নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যবসা-বাণিজ্যে মহামারি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব পড়ায় ঋণ পরিশোধে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সম্প্রতি এফবিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এ সময়ে ঋণের টাকা ফেরত দিতে চান না ব্যবসায়ীরা। ঋণের টাকা ফেরত দিতে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। করোনা ভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই স্থগিতাদেশ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এফবিসিসিআই এ সুবিধা এখন চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চেয়েছে।
লিখিত আবেদনে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময়সীমা সংক্রান্ত এখন পর্যন্ত যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে তার সবগুলোই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু দেশের রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি বাবদ সরকারি তহবিল থেকে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া, শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ দেওয়া, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, সিএসএমই খাতের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধাসহ কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহ, নি¤œ আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ইত্যাদি অত্যন্ত ভূমিকা রেখেছে। গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় টেউয়ের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি অধিকাংশ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণের কিস্তি সময় মতো পরিশোধ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত সুবিধাসমূহের মেয়াদ বাড়ানো না হলে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হবে, যা ব্যাংকিং খাতসহ পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কোটি টাকার গবেষণা ও পরীক্ষাগার নিয়ে প্রশ্ন
এদিকে কোটি টাকার গবেষণা ও পরীক্ষাগার কাদের জন্য, প্রশ্ন তুলেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের (ব্যবসায়ীদের) প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে আমি বলতে শুরু করেছি এবং বলতে থাকবো।’ তিনি বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের যেসব প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগার দরকার তা অনেক ক্ষেত্রেই নেই। আর যেগুলো আছে তা ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। এজন্য সরকারের লক্ষ্য অর্জনে বাধা তৈরি হচ্ছে। এর সমাধানে সরকারি বেসরকারি খাতের সব স্টেকহোল্ডারদের একযোগে কাজ করতে হবে। রোববার মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এফবিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ কররে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘শত শত কোটি টাকা খরচ করে দেশে গবেষণা ও পরীক্ষাগার (ল্যাব) তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এটি কাদের জন্য করা হয়েছে, উদ্দেশ্য কি? এ থেকে কতজন উপকৃত হতে পারবে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর গ্রহণ যোগ্যতা কতটুকু রয়েছে তার কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে গবেষণা কাজে যাচ্ছেন। দেশে ফিরে সেই গবেষণার ফলাফল আর প্রকাশ হয় না। তাহলে কেন টাকা খরচ করা হচ্ছে? গবেষকরা দেশে এসে তার অভিজ্ঞতা ফাইলবন্দি করে রাখছেন। তার কোন প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না! ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের এই নেতা বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে আমরা প্রতিযোগি দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছি। অনেকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছেন, কিন্তু এর আগে এসএমই খাতে বিশ্বের যে উত্থান হয়েছে, তা থেকেও আমরা পিছিয়ে আছি। এখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এই খাতকে কার্যকরী নীতি সহায়তা দিতে হবে।
ঋণ পরিশোধে সময় চাইলো এফবিসিসিআই
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