ঢাকা ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের জলছাপও মুছে ফেলা যায়

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: এআই দিয়ে তৈরি ছবি শনাক্তের জন্য ডিজিটাল চিহ্ন বা ওয়াটারমার্ক ব্যবহারের কথা বলা হলেও নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, এ চিহ্ন সহজেই প্রযুক্তির সাহায্যে সরিয়ে ফেলা যায়।

এসব ওয়াটারমার্ক হচ্ছে, ছবির ভেতরে লুকানো ডিজিটাল চিহ্ন বা সাইন, যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কোন ছবি বা কনটেন্ট আসল আর কোনটা এআই দিয়ে তৈরি।

‘সিম্যান্টিক ওয়াটারমার্কিং’ নামের বিশেষ এক ধরনের ওয়াটারমার্ক রয়েছে, যা এআই দিয়ে বানানো ছবির মধ্যে বসানো হয়। এ চিহ্নটিকে এতটা জটিলভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে আগের ধারণা অনুরারে, চিহ্নটি মুছে ফেলা বা নকল করা প্রায় অসম্ভব। তবে জার্মানির ‘রুহর ইউনিভার্সিটি বোচুম’-এর গবেষকরা এখন প্রমাণ করেছেন, এতদিন যেসব ওয়াটারমার্ককে খুবই নিরাপদ মনে করা হত, সেগুলো আসলে খুব সহজেই মুছে ফেলা বা পরিবর্তন করা যায়।

নাশভিলে অনুষ্ঠিত ‘সিভিপিআর ২০২৫’ সম্মেলনে নিজেদের গবেষণা উপস্থাপন করে গবেষণা দলটি বলেছে, কেবল দুটি সহজ ও কার্যকর কৌশল ব্যবহার করে কেউ চাইলে ‘সেমান্টিক ওয়াটারমার্ক’ মুছে ফেলতে বা নকল করতে পারেন। তাদের এ গবেষণাটি ‘আরজিভ’ নামের এক ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে, যাতে বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে প্রকাশের আগেই যে কেউ চাইলে অনলাইনে তা পড়তে বা দেখতে পারেন।

প্রথম পদ্ধতিটির নাম ‘ইমপ্রিন্টিং অ্যাটাক’। এ পদ্ধতিতে আসল ছবির ভেতরের লুকানো ডিজিটাল পরিচয় বদলে দেয় হ্যাকাররা, যেন মনে হয় ছবিটি এআই দিয়ে বানানো বা উল্টোভাবে এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে আসল বানাতেও এটি ব্যবহৃত হয়, যেটিকে ‘ল্যাটেন্ট রিপ্রেজেন্টেশন’ বলে।

গবেষকরা বলছেন, এতে আসল কোনো ছবি এমনভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায় যেন সেটিতে এআই দিয়ে তৈরি ছবির মতোই ওয়াটারমার্ক রয়েছে। অন্যভাবে বললে, কেউ চাইলে একদম সত্যিকারের ছবি নিয়ে তাতে ভুয়া ওয়াটারমার্ক যোগ করতে পারেন, যাতে দেখে মনে হয় ছবিটি এআই দিয়ে বানানো। ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারেন বা সত্য তথ্যকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করা সহজ হয়ে যায়।

দ্বিতীয় কৌশলটির নাম হচ্ছে, ‘রিপ্রম্পটিং অ্যাটাক’। এখানে একটি ওয়াটারমার্ক দেওয়া ছবিকে আবার এআইয়ের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে পাঠানো হয় বা নতুন করে প্রম্পট দিয়ে জেনারেট করা হয়। এতে সেই পুরোনো ওয়াটারমার্ক’সহ নতুন একটি ছবি তৈরি হয়, যার কনটেন্ট একেবারেই আলাদা। মানে হচ্ছে, এতে করে ওয়াটারমার্ক ছবির আসল কনটেন্ট সম্পর্কে কিছুই প্রমাণ করতে পারে না। কারণ একই ওয়াটারমার্ক এখন একেবারেই ভিন্ন ও সম্পর্ক নেই এমন ছবিতেও মিলতে পারে, যাতে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।

এসব বিষয় সাইবার হামলাকে আরও উদ্বেগজনক করে তোলে উল্লেখ করে গবেষকরা বলছেন, এগুলো বিভিন্ন ধরনের এআই সিস্টেমেই কাজ করে। ছবিটি পুরানো মডেল দিয়ে বানানো হোক বা নতুন প্রযুক্তি দিয়েই হোক না কেন উভয় ক্ষেত্রেই এ দুই ধরনের হামলা চালানো যায়। কেবল একটি ওয়াটারমার্ক দেওয়া ছবি থাকলেই এই হামলা চালানো সম্ভব।

গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলে ডিজিটাল বিষয়ের ওপর মানুষের আস্থা সংকটে পড়তে পারে। ওয়াটারমার্ক এত সহজে নকল বা পুনরায় ব্যবহার করা গেলে আমরা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারব না কোনো ছবি এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি কি না, যেটি সংবাদ মাধ্যম, অনলাইন নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গবেষণার লেখক ড. আন্দ্রেয়াস মুলার বলেছেন, বর্তমানে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওয়াটারমার্কিং পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট চিহ্নিত ও যাচাইয়ের জন্য ভালো কোনো উপায় না পাওয়া গেলে ডিজিটাল দুনিয়ায় আসল বা নকল কোনটি তা জানা কঠিন হয়ে যাবে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের জলছাপও মুছে ফেলা যায়

