ঢাকা ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

একদিন তেলাপোকারা রাজত্ব করবে দোর্দণ্ড প্রতাপে

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৩:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৬২ বার পড়া হয়েছে

কাল রাতে ডিনার করতে গিয়ে গণি সাহেব তরকারিতে তেলাপোকা আবিষ্কার করলেন। খুব ক্ষুদ্র সাইজের তেলাপোকা অনায়াসেই ভাজা পেঁয়াজের অংশ বলে উড়িয়ে দেয়া যায়। গণি সাহেব সন্তর্পণে তুলে বোন প্লেটে লুকিয়ে ফেললেন। বাইরে খেতে গিয়ে কত কিছুই তো না জেনে খেয়ে ফেলছেন। সবই মানসিক। তা ছাড়া চায়নিজরা তেলাপোকা নাকি রেলিশ করেই খায়, জিনিসটা খুব খারাপ কিছু না নিশ্চয়।
গণি সাহেব তেলাপোকা থেকে মনকে সরানোর চেষ্টা করলেন। তবু গা গোলানো ভাবটা গেল না। মুরগির তরকারি বাদ দিয়ে সবজি আর ডাল দিয়েই খাওয়াটা সেরে ফেললেন। তেলাপোকায় ছেয়ে গেছে বাড়িÑ রান্নাঘর, স্টোররুম, আলমারি, ফ্রিজ সর্বত্র তাদের নির্ভয় পদচারণা। এদের নির্মূল করা মানুষের কম্ম নয়। বিখ্যাত সব কোম্পানির দামি-দামি এরোসল ব্যবহার করে দু’চার দিন নিষ্কৃতি পাওয়া যায় বটে কিন্তু অচিরেই ফিরে আসে রক্তবীজের দল। তারা একদমই পরিবার পরিকল্পনায় বিশ্বাসী নয়। একদিন রাস্তার এক ক্যানভাসার এর মজমায় মুগ্ধ হয়ে গণি সাহেব তেলাপোকা নিধনের মহৌষধ পাউডার কিনে এনেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা ট্যালকম পাউডার এর মতো তেলাপোকার রূপচর্চার কাজেই লেগেছিল কেবল। আফসোস, কেউ চায়নায় তেলাপোকা এক্সপোর্ট করার কথা ভাবছে না !
আজকাল ইন্টারনেটে নাকি সব কিছুর সমাধান মেলে। গণি সাহেব পুরোনো জেনারেশনের মানুষ, অগভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহল কম (খুব সম্প্রতি জেনেছেন তার জেনারেশনের নাম বেবি বুমার্স। তাও জেন-জিকে গেঞ্জি বলায় বিদগ্ধ একজন বুঝিয়ে দিয়েছিল)।
জেনারেশনের খোটা শুনতে শুনতে ইদানীং তিনি জ্ঞান আহরণে ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু গুগল ঘাঁটতে গিয়ে আরও হতাশ হন গণি সাহেব। তেলাপোকা নাকি ৩২০ মিলিয়ন বছর ধরে বেঁচে আছে। কার্বনিফেরাস যুগেও নাকি এদের অস্তিত্ব ছিল। কার্বনিফেরাস যুগ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই গণি সাহেবের, ৩২০ মিলিয়নে কয়টা শূণ্য লাগে তাও ঠিক মনে করতে পারলেন না। শূণ্য চোখে তাকিয়ে থাকেন।
মনে পড়ে যায় শরৎ বাবুর সেই বিখ্যাত উক্তি ‘অতিকায় হস্তী লোপ পেয়েছে। কিন্তু তেলাপোকারা টিকে আছে।’ হয়তো একদিন মানুষ জাতিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তেলাপোকারা রাজত্ব করবে দোর্দণ্ড প্রতাপে। গণি সাহেব মানসচক্ষে দেখতে পান, অতিকায় এক তেলাপোকা তার বিছানায় শুয়ে পাচ নম্বর পায়ের ওপর ছয় নম্বর পা তুলে দিয়ে আয়েস করে টিভিতে অ্রানিমেল প্ল্যানেট দেখছে।
শুক্রবারে গণি সাহেব একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠেন। সাপ্তাহিক বিলাসিতার অংশ হিসাবে চিরাচরিত শুকনা রুটির বদলে গোমাংশ সহযোগে পরোটা দিয়ে নাস্তা সেরে এক কাপ চা আর খবরের কাগজ হাতে ড্রইং রুমে এসে আরাম করে বসেছেন হঠাৎই-চোখে পড়ল হাত দুয়েক দূরে তেল চকচকে দশাসই এক তেলাপোকা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, ঘন ঘন নড়ছে তার এন্টেনা। খুন চাপে গণি সাহেবের মাথায়, একপাটি চপ্পল হাতে তুলে নিয়ে ধেয়ে যান তার দিকে , তিরিশ সেকেন্ড ছোটাছুটি করে কোণঠাসা করে ফেলেন তাকে।
এমন সময় স্পষ্ট শুনতে পান তেলাপোকাটা চিৎকার করে বলছেÑ ‘মারতে চাও তো আমাকে, মার কাপুরুষ কোথাকার! জানি তো কেন মারতে চাও, হিংসা হিংসাÑ তুমি হিংসা কর আমাকে। কারণ তোমার বউ তোমাকে ভয় পায় না, ভয় পায় আমাকে!’ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেন না; হতভম্ব গণি সাহেব উদ্যত চপ্পল হাতে ফ্রিজ হয়ে যান।
লেখক: মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

