শীত আসি আসি করছে। বাঙালির প্রিয় ঋতু শীত। গ্রীষ্মপ্রধান এই অঞ্চলে শীতকাল নিয়ে আসে প্রশান্তির বার্তা। এখনকার এ সময়টা ভারী মিষ্টি ও চমৎকার। বলা চলে নাতিশীতোষ্ণ। হেমন্তের থেকে পাওয়া ফসলের প্রাচুর্য কৃষিপ্রধান এই দেশের মানুষের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দমুখর পরিবেশ। একই সঙ্গে উৎসবের চরণধ্বনি। তাই তো গ্রামে ও শহরে উৎসবের ধুম লেগে যায়। সবচেয়ে বড় উৎসব বিয়ের ধুমধাম মহানন্দে ঢেউ তুলে ভেসে বেড়ায়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি- এই চার মাস বিয়ের জন্য মোক্ষম সময়। গরমে ঘামে ত্যানা ত্যানা হয়ে যায় সব। পারতপক্ষে জরুরি না হলে কেউ গরমকালে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চায় না। এ বিষয় নিয়েই এবারের লাইফস্টাইল পাতার প্রধান ফিচার
সারা বছরে যত বিয়ে হয়, এর অধিকাংশই হয় শীতকালে। এই ট্রেন্ড শুধু বর্তমানেই নয়। এটি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ কারনে শীতকালকে মজা করে ‘বিয়ের মৌসুম’ বলা হয়ে থাকে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতেই অধিকাংশ মানুষ বিয়ের পরিকল্পনা করেন। কারণ শীতকালই বিয়ের জন্য বেশি উপযুক্ত। এই সময় বিয়ে করলে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, তা হলো-
লম্বা ছুটি: বেশির ভাগ স্কুলে নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। তাই ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ডিসেম্বরে স্কুল বন্ধ থাকে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছুটি মিলিয়ে বড়রাও সহজে বেড়াতে যেতে পারেন। এ সুযোগেই সব আত্মীয়স্বজন একত্রিত হতে পারেন। বছরের অন্যান্য সময় সবাইকে একত্রে পাওয়া অতটা সহজ নয়। ফলে বিয়ের জন্য বেশিরভাগ মানুষ শীতকালই বেছে নেন।
সাজগোজে স্বস্তি: বিয়েতে বর-বউ দুজনকেই সাজতে হয়। বরের সাজ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না থাকলেও বিয়ের সাজে কনে দেখতে কেমন হবে তা নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে। আর তাইতো মনের মতো করে সাজতে চান প্রত্যেক কনেই। শীত বাদে বাকি সময়টায় মেকআপ লাগিয়ে সাজলে মুশকিল। একটু বেশি ঘামলেই গলে গলে পড়ে সব সাজ। তাই কনের সাজ হোক বা বরের, শীতকালে বিয়ে হলে যত খুশি সাজুন, নষ্ট হওয়ার এতটুকু ভয় নেই। তাই বর-কনে ছাড়া বাকিরাও বিয়েবাড়ির সাজের আনন্দ নিতে পারে মনমতো।
আয়োজনে সময় পাওয়া: একটি আয়োজনের জন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। অনেকেই সারা বছর ধরে টাকা জমিয়ে আর্থিক প্রস্তুতি নেন। বিয়েতে খরচ করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা জোগার করতেও খানিকটা সময়ের প্রয়োজন তো হয়ই। বাড়িঘর সাজানো কিংবা গোছানোরও বিষয় আছে। সবকিছু মিলিয়ে বছরের শেষ কিংবা পরবর্তী বছরের একদম শুরুতেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব হয় বেশির ভাগের পক্ষে।
