ঢাকা ০৫:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

উন্মেষ ঘটুক মানবিকতার

  • আপডেট সময় : ০৯:০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

ড. হারুন রশীদ : ঋতুর পালাবদল ঘটে প্রকৃতির নিয়মেই। ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এখন শীত। হেমন্তের ফসল কাটা চলছে। কাটা শস্যের নাড়াপুচ্ছে জমতে শুরু করেছে শিশির। কবির ভাষায়- ‘শীতের হাওয়ায় লাগল কাঁপন আমলকীর ওই ডালে ডালে।’ ষড়ঋতুর এই দেশে একেকটি ঋতু একেক রূপ রঙ নিয়ে হাজির হয়। অভ্যস্ত মানুষজন প্রকৃতির এই পালাবদলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন খুব সহজেই। যদিও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিস্থিতির কারণে ঋতুর পালাক্রম রক্ষা হচ্ছে না। অর্থাৎ শীতকালে গরম বা গরমকালে শীত পড়ছে। বর্ষায় বৃষ্টির দেখা নেই। আগে যেমন মুষলধারে বর্ষার বৃষ্টি সবকিছুকে ছাপিয়ে-ভাসিয়ে নিয়ে যেত এখন সেটা নেই। এরপরও প্রকৃতির কিছু নিয়ম তো অলঙ্ঘনীয়।
প্রত্যেক ঋতুরই আলাদা চরিত্র, বৈশিষ্ট্য আছে। শীতের পরিবর্তনটা যেন একটু বেশি চোখে পড়ে। শীত এলে অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। হেমন্তের ফসল কাটা শেষ হয়। নবান্নের সঙ্গে পিঠাপায়েসের আয়োজন চলে গ্রামাঞ্চলে। নগর-বন্দরেও এখন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। সেই পিঠা কেউ খায় ক্ষুধা নিবারণের জন্য। কেউ বা ফেলে আসা গ্রামের টানে স্বজনের ছোঁয়া পায় তাতে।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই সময়ে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। এ ধরনের মানবিক কর্মকা- আরও বাড়াতে হবে। একজন মানুষও যেন শীতে কষ্ট না পায় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। কবি সুকান্ত যেমন করে সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য’ তেমনিভাবে আমাদের মধ্যে এই শীতে মানবিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। আর তখনই শীত কষ্টের ঋতু না হয়ে উৎসবের ঋতু হয়ে উঠবে
শীত একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। অন্যদিকে তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। বিশেষ করে দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। এ সময় শীতজনিত নানা রোগব্যাধিও দেখা দেয়। এজন্য শীতের জন্য আলাদা একটি প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন। এবার শীত আসছে এমন এক সময় যখন চলছে করোনা মহামারিকাল। দেশে ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণের পর থেকেই প্রাণঘাতী (কোভিট-১৯) ভাইরাসটি তার মরণ কামড় দিয়েই যাচ্ছে। দুই বছর পার হলেও এখনো যাওয়ার কোনো নাম নেই। বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন আসছে। ইতোমধ্যে দেশেও বেশ কয়েকজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। ফলে বাড়তে পারে করোনার তীব্রতা। বাড়বে মৃত্যু এবং সংক্রমণের সংখ্যাও।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, যদিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর হার অব্যাহতভাবে দুই শতাংশের নিচে রয়েছে, তবুও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সারাদেশের মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ লাখ ৩৩ হাজার এবং সর্বনি¤œ কক্সবাজার জেলায় ২৩ হাজার ৪২২ জন রোগী শনাক্ত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০০ ছড়িয়েছে। যাদের বেশিরভাগই পাওয়া গেছে মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতে। এছাড়া কর্ণাটক, কেরালা, গুজরাট এবং রাজস্থানে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তাই সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মৃত্যুঝুঁকি আছে জেনেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতিও কোনো কাজ দিচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে আর কত প্রাণ গেলে আমরা সচেতন হবো?
অন্যদিকে করোনা মহামারির মধ্যেও হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। এ যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।’ জাগো নিউজের রিপোর্ট বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় (২২ ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী) ১৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা অতি জরুরি। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা সচেতনতার কথা বলছেন। বিশেষ করে রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এডিস নামক যে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় সেই মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় খোলা পাত্রে জমে থামা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি, টায়ারের খোল, ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা অথবা পানির চৌবাচ্চায় এই মশা নির্বিচারে বংশ বিস্তার করে। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। ছেড়ে ছেড়ে আসা বৃষ্টির কারণেও এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটছে এবং সে কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে। এজন্য নিজেদের সচেতন হতে হবে কর্তৃপক্ষীয় দায়িত্বের পাশাপাশি।
এছাড়া শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতোমধ্যে জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলও বিঘিœত হয়। এজন্য সতর্কবার্তা জারি করা উচিত। এ সময় শৈত্যপ্রবাহেরও আশঙ্কা থাকে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সারাদেশে যে তাপমাত্রা ছিল, তা গত ৩০ বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে বেশ কম। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা রাতে গড়ে ৯-১৫ ডিগ্রি এবং দিনের বেলায় ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের এই সময়ে দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে এক থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কম। এ কারণেই এই মুহূর্তে দেশের ১০টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চললেও, সারাদেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর শীতের অনুভূতি বেশি দেখা যাচ্ছে। তীব্র শীত বেশকিছু দিন থাকতে পারে-এমনটিও বলা হচ্ছে।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পরিবর্তন হবে। এটাই স্বাভাবিক। এজন্য প্রতিটি ঋতুই যেন উপভোগ করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরি। শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুত রাখতে হবে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবানরা এজন্য এগিয়ে আসতে পারেন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এ সময়ে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। এ ধরনের মানবিক কর্মকা- আরও বাড়াতে হবে। একজন মানুষও যেন শীতে কষ্ট না পায় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। কবি সুকান্ত যেমন করে সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য’ তেমনিভাবে আমাদের মধ্যে এই শীতে মানবিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। আর তখনই শীত কষ্টের ঋতু না হয়ে উৎসবের ঋতু হয়ে উঠবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

