প্রযুক্তি ডেস্ক: বাজারে তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের বুদবুদ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
‘ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড’ সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক বাজারে ‘আকস্মিক পতনের’ ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন এআইভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক বাড়তে থাকা মূল্যায়ন এখন উদ্বেগের জোরালো কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, ফেডারেল রিজার্ভের প্রতি যদি গোটা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস কমে যায় তাহলে ‘মার্কিন ডলারের দামে হঠাৎ করেই ধস নামতে পারে’।
ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সতর্কতা এমন সময়ে এল যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর সমালোচনা করছেন এবং তাদের স্বাধীনতা কমানোর হুমকি দিচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।
এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে অবিরত উত্তেজনা ও আশাবাদ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাজারে বিভিন্ন এআই কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধিতে রকেট গতি যোগ করেছে। যেমন– চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার কোটি ডলারে, যা গত বছরের অক্টোবরে কোম্পানিটির ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। আরেক এআই কোম্পানি অ্যানথ্রপিক-এর দাম মার্চের প্রায় ৬ হাজার কোটি থেকে প্রায় তিনগুণ বেড়ে গত মাসে হয়েছে ১৭ হাজার কোটি ডলার।
তবে, বুধবার ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের ‘ফাইন্যানশিয়াল পলিসি কমিটি’ বা এফপিসি সতর্ক করে বলেছে, “বর্তমানে বাজারের পরিস্থিতি হচ্ছে, কোম্পানিগুলোর দাম অনেক বেড়েছে। ফলে বাজারে খুব দ্রুত ও বড় ধরনের দাম কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বিভিন্ন সূচকে দেখা যাচ্ছে, এআইনির্ভর বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের মূল্যায়ন বর্তমানে অনেকটাই বেশি। এমন পরিস্থিতি শেয়ারবাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলেছে। এআইয়ের ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে যদি বিনিয়োগকারীদের আশায় ফাটল ধরে, তবে বাজারে বড় ধরনের ধস নামতে পারে।
ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড বলেছে, বিনিয়োগকারীরা এখনও এসব সম্ভাব্য ঝুঁকিকে পুরোপুরি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এসব ঝুঁকি যদি বাস্তবে পরিণত হয় তবে তা ‘বাজারে আকস্মিক পতন ঘটাতে পারে’, যার ফলে ব্যক্তি ও ব্যবসা উভয়ের জন্যই অর্থায়ন বা ঋণের প্রবাহ কমে যাবে।
এফপিসি আরও যোগ করেছে, এক উন্মুক্ত অর্থনীতি ও বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে এমন কোনো বৈশ্বিক ধাক্কার প্রভাব যুক্তরাজ্যের আর্থিক ব্যবস্থার ওপরও ব্যাপকভাবে পড়তে পারে।
সম্প্রতি ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ‘ বা এমআইটি’র গবেষণায় উঠে এসেছে, ৯৫ শতাংশ কোম্পানিই জেনারেটিভ এআইতে করা বিনিয়োগ থেকে কোনো লাভ পাচ্ছে না। আর এ তথ্যই এআইনির্ভর অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাসের ওপর মানুষের আস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, বিনিয়োগকারীরা যদি এআই প্রযুক্তির অগ্রগতি বা এর ব্যবহার নিয়ে হতাশ হন তবে শেয়ারবাজারের উচ্চমূল্যায়ন হঠাৎ করেই ধসে পড়তে পারে।
এফপিসি বলেছে, এ ধরনের পরিস্থিতি ‘বর্তমানে যে ভবিষ্যৎ আয়ের ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে তা পুনর্মূল্যায়নের দিকে ঠেলে দিতে পারে’।
কমিটি আরও বলেছে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান হুমকি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
সানা/আপ্র/১০/১০/২০২৫