ঢাকা ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

এআই কিছু পেশা একেবারেই উধাও করে দিতে পারে

  • আপডেট সময় : ০৮:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

Sam Altman, CEO of ChatGPT maker OpenAI, arrives for a bipartisan Artificial Intelligence (AI) Insight Forum for all U.S. senators hosted by Senate Majority Leader Chuck Schumer (D-NY) at the U.S. Capitol in Washington, U.S., September 13, 2023. REUTERS/Craig Hudson

প্রযুক্তি ডেস্ক: ভবিষ্যতে এআইয়ের প্রাধান্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত বিশ্বে বেশ কিছু পেশা স্রেফ হারিয়ে যেতে পারে বলে অনুমান প্রকাশ করেছেন ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান। সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরে এআইয়ের ভবিষ্যৎ চিত্র নিয়ে বিস্তৃতভাবে কথা বলেন।

অল্টম্যান বলেন, ভবিষ্যতে অনেক পেশা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সরকার প্রধানরা চ্যাটজিপিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন, আর শত্রু রাষ্ট্রগুলো হয়ত এআইকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। এসব শঙ্কার পাশাপাশি, অল্টম্যান তার কোম্পানি ওপেনএআইকে মানবজাতির প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতের অবিচ্ছেদ্য স্থপতি হিসেবে উপস্থাপন করেন।

ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড অফ গভর্র্নস আয়োজিত ‘ক্যাপিটাল ফ্রেমওয়ার্ক ফর লার্জ ব্যাংকস’ সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ওপেনএআই প্রধান বলেন, এআইয়ের অগ্রগতির ফলে কিছু কিছু পেশা একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ কথা বলার সময় তিনি বিশেষভাবে গ্রাহকসেবার মত পেশাগুলোকে উল্লেখ করেছেন।

এটা এমন এক ক্ষেত্র যেখানে আমি বলব, ধরুন, আপনি যখন কাস্টমার সাপোর্টে কল করেন তখন মূলত এআইয়ের সঙ্গেই কথা বলছেন এবং এটাই এখন স্বাভাবিক।

কাস্টমার সার্ভিস খাতের পরিবর্তনকে প্রায় সম্পূর্ণ উল্লেখ করে ফেডারেল রিজার্ভের সুপারভিশনের জন্য দায়িত্বরত ভাইস চেয়ার মিশেল বোম্যানকে অল্টম্যান বলেন, এখন যখন কাস্টমার সার্ভিসগুলোতে কল করা হবে তখন এআই-ই উত্তর দেয়। এটা যেন এক সুপার স্মার্ট একজন মানুষ। কোনো ফোন ট্রি নেই, কোনো রিডাইরেকশন নেই। এটা কোম্পানির যে কোনো কাস্টমার সাপোর্ট এজেন্ট যা করতে পারত তার সবই পারে। ভুল করে না এবং খুব দ্রুতই কাজ করে। একবার কল দিলেন, সঙ্গে সঙ্গেই কাজটা হয়ে গেল, ব্যাস শেষ। এরপর অল্টম্যান স্বাস্থ্যসেবায় এআইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি পরামর্শ দেন, রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এআই এখন মানব চিকিৎসকদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে এআইকে এককভাবে স্বাস্থ্যসেবার প্রধান দায়িত্বশীল হিসেবে গ্রহণ করার মত দূরদর্শী কথা তিনি বলেননি।

