ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
মূল্যায়ন গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন

এইচএসসির খাতা শিক্ষার্থীদের হাতে গেল কীভাবে

  • আপডেট সময় : ০৯:২০:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র ধরা পড়েছে। খাতা যাচাইয়ের মতো গোপনীয় দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা পরীক্ষকরা খাতার ওএমআর অংশ বা ‘বৃত্ত’ পূরণের কাজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে করিয়েছেন। বিষয়টি সামনে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও স্থিরচিত্রের মাধ্যমে। এ নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বেশ কয়েকজন পরীক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা।

বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র (বিষয় কোড-১০৮), উচ্চতর গণিত (বিষয় কোড-১২৬) এবং বাংলা দ্বিতীয় পত্রের (বিষয় কোড-১০২) খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

এ নিয়ে অভিযুক্ত পরীক্ষকরা হলেন- রাজধানীর ডেমরার রোকেয়া আহসান কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মুরছানা আক্তার, মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চতর গণিতের শিক্ষক মহসীন আলামীন, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসাইন আকন, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষক সমীরময় মন্ডল, নবাবগঞ্জের মুন্সীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার আনসার ভিডিপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মো. রাকিবুল হাসান।

সংবাদসংস্থা ঢাকা পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরীক্ষার খাতা নিয়ে নিয়মবহির্ভূত যে ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মজা, বিদ্রুপ ও হাস্যরসের উপস্থাপন পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে। টিকটক, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ঘাঁটলেই দেখা যাচ্ছে-খাতা কাটছেন শিক্ষার্থীরাই, কেউ আবার খাতা হাতে বসে খিচুড়ি, লুচি, পরোটা খাচ্ছেন। যেখানে একপাশে রাখা খাতা, আরেক পাশে চাটনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খাতার ওএমআর অংশ (বৃত্ত) পূরণ করছেন। কোথাও কোথাও একাধিক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে বসে খাতা পূরণ করতে দেখা গেছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি শেয়ার করে এক শিক্ষার্থী ক্যাপশন দিয়েছেন– ‘বোর্ডের খাতা কাটছে টিকটকার’। আরেকজন লিখেছেন-‘তোমাদের খাতা এখন আমাদের হাতে’। কেউ কেউ আবার ফল নিয়েও মজা করে লিখেছেন- ‘কে ভাই এইটা ৯২ পাইছে’। এসব পোস্ট এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে বোর্ড পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বিশ্বাসযোগ্যতা ও সার্বিক মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ অবস্থায় উদ্বেগ, হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার খাতার গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর তারা প্রশ্ন তুলছেন কেন্দ্রীয় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের যথাযথ পদ্ধতি ও বোর্ডের নজরদারি নিয়ে।

রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, যে পরিশ্রমটা করেছি, সেটা যদি সঠিকভাবে মূল্যায়নই না হয়, তাহলে তো সবই বৃথা। নিজের খাতার নম্বর কেউ এভাবে ভাইরাল করে দেবে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। এ ঘটনায় আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এমনিতেই এসএসসির ফল বিপর্যয় দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তার ওপর প্রতিনিয়ত এমন চিত্র ফেসবুকে দেখতে পাচ্ছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টির সত্যতা নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেওয়া।

ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী তাহসিন ইসলাম বলেন, পরীক্ষার খাতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, মনে হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ এখন টিকটকারদের হাতে। বোর্ডের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। নইলে যারা পরিশ্রম করে তারা প্রতারিত হবে। আর এ ঘটনাগুলো দেখার পর মনে হচ্ছে– ফলাফল যাই আসুক, সেটা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। গোপনীয়তা রক্ষা না হলে বোর্ড পরীক্ষার কোনো মূল্যই থাকে না। আমরা আতঙ্কে আছি।

সাভার থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের উত্তরপত্র কারা দেখছেন সেই নিশ্চয়তা থাকছে না। বোর্ড পরীক্ষার মতো বড় একটা ব্যাপারে যদি এমন অনিয়ম হয়, তাহলে আর কিছুই বলার নেই। অনেকেই বলছে– এক খাতায় কেউ ৮০ দিচ্ছে, আবার কেউ ৪৫। তাহলে তো ফল নির্ভর করছে কে খাতা দেখছে তার ওপর। এটা ভয়াবহ। আমরা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা দেখতে চাই। যেন কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন এভাবে ভুল কারো হাতে ভেঙে না পড়ে।

এইচএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে এমন অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। এক পরীক্ষার্থীর মা মুসলিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলেটা সারা বছর ভালো পড়েছে, মডেল টেস্টে ভালো করেছে। কিন্তু এখন শুনছি পরীক্ষার খাতার মূল্যায়নে অনিয়ম হচ্ছে, এটা খুব কষ্টের। ওদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এইচএসসির ফল। আর এবার এমনিতেই কড়াকড়িভাবে খাতা মূল্যায়নের কথা শুনেছি। সবমিলিয়ে অভিভাবক হিসেবে আমি খুব চিন্তায় আছি।

উদ্বেগ জানিয়ে মিজানুর রহমান নামের আরেক অভিভাবক বলেন, আমরা সন্তানদের কষ্ট করে পড়াশোনা করাই, যাতে তারা ভালো ফল করে এগোতে পারে। কিন্তু বোর্ড যদি খাতা ঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে, তাহলে সব পরিশ্রম বৃথা। সঠিক তদন্ত হোক, দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। অভিভাবক হিসেবে আমাদের এটাই চাওয়া।

বিষয়টি নিয়ে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন নিয়ে যেসব অনিয়মের খবর আসছে তা শুধু হতাশাজনকই নয়, এগুলো শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা টালমাটাল করে দিচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি দেখেছি, অনেক সময় খাতা নেওয়ার তাড়াহুড়া, মূল্যায়নে সময়ের স্বল্পতা অথবা আর্থিক লাভের আশায় কিছু শিক্ষক নিজের খাতা অন্যকে দিয়ে মূল্যায়ন করিয়ে থাকেন। আবার অনেক সময় যারা খাতা মূল্যায়নের যোগ্য নন, তারাও বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে দায়িত্ব পেয়ে যান। প্রকৃত মেধাবীদের ফলে এর প্রভাব পড়ে, আবার দুর্বল শিক্ষার্থীরা বাড়তি নম্বর পেয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগে, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তিনি আরো বলেন, এ সমস্যার সমাধানে বোর্ডগুলোর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। খাতা কোন শিক্ষক নিচ্ছেন, কে মূল্যায়ন করছেন, সেটা একটি ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রাখতে হবে। মূল্যায়নের পর ৫-১০ শতাংশ খাতা রিভিউ করার একটি স্বতন্ত্র টিম থাকতে হবে। প্রয়োজনে একটি ‘র‌্যান্ডম অডিট’ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যেখানে বাছাই করা খাতা দ্বিতীয়বার মূল্যায়ন হবে। সেইসঙ্গে পরীক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ এবং মূল্যায়নের আগে একটি কোড অব কনডাক্টে সই করানো যেতে পারে।

এই শিক্ষক বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মূল্যায়নের দায়ভার নিতে হবে পরীক্ষককেই। অন্যকে দিয়ে খাতা দেখানো যেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়, সেটির নজির থাকতে হবে। শুধু দোষারোপ না করে এই প্রক্রিয়াটিকে পেশাদার ও আধুনিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাবলিক পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন নিরপেক্ষ, নিয়মভিত্তিক ও নৈতিকতা অনুসরণ করে হতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি বলেন, যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তবে সেটি গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, প্রত্যেক পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন অবশ্যই বোর্ডের নির্ধারিত নিয়ম মেনে দায়িত্বশীলতা ও সর্বোচ্চ সততার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া উচিত। একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে একটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার ফল তার ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে কারণে তার উত্তরপত্র যেন যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক, যিনি নিজেই বোর্ড নির্ধারিত পরীক্ষক, তিনি সশরীরে মূল্যায়ন করেন, সেটিই প্রত্যাশিত। সেখানে সহকারী হিসেবে যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হয়, তবে তা গুরুতর নৈতিক লঙ্ঘন ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি আরো বলেন, এসব ঘটনায় বোর্ড ইতোমধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ভবিষ্যতে যাতে এমন গুরুতর অনিয়ম আর না ঘটে সেজন্য শিক্ষা প্রশাসনকে আরো কঠোর এবং প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। কারণ এ ধরনের অনিয়ম শুধু ফলের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।

