বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: দুই যুগের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের জন্য দক্ষতা অর্জনের শীর্ষ খাতগুলো চিহ্নিত করা যেতে পারে; যার প্রথমেই জোর দিতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ক কোর্স চালু করার ওপর। এআইয়ের কারণে সৃষ্ট ধাক্কা সামলাতে শিক্ষার্থীদের এআইয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহারই শিখতে হবে সবার আগে। এ ছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো ১৫টি প্রধান খাত হতে পারে। তা হলো-
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই): এজেন্টিক এআই, কম্পিউটার ভিশন, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং।
২. মেশিন লার্নিং (এমএল) ও ডিপ লার্নিং: প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইসিস, অটোমেশন মডেল।
৩. ডেটা সায়েন্স ও বিগ ডেটা: ডেটা অ্যানালাইসিস, ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স।
৪. তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট: প্রোগ্রামিং, সাইবার সিকিউরিটি।
৫. ক্লাউড কম্পিউটিং ও ডেভঅপস: অডঝ, অুঁৎব, এড়ড়মষব ঈষড়ঁফ, সিস্টেম অটোমেশন।
৬. ফিনটেক ও ডিজিটাল ফাইন্যান্স: মোবাইল ব্যাংকিং, ব্লকচেইন, ডিজিটাল পেমেন্ট সল্যুশন।
৭. ডিজিটাল মার্কেটিং ও কনটেন্ট ক্রিয়েশন: ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া, গ্রাফিকস।
৮. হেলথকেয়ার ও মেডিকেল টেকনোলজি: মেডিকেল সহকারী, টেলিমেডিসিন।
৯. গ্রিন এনার্জি ও এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি: সোলার, উইন্ড ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
১০. কনস্ট্রাকশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং টেস্টিং, নবায়নযোগ্য শক্তি।
১১. কৃষিপ্রযুক্তি: স্মার্ট ফার্মিং, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ।
১২. ক্রিয়েটিভ মিডিয়া ও বিনোদন শিল্প: চলচ্চিত্র, গেম ডেভেলপমেন্ট, মিউজিক টেকনোলজি।
১৩. বিজনেস ও প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট: উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং মডেল।
১৪. টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসের হাই-টেক সেক্টর: অটোমেশন ও ডিজাইন টেকনোলজি।
১৫. ট্রান্সপোর্ট ও লজিস্টিক: স্মার্ট সাপ্লাই চেইন, ডেলিভারি ম্যানেজমেন্ট।
উপরের সব বিষয়ই এখন সময়ের প্রয়োজনে শিখতে হবে। তবে সবার আগে এআইয়ের কথা কেন বলা হলো, সেটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। প্রযুক্তির উৎকর্ষ আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি শিক্ষা- এই দুইয়ে মিলে বিশ্ব আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অথচ আমরা সে গতিতে এগোতে পারিনি- এটি বলাই বাহুল্য। এতদিন আমরা পিছিয়ে থেকেও ধীরে ধীরে এগিয়েছি। কিন্তু সামনে আর সেটি সম্ভব নয়। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই পুরো খেলার ধরনটাই বদলে দিচ্ছে।
‘জাভা’ একটি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা। একে শিখতে যেমন সময় লাগে, তেমনি এর ব্যবহার করে কাজ করতে গেলেও আগে অনেক সময় লাগত। শুধু একটি বেসলাইন তৈরি করতেই দীর্ঘ সময় চলে যেত, অনেক মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হতো। কিন্তু এখন এআই এজেন্ট সবকিছুই করে দিচ্ছে। ফলে সময় যেমন লাগছে না, তেমনি প্রয়োজন পড়ছে না এত মানুষেরও। এতে কিছু মানুষ কাজ হারাচ্ছে।
এতদিন একটি দক্ষতা দিয়েই লাখ লাখ মানুষ কাজ পেয়েছে। এখন ওই সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে এআই। এভাবে প্রায় সবক্ষেত্রেই এআই তার প্রভাব বিস্তার করছে। কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে, আর বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে শুরু থেকেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্য ও উচ্চস্তরের কাজে দক্ষ হতে হবে। তাই এখনই সময় এজেন্টিক এআইকে ভালোভাবে বোঝা এবং শেখার। কারণ যারা এটা রপ্ত করতে পারবে, তারাই ভবিষ্যতে এগিয়ে থাকবে।
এজেন্টিক এআই মানে হলো এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; যা নিজে থেকে কাজ করতে পারে। এটি নিজের লক্ষ্য ঠিক করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সব সময় মানুষের সাহায্য ছাড়াই কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
আমাদের তরুণরা কি বিদেশে গিয়ে শুধু উবার চালাবে? তারা কেবল অদক্ষ কাজই করবে, নাকি কাজের খোঁজে ঘুরে বেড়াবে? উত্তর একটাই- নিশ্চয়ই না। উপরের কর্মপরিকল্পনা থেকেই তা পরিষ্কার। আমরা চাই, তরুণরা বিদেশে যাবে তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা নিয়ে, বড় বড় কাজে অবদান রাখার জন্য। আবার তারা চাইলে দেশে বসেও শেষ করতে পারবে আন্তর্জাতিক প্রকল্প। এতে তারা যুক্ত হতে পারবে গ্লোবাল জব পোর্টাল বা আউটসোর্সিংয়ের সুবিধার সঙ্গে। অনলাইনে তারা খুঁজে নেবে আন্তর্জাতিক বাজারের কাজ। এ জন্য অনলাইনে আন্তর্জাতিক ডিগ্রি বা ভেন্ডর সার্টিফিকেশন সম্পন্ন করে নিজেদের আরো প্রস্তুত করে তুলতে পারে।
অন-ক্যাম্পাসের পাশাপাশি ডব্লিউইউএসটির গ্লোবাল ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি দিচ্ছে; যা বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অর্জন করা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে বসেই অর্জন করতে পারে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। এসব অনলাইন ডিগ্রি সিংক্রোনাস ও অ্যাসিংক্রোনাস- উভয় মডেলে তৈরি; যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে সরাসরি ল্যাবে বসে কাজ করার অভিজ্ঞতা কিংবা শেখার পরিবেশ অনুভব করতে এবং শিখতে পারে। এভাবে যখন প্রতিটি শিক্ষার্থীর ঝুলিতে ডিগ্রির পাশাপাশি স্কিল যুক্ত হবে, তখনই সেটি তাদের উন্নত ক্যারিয়ারের পথে এগিয়ে নেবে।
অন্যদিকে আমাদের তরুণরা স্রেফ কাজই খুঁজবে না, দক্ষতা নিয়ে তারা নিজেরাই হয়ে উঠবে একেকজন উদ্যোক্তা। তারা কাজ খুঁজবে না, বরং তারা কাজ দেবে। এক্ষেত্রেও রয়েছে ডব্লিউইউএসটির বিশেষ উদ্যোগ- বিজনেস ইনোভেশন ও ইনকিউবেশন সেন্টার; যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ জোগানো হয়। আর শুধু স্বপ্নই দেখানো হয় না, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাতে উদ্যোক্তা হতে পারে- এ জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহেও থাকছে তহবিল। যখন দক্ষ কোনো হাতে মূলধন সরবরাহ করা সম্ভব হবে, তখন ওই উদ্যোগ সাফল্যে রূপ নেবেই। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে।
এখানে প্রস্তাব হিসেবে পরামর্শ থাকবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম লক্ষ্যস্থল হিসেবে বেছে নেওয়ার। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৩২ জন শিক্ষার্থী (সূত্র: বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট)। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ হাতে বের হয়ে তারাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে। কেননা কর্মক্ষেত্রে তাদের যেসব জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন, তা তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পায় না। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকেই উপর্যুক্ত প্রক্রিয়ায় অ্যাপ্লায়েড ইউনিভার্সিটিতে পরিণত করা সম্ভব। এতে সবচেয়ে অ্যাফোর্ডেবল ও অ্যাকসেসবল বিশ্ববিদ্যালয়টিই এক সময় হয়ে উঠতে পারবে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ গড়ে তোলার সূতিকাগার; যা তাদের ক্যারিয়ারের পথেও উপযোগী হবে। তাহলে ভবিষ্যতের যে বাংলাদেশ আমরা চাই, এদিকেই আমরা ধাবিত হতে পারব।
ডিগ্রি অর্জনের পথেই আরো যে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, তা হচ্ছে ছাত্রাবস্থাতেই নিজের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করা। সোশ্যাল মিডিয়া এখানে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেই সব বিষয়ে আপনার এক্সপারটিজ আছে, সেগুলোর ওপরে নিয়মিত মতামত দিন, পডকাস্ট বা ভিডিও পোস্ট করুন কিংবা লেখালেখি করুন; মনে রাখবেন, আপনার লিংকডইন প্রোফাইলই আপনাকে নিয়োগকর্তার কাছে পরিচিত করে তোলার সেরা মাধ্যম।
মনে রাখতে হবে, আপনার প্রতিযোগিতা আর শুধু উপজেলা-জেলা কিংবা দেশের ভেতর সীমাবদ্ধ নয়। আজকের বিশ্বে আপনার প্রতিযোগিতা গোটা পৃথিবীর সঙ্গে। পৃথিবী আপনার কর্মক্ষেত্র। আর আপনাকে প্রমাণ রাখতে হবে ওই বৈশ্বিক মঞ্চেই। তাই বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠতে হলে বিশ্ববাজার থেকে কাজ অর্জন করতে হলে, ইংরেজির ওপর দক্ষতা গড়তেই হবে। শুধু তা-ই নয়, আপনাকে দক্ষ হতে হবে যোগাযোগ কৌশলেও। কাজের ধরন ও বর্ণনা ঠিকভাবে বোঝা এবং ডেলিভারির সময় তা ক্লায়েন্টকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বিজনেস ইংরেজি অপরিহার্য।
প্রত্যেক শিক্ষার্থী যদি সাবলীলভাবে কনভারসেশনাল ইংরেজি বলতে পারে আর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ইংরেজি আয়ত্ত করতে পারে, তাহলে তাদের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। তখন আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই হবে ওই আত্মবিশ্বাসী প্রজন্ম- যারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ





