স্যাম অল্টম্যান বলেন, এখনকার চ্যাটজিপিটি বেশিরভাগ সময় অনেক চিকিৎসকের তুলনায় আরো ভালো রোগ নির্ণয় করতে পারে। এটা যেন একজন সেরা ‘ডায়াগনস্টিশিয়ান’। তবুও মানুষ এখনও ডাক্তারের কাছে যায়। পাশাপাশি নিজেকে ‘সেকেলে’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি যোগ করেন, হয়ত আমি চাইব না আমার চিকিৎসা সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ কোনো মানব চিকিৎসক ছাড়া শুধু চ্যাটজিপিটির ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে লিখেছে, স্যাম অল্টম্যানের এই ওয়াশিংটন সফর ট্রাম্প প্রশাসনের ‘এআই অ্যাকশন প্ল্যান’ উন্মোচনের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। যেখানে মূলত কিছু নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা নির্ধারণ ও সহজীকরণ এবং আরো বেশি ডেটাসেন্টার স্থাপনে উৎসাহ দেওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অল্টম্যানের এই সর্বশেষ সরকারি সম্পৃক্ততা বিগত সময়ের তুলনায় ভিন্ন সুরে উপস্থাপিত হয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের সময় ওপেনএআই ও তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সরকারকে এআইয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অনুরোধ করেছিল। তবে এখন ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আলোচনা ঘুরে ‘চীনকে হারাতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা’র দিকে দাঁড়িয়েছে। ফায়ারসাইড চ্যাটে অল্টম্যান বলেন, এআইয়ের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা দ্রুত যেভাবে বাড়ছে, সেটাই তার বড় উদ্বেগের কারণ। এমন একটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট তার গভীর রাতের ঘুম কেড়ে নেয় যেখানে কোনো শত্রু রাষ্ট্র এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার উপর আক্রমণ চালাতে পারে।

তিনি ভয়েস ক্লোনিং বা কণ্ঠ নকল প্রযুক্তির অগ্রগতিতে মুগ্ধ হলেও শ্রোতাদের সতর্ক করে বলেন, এই একই প্রযুক্তি জালিয়াতি ও পরিচয় চুরির জন্য ভয়ঙ্করভাবে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ এখনও কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যারা শুধু ভয়েসপ্রিন্টকেই পরিচয় প্রমাণ হিসেবে নেয়। ওপেনএআই ও স্যাম অল্টম্যান এরইমধ্যে ওয়াশিংটন অভিযান জোরেসোরে শুরু করে দিয়েছেন। তিনি এমন এক জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন যেখানে ইলন মাস্কই ছিলেন সর্বেসর্বা। এর অংশ হিসেবে অল্টম্যান আগামী বছর তার কোম্পানির প্রথম অফিস ওয়াশিংটনে চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি ২০২৩ সালের মে মাসে কংগ্রেসে তার বহুল আলোচিত সাক্ষ্য দেওয়ার পর এই প্রথমবার সিনেটের কমার্স কমিটির মুখোমুখি হলেন তিনি, যা বিশ্বমঞ্চে অল্টম্যানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এআই কিছু পেশা একেবারেই উধাও করে দিতে পারে

আপডেট সময় : ০৮:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: ভবিষ্যতে এআইয়ের প্রাধান্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত বিশ্বে বেশ কিছু পেশা স্রেফ হারিয়ে যেতে পারে বলে অনুমান প্রকাশ করেছেন ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান। সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরে এআইয়ের ভবিষ্যৎ চিত্র নিয়ে বিস্তৃতভাবে কথা বলেন।

অল্টম্যান বলেন, ভবিষ্যতে অনেক পেশা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সরকার প্রধানরা চ্যাটজিপিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন, আর শত্রু রাষ্ট্রগুলো হয়ত এআইকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। এসব শঙ্কার পাশাপাশি, অল্টম্যান তার কোম্পানি ওপেনএআইকে মানবজাতির প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতের অবিচ্ছেদ্য স্থপতি হিসেবে উপস্থাপন করেন।

ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড অফ গভর্র্নস আয়োজিত ‘ক্যাপিটাল ফ্রেমওয়ার্ক ফর লার্জ ব্যাংকস’ সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ওপেনএআই প্রধান বলেন, এআইয়ের অগ্রগতির ফলে কিছু কিছু পেশা একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ কথা বলার সময় তিনি বিশেষভাবে গ্রাহকসেবার মত পেশাগুলোকে উল্লেখ করেছেন।

এটা এমন এক ক্ষেত্র যেখানে আমি বলব, ধরুন, আপনি যখন কাস্টমার সাপোর্টে কল করেন তখন মূলত এআইয়ের সঙ্গেই কথা বলছেন এবং এটাই এখন স্বাভাবিক।

