ঢাকা ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

এক ব্যক্তির মৃত্যু, সঙ্গে একটি ভাষারও বিদায়

  • আপডেট সময় : ০৯:১১:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : গড় আয়ুর হিসাবে অনেক দিন বেশিই বেঁচেছিলেন ক্রিস্টিনা কালদেরন, আবার তার চেয়ে বেশি বয়সী কেউ কেউও বেঁচে আছেন বিশ্বে। কিন্তু এই নারীর মৃত্যুর সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই কারণে যে তার সঙ্গে একটি ভাষাও বিশ্ব থেকে চিরতরে বিদায় নিতে যাচ্ছে।
দক্ষিণ আমেরিকারও সুদূর দক্ষিণে চিলিতে বসবাস ছিল ক্রিস্টিনার। ইয়াগান জনগোষ্ঠীর এই নারী ৯৩ বছর বয়সে গত বুধবার মারা যান। ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারা শেষ ব্যক্তিটি তিনিই ছিলেন বলে জানিয়েছে সিএনএন ও রয়টার্স।
ক্রিস্টিনা থাকতেন চিলির দক্ষিণ প্রান্তে ভিলা উকিকা শহরের কাছে একটি সাদাসিধে বাড়িতে। উলের মোজা বানিয়ে তা বিক্রি করে চলত তার সংসার।
বিশ্বে বিলুপ্তির পথে থাকা ইয়ামানি ভাষাটি টিকিয়ে রেখেছিলেন ক্রিস্টিনা ও তার বোন। ২০০৩ সালে বোন মারা যাওয়ার পর ক্রিস্টিনার নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথনই টিকিয়ে রেখেছিল ভাষাটিকে, এখন সেই ক্রিস্টিনাও আর নেই।
হর্ন অন্তরীপ এলাকায় বসবাসরত ইয়াগান জনগোষ্ঠীর সর্বসাকুল্যে ১২শ’র মতো এখন সদস্য টিকে আছে। তাদের মধ্যেই প্রচলন ছিল ইয়ামানা ভাষার। তবে শব্দের মূল উৎস বোঝাটা খটোমটো বলে ক্রিস্টিনাদের পরের প্রজন্ম ইয়ামানি ভাষায় কথা বলা ছেড়ে দেয়।
“তিনি শুধু নিজেই মারা যাননি, তার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির একটি স্মৃতিও হারিয়ে গেল,” বলছিলেন ক্রিস্টিনার নাতনি লিদিয়া গঞ্জালেস।
ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারা ক্রিস্টিনা ভাষাটি রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। একটি অভিধান তৈরিতে হাত দিয়েছিলেন তিনি, সেটি স্পেনিশ ভাষায় অনুবাদও করছিলেন।
চিলির নতুন সংবিধান প্রণয়নে যুক্ত থাকা লিদিয়া আশা করছেন, এই অভিধানের মাধ্যমে ইয়ামানা ভাষাটি টিকে থাকার পথ তৈরি হলেও হতে পারে।
বৈচিত্র্যময় বিশ্বের বুক থেকে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে নানা ভাষা। জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো বলছে, প্রতি দুই সপ্তাহে বিশ্বের বুক থেকে বিলীন হচ্ছে একটি করে ভাষা। তার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অংশ।
বিলুপ্তির হাত থেকে ভাষাগুলোকে রক্ষাও বিশ্বব্যাপী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন হয়, যে দিনটি বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত ইতিহাস বহন করছে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এক ব্যক্তির মৃত্যু, সঙ্গে একটি ভাষারও বিদায়

আপডেট সময় : ০৯:১১:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : গড় আয়ুর হিসাবে অনেক দিন বেশিই বেঁচেছিলেন ক্রিস্টিনা কালদেরন, আবার তার চেয়ে বেশি বয়সী কেউ কেউও বেঁচে আছেন বিশ্বে। কিন্তু এই নারীর মৃত্যুর সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই কারণে যে তার সঙ্গে একটি ভাষাও বিশ্ব থেকে চিরতরে বিদায় নিতে যাচ্ছে।
দক্ষিণ আমেরিকারও সুদূর দক্ষিণে চিলিতে বসবাস ছিল ক্রিস্টিনার। ইয়াগান জনগোষ্ঠীর এই নারী ৯৩ বছর বয়সে গত বুধবার মারা যান। ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারা শেষ ব্যক্তিটি তিনিই ছিলেন বলে জানিয়েছে সিএনএন ও রয়টার্স।
ক্রিস্টিনা থাকতেন চিলির দক্ষিণ প্রান্তে ভিলা উকিকা শহরের কাছে একটি সাদাসিধে বাড়িতে। উলের মোজা বানিয়ে তা বিক্রি করে চলত তার সংসার।
বিশ্বে বিলুপ্তির পথে থাকা ইয়ামানি ভাষাটি টিকিয়ে রেখেছিলেন ক্রিস্টিনা ও তার বোন। ২০০৩ সালে বোন মারা যাওয়ার পর ক্রিস্টিনার নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথনই টিকিয়ে রেখেছিল ভাষাটিকে, এখন সেই ক্রিস্টিনাও আর নেই।
হর্ন অন্তরীপ এলাকায় বসবাসরত ইয়াগান জনগোষ্ঠীর সর্বসাকুল্যে ১২শ’র মতো এখন সদস্য টিকে আছে। তাদের মধ্যেই প্রচলন ছিল ইয়ামানা ভাষার। তবে শব্দের মূল উৎস বোঝাটা খটোমটো বলে ক্রিস্টিনাদের পরের প্রজন্ম ইয়ামানি ভাষায় কথা বলা ছেড়ে দেয়।
“তিনি শুধু নিজেই মারা যাননি, তার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির একটি স্মৃতিও হারিয়ে গেল,” বলছিলেন ক্রিস্টিনার নাতনি লিদিয়া গঞ্জালেস।
ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারা ক্রিস্টিনা ভাষাটি রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। একটি অভিধান তৈরিতে হাত দিয়েছিলেন তিনি, সেটি স্পেনিশ ভাষায় অনুবাদও করছিলেন।
চিলির নতুন সংবিধান প্রণয়নে যুক্ত থাকা লিদিয়া আশা করছেন, এই অভিধানের মাধ্যমে ইয়ামানা ভাষাটি টিকে থাকার পথ তৈরি হলেও হতে পারে।
বৈচিত্র্যময় বিশ্বের বুক থেকে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে নানা ভাষা। জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো বলছে, প্রতি দুই সপ্তাহে বিশ্বের বুক থেকে বিলীন হচ্ছে একটি করে ভাষা। তার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অংশ।
বিলুপ্তির হাত থেকে ভাষাগুলোকে রক্ষাও বিশ্বব্যাপী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন হয়, যে দিনটি বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত ইতিহাস বহন করছে।