নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি একেবারেই সন্তুষ্ট নয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলটির সাত সদস্যের এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে ফখরুল যখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন, তখন তার চোখেমুখে স্পষ্ট ছিল হতাশা। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তার (প্রধান উপদেষ্টার) বক্তব্যে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়, তিনি সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেটলাইন আমাদেরকে দেননি। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিনি নির্বাচন শেষ করতে চান…আজকে আমাদের তিনি এটা বলেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি, ডিসেম্বরের যে কাট অফ টাইম, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, সেটা আরো খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) ডিসেম্বর থেকে জুন বলেছেন, উনি বলেননি এটা ডিসেম্বরে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে, আমাদের কাটঅফ টাইম ইজ ডিসেম্বর।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল যুমনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাত করেন। সেদিন বেরিয়ে এসে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ‘সব কার্য্ক্রম চলছে’ বলে তারা প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
তাহলে এখন ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা কেন বলা হচ্ছে- এ প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তো আমি বলতে পারব না। এটা উনারা বলতে পারবেন।
ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে কী করবে বিএনপি? এ প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আবারও আপনাদের সামনে আসব দলের মধ্যে আলোচনা করে এবং আমাদের অন্য মিত্র দলগুলোর সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এ বৈঠকের জন্য বেলা সোয় ১২টায় ‘যমুনা’য় পৌঁছায় বিএনপি মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য। পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে ফখরুলরা যুমনার সামনেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বৈঠকে নির্বাচনী রোডম্যাপ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
অন্যদিকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছিলেন উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
নির্বাচন ও সংস্কার: মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আলোচনার প্রধান যে বিষয়টা ছিলো সেটা হচ্ছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ যেটা আমরা বেশ কিছুকাল ধরে বলে আসছি, সেই বিষয়ে তার (প্রধান উপদেষ্টার) সাথে কথা বলেছি। আমরা বলেছি, যে পরিস্থিতি আছে এবং দেশের যে অবস্থা, তাতে করে আমরা বিশ্বাস করি এখানে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
একই সঙ্গে চলমান যে সংস্কার কমিশনগুলো করা হয়েছে, যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, আপনারা জানেন, সেগুলোতে আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। কয়েকদিন আগে সংস্কার কমিশনের কাছে আমাদের মতামতগুলো দিয়েছি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের সঙ্গে বৈঠক আছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গত অক্টোবর প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন নির্ভর করবে কতটা সংস্কার করা হল তার ওপর। প্রাথমিক সংস্কারগুলো সেরে ভোটে গেলে এ বছর ডিসেম্বরেও নির্বাচন করা যায়। আর বেশি সংস্কার করতে চাইলে নির্বাচন হতে পারে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে। তবে সরকারের এই অবস্থানের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। তাদের ভাষ্য, বেশিরভাগ সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচিত সরকারের হাত দিয়ে। সেজন্য নির্বাচন দরকার, আর সেটা হতে হবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই।
ঐকমত্যে জুলাই চার্টার্ড হবে: মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে সব দলগুলোর, সেগুলো নিয়ে আমরা একটা চার্টার করতে রাজি আছি। তারপরে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি। বাকি যেসব সংস্কারে আমরা একমত হব, সেটা আমরা অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন। এটাই ছিল আমাদের (বিএনপির) মূল কথা।