কাস্টমার সার্ভিস খাতের পরিবর্তনকে প্রায় সম্পূর্ণ উল্লেখ করে ফেডারেল রিজার্ভের সুপারভিশনের জন্য দায়িত্বরত ভাইস চেয়ার মিশেল বোম্যানকে অল্টম্যান বলেন, এখন যখন কাস্টমার সার্ভিসগুলোতে কল করা হবে তখন এআই-ই উত্তর দেয়। এটা যেন এক সুপার স্মার্ট একজন মানুষ। কোনো ফোন ট্রি নেই, কোনো রিডাইরেকশন নেই। এটা কোম্পানির যে কোনো কাস্টমার সাপোর্ট এজেন্ট যা করতে পারত তার সবই পারে। ভুল করে না এবং খুব দ্রুতই কাজ করে। একবার কল দিলেন, সঙ্গে সঙ্গেই কাজটা হয়ে গেল, ব্যাস শেষ। এরপর অল্টম্যান স্বাস্থ্যসেবায় এআইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি পরামর্শ দেন, রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এআই এখন মানব চিকিৎসকদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে এআইকে এককভাবে স্বাস্থ্যসেবার প্রধান দায়িত্বশীল হিসেবে গ্রহণ করার মত দূরদর্শী কথা তিনি বলেননি।

স্যাম অল্টম্যান বলেন, এখনকার চ্যাটজিপিটি বেশিরভাগ সময় অনেক চিকিৎসকের তুলনায় আরো ভালো রোগ নির্ণয় করতে পারে। এটা যেন একজন সেরা ‘ডায়াগনস্টিশিয়ান’। তবুও মানুষ এখনও ডাক্তারের কাছে যায়। পাশাপাশি নিজেকে ‘সেকেলে’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি যোগ করেন, হয়ত আমি চাইব না আমার চিকিৎসা সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ কোনো মানব চিকিৎসক ছাড়া শুধু চ্যাটজিপিটির ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে লিখেছে, স্যাম অল্টম্যানের এই ওয়াশিংটন সফর ট্রাম্প প্রশাসনের ‘এআই অ্যাকশন প্ল্যান’ উন্মোচনের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। যেখানে মূলত কিছু নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা নির্ধারণ ও সহজীকরণ এবং আরো বেশি ডেটাসেন্টার স্থাপনে উৎসাহ দেওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অল্টম্যানের এই সর্বশেষ সরকারি সম্পৃক্ততা বিগত সময়ের তুলনায় ভিন্ন সুরে উপস্থাপিত হয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের সময় ওপেনএআই ও তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সরকারকে এআইয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অনুরোধ করেছিল। তবে এখন ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আলোচনা ঘুরে ‘চীনকে হারাতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা’র দিকে দাঁড়িয়েছে। ফায়ারসাইড চ্যাটে অল্টম্যান বলেন, এআইয়ের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা দ্রুত যেভাবে বাড়ছে, সেটাই তার বড় উদ্বেগের কারণ। এমন একটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট তার গভীর রাতের ঘুম কেড়ে নেয় যেখানে কোনো শত্রু রাষ্ট্র এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার উপর আক্রমণ চালাতে পারে।

তিনি ভয়েস ক্লোনিং বা কণ্ঠ নকল প্রযুক্তির অগ্রগতিতে মুগ্ধ হলেও শ্রোতাদের সতর্ক করে বলেন, এই একই প্রযুক্তি জালিয়াতি ও পরিচয় চুরির জন্য ভয়ঙ্করভাবে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ এখনও কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যারা শুধু ভয়েসপ্রিন্টকেই পরিচয় প্রমাণ হিসেবে নেয়। ওপেনএআই ও স্যাম অল্টম্যান এরইমধ্যে ওয়াশিংটন অভিযান জোরেসোরে শুরু করে দিয়েছেন। তিনি এমন এক জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন যেখানে ইলন মাস্কই ছিলেন সর্বেসর্বা। এর অংশ হিসেবে অল্টম্যান আগামী বছর তার কোম্পানির প্রথম অফিস ওয়াশিংটনে চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি ২০২৩ সালের মে মাসে কংগ্রেসে তার বহুল আলোচিত সাক্ষ্য দেওয়ার পর এই প্রথমবার সিনেটের কমার্স কমিটির মুখোমুখি হলেন তিনি, যা বিশ্বমঞ্চে অল্টম্যানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।