ঢাকা ০১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

এক মণ কচুরিপানা বিক্রির টাকায় কেনা যাচ্ছে দুই মণ ধান

  • আপডেট সময় : ০৫:২১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

পিরোজপুর সংবাদদাতা: সময়ের ব্যবধানে কুটির শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সহজলভ্য ও অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি কচুরিপানা এখন কাঁচামাল হিসেবে রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে। শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি দুই হাজার টাকায়। যা দিয়ে দুই মণ ধান কেনা যাচ্ছে।

দৃষ্টিনন্দন ফুলঝুড়ি, কালারফুল পাপোশ, রকমারি ফুলদানি ও পাটি তৈরির কাঁচামাল এ কচুরিপানা। ব্যাগ, টুপি ও বাহারি সব জায়নামাজও তৈরি হয় এ থেকে। ফলে বিদেশে এর চাহিদা অনেক।

জানা যায়, পিরোজপুরের উত্তরের উপজেলা নাজিরপুরের নিম্নবিত্তদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে কচুরিপানা। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা গাওখালীর সোনাপুর গ্রামের নদী আর বিলে মাইলের পর মাইল দিগন্ত বিস্তৃত কচুরি পানা সংগ্রহে কাজ করছেন স্থানীয়রা। সব বয়সের নারী-পুরুষ এমনকি শিক্ষার্থীরাও তাদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে সহযোগী পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এ কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল হলেই ছোট-ছোট নৌকা নিয়ে স্থানীয়রা বেরিয়ে পড়েন কচুরিপানা সংগ্রহে। কিনতে ব্যয় না হওয়ায় শুধু নামমাত্র খরচে সংগ্রহ করা হচ্ছে এগুলো। এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবার সংযুক্ত এ কাজে। সংগ্রহকারীদের তালিকায় আছেন গৃহবধূরা-শিক্ষার্থীরাও।

কচুরিপানা সংগ্রহ কাজে জড়িতরা জানান, মাঘ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুম থাকলেও এর সংগ্রহ চলে সারাবছর। কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাটার পর প্রক্রিয়াজাত করে শুকাতে প্রায় ৫-৬ দিন লেগে যায়। এর পরে বিক্রি। প্রতি কেজি শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হয় ৫০ টাকা দরে। ১ কেজি শুকনো পণ্য পেতে সংগ্রহ করতে হয় প্রায় আড়াই কেজি কচুরিপানা। মাসে প্রায় ১০ টন কচুরিপানা কেনাবেচা হয় এখানে। ফলে অনেকটা বিনা পুঁজিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার মানুষ।

এ গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থান হচ্ছে এ কচুরিপানা থেকে। আর কাঁচামাল হিসেবে বিশ্বের ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এটি। কচুরিপানা হাতের নাগালে পাওয়ার কারণে অবসর সময়ে সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করছেন কাজে যুক্ত হচ্ছেন বেকার যুবক- শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয়রা জানান, কচুরিপানা কেটে যে উপার্জন হয়, তা থেকে অনেক পরিবারের সংসার চলে। এই কাজে অর্থ উপার্জন করে অনেকেই গবাদিপশুসহ হাঁস-মুরগি ক্রয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রায় ৩৬০ পিছ কচুরিপানায় এক কেজি পরিমাণ হয়ে থাকে। প্রতি কেজি কচুরিপানা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

জানা যায়, প্রাকৃতিক কচুরিপানা থেকে তৈরি করা কাঁচামাল দেশের উত্তর অঞ্চলের রংপুরসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের কুটিরশিল্পে পাঠানো হয়। যেখানে তৈরি হয় রঙিন পাটি, হাতব্যাগ, ফুলদানি, টুপি, জায়নামাজসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রী। এগুলো রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, জাপান সহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।

উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন বলেন, কচুরিপানা হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। ৫০ টাকা কেজিতে কচুরিপানা বিক্রি হয়। ফলে এক মণ কচুরিপানার দাম হয় দুই হাজার টাকা। অন্যদিকে ১ মণ ধানের দাম ১ হাজার টাকার কিছু বেশি। ফলে এক মণ কচুরিপানা বিক্রি করে দুই মণ ধান কেনা যায়। দুই মণ ধান উৎপাদন করতে অনেক খরচ হয়। সেখানে কচুরিপানা সংগ্রহে কোনো খরচ নেই, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হয়। কচুরিপানা কেটে রোদে শুকিয়ে আমার কাছে নিয়ে এলে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা করে দেই। এজন্য প্রতিপিস কচুরিপানা সর্বনিম্ন ১৮ ইঞ্চি হতে হবে। রোদে শুকিয়ে সাদা করতে হবে। একদম শুকনো হতে হবে, কোনো রস থাকা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, সরকার যদি আমাদের প্রতি দৃষ্টি দেয় ও এলাকার উন্নয়ন হয়, রাস্তাঘাট যদি ভালো হয় তাহলে এই পেশায় কর্মসংস্থান আরো বৃদ্ধি পাবে। কচুরিপানা বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি কিনে থাকে ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে। এমনকি বাংলাদেশ থেকে এই কচুরিপানা বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা কায়সার আহমেদ বলেন, এখানে উপার্জন করার আলাদা কোনো পথ নেই। কৃষির অবস্থাও ভালো না। দিন দিন সার ওষুধ ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ দিনে দিনে অসচ্ছল হয়ে পড়ছে। এখানকার মানুষ কচুরিপানা কেটে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করে আর্থিক উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। এটা করতে কোন মূলধনের প্রয়োজন হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার অনেক মানুষ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এনে পরিবারের কাজে খরচ করলেও ঋণ পরিষদের তেমন কোনো কর্মসংস্থান তাদের নেই। বর্তমানে কচুরিপানা কেটে রোদে শুকিয়ে বিক্রির মাধ্যমে তারা ঋণ পরিশোধ করছে ও তাদের ভেতরে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

কচুরিপানা বিক্রেতা ও বয়স্ক নারী কর্মী সুফিয়া বেগম বলেন, আমি যে কচুরিপানা শুকিয়ে বিক্রির জন্য এনেছি তার দাম হয়েছে ১১৯০ টাকা। আকাশ মেঘলা থাকায় শুকাতে দু-তিন দিন বেশি সময় লেগেছে। প্রতিমাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার কচুরিপানায় বিক্রি করি। এই টাকা সংসারের প্রয়োজনে খরচ করি। এনজিওর কিস্তি দেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শুনেছি নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী এলাকার কচুরিপানা বিদেশে যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। এগুলো চাষ করে নয় বরং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কচুরিপানা। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি কীভাবে এই উদ্যোগে কৃষকদের সহায়তা করা যায়।

অনুন্নত রাস্তাঘাট ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবে কুটির শিল্পের এই কাঁচামাল তৈরি করতে গিয়ে প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই পেশার সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই এলাকার রাস্তাঘাট উন্নতকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে কাঁচামালের গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে।

এসি/

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসির নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আসছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন

এক মণ কচুরিপানা বিক্রির টাকায় কেনা যাচ্ছে দুই মণ ধান

আপডেট সময় : ০৫:২১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

পিরোজপুর সংবাদদাতা: সময়ের ব্যবধানে কুটির শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সহজলভ্য ও অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি কচুরিপানা এখন কাঁচামাল হিসেবে রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে। শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি দুই হাজার টাকায়। যা দিয়ে দুই মণ ধান কেনা যাচ্ছে।

দৃষ্টিনন্দন ফুলঝুড়ি, কালারফুল পাপোশ, রকমারি ফুলদানি ও পাটি তৈরির কাঁচামাল এ কচুরিপানা। ব্যাগ, টুপি ও বাহারি সব জায়নামাজও তৈরি হয় এ থেকে। ফলে বিদেশে এর চাহিদা অনেক।

জানা যায়, পিরোজপুরের উত্তরের উপজেলা নাজিরপুরের নিম্নবিত্তদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে কচুরিপানা। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা গাওখালীর সোনাপুর গ্রামের নদী আর বিলে মাইলের পর মাইল দিগন্ত বিস্তৃত কচুরি পানা সংগ্রহে কাজ করছেন স্থানীয়রা। সব বয়সের নারী-পুরুষ এমনকি শিক্ষার্থীরাও তাদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে সহযোগী পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এ কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল হলেই ছোট-ছোট নৌকা নিয়ে স্থানীয়রা বেরিয়ে পড়েন কচুরিপানা সংগ্রহে। কিনতে ব্যয় না হওয়ায় শুধু নামমাত্র খরচে সংগ্রহ করা হচ্ছে এগুলো। এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবার সংযুক্ত এ কাজে। সংগ্রহকারীদের তালিকায় আছেন গৃহবধূরা-শিক্ষার্থীরাও।

কচুরিপানা সংগ্রহ কাজে জড়িতরা জানান, মাঘ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুম থাকলেও এর সংগ্রহ চলে সারাবছর। কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাটার পর প্রক্রিয়াজাত করে শুকাতে প্রায় ৫-৬ দিন লেগে যায়। এর পরে বিক্রি। প্রতি কেজি শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হয় ৫০ টাকা দরে। ১ কেজি শুকনো পণ্য পেতে সংগ্রহ করতে হয় প্রায় আড়াই কেজি কচুরিপানা। মাসে প্রায় ১০ টন কচুরিপানা কেনাবেচা হয় এখানে। ফলে অনেকটা বিনা পুঁজিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার মানুষ।

