ঢাকা ১১:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

এআই’র তৈরি শিল্পকর্ম প্রশ্নে অনলাইনে প্রতিবাদ শিল্পীদের

  • আপডেট সময় : ১০:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’র মাধ্যমে তৈরি শিল্পকর্মের বিরুদ্ধে ব্যপক প্রতিবাদ করছেন শিল্পীদের অনলাইন কমিউনিটি ‘আর্টস্টেশনের’ সদস্যরা। গেইম, ফিল্ম, মিডিয়া ও বিনোদন জগতে কাজ করা শিল্পীদের কাজের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন শোকেস হলো আর্টস্টেশন।
আজ মঙ্গলবার থেকে প্ল্যাটফর্মটির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ‘নো এআই আর্ট’ লেখা বসানো ছবি পোস্ট করে তারা এই প্রতিবাদ শুরু করেন। আর বুধবারে আর্টস্টেশনের ট্রেন্ডিং পেইজে প্রাধান্য পেয়েছে তাদের প্রতিবাদের ছবিগুলো। আর্টস্টেশনে এআই’র তৈরি কাজের উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সাইটে এআই মডেল প্রশিক্ষিত শিল্পকর্মের সম্ভাব্য ব্যবহার বন্ধের পক্ষে শিল্পীরা এই প্রতিবাদ করছেন বলে উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকার প্রতিবেদনে। এই প্রতিবাদ শুরু হয় ৫ ডিসেম্বর, বুলগেরিয়ার শিল্পী আলেক্সান্ডার নানিচকোভের এক টুইট থেকে।
“এখনকার এআই ‘আর্ট’ এমন লাখ লাখ শিল্পী ও আলোকচিত্রীর অগোচরে তৈরি হচ্ছে, যারা সময়, ভালবাসা ও পরিশ্রম ব্যয় করে বিলিয়ন বিলিয়ন ছবি তৈরি করেছেন।”– টুইটে বলেন নানিচকোভ।
“নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণাই নেই, এমন স্বার্থপর লোকজন সামান্য লাভের আশায় তাদের কাজ নির্মমভাবে চুরি করে ব্যবহার করছে।”
বক্তব্যের সঙ্গে, বৃত্তাকার ‘স্ট্রাইক-থ্রু’ চিহ্নের পেছনে, ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে সাদা রঙে ‘এআই’ লেখা একটি লোগোও পোস্ট করেছেন নানিচকভ। এর নীচের ক্যাপশনে বড় হাতের অক্ষরে লেখা ছিল ‘নো টু এআই জেনারেটেড ইমেজেস।’
পরবর্তীতে, ওই লোগো আর্টস্টেশনে দ্রুত ছড়িয়ে যায় ও সাইটে থাকা প্রতিবাদের অনেক ছবির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৯ ডিসেম্বর, ডিজিটাল চরিত্র শিল্পী ড্যান এডারের এক টুইটে আর্টস্টেশনে এআই আর্ট নিয়ে সমালোচনার গতি বেড়ে যায়। “আর্টস্টেশনের মূল পেইজে এআই আর্ট দেখে আমি ব্যথিত। অন্যান্য এআই টুলের পাশাপাশি ‘এমজে’ (মিড জার্নি) নিয়ে খেলতে আমার ভালোই লাগে। তবে, শত শত ঘণ্টা ব্যয় করা ও বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি শিল্পকর্মের পাশে ‘প্রম্পট’ ব্যবহার করা কিছু রাখা অপমানের চেয়েও বেশি।” — সে সময় টুইট করেন এডার। এর চারদিন পর, টুইটারে ‘জেকুগা আর্ট’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা টুইটের কারণে এই প্রতিবাদ আগের চেয়ে বেশি প্রচারণা পায়। ফলে, আগের চেয়ে বেশি লোকজন এই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আর্স টেকনিকা। বুধবারে, আর্টস্টেশনে ‘নো এআই আর্ট’ লিখে সার্চ দেওয়ার পর দুই হাজার ৯৯টি ফলাফল খুঁজে পাওয়ার কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। আর ‘নো টু এআই জেনারেটেড ইমেজেস’ লেখার বিপরীতে ফলাফল এসেছে দুই হাজার একশ ১১টি। আর প্রতিটি ফলাফলে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীর অ্যাকাউন্টের দেখা মিলছে। এর ফলে, এই প্রতিবাদ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে প্ল্যাটফর্মটি। ‘ইউজ অফ এআই সফটওয়্যার অন আর্টস্টেশন’ নামের একটি ‘এফএকিউ’ পোস্টে লেখা ছিল, সাইট থেকে এআই’র তৈরি শিল্পকর্ম নিষিদ্ধ হবে না। বরং, সাইটে তারা বিভিন্ন ট্যাগ সংযোজনের পরিকল্পনা করছেন। ফলে, দুটি উপায়ে এআই’র স্পষ্টতা পছন্দের অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়া যেতে পারে। এর একটি হলো অবাণিজ্যিক উপায়ে এআই গবেষণা প্রশিক্ষণ, অন্যটি হলো বাণিজ্যিক এআই প্রশিক্ষণ।
আর্টস্টেশন ও স্টেবলডিফিউশন ‘এসডি’ নামের এআই টুলের সম্পর্ক শুরু হয় ২০২২ সালের গ্রীষ্মে, ডিসকর্ড সার্ভারে স্টেবল ডিফিউশনের বেটা সংস্করণ পরীক্ষার সময় থেকে। এটি একটি জনপ্রিয় ওপেন সোর্স ইমেজ তৈরির এআই টুল যা লেখার বর্ণনা থেকে বিভিন্ন ছবি তৈরি করতে পারে।

