ঢাকা ১০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫

এক জমিতে তিন ফসল, কৃষকের মুখে হাসি

  • আপডেট সময় : ০৭:১৪:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

জামালপুর সংবাদদাতা : চরাঞ্চলের মাটি, জলবায়ু ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে মাথায় রেখে যমুনার চরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকায় গবেষণার কাজ চলমান রয়েছে। গবেষণার অংশ হিসেবে তারা শস্যবিন্যাস পদ্ধতির মাধ্যমে যমুনার চরের একই জমিতে সারা বছরে তিন ধরনের ফসল চাষ করে প্রাথমিকভাবে সাফল্য পেয়েছেন। যা ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যমুনার চরের মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ‘ফসলের উৎপাদনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরীক্ষণ এবং জলবায়ু সহনশীল ফসল ব্যবস্থার অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চরাঞ্চলের ফসলের উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ খায়রুল হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও বাকৃবির পিএইচডি গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইকরামুল হক। এ গবেষণার মাধ্যমে চরাঞ্চলে বিদ্যমান ফসল ও চাষ পদ্ধতি বের করা, জলবায়ু সহনশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক শস্য ব্যবস্থার বিকাশ, খরার প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন এবং জলবায়ু-স্মার্ট উৎপাদন পদ্ধতি বের করাই হলো গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস জানান, চরাঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত সুনির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ না করে বিচ্ছিন্নভাবে ভুট্টা, মরিচ, ধনিয়া, পাট, আলু, রসুন, ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন। ফলে ফসলের উৎপাদন কম হয় এবং আকস্মিক বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গবেষণার আওতায় তিন ধরনের লাভজনক শস্যবিন্যাস নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো ভুট্টা-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি। অন্যটি আলু-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি এবং আরেকটি মরিচ-চিনাবাদাম-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি। এই শস্যবিন্যাস পদ্ধতির অনুসরণ করে আধুনিক জাত, উন্নত প্রযুক্তি এবং কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতিটি চিহ্নিত করে চরাঞ্চলের চাষিদের জন্য সুপারিশ করা হবে। ড. আহমেদ খায়রুল হাসান বলেন, গত দুই বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, আকস্মিক বন্যা মোকাবিলায় জলমগ্ন সহনশীল বিনাধান-১১ এবং কম বয়সী চারা ভালো ফলন দিয়েছে।

ভুট্টা ও মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল (সাথী ফসল) হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, কালোজিরা, মেথি, ধনিয়া ও মটরশুঁটি চাষ করার ফলে একক ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মালচিং ও ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটের বীজ প্রাইমিং করে অঙ্কুরোদগমের হার বেড়েছে। আগাছা দমনে আগাছানাশক ও হ্যান্ড উইডিংয়ের সমন্বিত ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এছাড়াও বারি সরিষা-১৪, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, গম, রসুন, কাউন ও সূর্যমুখীর ফলনও সন্তোষজনক ছিল। গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকার কৃষাণি নাছিমা খাতুন জানান, গবেষক ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ৩৩ শতাংশ (১ বিঘা) জমিতে সূর্যমুখী, ভুট্টা ও রোপা আমন চাষ করেছি। এতে তিনি ভালো ফলন পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও অধিক জমিতে এই শস্যবিন্যাসে চাষ করার পরিকল্পনা করছি। গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে যুক্ত কৃষিতত্ত্ব বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম গবেষণার বিষয়ে বলেন, নির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ করলে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আগাছার প্রভাব কমে, মাটির পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে এ গবেষণার ক্ষেতে প্রতি আধা শতাংশ জমিতে ৭৬ কেজি পর্যন্ত আলু উৎপাদনের নজির পাওয়া গেছে, যা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এই গবেষণার সফল বাস্তবায়ন চরাঞ্চলের কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন গবেষক ও স্থানীয় কৃষকরা।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক জমিতে তিন ফসল, কৃষকের মুখে হাসি

আপডেট সময় : ০৭:১৪:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

জামালপুর সংবাদদাতা : চরাঞ্চলের মাটি, জলবায়ু ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে মাথায় রেখে যমুনার চরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকায় গবেষণার কাজ চলমান রয়েছে। গবেষণার অংশ হিসেবে তারা শস্যবিন্যাস পদ্ধতির মাধ্যমে যমুনার চরের একই জমিতে সারা বছরে তিন ধরনের ফসল চাষ করে প্রাথমিকভাবে সাফল্য পেয়েছেন। যা ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যমুনার চরের মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ‘ফসলের উৎপাদনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরীক্ষণ এবং জলবায়ু সহনশীল ফসল ব্যবস্থার অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চরাঞ্চলের ফসলের উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ খায়রুল হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও বাকৃবির পিএইচডি গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইকরামুল হক। এ গবেষণার মাধ্যমে চরাঞ্চলে বিদ্যমান ফসল ও চাষ পদ্ধতি বের করা, জলবায়ু সহনশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক শস্য ব্যবস্থার বিকাশ, খরার প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন এবং জলবায়ু-স্মার্ট উৎপাদন পদ্ধতি বের করাই হলো গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস জানান, চরাঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত সুনির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ না করে বিচ্ছিন্নভাবে ভুট্টা, মরিচ, ধনিয়া, পাট, আলু, রসুন, ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন। ফলে ফসলের উৎপাদন কম হয় এবং আকস্মিক বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গবেষণার আওতায় তিন ধরনের লাভজনক শস্যবিন্যাস নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো ভুট্টা-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি। অন্যটি আলু-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি এবং আরেকটি মরিচ-চিনাবাদাম-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি। এই শস্যবিন্যাস পদ্ধতির অনুসরণ করে আধুনিক জাত, উন্নত প্রযুক্তি এবং কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতিটি চিহ্নিত করে চরাঞ্চলের চাষিদের জন্য সুপারিশ করা হবে। ড. আহমেদ খায়রুল হাসান বলেন, গত দুই বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, আকস্মিক বন্যা মোকাবিলায় জলমগ্ন সহনশীল বিনাধান-১১ এবং কম বয়সী চারা ভালো ফলন দিয়েছে।

ভুট্টা ও মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল (সাথী ফসল) হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, কালোজিরা, মেথি, ধনিয়া ও মটরশুঁটি চাষ করার ফলে একক ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মালচিং ও ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটের বীজ প্রাইমিং করে অঙ্কুরোদগমের হার বেড়েছে। আগাছা দমনে আগাছানাশক ও হ্যান্ড উইডিংয়ের সমন্বিত ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এছাড়াও বারি সরিষা-১৪, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, গম, রসুন, কাউন ও সূর্যমুখীর ফলনও সন্তোষজনক ছিল। গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকার কৃষাণি নাছিমা খাতুন জানান, গবেষক ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ৩৩ শতাংশ (১ বিঘা) জমিতে সূর্যমুখী, ভুট্টা ও রোপা আমন চাষ করেছি। এতে তিনি ভালো ফলন পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও অধিক জমিতে এই শস্যবিন্যাসে চাষ করার পরিকল্পনা করছি। গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে যুক্ত কৃষিতত্ত্ব বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম গবেষণার বিষয়ে বলেন, নির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ করলে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আগাছার প্রভাব কমে, মাটির পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে এ গবেষণার ক্ষেতে প্রতি আধা শতাংশ জমিতে ৭৬ কেজি পর্যন্ত আলু উৎপাদনের নজির পাওয়া গেছে, যা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এই গবেষণার সফল বাস্তবায়ন চরাঞ্চলের কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন গবেষক ও স্থানীয় কৃষকরা।