ঢাকা ০৫:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

উল্কার আঘাতও ঘায়েল করতে পারেনি যাকে

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: ১৯৫৪ সালের ৩০ নভেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার সিলাকগা শহরে অ্যান হজেস নামে ৩৪ বছর বয়সী এক নারী একটি উল্কাঘাতে আহত হন। তখন তিনি নিজের বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন। উল্কাপিণ্ডের ওজন ছিল প্রায় সাড়ে ৮ পাউন্ড বা প্রায় ৪ কেজি। উল্কাপিণ্ডটি এখন রাখা আছে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান’স ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে। ইতিহাসের একমাত্র উল্কাঘাতে বিক্ষত মানুষ এই অ্যান হজেস। আর কেউ এরকম আঘাত পেয়েছে বলে জানা যায় না।

উল্কাপিণ্ড বস্তুটা ৪.৫ বিলিয়ন বছরের পুরোনো, অর্থাৎ প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়া মহাশূন্যের এক অতিপ্রাচীন পাথর। মহাকাশের অন্ধকার ভেদ করে পৃথিবীতে ছুটে এসেছিল সেটি। উল্কাটি সরাসরি অ্যান হজেসের শরীরে আঘাত করেনি। প্রথমে সেটি গিয়ে পড়ে তাঁর বিছানার পাশে রাখা রেডিওর ওপর। সেখান থেকে লেগে তাঁর শরীরে আঘাত করে। সেই কারণে তিনি গুরুতরভাবে আহত না হয়ে বেঁচে যান। যদিও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় এবং কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, শেষ পর্যন্ত তাঁর বড় কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়নি।

এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়ার আরো একটি কারণ ছিল। পরে জানা যায়, উল্কাটি আসলে একসঙ্গে ছিল না—পথে আসতে আসতে সেটি ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায়। একটি খণ্ড গিয়ে পড়ে অ্যান হজেসের বাড়িতে, আর অন্যটি কয়েক মাইল দূরে গিয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানীরা পরে হিসাব করে দেখেছেন, উল্কাটি সেদিন পৃথিবীতে এসে পড়েছিল ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে। অ্যানের আশপাশের বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী জানিয়েছেন, তাঁরা সেদিন আকাশে একটি বিশাল আগুনের গোলা ছুটে আসতে দেখেছেন। সাধারণত উল্কা এত বড় হয় না—সেগুলো গল্ফ বল কিংবা হাতের মুঠির মতো ছোট আকারের হয়। কিন্তু এইটি ছিল তুলনামূলকভাবে বেশ বড়। এটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিলাকগা উল্কা’, তবে বেশিরভাগ মানুষ একে ‘হজেস উল্কা’ নামেই চেনে।

উল্কাপাত খুব দুর্লভ ঘটনা নয়। মানুষ না হলেও ১৯৭২ সালে ভেনিজুয়েলায় একটি গরু মারা যায় উল্কাঘাতে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরো বড় পরিসরের একটি ঘটনা ঘটে রাশিয়ার চেলইয়াবিনস্কে। একটি উল্কা তৈরি করে সনিক বুম বা শব্দ-নিনাদ। অর্থাৎ প্রচন্ড বেগে শব্দ তরঙ্গ ছুটে যায় চারদিকে। এর আঘাতে ভেঙে পড়ে জানালার কাচসহ আরো নানা কিছু। এ ঘটনায় সেবার আহত হয় প্রায় ১ হাজার মানুষ।

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ড. ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি দিলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

উল্কার আঘাতও ঘায়েল করতে পারেনি যাকে

আপডেট সময় : ০৪:৩৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ১৯৫৪ সালের ৩০ নভেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার সিলাকগা শহরে অ্যান হজেস নামে ৩৪ বছর বয়সী এক নারী একটি উল্কাঘাতে আহত হন। তখন তিনি নিজের বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন। উল্কাপিণ্ডের ওজন ছিল প্রায় সাড়ে ৮ পাউন্ড বা প্রায় ৪ কেজি। উল্কাপিণ্ডটি এখন রাখা আছে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান’স ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে। ইতিহাসের একমাত্র উল্কাঘাতে বিক্ষত মানুষ এই অ্যান হজেস। আর কেউ এরকম আঘাত পেয়েছে বলে জানা যায় না।

উল্কাপিণ্ড বস্তুটা ৪.৫ বিলিয়ন বছরের পুরোনো, অর্থাৎ প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়া মহাশূন্যের এক অতিপ্রাচীন পাথর। মহাকাশের অন্ধকার ভেদ করে পৃথিবীতে ছুটে এসেছিল সেটি। উল্কাটি সরাসরি অ্যান হজেসের শরীরে আঘাত করেনি। প্রথমে সেটি গিয়ে পড়ে তাঁর বিছানার পাশে রাখা রেডিওর ওপর। সেখান থেকে লেগে তাঁর শরীরে আঘাত করে। সেই কারণে তিনি গুরুতরভাবে আহত না হয়ে বেঁচে যান। যদিও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় এবং কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, শেষ পর্যন্ত তাঁর বড় কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়নি।

এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়ার আরো একটি কারণ ছিল। পরে জানা যায়, উল্কাটি আসলে একসঙ্গে ছিল না—পথে আসতে আসতে সেটি ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায়। একটি খণ্ড গিয়ে পড়ে অ্যান হজেসের বাড়িতে, আর অন্যটি কয়েক মাইল দূরে গিয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানীরা পরে হিসাব করে দেখেছেন, উল্কাটি সেদিন পৃথিবীতে এসে পড়েছিল ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে। অ্যানের আশপাশের বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী জানিয়েছেন, তাঁরা সেদিন আকাশে একটি বিশাল আগুনের গোলা ছুটে আসতে দেখেছেন। সাধারণত উল্কা এত বড় হয় না—সেগুলো গল্ফ বল কিংবা হাতের মুঠির মতো ছোট আকারের হয়। কিন্তু এইটি ছিল তুলনামূলকভাবে বেশ বড়। এটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিলাকগা উল্কা’, তবে বেশিরভাগ মানুষ একে ‘হজেস উল্কা’ নামেই চেনে।

উল্কাপাত খুব দুর্লভ ঘটনা নয়। মানুষ না হলেও ১৯৭২ সালে ভেনিজুয়েলায় একটি গরু মারা যায় উল্কাঘাতে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরো বড় পরিসরের একটি ঘটনা ঘটে রাশিয়ার চেলইয়াবিনস্কে। একটি উল্কা তৈরি করে সনিক বুম বা শব্দ-নিনাদ। অর্থাৎ প্রচন্ড বেগে শব্দ তরঙ্গ ছুটে যায় চারদিকে। এর আঘাতে ভেঙে পড়ে জানালার কাচসহ আরো নানা কিছু। এ ঘটনায় সেবার আহত হয় প্রায় ১ হাজার মানুষ।