নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, এই বিচার কেবল একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়। এটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি শক্ত বার্তা যে বাংলাদেশ আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত শক্তিশালী বা প্রভাবশালী হোক না কেন। এই বিচার হবে একটি ইতিহাস। এটি হবে সেই সব মানুষের আত্মত্যাগের সম্মাননা, যাঁরা ন্যায়বিচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই ট্রাইব্যুনাল প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশ একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাষ্ট্র।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। আগামীকাল সোমবার এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ আসামি গ্রেফতার আছেন। গ্রেফতার আট আসামি হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এই মামলার আট আসামি পলাতক।
সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, অনেক স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশে দেখা গেছে, স্বৈরাচার পালিয়েই শুধু যায়নি, তার ৩০০ এমপি, তার মন্ত্রিসভা, পুলিশ বাহিনী, দলীয় নেতা-কর্মী, এমনকি মসজিদের ইমাম ও নিজেদের শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ বলে দাবি করা উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও পালিয়েছেন। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় ট্রাইব্যুনাল, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, এই মামলায় নির্মোহ, নিরপেক্ষ, নির্ভুল ও দৃঢ় বিচার নিশ্চিত করুন। দোষীদের যথাযথ শাস্তি দিন, যাতে জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসে। কারণ, আমরা এমন একটি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ন্যায়বিচার কেবল একটি রায় নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। অপরাধী যত বড়ই হোক, কৃতকর্মের বিচার থেকে কেউ রেহাই পাবে না।’
আসামিদের বিরুদ্ধে সংগৃহীত প্রমাণ কেবল বিশ্বাসযোগ্যই নয়, বরং অকাট্য ও স্বতন্ত্র ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তার ঊর্ধ্বে বলে সূচনা বক্তব্যে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপিত প্রমাণগুলো অস্পষ্ট তথ্যের বিচ্ছিন্ন টুকরো নয়। বরং একটি অবিচ্ছিন্ন ও সুদৃঢ় প্রমাণশৃঙ্খল। যার প্রতিটি অংশ পরবর্তী অংশকে আরো দৃঢ়তর করে। এই প্রমাণের সামগ্রিকতা হচ্ছে, চাক্ষুষ সাক্ষ্য, ডিজিটাল রেকর্ড, সরকারি যোগাযোগ ও ফরেনসিক প্রতিবেদন।
সানা/আপ্র/১৪/০৯/২০২৫