নিজস্ব প্রতিবেদক :এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ফল তৈরি ও প্রকাশের দাবি জানিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ফেল করা একদল শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তারাই আবার ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। এরপর সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। তাদের সঙ্গে অনেক নারী অভিভাবককে দেখা যায়। দুপুর পৌনে ২টার দিকে বোর্ডের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন একদল শিক্ষার্থী। পরে বোর্ড প্রাঙ্গণেই তারা বিক্ষোভ করেছেন। তবে তাদেরই বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ তুলে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কারণে সন্ধ্যা ৬টাতেও বোর্ড কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
রোববার দুপুরে ‘এইচএসসি ব্যাচ-২০২৪’ এর ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে বোর্ডে যান। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল ‘বৈষম্যহীন রেজাল্ট চাই’।
আন্দোলনকারীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে তারা দেখা করতে চাইলে গেটে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে বোর্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। বোর্ড চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের ওপর হামলা করা হয় বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। পরে তারা বোর্ড প্রাঙ্গণেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এদিকে, দুপুর ২টার দিকে শিক্ষা বোর্ডের প্রবেশপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিন ছাত্রীসহ ছয়জন আহত হন। বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছিল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রকাশিত ফলাফল বৈষম্যমূলক। তারা সবগুলো বিষয়ের ওপর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল চান। এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই সেই সাবজেক্ট ম্যাপিং করার দাবি তাদের।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। ঘটনাস্থলে থাকা চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রথমে বোর্ডের ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না। সেসময় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে ঢুকতে চাইলেও তাদের যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কিছুটা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে বলে শুনেছি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এখনো অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিদল ঠিক করে দিলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে বাতিল পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল তৈরি করেছি। এখানে কেউ বঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারপরও শিক্ষার্থীরা কি বলতে চায়, তাদের কথা শুনবো। সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমরা অবগত করবো। এদিকে, শিক্ষার্থীরা ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের কক্ষে ঢুকে পড়েছেন। বোর্ড চেয়ারম্যানকে ঘিরে সেখানে বিক্ষোভ করছেন তারা। ফল বাতিলের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অধ্যাপক তপন বলেন, “যারা আন্দোলন করছে, তারা অকৃতকার্য হয়েছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব সাবজেক্টে পরীক্ষা হয়েছে- তার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করে ফলাফল দিয়েছি। “এখন তারা সেটি মানবে না। তারা চাচ্ছে সবগুলো সাবজেক্ট ম্যাপিং করে নতুন করে ফলাফল দিতে। এটা কীভাবে সম্ভব?”
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তারা বুঝতেছে না, সরছেও না। এখানে সেনাবাহিনী আছে, পুলিশ আছে। তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।”
গত ১৫ অক্টোবর চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন একদল শিক্ষার্থী ফল বাতিলের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি ফেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেছেন সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীরা। এক দফা দাবিতে তারা এ আন্দোলন করেছেন। এছাড়া অন্যান্য বোর্ড ঘেরাওয়ের খবর পাওয়া গেছে। রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে চট্টগ্রাম বোর্ডের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তারা। দাবি মেনে না নেওয়ায় পরে বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় দাবি মেনে নেওয়া না হলে সড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের যে ফলাফল দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। আমাদের দাবি একটাই, মাধ্যমিকের ফলাফল অনুযায়ী এইচএসসির ফলাফল দেওয়া হোক। এদিকে আন্দোলনের কারণে শিক্ষা বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বোর্ড কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।