ফারজানা কাশেমী : দুঃসহ সময়ের এক ক্রান্তিকাল। পুরো পৃথিবী যেন এক দুর্বিসহ জনপদ। জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দোলাচল। বিপন্ন আর নিশ্চিহ্ন পথে ক্রমশ বেঁচে থাকার দুরুহ দায়। কঠিনত্বের অসহায়ত্ব। তীব্র সংকটের মুখোমুখি যেন মানুষের বেঁচে থাকা। দুর্যোগকালীন অচলাবস্থা, গৃহে বন্দিত্ব, অর্থ সংকট, চাহিদা অনুযায়ী সুযোগের অপ্রতুলতা সব মিলিয়ে বেঁচে থাকার টানাপোড়ন।
মৃত্যুর মতো নির্মম কঠিনত্ব এড়িয়ে যাওয়ার হাজারো চেষ্টা, বেঁচে থাকার আকুলতা, সর্বাত্মক প্রচেষ্টার সাথে অসঙ্গতির এক প্রতিফলন। অসঙ্গতির আহাজারি আর অসামর্থ্যকে প্রতিহত করার করজোড় চেষ্টায় নিবেদিত রয়েছে কিছু নিরলস আর অক্লান্ত সহযাত্রী। নিবেদিত প্রাণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অসামর্থ্য, দুর্ভ্যদ্যেতা আর অপছায়া যেন দূরীভুত হয়।
একটা সাধারণ মেয়ে অসাধারণ মানবিকতায় তার দিকদর্শন প্রতিফলন করে। বেঁচে থাকার আয়োজনকে পূর্ণতা প্রদানের জন্য দুর্নিবার চেষ্টা করে। হাজারো অসঙ্গতি আর পরাজয়ের গ্লানির ভয় তুচ্ছ করে মানুষের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে। বেঁচে থাকার গান গাইতে আর আলোর মশাল প্রজ্বলনে প্রাণপণ স্বপ্ন দেখায়। ভোরের রঙে দিগন্ত আলোকিত করার নিরলস শ্রমের এক অক্লান্ত সৈনিক।
লিজা নামের সাধারণ মেয়ে এক অসাধারণ প্রাণপ্রদীপ, মুক্তির দিশা আর আলোর পথের যাত্রী। যার গতিপথ কোন পিছুটানে আড়ষ্ট হয়নি। লকডাউনের সেই দিনগুলোতে কাটাবনে কুকুরের জন্য খাবার দিতে যাওয়া মেয়েটির চোখ এড়িয়ে যায়নি। পথশিশুদের খাবার জোগাড়ের চেষ্টা। নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্য আর দুর্নিবার প্রচেষ্টায় কিছু অনাহারির খাবার জোগাড়ের নিমিত্তে গড়ে তুলে মেহমানখানা। এই মেহমানখানার মেহমান হয় ক্ষুধার্ত মানুষেরা।
শ্রদ্ধা লিজার জন্য। আজন্ম ঋণ আর কৃতজ্ঞতা তাদের জন্য, যারা লিজার এই মহৎ কর্মের সহযোগী হয়েছিলেন। কোন প্রতিবন্ধতায় লিজা মানব সেবার পথ রুষ্ট করেনি। লিজার উদ্দীপিত চেষ্টায় একদল অনাহারি মানুষের রঙিন দিন আর এক মুঠো হাসি। লিজার অনির্বাণ শ্রম সাধনায় উৎসবের দিন কিছু মানুষের পেট পুড়ে একবেলা খাওয়া। লিজা মানে একখ- আলোর মিছিল। লিজা যেনো আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন পূরণ। লিজা যেনো ১,৪৭,৬১০ বর্গ কি:মি: সীমানার প্রাচীর। লিজার জন্য গাইতে পারা-‘আমার কাছে দেশ মানে, এক লোকের পাশে অন্য লোক।’
লেখক : আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ
এক মানবিক মানুষের জীবনবোধ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