ঢাকা ০৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

ঋণের ফাঁদে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২
  • ৮৮ বার পড়া হয়েছে

অলোক আচার্য : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন অর্থনীতিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত সময় পার করছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। প্রাচীনকাল থেকেই দেশটি ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো।
শ্রীলঙ্কা মূলত চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দেশটিতে নগদ অর্থের চরম সংকট চলছে। সাগরপাড়ের চমৎকার এই দেশটি এখন মারাত্মক এক অর্থনৈতিক সংকটে দাঁড়িয়ে। এই সংকট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে একাধিক সিদ্ধান্ত বা ভুল পরিকল্পনা। দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা কতটা তীব্র আকার ধারণ করেছে জানার জন্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদে চোখ বুলালেই স্পষ্ট হবে। অবস্থা এমন যে, কাগজ আমদানির অর্থ না থাকায় দেশটিতে পরীক্ষা পর্যন্ত বন্ধ আছে। রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের সংকট। চালের কেজি ৫০০ টাকা বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মানুষ সকাল থেকে ছুটছে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা মেটাতে।
এছাড়াও রয়েছে ওষুধসহ অন্যান্য পণ্যের সংকট। দেশটির পেট্রল পাম্পগুলোতে সেনা মোতায়েনের জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তেল কিনতে হচ্ছে নাগরিকদের। এভাবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে গিয়ে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা আমরা পত্রিকায় পড়েছি। অর্থাৎ সেখানে জ্বালানী সংকট তীব্র হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে আমদানি করার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই। ইরানের কাছ থেকে জ্বালানী তেল আমদানি বাবদ আড়াইশ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারেনি দেশটি। এর বিনিময়ে প্রতিমাসে পাঁচ মিলিয়ন ডলারের চা ইরানে রপ্তানি করবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এভাবে না হয় একদিক সামাল দেওয়া গেলো। কিন্তু বাকি দিক? অর্থাৎ সমস্যা তো কেবল জ্বালানী তেলের নয়, আরও বহু ক্ষেত্রে রয়েছে। তাছাড়া ঋণ দিতে বিভিন্ন দেশ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, দেবেও। কিন্তু ঋণ তো একসময় পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য নতুন এবং কার্যকরী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তবে এটা ঠিক, আপাত সমস্যা মোকাবিলার জন্য ঋণের বিকল্প নেই।
দেশটির মুদ্রার মানও কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে। এমন ভয়াবহ দুর্যোগে দেশটি স্বাধীনতার পর থেকে আর কখনও পড়েনি। দেশটি এমন অবস্থা সামাল দিতে প্রতিবেশী দেশ আইএমএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ভারত দেশটিকে খাবার ও ওষুধ কিনতে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। তারও আগে ভারত দেশটিকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার আজকের এই অবস্থার পেছনে দেশটির বিপুল ঋণ গ্রহণ এবং তা পরিশোধ করতে না পারাকেও দায়ী করা হয়। এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব খাদ্য সংকটের আশঙ্কার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এর প্রভাবও দেশটিতে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বৈশ্বিক অর্থনীতি পরিস্থিতিও সুবিধার নয়। একটি দেশের উন্নয়নের বিপরীতে প্রয়োজন স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামোয় দেশের জনগণের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান থাকে। জনগণ তখন তাদের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে থেকে সেগুলো কিনতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে অর্থনৈতিক উৎস যেমন কর, রেমিট্যান্স প্রভৃতি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। বর্তমান শ্রীলঙ্কায় দুটো পরিস্থিতিই ক্রমশ বিপরীতমুখি। ফলে ব্যবধান বাড়ছে।
করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সতর্ক হয়নি। তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। এর জেরে বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ব্যপক আকার ধারণ করে বিভিন্ন দেশে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব, খাদ্য সংকট, পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি জীবনযাত্রাকে অস্থির করে তুলেছে বিশ্বজুড়েই। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে অপরিশোধিত তেলের দাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে ব্যারেল প্রতি প্রায় ১১৭ ডলার দাম উঠেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ২ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ বিশ্বে প্রতি ১০ ব্যারেল তেলের এক ব্যারেল আসে রাশিয়া থেকে। আবার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়া উত্তোলন করে। ইউরোপের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের জোগান আসে এই দেশ থেকে। বিশ্বজুড়ে অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য গমের দামও উর্ধ্বমুখি। ভুট্টার দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
ঠিক এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট দেশটিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে। ঋণ নিয়ে সাময়িকভাবে দেশটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামাল দিতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য ঋণ পরিশোধ দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আজ এই ঋণের ভারেই এই দুর্দশা তৈরি হয়েছে। দেশটির জনগণ দুঃসময় পার করছে। অথচ দেশটি কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি। তারপরও নিত্যপণ্য সংগ্রহ করতেই তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দেশটি গত ১৫ বছরে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে যগুলোর পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এ জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে দেশটি। বিপুল অর্থ খরচ করলেও অনেক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ঋণ নেওয়া হলেও সেই ঋণ পরিশোধের উৎস এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি দেশটি। তারই খেসারত দিচ্ছে তারা।
তাছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় শ্রীলঙ্কায় অর্থের যোগানের একটি বড় উৎস বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে দেখা যায় করোনার ধাক্কা, ঋণ এবং কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে দেশটি আজকে ভুগছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দেশটিকে বেশ বড় ধরনের সংগ্রাম করতে হবে।
লেখক: শিক্ষক ও মুক্তগদ্য লেখক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও পরিবারের ৫৭৬ কোটি টাকা ফ্রিজ

