আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীপাবলির রাতে আলোক ঝলকানো উৎসব শেষে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গিয়েছিলেন ভারতের রাজধানী শহর দিল্লির বাসিন্দারা। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে আর সূর্যের মুখ দেখতে পাননি তারা। কারণ, গোটা শহর ঢাকা পড়েছে দূষিত বায়ুর গাঢ় কুয়াশায়। দূষণ নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার আতশবাজি পোড়ানোয় যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা কোনো কাজেই আসেনি। বরং গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই চলতি বছরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে দিল্লিবাসীকে।
বিশ্বজুড়ে রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে নয়া দিল্লির বায়ুদূষণ বরাবরই ভয়াবহ। কিন্তু শুক্রবার তা যেন আগের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এনডিটিভির খবর অনুসারে, বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দীপাবলি উৎসবের আগেও এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিআই) দিল্লিতে বায়ুদূষণের সীমা ছিল ৩৮২। রাত ৮টা নাগাদ তা আরও ভয়াবহ হতে শুরু করে।
গতকাল শুক্রবার সকালে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম এলাকায় বাতাসে বিষাক্ত কণার উপস্থিতি দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ৯৯৯ পিএম২.৫। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে মানবদেহের জন্য এর নিরাপদ সীমা মাত্র ২৫ পিএম২.৫।
এ ধরনের দূষিত বায়ু ফুসফুসের ক্যন্সারসহ নানা ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে। ভারতে প্রতি বছরই বায়ুদূষণজনিত রোগে ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়।
ভারতের সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) বিশ্লেষক সুনীল দাহিয়া বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আতশবাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা দিল্লিতে সফল হয়েছে বলে মনে হয় না। এর ফলে বিপজ্জনক দূষণের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
প্রায় প্রতি বছরই ভারত সরকার অথবা দেশটির সুপ্রিম কোর্ট আতশবাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকে। তবে মাঠপর্যায়ে তা খুব কমই কার্যকর হতে দেখা যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় দিল্লির প্রতিবেশী পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষকদের খড় পোড়ানোর মৌসুম। পরবর্তী বছরে চাষের জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে পুরোনো খড়কুটোয় আগুন ধরিয়ে দেন কৃষকরা। দিল্লির বায়ুদূষণের জন্য অন্তত ৩৫ শতাংশ দায়ী এ থেকে তৈরি ধোঁয়া।
ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নজর দিতে গিয়ে তারা বায়ুদূষণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গত সোমবার (১ নভেম্বর) স্কটল্যান্ডে কপ২৬ সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দিয়েছেন, ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনবে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলার এই লক্ষ্যমাত্রায় ভারত অন্তত দুই দশক বেশি সময় নিচ্ছে।
উৎসব শেষে দূষণে ঢাকা দিল্লি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