নিজস্ব প্রতিবেদক: যতক্ষণ ‘প্রয়োজন’, নেতাকর্মীদের ততক্ষণ রাজপথে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথের অপেক্ষায় থাকা বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
বুধবার (২১ মে) দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘নির্দেশ একটাই, যতক্ষণ দরকার রাজপথ ছেড়ে উঠে আসা যাবে না।’
এর আগে এদিন সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত ১৪ মে থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন সমর্থকেরা। মঙ্গলবার তারা ঘোষণা দেন, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানানো হয়। পাশাপাশি ডিএসসিসি এলাকার সব নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের কাছ থেকে।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় বুধবার সকাল ১০টার পর নগর ভবনের সামনে থেকে চলে আসেন ইশরাক সমর্থকরা। তারপর তারা মৎস্যভবন ও কাকরাইল এলাকায় অবস্থান নেন। সেই অবস্থান কর্মসূচির বিভিন্ন ভিডিও, খবর নিজের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করছেন ইশরাক হোসেন।
রিট মামলার আদেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার: বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট অবৈধ ঘোষণার দাবি এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে রিট মামলার আদেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ মে) দিন রেখেছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার (২১ মে) দুপুরে এ আদেশ দেয়। এ রিট মামলার ওপর মঙ্গলবার দুই দফা শুনানির পর বুধবার আদেশের জন্য রাখা হয়েছিল। কিন্তু এদিন আবার দুই পক্ষের শুনানি হয় এবং পরে আদালত আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখে।
এদিন রিট আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন। অন্যদিকে রিটকারী পক্ষে জবাব দেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন।
ইশরাকের পক্ষে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে কয়েকটি ভুল থাকার দাবি তুলে রুল জারির আর্জি জানান মোহাম্মদ হোসেন। অন্যদিকে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যায়। সেটা করতে পারে মামলার বিবাদী পক্ষ। সেখানে আপিল না করে একজন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট মামলা করতে পারেন না।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি। তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
এদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে নগর ভবন অচল করে রেখেছেন। বুধবার হাই কোর্টে যখন শুনানি চলে, তখনো মৎস্যভবন ও কাকরাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ইশরাক সমর্থকরা। এর পাল্টায় নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। দলটির অভিযোগ, ইশরাককে মেয়র ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্ব করেছে। ওই অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এনসিপি দাবি ‘রাজনৈতিক’; নির্বাচনি ট্রাইবুনালের রায়ে ইসির পক্ষভুক্ত হওয়ার নজির নেই।
এদিকে আরেক ফেসবুক পোস্টে ইশরাক হোসেন লেখেন, ‘ঢাকাবাসীর অবস্থান কর্মসূচিতে জনজোয়ার। ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি।’
ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে রয়েছে। সেখানে কোনো ধরনের দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস নগর ভবনে থাকায়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও কার্যালয়ে আসতে পারছেন না।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি ইশরাকের: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। বুধবার (২১ মে) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি জানান তিনি।
ওই পোস্টে ইশরাক লেখেন, গণতান্ত্রিক ভাষায়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে যৌক্তিক কারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। যেহেতু এটা প্রতীয়মান যে আপনারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, হয়ত আগামীতে সরাসরি যুক্ত হবেন। এবং এটাও অনেকটা স্পষ্ট আপনারা নির্বাচন করবেন। তাহলে আপনাদের পদত্যাগের দাবি কি অযৌক্তিক? নাকি এটাই সঠিক পদক্ষেপ হবে এবং আপনাদের নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটবে।
আপনাদেরই নাহিদ ইসলাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন সেটাই অনুসরণ করুন। উনি চাইলে হয়ত আরো কিছুদিন মন্ত্রিত্ব করে তারপর এনসিপিতে যেতে পারতেন। একটা সময় ছিল সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহরা জোরালোভাবে দাবি করলে ওনারাও হয়ত মন্ত্রিত্ব নিতে পারতেন। কিন্তু তারা রাজনীতি করবেন বলে সেই কর্মপন্থা বেছে নিয়েছেন। হয়ত একদিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে পূর্ণাঙ্গভাবে মন্ত্রীর দায়িত্ব, ক্ষমতা ও সম্মান আবার পাবেন।
আপনারা পদত্যাগ করলে বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতার ইমেজই বৃদ্ধি পাবে। এখনও মনে করি সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দলীয় ও সাংগঠনিক কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে দেশ ও জনগণকে আপনারা আরো ভালো কিছু দিতে পারবেন।
আর ক্ষমতা ধরে রাখলে আপনাদের দলের লোকজনকে বিশেষ সুবিধা দিতেই হবে, এটা থেকে বিরত থাকার বা শতভাগ নিরপেক্ষ থাকার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা অথবা ক্ষমতা আপনাদের নাই। কারোরই থাকে না। কাঁঠাল ভাঙবে আপনাদের মাথায়, খাবে কিন্তু অন্য সবাই।
এখন নিশ্চয়ই বলবেন বা ভাববেন ক্ষমতার লোভে অবৈধ মেয়র হওয়ার জন্য দিনের পর দিন আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে জনভোগান্তি তৈরি করে নিজেকে সাধু বানিয়ে আমাদের নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন, তাই না? আমি নিজেও কি কম সমালোচনার শিকার হয়েছি এটি করতে গিয়ে? কিন্তু আমার আর কোনো উপায় ছিল না। আপনাদেরকে যে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে সেটা জনগণকে বোঝানো দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল। এবং আজ অবধি আমাকে বাধা দেওয়ার কাজটি যৌথ সিদ্ধান্তে হচ্ছে, এটা মিনিমাম রাজনৈতিক বোধ সম্পন্ন মানুষ বোঝে।
কিন্তু আমি বলব এটা ছিল ওনাদের ভুল পলিসি, ব্যবহার হলেন আপনি আসিফ ভূঁইয়া। আইন-আদালত মেনে নিতে না পারলে কোথা থেকে দেশ সংস্কার শুরু হবে? তারপর যত ইচ্ছা সমালোচনা করতেন, দেখতেন আসলে কি করি। এখন পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া আমাকে সম্পন্ন করতেই হবে।
বন্দোবস্ত তো আগেরটাই অনুসরণ হচ্ছে। আরো পাকাপোক্ত করা হচ্ছে বললেও ভুল হবে না। আপনাদের পদত্যাগের দাবি থেকে সরার কোনো সুযোগ নাই। আপনারাই বা কেন থাকতে চাচ্ছেন?