উন্মেষ ঘটুক মানবিকতার

আপডেট সময় : ০৯:০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১

ড. হারুন রশীদ : ঋতুর পালাবদল ঘটে প্রকৃতির নিয়মেই। ঋতু পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এখন শীত। হেমন্তের ফসল কাটা চলছে। কাটা শস্যের নাড়াপুচ্ছে জমতে শুরু করেছে শিশির। কবির ভাষায়- ‘শীতের হাওয়ায় লাগল কাঁপন আমলকীর ওই ডালে ডালে।’ ষড়ঋতুর এই দেশে একেকটি ঋতু একেক রূপ রঙ নিয়ে হাজির হয়। অভ্যস্ত মানুষজন প্রকৃতির এই পালাবদলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন খুব সহজেই। যদিও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিস্থিতির কারণে ঋতুর পালাক্রম রক্ষা হচ্ছে না। অর্থাৎ শীতকালে গরম বা গরমকালে শীত পড়ছে। বর্ষায় বৃষ্টির দেখা নেই। আগে যেমন মুষলধারে বর্ষার বৃষ্টি সবকিছুকে ছাপিয়ে-ভাসিয়ে নিয়ে যেত এখন সেটা নেই। এরপরও প্রকৃতির কিছু নিয়ম তো অলঙ্ঘনীয়।
প্রত্যেক ঋতুরই আলাদা চরিত্র, বৈশিষ্ট্য আছে। শীতের পরিবর্তনটা যেন একটু বেশি চোখে পড়ে। শীত এলে অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। হেমন্তের ফসল কাটা শেষ হয়। নবান্নের সঙ্গে পিঠাপায়েসের আয়োজন চলে গ্রামাঞ্চলে। নগর-বন্দরেও এখন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। সেই পিঠা কেউ খায় ক্ষুধা নিবারণের জন্য। কেউ বা ফেলে আসা গ্রামের টানে স্বজনের ছোঁয়া পায় তাতে।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই সময়ে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। এ ধরনের মানবিক কর্মকা- আরও বাড়াতে হবে। একজন মানুষও যেন শীতে কষ্ট না পায় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। কবি সুকান্ত যেমন করে সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য’ তেমনিভাবে আমাদের মধ্যে এই শীতে মানবিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। আর তখনই শীত কষ্টের ঋতু না হয়ে উৎসবের ঋতু হয়ে উঠবে
শীত একদিকে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। অন্যদিকে তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে মানুষজনের। বিশেষ করে দরিদ্ররা শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। এ সময় শীতজনিত নানা রোগব্যাধিও দেখা দেয়। এজন্য শীতের জন্য আলাদা একটি প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন। এবার শীত আসছে এমন এক সময় যখন চলছে করোনা মহামারিকাল। দেশে ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণের পর থেকেই প্রাণঘাতী (কোভিট-১৯) ভাইরাসটি তার মরণ কামড় দিয়েই যাচ্ছে। দুই বছর পার হলেও এখনো যাওয়ার কোনো নাম নেই। বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন আসছে। ইতোমধ্যে দেশেও বেশ কয়েকজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। ফলে বাড়তে পারে করোনার তীব্রতা। বাড়বে মৃত্যু এবং সংক্রমণের সংখ্যাও।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, যদিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর হার অব্যাহতভাবে দুই শতাংশের নিচে রয়েছে, তবুও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সারাদেশের মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ লাখ ৩৩ হাজার এবং সর্বনি¤œ কক্সবাজার জেলায় ২৩ হাজার ৪২২ জন রোগী শনাক্ত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০০ ছড়িয়েছে। যাদের বেশিরভাগই পাওয়া গেছে মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতে। এছাড়া কর্ণাটক, কেরালা, গুজরাট এবং রাজস্থানে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তাই সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মৃত্যুঝুঁকি আছে জেনেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতিও কোনো কাজ দিচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে আর কত প্রাণ গেলে আমরা সচেতন হবো?
