ঢাকা ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

এক মাস পর সরব ক্লাসরুম, মানতে হবে ২০ নির্দেশনা

  • আপডেট সময় : ০১:৫৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের বাধা পেরিয়ে এক মাস পর আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে দুই ডোজ কোভিড টিকা নেওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এবার আর আগের মত তোড়জোড় দেখা যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ওমিক্রণ ধরনটি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংক্রমণ কমায় দ্রুত স্কুল খুলে দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। এক মাস পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত। ক্লাসের আগে-পরে আর স্কুলের বাইরেও তারা আগের মত মেতে উঠছে আড্ডায়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই শিফট অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করছে।
মিরপুর ১০ নম্বরের মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্রী কানিজ ফাতেমা ক্লাসে ফিরতে পেরে দারুণ খুশি। “ক্লাসে যেভাবে পড়ালেখা হয়, সেটা কিন্তু বাসায় হয় না। এই কয়দিন বাসায় তেমন পড়ালেখা হয়নি। খুব টেনশনে ছিলাম স্কুল আবার কবে খুলবে। “এখন স্কুল খুলে দেওয়ায় টিচারদের সাথে দেখা হয়েছে, বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে। অনেক খুশি লাগছে।”
এ স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবক নাসরিন আক্তার। বললেন, মহামারীর মধ্যে গত দুই বছর ছেলেমেয়েরা একরকম পড়ালেখার বাইরেই ছিল। এর পর যদি সংক্রমণ আবারও বাড়ে, তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার পক্ষে।
“ক্লাস বন্ধ থাকলে বাচ্চারা পড়তে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। এত বেশি গ্যাপ হয়েছে, এটা কমানো অসম্ভব। টিচাররা যদি একটু গুরুত্ব দেয়, তাহলেই কেবল ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।” প্রথম দিন ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে এসেছে জানিয়ে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের মর্নিং শিফটের প্রধান আমিনা রশীদ বলেন, “বাচ্চারা এখন আর বাসায় বসে থাকতে চায় না। ওরা স্কুলে আসার জন্য মুখিয়ে ছিল।”
শিক্ষার্থীরা টিকা নেওয়ায় ক্লাস চালাতে কোনো শঙ্কা দেখছেন না তিনি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা দুই ডোজ টিকা পেয়েছে, মঙ্গলবার থেকে কেবল তাদেরই ক্লাসে আসতে বলেছিল সরকার। তবে শিক্ষার্থীরা টিকা নিয়েছে কিনা, সব স্কুলে তা জানতে চাওয়া হয়নি।
সকালে রাজধানীর রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্ড হাতে নিয়ে লাইন ধরে স্কুলে প্রবেশ করেতে দেখযা যায়। টিকা কার্ড দেখার পাশাপাশি তাদের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হয় স্কুলে গেইটে। তবে মিরপুর ১২ নম্বরের লিটল ফ্লাওয়ার্স প্রিপারেটরি স্কুলে টিকার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি বলে জানিয়েছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। এ স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করার ব্যবস্থা থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোভিড সুরক্ষাবিধি পুরোপুরি মানতে দেখা যায়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মার্চ থেকে খোলার নির্দেশনা থাকলেও মঙ্গলবারই শিশুদের নিয়ে ক্লাস শুরু করে দিয়েছে বেশ কিছু স্কুল। লিটল ফ্লাওয়ার্স প্রিপারেটরি স্কুলেও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে দেখা যায়। পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলেছে, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে তাদের ছয়টি ক্লাস হয়েছে। মিরপুরের প্যারাডাইস কিন্ডারগার্টেন ও হাই স্কুলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে দেখা গেছে সকালে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাচ্চারা স্কুলে আসতে চাচ্ছে, তাই আসছে। আমাদের স্টুডেন্ট কম, তাই এক শিফটেই এখন ক্লাস হচ্ছে।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২০২০ সালের মার্চে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেড় বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্লাসে ফেরে শিক্ষার্থীরা।
এরপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারলেও চার মাস পরই আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছিল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে। সংক্রমণ কমে আসায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। আর সশরীরে ক্লাস শুরুর ক্ষেত্রে ২০ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মানতে হবে যে ২০ নির্দেশনা : ১. শ্রেণিপাঠদানে অংশ নিতে করোনার দুই ডোজ টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে সব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে, শুধু তারাই শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোভিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়সমূহ ব্যানার বা অন্য কোনও উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে সকল শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন/ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণকৃত অ্যাসাইনমেন্টগুলোর কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে;
৬. শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন ইতোপূর্বে পাঠানো নির্দেশনা মোতাবেক প্রণয়ন করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশ/প্রস্থান মুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কেবল একটি প্রবেশ/প্রস্থান মুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশ/প্রস্থান মুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া আসা করবে সেই বিষয়ে তাদের শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।
১১. প্রতিষ্ঠানের সকল ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙ্গিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. প্রতিষ্ঠানের সকল ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১৩. প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ অন্য কেউ প্রবেশ/অবস্থান/প্রস্থানের সময় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
১৪. প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এবং অন্য কেউ সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. প্রতিষ্ঠানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে।
১৯. প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
২০. প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক মাস পর সরব ক্লাসরুম, মানতে হবে ২০ নির্দেশনা

