প্রত্যাশা ডেস্ক: কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহতাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন’ (সুরা কাউসার: ২)।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন স্বাধীন মুসলিম নর বা নারী ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব (দুররুল মুখতার: ৫/২১৯)।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বোঝায়- নিজ মালিকানায় সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি স্বর্ণ থাকা অথবা সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রুপা থাকা অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা বা প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা।
কারো কাছে যদি এই পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য বা টাকা-পয়সা না থাকে যেগুলো কোনো একটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ হয়। কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব (আল মুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৫৫)। যেমন- কারো কাছে কোরবানির দিনগুলোতে দুই ভরি স্বর্ণ ও এক হাজার টাকা আছে, যার কোনো একটিও পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নয়। কিন্তু দুই ভরি স্বর্ণের মূল্য ও এক হাজার টাকা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের বেশি হয়ে যায়। তাই তিনি নিসাবের মালিক বলে গণ্য হবেন এবং তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।
কোরবানি যার ওপর ওয়াজিব, তার কাছে তৎক্ষণাৎ পশু কেনার মতো নগদ টাকা না থাকলে ঋণ করে হলেও কোরবানি করতে হবে। পরে তা পরিশোধ করে দেবে। অন্যথায় কোরবানির দিন চলে গেলে পরবর্তীকালে একটি মধ্যমমানের বকরির মূল্য কোরবানির নিয়তে সদকা করে দিতে হবে (রদ্দুল মুহতার: ৪৫৩-৯/৪৫২; দুররুল মুখতার: ৯/৪৬৩)।
ওয়াজিব কোরবানি না করা কঠিন গুনাহের কাজ। রাসুলুল্লাহ (স.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। নবীজি বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয় (মুসনাদ আহমদ: ৮২৭৩; ইবনে মাজাহ: ৩১২৩; হাকেম: ৭৫৬৫-৭৫৬৬)।
যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তার ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্য এবং ব্যবস্থা থাকলে তিনি ঋণ করে কোরবানি করতে পারেন। এটি যে কোনো ভালো কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
দান-সদকা, হজ-ওমরা করার জন্যও যদি কেউ ঋণ করেন এবং তার ঋণ পরিশোধ করার সৎ উদ্দেশ্য ও ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তিনি ঋণ করে ভালো কাজ করতে পারেন; কোরবানিটাও একই রকম। তবে ঋণ করে কোরবানি করা তার জন্য আবশ্যক নয়। সামর্থ্য না থাকলে ইসলামি শরিয়ত ঋণ করে কোরবানি করতে বাধ্য করে না। আবার কেউ ঋণগ্রস্ত থাকলে তার জন্য আগে ঋণ পরিশোধ করা উত্তম।
ঋণ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তাহলে সেই ঋণ থাকা অবস্থায় কোরবানি করা যাবে। যেমন- একজন ব্যক্তির তার স্ত্রীর কাছে মোহারানার ঋণ রয়েছে। আরও এই রকম সিস্টেম্যাটিক ঋণ রয়েছে যেগুলো হয়ত তিনি ধারবাহিকভাবে কিস্তিতে শোধ করছেন, সেক্ষেত্রে তিনি কোরবানি করতে পারেন।
অবশ্য ঋণ পরিশোধের পর কোরবানির দিনগুলোতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
আমাদের সমাজে অনেক ব্যক্তি আছেন যারা অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি কাজের লোকের পাওনা আটকে রেখে বড় বড় গরু কোরবানি করেন, ইসলামি শরিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি জঘন্য অপরাধ।
অন্যের হক না দিয়ে কোরবানি করলে তাতে আল্লাহতাআলা মোটেও সন্তুষ্ট হবেন না।
আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে কোরবানির সকল মাসয়ালা জানার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