আপডেট সময় : ০৫:৫৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: এআই দিয়ে তৈরি ছবি শনাক্তের জন্য ডিজিটাল চিহ্ন বা ওয়াটারমার্ক ব্যবহারের কথা বলা হলেও নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, এ চিহ্ন সহজেই প্রযুক্তির সাহায্যে সরিয়ে ফেলা যায়।

এসব ওয়াটারমার্ক হচ্ছে, ছবির ভেতরে লুকানো ডিজিটাল চিহ্ন বা সাইন, যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কোন ছবি বা কনটেন্ট আসল আর কোনটা এআই দিয়ে তৈরি।

‘সিম্যান্টিক ওয়াটারমার্কিং’ নামের বিশেষ এক ধরনের ওয়াটারমার্ক রয়েছে, যা এআই দিয়ে বানানো ছবির মধ্যে বসানো হয়। এ চিহ্নটিকে এতটা জটিলভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে আগের ধারণা অনুরারে, চিহ্নটি মুছে ফেলা বা নকল করা প্রায় অসম্ভব। তবে জার্মানির ‘রুহর ইউনিভার্সিটি বোচুম’-এর গবেষকরা এখন প্রমাণ করেছেন, এতদিন যেসব ওয়াটারমার্ককে খুবই নিরাপদ মনে করা হত, সেগুলো আসলে খুব সহজেই মুছে ফেলা বা পরিবর্তন করা যায়।

নাশভিলে অনুষ্ঠিত ‘সিভিপিআর ২০২৫’ সম্মেলনে নিজেদের গবেষণা উপস্থাপন করে গবেষণা দলটি বলেছে, কেবল দুটি সহজ ও কার্যকর কৌশল ব্যবহার করে কেউ চাইলে ‘সেমান্টিক ওয়াটারমার্ক’ মুছে ফেলতে বা নকল করতে পারেন। তাদের এ গবেষণাটি ‘আরজিভ’ নামের এক ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে, যাতে বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে প্রকাশের আগেই যে কেউ চাইলে অনলাইনে তা পড়তে বা দেখতে পারেন।

প্রথম পদ্ধতিটির নাম ‘ইমপ্রিন্টিং অ্যাটাক’। এ পদ্ধতিতে আসল ছবির ভেতরের লুকানো ডিজিটাল পরিচয় বদলে দেয় হ্যাকাররা, যেন মনে হয় ছবিটি এআই দিয়ে বানানো বা উল্টোভাবে এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে আসল বানাতেও এটি ব্যবহৃত হয়, যেটিকে ‘ল্যাটেন্ট রিপ্রেজেন্টেশন’ বলে।

গবেষকরা বলছেন, এতে আসল কোনো ছবি এমনভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায় যেন সেটিতে এআই দিয়ে তৈরি ছবির মতোই ওয়াটারমার্ক রয়েছে। অন্যভাবে বললে, কেউ চাইলে একদম সত্যিকারের ছবি নিয়ে তাতে ভুয়া ওয়াটারমার্ক যোগ করতে পারেন, যাতে দেখে মনে হয় ছবিটি এআই দিয়ে বানানো। ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারেন বা সত্য তথ্যকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করা সহজ হয়ে যায়।

দ্বিতীয় কৌশলটির নাম হচ্ছে, ‘রিপ্রম্পটিং অ্যাটাক’। এখানে একটি ওয়াটারমার্ক দেওয়া ছবিকে আবার এআইয়ের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে পাঠানো হয় বা নতুন করে প্রম্পট দিয়ে জেনারেট করা হয়। এতে সেই পুরোনো ওয়াটারমার্ক’সহ নতুন একটি ছবি তৈরি হয়, যার কনটেন্ট একেবারেই আলাদা। মানে হচ্ছে, এতে করে ওয়াটারমার্ক ছবির আসল কনটেন্ট সম্পর্কে কিছুই প্রমাণ করতে পারে না। কারণ একই ওয়াটারমার্ক এখন একেবারেই ভিন্ন ও সম্পর্ক নেই এমন ছবিতেও মিলতে পারে, যাতে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।

এসব বিষয় সাইবার হামলাকে আরও উদ্বেগজনক করে তোলে উল্লেখ করে গবেষকরা বলছেন, এগুলো বিভিন্ন ধরনের এআই সিস্টেমেই কাজ করে। ছবিটি পুরানো মডেল দিয়ে বানানো হোক বা নতুন প্রযুক্তি দিয়েই হোক না কেন উভয় ক্ষেত্রেই এ দুই ধরনের হামলা চালানো যায়। কেবল একটি ওয়াটারমার্ক দেওয়া ছবি থাকলেই এই হামলা চালানো সম্ভব।

গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলে ডিজিটাল বিষয়ের ওপর মানুষের আস্থা সংকটে পড়তে পারে। ওয়াটারমার্ক এত সহজে নকল বা পুনরায় ব্যবহার করা গেলে আমরা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারব না কোনো ছবি এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি কি না, যেটি সংবাদ মাধ্যম, অনলাইন নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গবেষণার লেখক ড. আন্দ্রেয়াস মুলার বলেছেন, বর্তমানে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওয়াটারমার্কিং পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট চিহ্নিত ও যাচাইয়ের জন্য ভালো কোনো উপায় না পাওয়া গেলে ডিজিটাল দুনিয়ায় আসল বা নকল কোনটি তা জানা কঠিন হয়ে যাবে।