ঋণের ফাঁদে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট

আপডেট সময় : ০৯:৪৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২

অলোক আচার্য : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন অর্থনীতিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত সময় পার করছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। প্রাচীনকাল থেকেই দেশটি ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো।
শ্রীলঙ্কা মূলত চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দেশটিতে নগদ অর্থের চরম সংকট চলছে। সাগরপাড়ের চমৎকার এই দেশটি এখন মারাত্মক এক অর্থনৈতিক সংকটে দাঁড়িয়ে। এই সংকট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে একাধিক সিদ্ধান্ত বা ভুল পরিকল্পনা। দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা কতটা তীব্র আকার ধারণ করেছে জানার জন্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদে চোখ বুলালেই স্পষ্ট হবে। অবস্থা এমন যে, কাগজ আমদানির অর্থ না থাকায় দেশটিতে পরীক্ষা পর্যন্ত বন্ধ আছে। রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের সংকট। চালের কেজি ৫০০ টাকা বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মানুষ সকাল থেকে ছুটছে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা মেটাতে।
এছাড়াও রয়েছে ওষুধসহ অন্যান্য পণ্যের সংকট। দেশটির পেট্রল পাম্পগুলোতে সেনা মোতায়েনের জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তেল কিনতে হচ্ছে নাগরিকদের। এভাবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে গিয়ে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা আমরা পত্রিকায় পড়েছি। অর্থাৎ সেখানে জ্বালানী সংকট তীব্র হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে আমদানি করার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই। ইরানের কাছ থেকে জ্বালানী তেল আমদানি বাবদ আড়াইশ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারেনি দেশটি। এর বিনিময়ে প্রতিমাসে পাঁচ মিলিয়ন ডলারের চা ইরানে রপ্তানি করবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এভাবে না হয় একদিক সামাল দেওয়া গেলো। কিন্তু বাকি দিক? অর্থাৎ সমস্যা তো কেবল জ্বালানী তেলের নয়, আরও বহু ক্ষেত্রে রয়েছে। তাছাড়া ঋণ দিতে বিভিন্ন দেশ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, দেবেও। কিন্তু ঋণ তো একসময় পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য নতুন এবং কার্যকরী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তবে এটা ঠিক, আপাত সমস্যা মোকাবিলার জন্য ঋণের বিকল্প নেই।
দেশটির মুদ্রার মানও কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে। এমন ভয়াবহ দুর্যোগে দেশটি স্বাধীনতার পর থেকে আর কখনও পড়েনি। দেশটি এমন অবস্থা সামাল দিতে প্রতিবেশী দেশ আইএমএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ভারত দেশটিকে খাবার ও ওষুধ কিনতে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। তারও আগে ভারত দেশটিকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার আজকের এই অবস্থার পেছনে দেশটির বিপুল ঋণ গ্রহণ এবং তা পরিশোধ করতে না পারাকেও দায়ী করা হয়। এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব খাদ্য সংকটের আশঙ্কার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এর প্রভাবও দেশটিতে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বৈশ্বিক অর্থনীতি পরিস্থিতিও সুবিধার নয়। একটি দেশের উন্নয়নের বিপরীতে প্রয়োজন স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামোয় দেশের জনগণের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান থাকে। জনগণ তখন তাদের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে থেকে সেগুলো কিনতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে অর্থনৈতিক উৎস যেমন কর, রেমিট্যান্স প্রভৃতি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। বর্তমান শ্রীলঙ্কায় দুটো পরিস্থিতিই ক্রমশ বিপরীতমুখি। ফলে ব্যবধান বাড়ছে।
করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সতর্ক হয়নি। তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। এর জেরে বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ব্যপক আকার ধারণ করে বিভিন্ন দেশে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব, খাদ্য সংকট, পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি জীবনযাত্রাকে অস্থির করে তুলেছে বিশ্বজুড়েই। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে অপরিশোধিত তেলের দাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে ব্যারেল প্রতি প্রায় ১১৭ ডলার দাম উঠেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ২ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ বিশ্বে প্রতি ১০ ব্যারেল তেলের এক ব্যারেল আসে রাশিয়া থেকে। আবার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়া উত্তোলন করে। ইউরোপের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের জোগান আসে এই দেশ থেকে। বিশ্বজুড়ে অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য গমের দামও উর্ধ্বমুখি। ভুট্টার দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
ঠিক এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট দেশটিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে। ঋণ নিয়ে সাময়িকভাবে দেশটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামাল দিতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য ঋণ পরিশোধ দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আজ এই ঋণের ভারেই এই দুর্দশা তৈরি হয়েছে। দেশটির জনগণ দুঃসময় পার করছে। অথচ দেশটি কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি। তারপরও নিত্যপণ্য সংগ্রহ করতেই তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দেশটি গত ১৫ বছরে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে যগুলোর পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এ জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে দেশটি। বিপুল অর্থ খরচ করলেও অনেক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ঋণ নেওয়া হলেও সেই ঋণ পরিশোধের উৎস এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি দেশটি। তারই খেসারত দিচ্ছে তারা।
তাছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় শ্রীলঙ্কায় অর্থের যোগানের একটি বড় উৎস বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে দেখা যায় করোনার ধাক্কা, ঋণ এবং কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে দেশটি আজকে ভুগছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দেশটিকে বেশ বড় ধরনের সংগ্রাম করতে হবে।
লেখক: শিক্ষক ও মুক্তগদ্য লেখক