ঢাকা ০৬:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একাত্তরের এই দিনে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা

  • আপডেট সময় : ০১:৫৭:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : সেনানিবাসে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী’র সভাপতিত্বে বৈঠক বসে। ওই বৈঠক থেকেই আলবদর, আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়।
বৈঠক শেষে, ফরমান আলী তৎকালীন বাংলাদেশের শীর্ষ মুক্তবুদ্ধির অধিকারীদের তালিকা তুলে দেন হন্তারক বাহিনীর হাতে।
পরিকল্পনা মাফিক, সে রাতেই আলবদর বাহিনী সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর জীবিত ফিরে আসেননি। বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট দোসর জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এদিকে, চার নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিবাহিনী হরিপুর আক্রমণ করে, একদিন সম্মুখযুদ্ধের পর হরিপুর শত্রুমুক্ত হয়। একই সঙ্গে হানাদারমুক্ত হয় নীলফামারী, গাইবান্ধা, নরসিংদী, সরিষাবাড়ী, ভেড়ামারা এবং শ্রীপুর। অন্যদিকে, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন দেওয়ায় ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী বলেন, তার জীবনের শেষ সংগ্রাম বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ে তোলা। পাশাপাশি, যৌথবাহিনীর টাঙ্গাইল অভিমুখে আক্রমণ শুরু করে। সূর্যাস্তের আগে জামালপুর ও ময়মনসিংহের দিক থেকে মিত্র বাহিনীর জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগ দিয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছত্রীসেনা নামিয়ে রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর প্রচ- আক্রমণ চালায়। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। সারারাত তুমুল যুদ্ধ শেষে ভোরে হানাদার বাহিনী অস্ত্র সমার্পন করে। বিজয়ীর বেশে মুক্তিবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ওদিকে, ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত থাকে। ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় কারফিউ, ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে লুটতরাজ শুরু হয়। অবরুদ্ধ ঢাকাবাসী শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আশঙ্কার দিনযাপন করতে থাকে। যে কোনো সময় মুক্তি-মিত্রবাহিনীর মিলিত কমান্ড পাকিস্তানিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এমন খবরে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যায়। ঢাকা থেকে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় না। এছাড়াও, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার প্রতিনিধি ভোরেন্টসভকে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন – ১২ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নের আগেই ঢাকায় ভারতীয় বাহিনীকে যুদ্ধ বিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায়, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১২ ডিসেম্বরেই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন তাদের হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে জানিয়ে দেয়। মার্কিন ৭ম নৌ বহর বঙ্গোপসাগরের খুব কাছাকাছি চলে আসে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

একাত্তরের এই দিনে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা

আপডেট সময় : ০১:৫৭:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : সেনানিবাসে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী’র সভাপতিত্বে বৈঠক বসে। ওই বৈঠক থেকেই আলবদর, আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়।
বৈঠক শেষে, ফরমান আলী তৎকালীন বাংলাদেশের শীর্ষ মুক্তবুদ্ধির অধিকারীদের তালিকা তুলে দেন হন্তারক বাহিনীর হাতে।
পরিকল্পনা মাফিক, সে রাতেই আলবদর বাহিনী সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর জীবিত ফিরে আসেননি। বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট দোসর জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এদিকে, চার নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিবাহিনী হরিপুর আক্রমণ করে, একদিন সম্মুখযুদ্ধের পর হরিপুর শত্রুমুক্ত হয়। একই সঙ্গে হানাদারমুক্ত হয় নীলফামারী, গাইবান্ধা, নরসিংদী, সরিষাবাড়ী, ভেড়ামারা এবং শ্রীপুর। অন্যদিকে, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন দেওয়ায় ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী বলেন, তার জীবনের শেষ সংগ্রাম বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ে তোলা। পাশাপাশি, যৌথবাহিনীর টাঙ্গাইল অভিমুখে আক্রমণ শুরু করে। সূর্যাস্তের আগে জামালপুর ও ময়মনসিংহের দিক থেকে মিত্র বাহিনীর জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগ দিয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছত্রীসেনা নামিয়ে রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর প্রচ- আক্রমণ চালায়। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। সারারাত তুমুল যুদ্ধ শেষে ভোরে হানাদার বাহিনী অস্ত্র সমার্পন করে। বিজয়ীর বেশে মুক্তিবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ওদিকে, ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত থাকে। ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় কারফিউ, ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে লুটতরাজ শুরু হয়। অবরুদ্ধ ঢাকাবাসী শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আশঙ্কার দিনযাপন করতে থাকে। যে কোনো সময় মুক্তি-মিত্রবাহিনীর মিলিত কমান্ড পাকিস্তানিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এমন খবরে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যায়। ঢাকা থেকে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় না। এছাড়াও, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার প্রতিনিধি ভোরেন্টসভকে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন – ১২ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নের আগেই ঢাকায় ভারতীয় বাহিনীকে যুদ্ধ বিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায়, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১২ ডিসেম্বরেই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন তাদের হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে জানিয়ে দেয়। মার্কিন ৭ম নৌ বহর বঙ্গোপসাগরের খুব কাছাকাছি চলে আসে।