নীলফামারী প্রতিনিধি : স্কুল যে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সেটার উত্তম নিদর্শন বালাগ্রাম সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের ফুলগাছের মাধ্যমে স্কুল প্রাঙ্গণের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। পরিপূর্ণ পরিকল্পনার মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হয়েছে শিশুপার্কের মতো করে। বসানো হয়েছে স্লিপার, ব্যালান্সিং, ল্যাডার, দোলনা, জঙ্গল জিমসহ শিশু পার্কের বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম। শুধু শিশুরা নয় এমন পরিবেশে মুগ্ধ হতে বাধ্য সব বয়সের মানুষ। মনোরম এমন পরিবেশে একসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও খেলাধুলা সুযোগ হওয়ায় স্কুলবিমুখ অনেক শিক্ষার্থী হয়েছে স্কুলমুখি। বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও পড়াশুনার চাহিদা। এছাড়াও এমন নিরাপদ পরিবেশে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পেরে খুশি অভিভাবকরাও। বালাগ্রাম মন্তের ডাঙা এলাকার রেজওয়ান ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে এখানে পড়ে। আগে জলঢাকা ব্র্যাক স্কুলে পড়ত। এমন পরিবেশে ছেলে মেয়েরা বেড়ে উঠবে ভেবে এখানে দেই। এখন মেয়ে পড়াশুনায় অনেক মনোযোগী৷ আগেতো স্কুল যেতেই চাইত না।
একই এলাকার ছবিতা রানীর ছেলে বিমল বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগে বিমলকে স্কুলে পাঠাতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হতো ছবিতা রানীকে। তবে এখন স্কুলে যাওয়ার জন্য বিমল নিজেই আগ্রহী জানিয়ে ছবিতা রানী বলেন, বিমল আগে স্কুলে যেতে চাইত না। সে অনেক ঝামেলা করত। কিন্তু স্কুলে যেতে এখন তাকে আর বলা লাগেনা। সেদিন স্কুলে গেলাম, স্কুলের পরিবেশ দেখে অবাগ হয়েছি। বিমল ও তার বন্ধুরা খেলছিল টিফিন টাইমে। এমন স্কুল সচারাচর দেখা যায় না। ধন্যবাদ স্কুল কর্তৃপক্ষকে। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবেল ইসলাম জানায়, এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলেও ভালো লাগে। এখন আমি নিয়মিত স্কুলে আসি। স্যাররাও অনেক ভালো। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছামিয়া আক্তার জানায়, আগে মাঠ ফাঁকা ছিলো। স্যার পার্কের মতো করে দিছেন। এখন আমাদের খেলাধুলা করতে ভালো লাগে। আমি নিয়মিত স্কুলে আসি। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখি করার ভাবনা থেকে এমন উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আফজালুর রহমান বলেন, আসলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। আমাদের চিন্তা ছিল স্কুলের প্রতি কিভাবে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়। স্কুলে তারা নিয়মিত হলে পড়ালেখার ক্ষেত্রে এমনিতেই আগ্রহী হবে। তাই উদ্যোগ নিই স্কুলের পরিবেশটা শিশুবান্ধব করার।
তিনি বলেন, পরিবেশ যখন শিশুবান্ধব হবে তখন শিক্ষার্থীদের পেছনে আমাদের ছুটতে হবে না, শিক্ষার্থীরাই প্রতিদিন স্কুলে আসবে। সেই জায়গা থেকে এই ব্যতিক্রম কিছু করা। এতে আমার সহকর্মীরা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন, দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, দীর্ঘ ২ বছর করোনা মহামারির কারণে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে অনেকটা দূরে চলে যায়। তবে শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য বালাগ্রাম সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন, সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক সহযোগিতা ছিল। এমন পরিবেশ উপজেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।-
একটি শিশুবান্ধব স্কুল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