এ গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থান হচ্ছে এ কচুরিপানা থেকে। আর কাঁচামাল হিসেবে বিশ্বের ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এটি। কচুরিপানা হাতের নাগালে পাওয়ার কারণে অবসর সময়ে সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করছেন কাজে যুক্ত হচ্ছেন বেকার যুবক- শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয়রা জানান, কচুরিপানা কেটে যে উপার্জন হয়, তা থেকে অনেক পরিবারের সংসার চলে। এই কাজে অর্থ উপার্জন করে অনেকেই গবাদিপশুসহ হাঁস-মুরগি ক্রয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রায় ৩৬০ পিছ কচুরিপানায় এক কেজি পরিমাণ হয়ে থাকে। প্রতি কেজি কচুরিপানা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

জানা যায়, প্রাকৃতিক কচুরিপানা থেকে তৈরি করা কাঁচামাল দেশের উত্তর অঞ্চলের রংপুরসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের কুটিরশিল্পে পাঠানো হয়। যেখানে তৈরি হয় রঙিন পাটি, হাতব্যাগ, ফুলদানি, টুপি, জায়নামাজসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রী। এগুলো রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, জাপান সহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।

উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন বলেন, কচুরিপানা হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। ৫০ টাকা কেজিতে কচুরিপানা বিক্রি হয়। ফলে এক মণ কচুরিপানার দাম হয় দুই হাজার টাকা। অন্যদিকে ১ মণ ধানের দাম ১ হাজার টাকার কিছু বেশি। ফলে এক মণ কচুরিপানা বিক্রি করে দুই মণ ধান কেনা যায়। দুই মণ ধান উৎপাদন করতে অনেক খরচ হয়। সেখানে কচুরিপানা সংগ্রহে কোনো খরচ নেই, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হয়। কচুরিপানা কেটে রোদে শুকিয়ে আমার কাছে নিয়ে এলে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা করে দেই। এজন্য প্রতিপিস কচুরিপানা সর্বনিম্ন ১৮ ইঞ্চি হতে হবে। রোদে শুকিয়ে সাদা করতে হবে। একদম শুকনো হতে হবে, কোনো রস থাকা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, সরকার যদি আমাদের প্রতি দৃষ্টি দেয় ও এলাকার উন্নয়ন হয়, রাস্তাঘাট যদি ভালো হয় তাহলে এই পেশায় কর্মসংস্থান আরো বৃদ্ধি পাবে। কচুরিপানা বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি কিনে থাকে ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে। এমনকি বাংলাদেশ থেকে এই কচুরিপানা বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা কায়সার আহমেদ বলেন, এখানে উপার্জন করার আলাদা কোনো পথ নেই। কৃষির অবস্থাও ভালো না। দিন দিন সার ওষুধ ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ দিনে দিনে অসচ্ছল হয়ে পড়ছে। এখানকার মানুষ কচুরিপানা কেটে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করে আর্থিক উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। এটা করতে কোন মূলধনের প্রয়োজন হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার অনেক মানুষ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এনে পরিবারের কাজে খরচ করলেও ঋণ পরিষদের তেমন কোনো কর্মসংস্থান তাদের নেই। বর্তমানে কচুরিপানা কেটে রোদে শুকিয়ে বিক্রির মাধ্যমে তারা ঋণ পরিশোধ করছে ও তাদের ভেতরে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

কচুরিপানা বিক্রেতা ও বয়স্ক নারী কর্মী সুফিয়া বেগম বলেন, আমি যে কচুরিপানা শুকিয়ে বিক্রির জন্য এনেছি তার দাম হয়েছে ১১৯০ টাকা। আকাশ মেঘলা থাকায় শুকাতে দু-তিন দিন বেশি সময় লেগেছে। প্রতিমাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার কচুরিপানায় বিক্রি করি। এই টাকা সংসারের প্রয়োজনে খরচ করি। এনজিওর কিস্তি দেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শুনেছি নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী এলাকার কচুরিপানা বিদেশে যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। এগুলো চাষ করে নয় বরং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কচুরিপানা। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি কীভাবে এই উদ্যোগে কৃষকদের সহায়তা করা যায়।

অনুন্নত রাস্তাঘাট ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবে কুটির শিল্পের এই কাঁচামাল তৈরি করতে গিয়ে প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই পেশার সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই এলাকার রাস্তাঘাট উন্নতকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে কাঁচামালের গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে।

এসি/