আপডেট সময় : ০১:৫৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের বাধা পেরিয়ে এক মাস পর আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে দুই ডোজ কোভিড টিকা নেওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এবার আর আগের মত তোড়জোড় দেখা যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ওমিক্রণ ধরনটি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংক্রমণ কমায় দ্রুত স্কুল খুলে দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। এক মাস পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত। ক্লাসের আগে-পরে আর স্কুলের বাইরেও তারা আগের মত মেতে উঠছে আড্ডায়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই শিফট অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করছে।
মিরপুর ১০ নম্বরের মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্রী কানিজ ফাতেমা ক্লাসে ফিরতে পেরে দারুণ খুশি। “ক্লাসে যেভাবে পড়ালেখা হয়, সেটা কিন্তু বাসায় হয় না। এই কয়দিন বাসায় তেমন পড়ালেখা হয়নি। খুব টেনশনে ছিলাম স্কুল আবার কবে খুলবে। “এখন স্কুল খুলে দেওয়ায় টিচারদের সাথে দেখা হয়েছে, বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে। অনেক খুশি লাগছে।”
এ স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবক নাসরিন আক্তার। বললেন, মহামারীর মধ্যে গত দুই বছর ছেলেমেয়েরা একরকম পড়ালেখার বাইরেই ছিল। এর পর যদি সংক্রমণ আবারও বাড়ে, তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার পক্ষে।
“ক্লাস বন্ধ থাকলে বাচ্চারা পড়তে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। এত বেশি গ্যাপ হয়েছে, এটা কমানো অসম্ভব। টিচাররা যদি একটু গুরুত্ব দেয়, তাহলেই কেবল ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।” প্রথম দিন ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে এসেছে জানিয়ে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের মর্নিং শিফটের প্রধান আমিনা রশীদ বলেন, “বাচ্চারা এখন আর বাসায় বসে থাকতে চায় না। ওরা স্কুলে আসার জন্য মুখিয়ে ছিল।”
শিক্ষার্থীরা টিকা নেওয়ায় ক্লাস চালাতে কোনো শঙ্কা দেখছেন না তিনি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা দুই ডোজ টিকা পেয়েছে, মঙ্গলবার থেকে কেবল তাদেরই ক্লাসে আসতে বলেছিল সরকার। তবে শিক্ষার্থীরা টিকা নিয়েছে কিনা, সব স্কুলে তা জানতে চাওয়া হয়নি।
সকালে রাজধানীর রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্ড হাতে নিয়ে লাইন ধরে স্কুলে প্রবেশ করেতে দেখযা যায়। টিকা কার্ড দেখার পাশাপাশি তাদের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হয় স্কুলে গেইটে। তবে মিরপুর ১২ নম্বরের লিটল ফ্লাওয়ার্স প্রিপারেটরি স্কুলে টিকার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি বলে জানিয়েছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। এ স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করার ব্যবস্থা থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোভিড সুরক্ষাবিধি পুরোপুরি মানতে দেখা যায়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মার্চ থেকে খোলার নির্দেশনা থাকলেও মঙ্গলবারই শিশুদের নিয়ে ক্লাস শুরু করে দিয়েছে বেশ কিছু স্কুল। লিটল ফ্লাওয়ার্স প্রিপারেটরি স্কুলেও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে দেখা যায়। পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলেছে, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে তাদের ছয়টি ক্লাস হয়েছে। মিরপুরের প্যারাডাইস কিন্ডারগার্টেন ও হাই স্কুলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে দেখা গেছে সকালে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাচ্চারা স্কুলে আসতে চাচ্ছে, তাই আসছে। আমাদের স্টুডেন্ট কম, তাই এক শিফটেই এখন ক্লাস হচ্ছে।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২০২০ সালের মার্চে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেড় বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্লাসে ফেরে শিক্ষার্থীরা।
এরপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারলেও চার মাস পরই আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছিল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে। সংক্রমণ কমে আসায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। আর সশরীরে ক্লাস শুরুর ক্ষেত্রে ২০ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মানতে হবে যে ২০ নির্দেশনা : ১. শ্রেণিপাঠদানে অংশ নিতে করোনার দুই ডোজ টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে সব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে, শুধু তারাই শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোভিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়সমূহ ব্যানার বা অন্য কোনও উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে সকল শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন/ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণকৃত অ্যাসাইনমেন্টগুলোর কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে;
৬. শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন ইতোপূর্বে পাঠানো নির্দেশনা মোতাবেক প্রণয়ন করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশ/প্রস্থান মুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কেবল একটি প্রবেশ/প্রস্থান মুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশ/প্রস্থান মুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া আসা করবে সেই বিষয়ে তাদের শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।
১১. প্রতিষ্ঠানের সকল ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙ্গিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. প্রতিষ্ঠানের সকল ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১৩. প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ অন্য কেউ প্রবেশ/অবস্থান/প্রস্থানের সময় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
১৪. প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এবং অন্য কেউ সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. প্রতিষ্ঠানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে।
১৯. প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
২০. প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।