ডিসকর্ড খোলার পরপরই, স্টেবল ডিফিউশন ব্যবহার করা লোকজন খুঁজে পান, এতে ‘ট্রেন্ডিং অন আর্টস্টেশন’ বাক্যাংশটি প্রম্পট হিসেবে ব্যবহার করলে, প্রায় জাদুকরী উপায়ে ছবিতে স্বতন্ত্র একটি ডিজিটাল আর্টের ধরন যুক্ত হয়। আর এর কারণ হচ্ছে, আর্টস্টেশনে কাজ জমা দেওয়া শিল্পীদের অনুমতি ছাড়াই যথেচ্ছ তাদের কাজ অবলম্বন করে ফিউশন তৈরি করা যেটিকে বলা হচ্ছে “এআই-এর তৈরি ছবি।”
এর পেছনে রয়েছে স্টেবল ডিফিউশনের প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট ডেটাসেট। এর মধ্যে আর্টস্টেশনের ওয়েবসাইট থেকে ‘চুরি করা’ সর্বজনীনভাবে প্রবেশাধিকার পাওয়া শিল্পকর্মও রয়েছে। মূল শিল্পীর অনুমতি না নিয়েই বিভিন্ন ছবি চুরি করেছে এটি। ফলে, এআই’র মাধ্যমে তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে চলমান বিতর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, এআই প্রশিক্ষণ ডেটাসেটে কোনো শিল্পীর কাজ যোগ করার বেলায় অনুমতি নেওয়া উচিৎ কি না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এআই’র তৈরি শিল্পকর্ম প্রশ্নে অনলাইনে প্রতিবাদ শিল্পীদের