একদিন তেলাপোকারা রাজত্ব করবে দোর্দণ্ড প্রতাপে

আপডেট সময় : ০৪:৩৩:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কাল রাতে ডিনার করতে গিয়ে গণি সাহেব তরকারিতে তেলাপোকা আবিষ্কার করলেন। খুব ক্ষুদ্র সাইজের তেলাপোকা অনায়াসেই ভাজা পেঁয়াজের অংশ বলে উড়িয়ে দেয়া যায়। গণি সাহেব সন্তর্পণে তুলে বোন প্লেটে লুকিয়ে ফেললেন। বাইরে খেতে গিয়ে কত কিছুই তো না জেনে খেয়ে ফেলছেন। সবই মানসিক। তা ছাড়া চায়নিজরা তেলাপোকা নাকি রেলিশ করেই খায়, জিনিসটা খুব খারাপ কিছু না নিশ্চয়।
গণি সাহেব তেলাপোকা থেকে মনকে সরানোর চেষ্টা করলেন। তবু গা গোলানো ভাবটা গেল না। মুরগির তরকারি বাদ দিয়ে সবজি আর ডাল দিয়েই খাওয়াটা সেরে ফেললেন। তেলাপোকায় ছেয়ে গেছে বাড়িÑ রান্নাঘর, স্টোররুম, আলমারি, ফ্রিজ সর্বত্র তাদের নির্ভয় পদচারণা। এদের নির্মূল করা মানুষের কম্ম নয়। বিখ্যাত সব কোম্পানির দামি-দামি এরোসল ব্যবহার করে দু’চার দিন নিষ্কৃতি পাওয়া যায় বটে কিন্তু অচিরেই ফিরে আসে রক্তবীজের দল। তারা একদমই পরিবার পরিকল্পনায় বিশ্বাসী নয়। একদিন রাস্তার এক ক্যানভাসার এর মজমায় মুগ্ধ হয়ে গণি সাহেব তেলাপোকা নিধনের মহৌষধ পাউডার কিনে এনেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা ট্যালকম পাউডার এর মতো তেলাপোকার রূপচর্চার কাজেই লেগেছিল কেবল। আফসোস, কেউ চায়নায় তেলাপোকা এক্সপোর্ট করার কথা ভাবছে না !
আজকাল ইন্টারনেটে নাকি সব কিছুর সমাধান মেলে। গণি সাহেব পুরোনো জেনারেশনের মানুষ, অগভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহল কম (খুব সম্প্রতি জেনেছেন তার জেনারেশনের নাম বেবি বুমার্স। তাও জেন-জিকে গেঞ্জি বলায় বিদগ্ধ একজন বুঝিয়ে দিয়েছিল)।
জেনারেশনের খোটা শুনতে শুনতে ইদানীং তিনি জ্ঞান আহরণে ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু গুগল ঘাঁটতে গিয়ে আরও হতাশ হন গণি সাহেব। তেলাপোকা নাকি ৩২০ মিলিয়ন বছর ধরে বেঁচে আছে। কার্বনিফেরাস যুগেও নাকি এদের অস্তিত্ব ছিল। কার্বনিফেরাস যুগ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই গণি সাহেবের, ৩২০ মিলিয়নে কয়টা শূণ্য লাগে তাও ঠিক মনে করতে পারলেন না। শূণ্য চোখে তাকিয়ে থাকেন।
মনে পড়ে যায় শরৎ বাবুর সেই বিখ্যাত উক্তি ‘অতিকায় হস্তী লোপ পেয়েছে। কিন্তু তেলাপোকারা টিকে আছে।’ হয়তো একদিন মানুষ জাতিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তেলাপোকারা রাজত্ব করবে দোর্দণ্ড প্রতাপে। গণি সাহেব মানসচক্ষে দেখতে পান, অতিকায় এক তেলাপোকা তার বিছানায় শুয়ে পাচ নম্বর পায়ের ওপর ছয় নম্বর পা তুলে দিয়ে আয়েস করে টিভিতে অ্রানিমেল প্ল্যানেট দেখছে।
শুক্রবারে গণি সাহেব একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠেন। সাপ্তাহিক বিলাসিতার অংশ হিসাবে চিরাচরিত শুকনা রুটির বদলে গোমাংশ সহযোগে পরোটা দিয়ে নাস্তা সেরে এক কাপ চা আর খবরের কাগজ হাতে ড্রইং রুমে এসে আরাম করে বসেছেন হঠাৎই-চোখে পড়ল হাত দুয়েক দূরে তেল চকচকে দশাসই এক তেলাপোকা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, ঘন ঘন নড়ছে তার এন্টেনা। খুন চাপে গণি সাহেবের মাথায়, একপাটি চপ্পল হাতে তুলে নিয়ে ধেয়ে যান তার দিকে , তিরিশ সেকেন্ড ছোটাছুটি করে কোণঠাসা করে ফেলেন তাকে।
এমন সময় স্পষ্ট শুনতে পান তেলাপোকাটা চিৎকার করে বলছেÑ ‘মারতে চাও তো আমাকে, মার কাপুরুষ কোথাকার! জানি তো কেন মারতে চাও, হিংসা হিংসাÑ তুমি হিংসা কর আমাকে। কারণ তোমার বউ তোমাকে ভয় পায় না, ভয় পায় আমাকে!’ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেন না; হতভম্ব গণি সাহেব উদ্যত চপ্পল হাতে ফ্রিজ হয়ে যান।
লেখক: মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি