রাঙামাটি সংবাদদাতা : ধান ক্ষেত, বাঁশের ছোট সাঁকো আর পাহাড়ি ঝিরি- দুর্গম পথ মাড়িয়ে যেতে হয় ফুটবলের স্বর্ণকন্যা ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি। তার অর্জনের পথটি যে মসৃণ ছিল না, সেটাই বলে দিচ্ছে তার গ্রামের বাড়িটি। তবু সে বাড়িটি এখন অন্য আলোয় উজ্বল। ঋতুপর্ণার মতো পাহাড়ের আরেক মেয়ে রূপনার বাড়িও দুর্গম এলাকায়। তবে মেয়ের অভাবনীয় সাফল্যের দিনেও মা কালা সেনা চাকমার ব্যস্ততা ক্ষেত পরিচর্যায়। বুধবার (৩০ অক্টোবর) নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে দেশের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ঋতুপর্ণা। তাতে গোটা দেশ ভাসছে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে। বাদ যায়নি পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিও। এই জেলার মেয়ে ঋতুপর্ণা, রূপনা আর মনিকাদের নৈপুণ্যে বিজয়ী হয়েছে দেশ। টানা দ্বিতীয়বার নারী ফুটবল সাফ জয়ী হওয়ায় রাঙামাটিতে ঋতুপর্ণা ও রূপনার বাড়িতে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ। বাড়িতে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা ভিড় করছেন। তাদের এমন সাফল্যে গর্বিত স্বজন ও এলাকাবাসী। তবে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থা, স্থানীয় বা জেলা প্রশাসনের কেউ তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি। ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি রাঙামাটি জেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাইছড়ি গ্রামে। যেখানে যাওয়ার জন্য ভালো কোনও সড়ক নেই। ধান ক্ষেত দিয়ে ঘণ্টাখানেক হাঁটা পথের গ্রাম থেকে উঠে আসা ঋতু আজ দেশের সাফল্যের তারকা। বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন। তার মেঝো বোনের জামাই সুদীপ চাকমা বলেন, সন্ধ্যায় আমরা সবাই একসঙ্গে খেলা দেখেছি। যখন ঋতু গোল করেছে এবং বাংলাদেশ জিতেছে তাতে সবাই অনেক আনন্দিত হয়েছি। খেলা শেষে ঋতু ফোন করেছে, সেও খুব খুশি- সেরা খেলোয়াড় হতে পেরে। দেশে ফেরার পথে ভিডিও কলে ঋতুপর্ণা চাকমা তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খোলোয়াড় হতে পেরে অবশ্যই খুশি। এই খুশি প্রকাশ করা কঠিন। তার মা ভূজিপতি চাকমা বলেন, আমার মেয়ের খেলা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি তার জন্য অনেক আশীর্বাদ করি, যাতে সে আরও ভালো খেলতে পারে। তিনি আরও বলেন, গতবার যখন ঋতুরা জিতেছিল- তখন প্রশাসনের অনেকে আমার বাড়িতে এসেছিল তখন নতুন বাড়ি, বাড়িতে আসার রাস্তাসহ অনেক কিছু করে দেওয়ার কথা বললেও কিছু করে দেয়নি। আমার মেয়েরা দেশের জন্য খেলে যাচ্ছে। সরকার যদি এবার কিছু করে আমাদের জন্য। সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। তার বাড়ি রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে ভূঁইয়াদাম গ্রামে। ঢালু পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা বেয়ে রূপনার বাড়িতে যেতে হয়। একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করত রূপনার পরিবার। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রূপনা চাকমার জীর্ণ ঘর নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে গত সেপ্টেম্বরে তার পরিবারের জন্য নতুন ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। মেয়ের এমন অর্জনে যেন কোনও প্রভাব ফেলেনি রূপনার চাকমার মা কালা সেনা চাকমার। অন্য স্বাভাবিক দিনের মত ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। রূপনার চাকমা মা কালা সোনা চাকমা বলেন, মেয়ে যখন ফাইনালে উঠেছে এবং খেলায় জিতেছে- আমি খুব খুশি রয়েছি। সে যাতে ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলতে পারে সেই আশীর্বাদ করি। রাস্তা করে দেওয়ার কথা ছিল আর হয়নি। কেউ আর যোগাযোগ রাখেনি। কেউ খবরও নেয়নি এতদিন। টানা দ্বিতীয়বার সাফ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় গর্বিত তাদের সাবেক কোচ আর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।