অন্যদিকে করোনা মহামারির মধ্যেও হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। এ যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।’ জাগো নিউজের রিপোর্ট বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় (২২ ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী) ১৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা অতি জরুরি। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা সচেতনতার কথা বলছেন। বিশেষ করে রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এডিস নামক যে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় সেই মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় খোলা পাত্রে জমে থামা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি, টায়ারের খোল, ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা অথবা পানির চৌবাচ্চায় এই মশা নির্বিচারে বংশ বিস্তার করে। আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। ছেড়ে ছেড়ে আসা বৃষ্টির কারণেও এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটছে এবং সে কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে। এজন্য নিজেদের সচেতন হতে হবে কর্তৃপক্ষীয় দায়িত্বের পাশাপাশি।
এছাড়া শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতোমধ্যে জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলও বিঘিœত হয়। এজন্য সতর্কবার্তা জারি করা উচিত। এ সময় শৈত্যপ্রবাহেরও আশঙ্কা থাকে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সারাদেশে যে তাপমাত্রা ছিল, তা গত ৩০ বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে বেশ কম। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা রাতে গড়ে ৯-১৫ ডিগ্রি এবং দিনের বেলায় ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের এই সময়ে দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে এক থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কম। এ কারণেই এই মুহূর্তে দেশের ১০টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চললেও, সারাদেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর শীতের অনুভূতি বেশি দেখা যাচ্ছে। তীব্র শীত বেশকিছু দিন থাকতে পারে-এমনটিও বলা হচ্ছে।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পরিবর্তন হবে। এটাই স্বাভাবিক। এজন্য প্রতিটি ঋতুই যেন উপভোগ করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরি। শীতজনিত রোগব্যাধি থেকে মানুষজনকে রক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুত রাখতে হবে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য গরম কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবানরা এজন্য এগিয়ে আসতে পারেন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এ সময়ে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। এ ধরনের মানবিক কর্মকা- আরও বাড়াতে হবে। একজন মানুষও যেন শীতে কষ্ট না পায় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। কবি সুকান্ত যেমন করে সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য’ তেমনিভাবে আমাদের মধ্যে এই শীতে মানবিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। আর তখনই শীত কষ্টের ঋতু না হয়ে উৎসবের ঋতু হয়ে উঠবে।