ঢাকা ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

এক-দুই মাস ধৈর্য ধরতে বললেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:১৮:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দাম বাড়িয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ করতে কেউ চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলে টানা ছয় মাস ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। আর না পারায় বাধ্য হয়ে দাম সমন্বয় করা হয়েছে, বাড়ানো হয়নি। এক-দুই মাস ধৈর্য ধরুন, সহনীয় হোন। বিশ্ববাজারে কমলেই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।
সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশের জ্বালানি পরিস্থিতি: অস্থির বিশ্ববাজার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। সমুদ্র কেন অনুসন্ধান হয়নি, কেন গ্যাসে উৎপাদন বাড়েনি। এসব নানা কথা হচ্ছে। সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সময় নয়। তাৎক্ষণিক সমাধান দরকার।
চার থেকে পাঁচ মাস আগেও দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সংকট হয়নি বলে উল্লেখ করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান সংকট বৈশ্বিক। সব দেশ নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবে, এমনটা আগে থেকে কারও পূর্বাভাস ছিল না। বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরকার আগাম সতর্কতা নিয়েছে। আগামী মাসের শেষ দিকে লোডশেডিং থেকে বের হতে পারবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে শত শত কারখানা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাত ও বস্ত্র খাতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। এতে করে গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। দেশে দিনে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়িয়েও ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছিল না। তাই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করা হয়েছে। ১০৮টি ইকোনমিক অঞ্চল শুরুর অপেক্ষায়। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াট পরিকল্পনায় আছে। সামনে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়তে থাকবে। তাই দেশে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি বাড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থলে ও সমুদ্রে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে শুরু থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে।
জ্বালানি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই ৪৬টি কূপ খনন করে অন্তত ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হবে। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। তবে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির। এটি জ্বালানি বিভাগ করতে পারে না। জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার মানসিকতা থেকে এভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। বিপিসির বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ আছে। এগুলো পরিষ্কার করা দরকার।
দেশের গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, বিদ্যুতের সক্ষমতা আছে। মূল সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি। আর এ সংকটের মূলে আছে নিজস্ব জ্বালানির প্রতি অবহেলা। এটি সব সরকারই করেছে। দেশের গ্যাস যথাযথভাবে অনুসন্ধান ও উৎপাদন করা হলে এখনকার সংকট তৈরি হতো না। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে না পারার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, গত বছরেও সাড়ে ১২ ডলারে এলএনজি কেনা গেছে খোলাবাজার থেকে। এটি বেড়ে ৪০ ডলারে পৌঁছায় বাধ্য হয়ে খোলাবাজার থেকে কেনা বন্ধ করা হয়েছে। দাম কমলে এ বিষয়ে চিন্তা করা হবে। দেশীয় সম্পদের ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিআইআইএসএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাহফুজ কবির। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি আগামী কয়েক মাসে আরও বাড়বে। কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, শিল্প খাতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। জ্বালানির দাম খুব অস্থিতিশীল সব সময়ই। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা আমজাদ হোসেন।
নিবন্ধে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ বিইআরসির মাধ্যমে করা উচিত। পাশাপাশি ভারতের মতো নিয়মিত দাম সমন্বয় করা উচিত। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করতে হবে। যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্র ঠিক সময়ে উৎপাদনে আসতে পারলেও সঞ্চালন লাইনের কারণে বসে থাকার শঙ্কা রয়ে গেছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

এক-দুই মাস ধৈর্য ধরতে বললেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:১৮:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দাম বাড়িয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ করতে কেউ চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলে টানা ছয় মাস ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। আর না পারায় বাধ্য হয়ে দাম সমন্বয় করা হয়েছে, বাড়ানো হয়নি। এক-দুই মাস ধৈর্য ধরুন, সহনীয় হোন। বিশ্ববাজারে কমলেই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।
সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশের জ্বালানি পরিস্থিতি: অস্থির বিশ্ববাজার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। সমুদ্র কেন অনুসন্ধান হয়নি, কেন গ্যাসে উৎপাদন বাড়েনি। এসব নানা কথা হচ্ছে। সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সময় নয়। তাৎক্ষণিক সমাধান দরকার।
চার থেকে পাঁচ মাস আগেও দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সংকট হয়নি বলে উল্লেখ করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান সংকট বৈশ্বিক। সব দেশ নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবে, এমনটা আগে থেকে কারও পূর্বাভাস ছিল না। বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরকার আগাম সতর্কতা নিয়েছে। আগামী মাসের শেষ দিকে লোডশেডিং থেকে বের হতে পারবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে শত শত কারখানা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাত ও বস্ত্র খাতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। এতে করে গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। দেশে দিনে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়িয়েও ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছিল না। তাই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করা হয়েছে। ১০৮টি ইকোনমিক অঞ্চল শুরুর অপেক্ষায়। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াট পরিকল্পনায় আছে। সামনে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়তে থাকবে। তাই দেশে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি বাড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থলে ও সমুদ্রে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে শুরু থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে।
জ্বালানি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই ৪৬টি কূপ খনন করে অন্তত ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হবে। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। তবে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির। এটি জ্বালানি বিভাগ করতে পারে না। জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার মানসিকতা থেকে এভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। বিপিসির বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ আছে। এগুলো পরিষ্কার করা দরকার।
দেশের গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, বিদ্যুতের সক্ষমতা আছে। মূল সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি। আর এ সংকটের মূলে আছে নিজস্ব জ্বালানির প্রতি অবহেলা। এটি সব সরকারই করেছে। দেশের গ্যাস যথাযথভাবে অনুসন্ধান ও উৎপাদন করা হলে এখনকার সংকট তৈরি হতো না। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে না পারার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, গত বছরেও সাড়ে ১২ ডলারে এলএনজি কেনা গেছে খোলাবাজার থেকে। এটি বেড়ে ৪০ ডলারে পৌঁছায় বাধ্য হয়ে খোলাবাজার থেকে কেনা বন্ধ করা হয়েছে। দাম কমলে এ বিষয়ে চিন্তা করা হবে। দেশীয় সম্পদের ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিআইআইএসএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাহফুজ কবির। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি আগামী কয়েক মাসে আরও বাড়বে। কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, শিল্প খাতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। জ্বালানির দাম খুব অস্থিতিশীল সব সময়ই। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা আমজাদ হোসেন।
নিবন্ধে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ বিইআরসির মাধ্যমে করা উচিত। পাশাপাশি ভারতের মতো নিয়মিত দাম সমন্বয় করা উচিত। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করতে হবে। যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্র ঠিক সময়ে উৎপাদনে আসতে পারলেও সঞ্চালন লাইনের কারণে বসে থাকার শঙ্কা রয়ে গেছে।