সিলেট প্রতিনিধি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ ও পুলিশের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গতকাল বুধবার বিকেল ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। কর্মসূচিতে নয়জন ছাত্রী ও ১৫ জন ছাত্র অংশ নিয়েছেন। অনশনকারীদের ঘিরে রেখেছেন অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা। এর আগে উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচিও এর আগে ঘোষণা করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
গত সোমবার বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ দেখে ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাইসহ’ নানা ধরনের স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এর পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাতে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তারা নির্দেশ উপেক্ষা করে হলে অবস্থান করেন। উল্টো তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ আনা হয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মেনে নেব: উপাচার্য ফরিদ : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে তা তিনি মেনে নেবেন। বুধবার সকালে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা গালিগালাজ সহ্য করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে।
“এখানে আমার যদি কোনো দোষ থাকে তাহলে তদন্ত কমিটি হবে। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে আমি তাই মেনে নেব।” বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের চতুর্থ দিন বিকালে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাতে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নির্দেশ উপেক্ষা করে হলে অবস্থান করেন। উল্টো তারা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে নতুন আন্দোলন শুরু করেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর পর পুলিশই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেখানে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়। গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অভিযোগ আনা হয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সপ্তম দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কয়েক দিন বিক্ষোভের পর তারা অনশন শুরু করেন। বুধবার বিকেল ৩টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
‘শিক্ষার্থীদের অশোভন ভাষার’ প্রতিবাদে শিক্ষকরা : সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ‘কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন’ বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বুধবার বেলা ১২টার দিকে তারা মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানান। কর্মসূচিতে অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত হন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন বক্তব্য কখনও কাম্য নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের এ রকম শিক্ষা কখনও দেইনি।” শিক্ষার্থীদের দাবি, ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বলে থাকে তার দায় সব শিক্ষার্থীর নয়।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনে শাবি শিক্ষার্থীরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