আপডেট সময় : ১০:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

প্রযুক্তি ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’র মাধ্যমে তৈরি শিল্পকর্মের বিরুদ্ধে ব্যপক প্রতিবাদ করছেন শিল্পীদের অনলাইন কমিউনিটি ‘আর্টস্টেশনের’ সদস্যরা। গেইম, ফিল্ম, মিডিয়া ও বিনোদন জগতে কাজ করা শিল্পীদের কাজের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন শোকেস হলো আর্টস্টেশন।
আজ মঙ্গলবার থেকে প্ল্যাটফর্মটির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ‘নো এআই আর্ট’ লেখা বসানো ছবি পোস্ট করে তারা এই প্রতিবাদ শুরু করেন। আর বুধবারে আর্টস্টেশনের ট্রেন্ডিং পেইজে প্রাধান্য পেয়েছে তাদের প্রতিবাদের ছবিগুলো। আর্টস্টেশনে এআই’র তৈরি কাজের উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সাইটে এআই মডেল প্রশিক্ষিত শিল্পকর্মের সম্ভাব্য ব্যবহার বন্ধের পক্ষে শিল্পীরা এই প্রতিবাদ করছেন বলে উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকার প্রতিবেদনে। এই প্রতিবাদ শুরু হয় ৫ ডিসেম্বর, বুলগেরিয়ার শিল্পী আলেক্সান্ডার নানিচকোভের এক টুইট থেকে।
“এখনকার এআই ‘আর্ট’ এমন লাখ লাখ শিল্পী ও আলোকচিত্রীর অগোচরে তৈরি হচ্ছে, যারা সময়, ভালবাসা ও পরিশ্রম ব্যয় করে বিলিয়ন বিলিয়ন ছবি তৈরি করেছেন।”– টুইটে বলেন নানিচকোভ।
“নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণাই নেই, এমন স্বার্থপর লোকজন সামান্য লাভের আশায় তাদের কাজ নির্মমভাবে চুরি করে ব্যবহার করছে।”
বক্তব্যের সঙ্গে, বৃত্তাকার ‘স্ট্রাইক-থ্রু’ চিহ্নের পেছনে, ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে সাদা রঙে ‘এআই’ লেখা একটি লোগোও পোস্ট করেছেন নানিচকভ। এর নীচের ক্যাপশনে বড় হাতের অক্ষরে লেখা ছিল ‘নো টু এআই জেনারেটেড ইমেজেস।’
পরবর্তীতে, ওই লোগো আর্টস্টেশনে দ্রুত ছড়িয়ে যায় ও সাইটে থাকা প্রতিবাদের অনেক ছবির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৯ ডিসেম্বর, ডিজিটাল চরিত্র শিল্পী ড্যান এডারের এক টুইটে আর্টস্টেশনে এআই আর্ট নিয়ে সমালোচনার গতি বেড়ে যায়। “আর্টস্টেশনের মূল পেইজে এআই আর্ট দেখে আমি ব্যথিত। অন্যান্য এআই টুলের পাশাপাশি ‘এমজে’ (মিড জার্নি) নিয়ে খেলতে আমার ভালোই লাগে। তবে, শত শত ঘণ্টা ব্যয় করা ও বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি শিল্পকর্মের পাশে ‘প্রম্পট’ ব্যবহার করা কিছু রাখা অপমানের চেয়েও বেশি।” — সে সময় টুইট করেন এডার। এর চারদিন পর, টুইটারে ‘জেকুগা আর্ট’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা টুইটের কারণে এই প্রতিবাদ আগের চেয়ে বেশি প্রচারণা পায়। ফলে, আগের চেয়ে বেশি লোকজন এই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আর্স টেকনিকা। বুধবারে, আর্টস্টেশনে ‘নো এআই আর্ট’ লিখে সার্চ দেওয়ার পর দুই হাজার ৯৯টি ফলাফল খুঁজে পাওয়ার কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। আর ‘নো টু এআই জেনারেটেড ইমেজেস’ লেখার বিপরীতে ফলাফল এসেছে দুই হাজার একশ ১১টি। আর প্রতিটি ফলাফলে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীর অ্যাকাউন্টের দেখা মিলছে। এর ফলে, এই প্রতিবাদ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে প্ল্যাটফর্মটি। ‘ইউজ অফ এআই সফটওয়্যার অন আর্টস্টেশন’ নামের একটি ‘এফএকিউ’ পোস্টে লেখা ছিল, সাইট থেকে এআই’র তৈরি শিল্পকর্ম নিষিদ্ধ হবে না। বরং, সাইটে তারা বিভিন্ন ট্যাগ সংযোজনের পরিকল্পনা করছেন। ফলে, দুটি উপায়ে এআই’র স্পষ্টতা পছন্দের অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়া যেতে পারে। এর একটি হলো অবাণিজ্যিক উপায়ে এআই গবেষণা প্রশিক্ষণ, অন্যটি হলো বাণিজ্যিক এআই প্রশিক্ষণ।
আর্টস্টেশন ও স্টেবলডিফিউশন ‘এসডি’ নামের এআই টুলের সম্পর্ক শুরু হয় ২০২২ সালের গ্রীষ্মে, ডিসকর্ড সার্ভারে স্টেবল ডিফিউশনের বেটা সংস্করণ পরীক্ষার সময় থেকে। এটি একটি জনপ্রিয় ওপেন সোর্স ইমেজ তৈরির এআই টুল যা লেখার বর্ণনা থেকে বিভিন্ন ছবি তৈরি করতে পারে।

ডিসকর্ড খোলার পরপরই, স্টেবল ডিফিউশন ব্যবহার করা লোকজন খুঁজে পান, এতে ‘ট্রেন্ডিং অন আর্টস্টেশন’ বাক্যাংশটি প্রম্পট হিসেবে ব্যবহার করলে, প্রায় জাদুকরী উপায়ে ছবিতে স্বতন্ত্র একটি ডিজিটাল আর্টের ধরন যুক্ত হয়। আর এর কারণ হচ্ছে, আর্টস্টেশনে কাজ জমা দেওয়া শিল্পীদের অনুমতি ছাড়াই যথেচ্ছ তাদের কাজ অবলম্বন করে ফিউশন তৈরি করা যেটিকে বলা হচ্ছে “এআই-এর তৈরি ছবি।”
এর পেছনে রয়েছে স্টেবল ডিফিউশনের প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট ডেটাসেট। এর মধ্যে আর্টস্টেশনের ওয়েবসাইট থেকে ‘চুরি করা’ সর্বজনীনভাবে প্রবেশাধিকার পাওয়া শিল্পকর্মও রয়েছে। মূল শিল্পীর অনুমতি না নিয়েই বিভিন্ন ছবি চুরি করেছে এটি। ফলে, এআই’র মাধ্যমে তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে চলমান বিতর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, এআই প্রশিক্ষণ ডেটাসেটে কোনো শিল্পীর কাজ যোগ করার বেলায় অনুমতি নেওয়া উচিৎ কি না।