যেকোনো শিক্ষার স্তরে – প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত-মূল্যায়ন হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে উল্লেখ করে অধ্যাপক জিন্নাহ বলেন, শিক্ষার্থী যেন না হয় অতিমূল্যায়নের শিকার, আবার যেন না হয় অবমূল্যায়নের শিকার। প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতার নিরিখেই ফল নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার উদ্দেশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে শিক্ষা বোর্ড বলছে, শিক্ষার্থীদের দিয়ে উত্তরপত্র পূরণ করানো শুধু গোপনীয়তার লঙ্ঘনই নয়, বরং তা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেননা, পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। কেবল অনুমোদিত পরীক্ষকই খাতা খোলার ও মূল্যায়ন করার অধিকার রাখেন। প্রতিটি খাতা বোর্ড থেকে সিলগালা অবস্থায় নির্ধারিত কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং খোলা হয় নির্ধারিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে। এমসিকিউ অংশের বৃত্ত পূরণও পরীক্ষকের দায়িত্ব। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী, এমনকি সহকারী শিক্ষকও যুক্ত হতে পারেন না।

আবার নিয়ম অনুসারে, উত্তরপত্রের ওপর কোনোভাবেই শিক্ষার্থীর রোল নম্বর বা নাম থাকে না। এতে থাকে একটি নির্দিষ্ট কোড, যাতে পরিচয় গোপন থাকে এবং পক্ষপাতের সুযোগ না থাকে। খাতা মূল্যায়নের পর পরীক্ষক তা প্রধান পরীক্ষকের মাধ্যমে বোর্ডে ফেরত পাঠান। এই পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত গোপনীয়, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত এবং নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি একের পর এক খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের ঘটনায় বোর্ড উদ্বিগ্ন। আগে কয়েকটি অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এবারও জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় তদন্ত হচ্ছে। চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা, চাকরিচ্যুতি কিংবা স্থায়ীভাবে খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়ার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, খাতা মূল্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষকের বাইরে অন্য কেউ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী বা পরিবারের সদস্য যদি বৃত্ত পূরণ করে তা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এতে শিক্ষা বোর্ডের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আমরা খুঁজে পেয়েছি। এমন ঘটনা কারা ঘটিয়েছে সেটির তদন্ত চলছে এবং খোঁজা হচ্ছে। এই ছয়জনকে নোটিশ দিয়ে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সেটি এলে (চিঠির জবাব) আমরা বোর্ডে মিটিংয়ে পাঠাব। সেখানে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মূল্যায়ন গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন

এইচএসসির খাতা শিক্ষার্থীদের হাতে গেল কীভাবে

আপডেট সময় : ০৯:২০:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র ধরা পড়েছে। খাতা যাচাইয়ের মতো গোপনীয় দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা পরীক্ষকরা খাতার ওএমআর অংশ বা ‘বৃত্ত’ পূরণের কাজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে করিয়েছেন। বিষয়টি সামনে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও স্থিরচিত্রের মাধ্যমে। এ নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বেশ কয়েকজন পরীক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা।

বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র (বিষয় কোড-১০৮), উচ্চতর গণিত (বিষয় কোড-১২৬) এবং বাংলা দ্বিতীয় পত্রের (বিষয় কোড-১০২) খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

এ নিয়ে অভিযুক্ত পরীক্ষকরা হলেন- রাজধানীর ডেমরার রোকেয়া আহসান কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মুরছানা আক্তার, মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চতর গণিতের শিক্ষক মহসীন আলামীন, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসাইন আকন, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষক সমীরময় মন্ডল, নবাবগঞ্জের মুন্সীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার আনসার ভিডিপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মো. রাকিবুল হাসান।

সংবাদসংস্থা ঢাকা পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরীক্ষার খাতা নিয়ে নিয়মবহির্ভূত যে ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মজা, বিদ্রুপ ও হাস্যরসের উপস্থাপন পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে। টিকটক, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ঘাঁটলেই দেখা যাচ্ছে-খাতা কাটছেন শিক্ষার্থীরাই, কেউ আবার খাতা হাতে বসে খিচুড়ি, লুচি, পরোটা খাচ্ছেন। যেখানে একপাশে রাখা খাতা, আরেক পাশে চাটনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খাতার ওএমআর অংশ (বৃত্ত) পূরণ করছেন। কোথাও কোথাও একাধিক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে বসে খাতা পূরণ করতে দেখা গেছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি শেয়ার করে এক শিক্ষার্থী ক্যাপশন দিয়েছেন– ‘বোর্ডের খাতা কাটছে টিকটকার’। আরেকজন লিখেছেন-‘তোমাদের খাতা এখন আমাদের হাতে’। কেউ কেউ আবার ফল নিয়েও মজা করে লিখেছেন- ‘কে ভাই এইটা ৯২ পাইছে’। এসব পোস্ট এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে বোর্ড পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বিশ্বাসযোগ্যতা ও সার্বিক মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ অবস্থায় উদ্বেগ, হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার খাতার গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর তারা প্রশ্ন তুলছেন কেন্দ্রীয় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের যথাযথ পদ্ধতি ও বোর্ডের নজরদারি নিয়ে।

রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, যে পরিশ্রমটা করেছি, সেটা যদি সঠিকভাবে মূল্যায়নই না হয়, তাহলে তো সবই বৃথা। নিজের খাতার নম্বর কেউ এভাবে ভাইরাল করে দেবে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। এ ঘটনায় আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এমনিতেই এসএসসির ফল বিপর্যয় দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তার ওপর প্রতিনিয়ত এমন চিত্র ফেসবুকে দেখতে পাচ্ছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টির সত্যতা নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেওয়া।

ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী তাহসিন ইসলাম বলেন, পরীক্ষার খাতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, মনে হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ এখন টিকটকারদের হাতে। বোর্ডের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। নইলে যারা পরিশ্রম করে তারা প্রতারিত হবে। আর এ ঘটনাগুলো দেখার পর মনে হচ্ছে– ফলাফল যাই আসুক, সেটা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। গোপনীয়তা রক্ষা না হলে বোর্ড পরীক্ষার কোনো মূল্যই থাকে না। আমরা আতঙ্কে আছি।

সাভার থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের উত্তরপত্র কারা দেখছেন সেই নিশ্চয়তা থাকছে না। বোর্ড পরীক্ষার মতো বড় একটা ব্যাপারে যদি এমন অনিয়ম হয়, তাহলে আর কিছুই বলার নেই। অনেকেই বলছে– এক খাতায় কেউ ৮০ দিচ্ছে, আবার কেউ ৪৫। তাহলে তো ফল নির্ভর করছে কে খাতা দেখছে তার ওপর। এটা ভয়াবহ। আমরা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা দেখতে চাই। যেন কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন এভাবে ভুল কারো হাতে ভেঙে না পড়ে।

এইচএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে এমন অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। এক পরীক্ষার্থীর মা মুসলিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলেটা সারা বছর ভালো পড়েছে, মডেল টেস্টে ভালো করেছে। কিন্তু এখন শুনছি পরীক্ষার খাতার মূল্যায়নে অনিয়ম হচ্ছে, এটা খুব কষ্টের। ওদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এইচএসসির ফল। আর এবার এমনিতেই কড়াকড়িভাবে খাতা মূল্যায়নের কথা শুনেছি। সবমিলিয়ে অভিভাবক হিসেবে আমি খুব চিন্তায় আছি।

উদ্বেগ জানিয়ে মিজানুর রহমান নামের আরেক অভিভাবক বলেন, আমরা সন্তানদের কষ্ট করে পড়াশোনা করাই, যাতে তারা ভালো ফল করে এগোতে পারে। কিন্তু বোর্ড যদি খাতা ঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে, তাহলে সব পরিশ্রম বৃথা। সঠিক তদন্ত হোক, দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। অভিভাবক হিসেবে আমাদের এটাই চাওয়া।

বিষয়টি নিয়ে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন নিয়ে যেসব অনিয়মের খবর আসছে তা শুধু হতাশাজনকই নয়, এগুলো শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা টালমাটাল করে দিচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি দেখেছি, অনেক সময় খাতা নেওয়ার তাড়াহুড়া, মূল্যায়নে সময়ের স্বল্পতা অথবা আর্থিক লাভের আশায় কিছু শিক্ষক নিজের খাতা অন্যকে দিয়ে মূল্যায়ন করিয়ে থাকেন। আবার অনেক সময় যারা খাতা মূল্যায়নের যোগ্য নন, তারাও বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে দায়িত্ব পেয়ে যান। প্রকৃত মেধাবীদের ফলে এর প্রভাব পড়ে, আবার দুর্বল শিক্ষার্থীরা বাড়তি নম্বর পেয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগে, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তিনি আরো বলেন, এ সমস্যার সমাধানে বোর্ডগুলোর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। খাতা কোন শিক্ষক নিচ্ছেন, কে মূল্যায়ন করছেন, সেটা একটি ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেমে রাখতে হবে। মূল্যায়নের পর ৫-১০ শতাংশ খাতা রিভিউ করার একটি স্বতন্ত্র টিম থাকতে হবে। প্রয়োজনে একটি ‘র‌্যান্ডম অডিট’ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যেখানে বাছাই করা খাতা দ্বিতীয়বার মূল্যায়ন হবে। সেইসঙ্গে পরীক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ এবং মূল্যায়নের আগে একটি কোড অব কনডাক্টে সই করানো যেতে পারে।

