ারপার্সন ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো- চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। রোববার (৩১ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে ‘শিক্ষা আইন: নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো- চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সংসদে শিক্ষা আইন পাস করার আগে এর খসড়া জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা যেন মতামত দিতে পারেন। ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন বলেন, সুন্দর দেশ গড়তে অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রত্যেক মানব মর্যাদা পাবে এমন দেশ গড়তে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন না করার দায় রাজনীতিক ও আমলাদের বলে মনে করেন তিনি। আলোচনা সভার আয়োজন করে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ। এ সময় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তিনি ৬টি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলো হলো-
১. ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-এর আলোকে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ অতি দ্রুত প্রণয়ন ও গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
২. ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত শিক্ষা আইন, ২০১৬-এর খসড়ার ওপর মতামত প্রদানের আহ্বান করা হলে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও মতবিনিময় করে সুপারিশমালা প্রস্তুত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পেশ করে এই সুপারিশমালার আলোকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া পরিমার্জন করা হয়েছে কি না বা এ সংক্রান্ত কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা।
৩. নতুন খসড়া আইন হয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপনের আগে প্রকাশ করা জরুরি যাতে সংশ্লিষ্ট এবং আগ্রহী থাকলে তাদের মতামত দিতে পারেন। বিশেষ করে শিক্ষা অধিকার, নোট বই, গাইড বই, কোচিং বাণিজ্য রোধে প্রস্তাবিত আইনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এ সকল বিষয়ে নাগরিক সমাজকে জানানো এবং তাদের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
৪. এছাড়াও বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও কোভিড প্রতিঘাত বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট ও আইনে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচ্য।
৫. শিক্ষা বিষয়ে যথাযথ দিক-নির্দেশনা প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের’ বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা প্রকাশ করে এ সকল বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।
৬. অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের অধিকার হিসেবে আইনী স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শহর- গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যালয় অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। এখন শিক্ষকদের বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দরকার। ভবিষ্যতে কোনো মহামারিতে শিক্ষা কীভাবে চলবে এ বিষয়টিও আইনে থাকার প্রস্তাব দেন তিনি। সভায় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘শিক্ষা আইন ক্যাবিনেটে গেছে কি না তা আমরা আদৌ জানি না। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না। অথচ এটি জনগণকে জানানো উচিত। শিক্ষা আইন দ্রুত করতে হবে, দ্রুত আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।’
শিক্ষা নীতিতে কোচিং, প্রাইভেট পড়ানো যাবে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের শিক্ষানীতিমালাকে বৈধতা দিয়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, কোচিং বাণিজ্য ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষায় আগেও প্রাইভেট পড়ানোর একটি বিষয় ছিল। তবে তা এতটা বাণিজ্যিক ছিল না। এখন এটি বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। উন্নত বিশ্বে রেমেডিয়াল কোচিং স্কুলের ভিতর চালু আছে। তবে তা টাকা বিনিময়ে নয়।’ জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এর আলোকে ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালে খসড়া আইন সকলের মতামতের জন্য উন্মুক্ত হয়। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আইনের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়নি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক যুগেও শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা

আপডেট সময় : ১০:৪১:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : দীর্ঘ এক যুগেও শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এডুকেশন ওয়াচ চেয়ারপার্সন ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো- চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। রোববার (৩১ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে ‘শিক্ষা আইন: নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো- চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সংসদে শিক্ষা আইন পাস করার আগে এর খসড়া জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা যেন মতামত দিতে পারেন। ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন বলেন, সুন্দর দেশ গড়তে অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রত্যেক মানব মর্যাদা পাবে এমন দেশ গড়তে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন না করার দায় রাজনীতিক ও আমলাদের বলে মনে করেন তিনি। আলোচনা সভার আয়োজন করে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ। এ সময় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তিনি ৬টি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশগুলো হলো-
১. ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-এর আলোকে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ অতি দ্রুত প্রণয়ন ও গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
২. ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত শিক্ষা আইন, ২০১৬-এর খসড়ার ওপর মতামত প্রদানের আহ্বান করা হলে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও মতবিনিময় করে সুপারিশমালা প্রস্তুত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পেশ করে এই সুপারিশমালার আলোকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া পরিমার্জন করা হয়েছে কি না বা এ সংক্রান্ত কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা।
৩. নতুন খসড়া আইন হয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপনের আগে প্রকাশ করা জরুরি যাতে সংশ্লিষ্ট এবং আগ্রহী থাকলে তাদের মতামত দিতে পারেন। বিশেষ করে শিক্ষা অধিকার, নোট বই, গাইড বই, কোচিং বাণিজ্য রোধে প্রস্তাবিত আইনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এ সকল বিষয়ে নাগরিক সমাজকে জানানো এবং তাদের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
৪. এছাড়াও বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও কোভিড প্রতিঘাত বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট ও আইনে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচ্য।
৫. শিক্ষা বিষয়ে যথাযথ দিক-নির্দেশনা প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের’ বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা প্রকাশ করে এ সকল বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।
৬. অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের অধিকার হিসেবে আইনী স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শহর- গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যালয় অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। এখন শিক্ষকদের বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দরকার। ভবিষ্যতে কোনো মহামারিতে শিক্ষা কীভাবে চলবে এ বিষয়টিও আইনে থাকার প্রস্তাব দেন তিনি। সভায় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘শিক্ষা আইন ক্যাবিনেটে গেছে কি না তা আমরা আদৌ জানি না। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না। অথচ এটি জনগণকে জানানো উচিত। শিক্ষা আইন দ্রুত করতে হবে, দ্রুত আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।’
শিক্ষা নীতিতে কোচিং, প্রাইভেট পড়ানো যাবে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের শিক্ষানীতিমালাকে বৈধতা দিয়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, কোচিং বাণিজ্য ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষায় আগেও প্রাইভেট পড়ানোর একটি বিষয় ছিল। তবে তা এতটা বাণিজ্যিক ছিল না। এখন এটি বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। উন্নত বিশ্বে রেমেডিয়াল কোচিং স্কুলের ভিতর চালু আছে। তবে তা টাকা বিনিময়ে নয়।’ জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এর আলোকে ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালে খসড়া আইন সকলের মতামতের জন্য উন্মুক্ত হয়। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আইনের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়নি।