প্রত্যাশা ডেস্ক: মানুষ বা অন্যান্য উন্নত প্রাণীর মধ্যে আহতদের সেবা করার প্রবণতা দেখা যায়, কিন্তু তাই বলে পোকামাকড়? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে আফ্রিকার এক বিশেষ প্রজাতির পিঁপড়া তাদের আহত সতীর্থদের শুধুমাত্র উদ্ধারই করে না, বরং তাদের ক্ষতস্থানে রীতিমতো ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ প্রয়োগ করে চিকিৎসাও করে।
এই অসাধারণ পিঁপড়াটির নাম মাতাবেলে, যারা প্রধানত উঁইপোকা শিকার করে জীবনধারণ করে। উঁইপোকার দুর্গের ভেতর এই শিকার অভিযান খুবই বিপজ্জনক, যার ফলে প্রায়ই অনেক পিঁপড়া মারাত্মকভাবে আহত হয় বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারায়।
গবেষকরা দেখেছেন, এই পিঁপড়ারা তাদের আহত সঙ্গীদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করে বাসায় ফিরিয়ে আনে। কিন্তু আসল চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটে বাসায় ফেরার পর।
জার্মানির ভ্যুর্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল আবিষ্কার করেছে যে, যখন কোনো আহত পিঁপড়াকে বাসায় আনা হয়, তখন অন্য ‘স্বাস্থ্যকর্মী’ পিঁপড়ারা এগিয়ে আসে। তারা প্রথমে ক্ষতস্থানটি পরীক্ষা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পিঁপড়ারা তাদের শরীরের পাশে থাকা একটি বিশেষ গ্রন্থি থেকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা জীবাণুনাশক পদার্থ নিঃসরণ করে। এরপর তারা সেই পদার্থ সরাসরি আহতের ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়। এই পদার্থগুলো ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করে।
বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবিশ্বাস্যরকম কার্যকর। যে সমস্ত আহত পিঁপড়া এই চিকিৎসা পায়নি, তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংক্রমণে মারা গেছে। অন্যদিকে, যে পিঁপড়ারা সতীর্থদের কাছ থেকে এই ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ চিকিৎসা পেয়েছে, তাদের বেঁচে থাকার হার বেড়ে প্রায় ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে!
এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, সামাজিক প্রাণী হিসেবে পিঁপড়ারা কতটা উন্নত এবং তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি যত্ন নেওয়ার এমন জটিল ব্যবস্থা বিবর্তিত হয়েছে, যা তাদের কলোনির টিকে থাকাকে নিশ্চিত করে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসি/আপ্র/২০/১০/২০২৫