পোশাকে আনা যায় ভিন্নতা: বিয়েবাড়িতে সাজগোজ মানেই জমকালো হবে। ভেলভেট বা সিল্কের পোশাক পরলে বিয়েবাড়িতে তা বেশ মানানসই হয়। তবে গরমকালে এ ধরনের কাপড় পরা যায় না। তবে শীতকালে ভেলভেটের শাড়ি বা গাউন পরা যায়।
ডেকোরেশন: বিয়েতে ফুল ছাড়া আবার ডেকোরেশন হয় নাকি? পারফেক্ট ডেকোরেশনের জন্য ফুল চাই চাই। শীতকালে সব ধরনের ফুল সহজলভ্য। ফুলের সহজলভ্যতা বিয়ের উৎসবকে আরও বেশি জমকালো এবং অভিজাত করে তোলে। ডালিম, রজনীগন্ধা, অর্কিড, গাঁদা, গোলাপ, জুঁই সব ধরনের ফুলের দামও কমে যায় অনেক।
কম পরিশ্রম: দাওয়াত, খাওয়া-দাওয়া, প্যান্ডেলসহ কত কাজই না করতে হয় বিয়েতে! এই কাজগুলো সবাই মিলে হাত লাগিয়ে সারতে হয়। রাত জাগা, প্রভৃতি উৎপাতে অনেক এনার্জি খরচ হয়। গরমের দিনে একটু পরিশ্রম করলেই হাঁপিয়ে উঠতে হয়। কিন্তু শীতকালে বিয়ে হলে সেই ভয় কমে যায়। বরং কাজ করলে শীতের অনুভূতিটা কম হয়। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে দিতে আগ্রহী থাকে এই সময়। তাই বিয়ের জন্য শীতই পারফেক্ট মৌসুম।
ভরপুর খাওয়া-দাওয়া: পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, রেজালা, মাংসের চপ, বেগুনি বিয়ের অনুষ্ঠানে এগুলো একেবারে কমন আইটেম। কিন্তু গরমের সময় খেতে হয় রয়ে-সয়ে। খাবারে একটু এদিক-সেদিক হলেই পেটের ভেতর অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু শীতকালে বিয়ে হলে সেই চিন্তা খুবই কম থাকে। এমনিতেই নানা পিঠাপুলি পেট ভরে খাওয়া হয়, পাশাপাশি দাওয়াতও খাওয়া যায় একেবারে কবজি ডুবিয়ে। শীতকালে খাবার সংরক্ষণের কোনো চাপ বা টেনশন থাকে না।
বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়: শীতকালে ফ্যান চালাতে হয় না। আবার দ্রুত ঘুমানোর একটা তাড়া থাকে। তাই সব লাইট-টিভিও তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। এতে মাসিক বিদ্যুৎ বিল একেবারেই কম হবে। অতিথি অভ্যাগতদের যত্নে সুবিধা হয়, সঙ্গে সাশ্রয়ও।
জম্পেশ হানিমুন: ভালো-মন্দ মিলিয়ে শীতের সময়টা ঘোরাঘুরির জন্য একেবারে পারফেক্ট। নবদম্পতির জন্য একসাথে ছুটি কাটানোর অর্থাৎ হানিমুনের জন্য সবথেকে ভালো সময় এটি। শীতকালে বিয়ে এবং এর পরে হানিমুনে ঘোরাঘুরিটা জমে বেশ। পরস্পরের পাশাপাশি থেকে উষ্ণতাও ভাগাভাগি করা যায়, সেই সুযোগে সঙ্গীকে চিনে নেয়া যায়, জেনে নেয়া যায়। আবার হোটেলসহ সব জায়গায় কাপল প্যাকেজ থাকায় নব-বিবাহিতরা অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই বিয়ে এবং হানিমুনের জন্য শীতের সময়টাই উপযুক্ত।
সব মিলিয়ে শতি ঋতু বিয়ের জন্য বেশ উপযোগী। যে কারণে প্রতি বছর শীতে একটা বিয়ের হিড়িক পড়ে। মূলত ঋতুর সাথে বিয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে স্বস্তির হিসাব করায় শীতে বেশি বিয়ে হয়।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ


