এই শিক্ষক বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মূল্যায়নের দায়ভার নিতে হবে পরীক্ষককেই। অন্যকে দিয়ে খাতা দেখানো যেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়, সেটির নজির থাকতে হবে। শুধু দোষারোপ না করে এই প্রক্রিয়াটিকে পেশাদার ও আধুনিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাবলিক পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন নিরপেক্ষ, নিয়মভিত্তিক ও নৈতিকতা অনুসরণ করে হতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি বলেন, যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তবে সেটি গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, প্রত্যেক পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন অবশ্যই বোর্ডের নির্ধারিত নিয়ম মেনে দায়িত্বশীলতা ও সর্বোচ্চ সততার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া উচিত। একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে একটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার ফল তার ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে কারণে তার উত্তরপত্র যেন যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক, যিনি নিজেই বোর্ড নির্ধারিত পরীক্ষক, তিনি সশরীরে মূল্যায়ন করেন, সেটিই প্রত্যাশিত। সেখানে সহকারী হিসেবে যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হয়, তবে তা গুরুতর নৈতিক লঙ্ঘন ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি আরো বলেন, এসব ঘটনায় বোর্ড ইতোমধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ভবিষ্যতে যাতে এমন গুরুতর অনিয়ম আর না ঘটে সেজন্য শিক্ষা প্রশাসনকে আরো কঠোর এবং প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। কারণ এ ধরনের অনিয়ম শুধু ফলের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।

যেকোনো শিক্ষার স্তরে – প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত-মূল্যায়ন হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে উল্লেখ করে অধ্যাপক জিন্নাহ বলেন, শিক্ষার্থী যেন না হয় অতিমূল্যায়নের শিকার, আবার যেন না হয় অবমূল্যায়নের শিকার। প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতার নিরিখেই ফল নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার উদ্দেশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে শিক্ষা বোর্ড বলছে, শিক্ষার্থীদের দিয়ে উত্তরপত্র পূরণ করানো শুধু গোপনীয়তার লঙ্ঘনই নয়, বরং তা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেননা, পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। কেবল অনুমোদিত পরীক্ষকই খাতা খোলার ও মূল্যায়ন করার অধিকার রাখেন। প্রতিটি খাতা বোর্ড থেকে সিলগালা অবস্থায় নির্ধারিত কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং খোলা হয় নির্ধারিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে। এমসিকিউ অংশের বৃত্ত পূরণও পরীক্ষকের দায়িত্ব। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী, এমনকি সহকারী শিক্ষকও যুক্ত হতে পারেন না।

আবার নিয়ম অনুসারে, উত্তরপত্রের ওপর কোনোভাবেই শিক্ষার্থীর রোল নম্বর বা নাম থাকে না। এতে থাকে একটি নির্দিষ্ট কোড, যাতে পরিচয় গোপন থাকে এবং পক্ষপাতের সুযোগ না থাকে। খাতা মূল্যায়নের পর পরীক্ষক তা প্রধান পরীক্ষকের মাধ্যমে বোর্ডে ফেরত পাঠান। এই পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত গোপনীয়, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত এবং নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি একের পর এক খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের ঘটনায় বোর্ড উদ্বিগ্ন। আগে কয়েকটি অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এবারও জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় তদন্ত হচ্ছে। চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা, চাকরিচ্যুতি কিংবা স্থায়ীভাবে খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়ার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, খাতা মূল্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষকের বাইরে অন্য কেউ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী বা পরিবারের সদস্য যদি বৃত্ত পূরণ করে তা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এতে শিক্ষা বোর্ডের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আমরা খুঁজে পেয়েছি। এমন ঘটনা কারা ঘটিয়েছে সেটির তদন্ত চলছে এবং খোঁজা হচ্ছে। এই ছয়জনকে নোটিশ দিয়ে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সেটি এলে (চিঠির জবাব) আমরা বোর্ডে মিটিংয়ে পাঠাব। সেখানে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।